নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরাজিত মেঘের সাম্রাজ্য

মাসকাওয়াথ আহসান

মাসকাওয়াথ আহসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি বাড়ী একটি খামার

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১:০৩

(পড়ুন একটি প্রাসাদ, একটি শান-শওকাত)



প্রাককথন



বাংলাদেশে একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পটি চালু হয় মূলতঃ পাকিস্তান আমলে। তখন ২২ টি বাড়ী ২২ টি খামার ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। অধিকাংশ বাড়ী ও খামার নির্মিত হয় ততকালীন পশ্চিম পাকি অস্থানে । ভারতেও ৪৭-এর পর থেকে জওহরলাল নেহেরু "একটি বাড়ী একটি খামার" প্রকল্প চালু করেন। পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো "একটি বাড়ী একটি ছাগু খামার" আন্দোলনের জন্য প্রসিদ্ধ। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এই "একটি বাড়ী একটি খামার" প্রকল্পকে ঘৃণা করতেন। উনি মনে করতেন পুরো বাংলাদেশ একটি বাড়ী একটি খামার হতে পারে। কিন্তু ঐ ২২ টি বাড়ী ও খামারের দরকার নাই। একারণেই তিনি বাকশাল প্রবর্তন করেন। কিন্তু পাকিস্তানের প্রবল প্রভাবে মুশতাকসহ কতিপয় ছাগু চেয়েছিল ভুট্টোর অনুরূপ "একটি বাড়ি একটি ছাগু খামার প্রকল্প"টি বাংলাদেশে অনুসৃত হোক। বঙ্গবন্ধু এইসব একটি বাড়ি একটি খামারের শান-শওকত ঘৃণা করতেন। লুঙ্গি-গেঞ্জি পরে শাক-ডাল-একটু মাছ-ভাত তারপর একটু পাইপ মুখে সৃজনশীল রাজনৈতিক ও জীবন ভাবনাই তার প্রিয় ছিল। বাংলাদেশের মুশতাক ঘরানার একটি বাড়ী একটি ছাগ-খামার প্রকল্পের ভক্তরা তাই বাধ্য হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে।এরপর আর বাংলাদেশকে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন মাশাল্লাহ বাংলাদেশে ৪৫ হাজার ২৩৫ টি 'একটি বাড়ী একটি ছাগ খামার রয়েছে। চলুন দেখা যাক সেইসব সৌভাগ্যবানদের; যারা বাংলাদেশে 'একটি বাড়ী একটি খামার' বিপ্লব সাধিত করেছেন। পরের পোস্টে এক এক করে আপনাদের বাড়ি ও খামার দেখাতে নিয়ে যাবো।



একটি বাড়ী একটি খামার -১



ঘোষক পরিবার



এই পথ যদি না শেষ হয়



বাংলাদেশের ২৩ তম একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় জিয়া-পরিবারে।

খুব সৎ সে ভালোবাসার যৌথ খামার। প্রতিদিন টিভিতে নিজেকে দেখতে পাওয়ার বায়েস্কোপের নেশায় বুঁদ থাকতেন এই খামারের মালিক। খাওয়া দাওয়া তেমন করতেন না। ক্যান্টনমেন্টে গুলির আওয়াজে পেট ভরে যেত তার। বিদ্রোহী অফিসারের মৃত্যুর খবর নীল টেলিফোনে রিসিভ করে উনি একটু সুজি খেতেন। নবীজীর সুন্নত। নৈশভোজের পর একটু মিষ্টিমুখ করা। মিসেস জিয়াও খুশী; তাকেও টেলিভিশনে দেখা যাচ্ছে। গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে সুন্দরীতমার ছবি। তবে পিনু-কোকো খুশী নয়। তাদের টেলিভিশনে দেখা যায়না। খামারের মালিক আব্বু বললেন, এক লাফ দিয়ে টিভিতে আসা যায়না। আগে রেডিওতে স্কুল ব্রডকাস্ট প্রোগ্রাম করো। পরে দেখা যাবে। দেখো আমার ঐতিহাসিক রেডিও ব্যাকগ্রাউন্ড। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা পড়ে অডিশন দিয়ে তারপর টিভিতে এসেছি। আর তোমার আম্মা একজন মেয়ে। তার সৌন্দর্য্যটা আসল। টিভিতে উনি চান্স পাবেন সেটা নতুন কিছু নয়। কিন্তু তোমরাতো ছেলে। যাও রেডিও করো।



সেলিব্রেটি জিয়া এক রাতে বেগমকে ফোন করলেন। পুতুল, পিনু-কোকোরা রেডিওতে গেছিলো আজ? পুতুল জিয়া ক্ষেপে যান। দুনিয়ায় রেডিও-টিভি ছাড়া আর কিছু নাই; তুমি কী গোপালী নাকি? টাকা-পয়সার টানাটানি। তুমি প্রত্যেকদিন যেরকম ঠুসঠাস করো; তুমি টেসে গেলে আমাদের কী হবে বলুনী?

জিয়া বললেন আমার ভাঙ্গা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জি রেখে যাচ্ছি। পিনু আর কোকোকে দিও। তারপর ওরা বুঝে নেবে। যাই ঘুমাই। সকালে খাল কাটতে যেতে হবে।



হাওয়া-রাত



সে রাতেই টেসে গেলেন ঘোষক জিয়া। অকূল পাথারে বেগম জিয়া। রাষ্ট্র তখন পিনু-কোকোকে বড় করার দায় নিলো। মাত্র এক টাকা দিয়ে মইনুল হোসেন রোডের প্রাসাদটি উনার হয়ে গেল। তারপর একদিন পিনু এসে বললো, মা, আমাকে বাবার ভাঙ্গা স্যুটকেসটা দাও। কোকো চাইলো ছেঁড়া গেঞ্জি। এরপর আর ঘোষক পরিবারকে ফিরে তাকাতে হয়নি। হাওয়া প্রাসাদে বসে খামারের নতুন মালিক পিনু ভাঙ্গা স্যুটকেসে টেন পার্সেন্ট নিতে থাকেন। আর কোকো অনেকগুলো স্টীমার কিনে তাতে ছেঁড়া গেঞ্জির পতাকা বেঁধে দেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে জিয়ার একটি বাড়ী সমৃদ্ধ এক খামার হয়ে ওঠে।



একটি বাড়ী একটি খামার -২



মধু-খামার



১৯৮২ সালের কথা। রংপুরের যাত্রা-পালার নায়ক এরশাদ সন্তুষ্ট ছিলেন না রাষ্ট্রের দেয়া ৬০ বিঘা খাস জমিতে কৃষিকাজ করে। তার মনে হলো এই ডেলটাটা পুরোচাষ করলে ক্ষতি কী। যাত্রা নায়কের জীবনে ডেল্টাপ্রীতি খুব ছোট বেলা থেকে। কিন্তু জীবন বন্দী রওশন নামের এক 'এ খাঁচা ভাঙ্গবো আমি ক্যামন করে'র দেয়া দুটো ভাত-রুটি-সব্জির সন্ন্যাসে। এক অন্তর্জলী যাত্রার বুড়ো তখন প্রেসিডেন্ট। তাকে কোলে করে গ্রীণ রোডের 'একটি বাড়ী একটি খামারে" পৌছে দেয় যাত্রা নায়ক এরশাদ। তারপর আর তাকে ফিরে তাকাতে হয়নি। রঙ্গভবন দখল করে তিনি মধু-খামার গড়ে তুললেন।

টিভিতে দেখে যে মৌমাছিকে চোখে ধরে, যাত্রা নায়ক ফোন করে বলেন, মৌমাছি মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি, একবার রঙ্গভবনে এসো না ভাই!



এরপর মৌমাছিরা রঙ্গভবনে আসে। তৈরী হয় 'জেনারেল-মৌচাক'; এরশাদ তখন একেবারে চাক ভাঙ্গা মধু চেখে বন্যার সময় বিটিভির মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং 'তোমাদের পাশে এসে বিপদের বাঁশী হতে, আজকের চেষ্টা অপারে'- লিপসিং শুরু করেন। অনেক সময় মসজিদে কান্নার অভিনয়ের জন্য গ্লিসারিন পকেটে নিয়ে ঘুরতে হয় উনাকে। এরপর আর কখনো নিরস হতে হয়নি যাত্রা ও টিভি অভিনেতা মধু-খামারের মালিককে। সৌদী আরব পেট্রো ডলার পাঠায়। আর মধুনায়ক জনতা টাওয়ার গড়ে তুলে।



বাংলাদেশের রাষ্ট্র-ধর্ম ইসলাম করায় এই মধু নায়ককে সৌদি প্রিন্স বান্দর রিয়াদে ডেকে উনার সম্মানে বেলী ড্যান্সের আয়োজন করে। বান্দর বলে, এখন থেকে এ আপনার সেকেন্ড হাউজ, সেকেন্ড ফার্ম। মধু নায়ক বুঝতে পারে, আমি ইহাকে পাইলাম।



বেলী ডান্সের ঘোর নিয়ে ঢাকায় ফিরে মসনদ দুলতে দেখে এরশাদ গুলি করে মারেন বেচারা নূরহোসেনকে। তারপর আবার মৌমাছি পরিচর্যায় মন দেন। আজ রঙ্গভবনটি পুরান ঢাকার ট্রাফিক জ্যামে ঘিঞ্জি হয়ে যাওয়ায়; এরশাদ মধু খামারটি বারিধারার রাষ্ট্রপতি প্রাসাদে তুলে নিয়ে আসেন। মাঝে জনতা টাওয়ার মামলায় কিছুদিন এই মধুনায়ককে কারাগারের প্রাসাদে থাকতে হয়েছিল। তখনও প্যারোলে মৌমাছি পরিচর্যার সুযোগ তিনি পেয়েছেন। কারা-প্রাসাদ থেকে মুক্তির পর মিডিয়া বুমের কারণে মৌমাছি অনুভূতিশিল্পীরা বারিধারার মধু-খামারে দ্রুত ছুটে আসতে শুরু করলে ;এরশাদের একটি বাড়ী, একটি খামার আরো মধুময় হয়ে ওঠে। জয়বাবা মধুনাথ!

একটি বাড়ী একটি খামার -৩



গোলাম-খামার



মগবাজারে সাদা রাজহাঁসের মতো একটি গোলাম খামার রয়েছে। সেখানে বাস করতেন এক গোলাম আজম; মওদুদীর ছাগ-দর্শনের অনুসারী। সুতরাং সে ৭১ এর 'গন্ডগোলে'র সময় নাপাকি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়াকে বুদ্ধি দেয় যুদ্ধের পাশাপাশি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের মারখুট ছাগু এনে বঙ্গালে প্রজনন ঘটালে তা একদিকে মওদুদীর ছাগ-দর্শনের শ্রোতা বাড়াবে। অন্যদিকে এই শ্রোতারাই সময়ে-অসময়ে গোলামী করবে। গোলামের বুদ্ধিটা টিক্কা খানের মাথায় ধরে। সে গোলামের উপস্থিতিতে পাঞ্জাবের মেজর-ক্যাপটেন-চ্যাপটেন মারখুটদের 'লেডি চ্যাটার্লিজ লাভার' ফিল্ম প্রদর্শন করে উচ্চকিত করে হিতোপদেশ দেয়; যাও বঙ্গাল মুলুকে মারখুট পৌরুষ দ্যাখাও। গোলাম তখন তার নিজের বোনের রান্না করা এক বাটি মাটন কাড়হাই টিক্কার সামনে মেলে ধরে বলে, স্যার আপনি ছাগ প্রজনন শুরু করুন। এরপর আর গোলামকে ফিরে তাকাতে হয়নি।



এর ফলশ্রুতিতে পাঞ্জাবের মারখুটদের হাতে ৩০ লাখ বাঙ্গালী শহীদ হন; ৪ লাখ নারীকে মারখুটেরা সম্ভ্রমহানির চেষ্টা করে। পাঞ্জাবের মারখুটেরা জন্মগতভাবেই নাম-পুরুষ ধরণের (৭১এর মারখুটদের নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক বেগমদের ভাষ্য অনুয়ায়ী) ; যা তাদের স্থিতিস্থাপকতাকে ক্ষণস্থায়ী করে। ফলে তারা বাঙ্গালী নারীদের অনেককে শারীরিক ভাবে নির্যাতন ও হত্যা করে অক্ষমতায় নত হয়ে যাওয়া পৌরুষে শ্লাঘা অনুভবের কারণে। ব্যর্থ হয়ে যায় গোলামের ছাগু প্রজনন খামার। গোলামকে জান বাঁচানোর ফরজ পালনে পাকিস্তান পলায়ন করতে হয়। তারপর মওদুদীর ছাগ-দর্শনে্র প্রধান পৃষ্ঠপোষক বৃটেনে আশ্রয় নেন এই ছাগুচাষী গোলাম। পরে ৭৫-এ বন্ধবন্ধুকে মুশতাক ছাগুরা হত্যা করলে; গোলাম আবার মগবাজারের গোলাম খামারে ফিরে আসে। ঘোষক জিয়া ও মধু-এরশাদ তাকে ছাগু চাষে উতসাহ দেন।



৭১এর ছাগুচাষ প্রকল্প ব্যর্থ হয়ে যাওয়ায়; নিটশের বুদ্ধি অনুযায়ী গোলাম আজম তার সহগোলামদের ইচ্ছুক গোলামীদের পাকিস্তানের পাঞ্জাবের পারসোনায় নিয়ে গিয়ে স্পা নেবার ব্যবস্থা করে। গোলামের এই জেনারেশন ৭৫ প্রকল্পটি খুব সফল। এখন মারখুট ছাগুর সংখ্যা তার খামারে অনেক। এরা চাপাতি নিয়ে ঘুরে 'জয় বাংলা' বলা তরুণদের খুন করতে ও হিন্দুপল্লীতে ঢুকে পেট্রোল ঢেলে আগুণ দিতে ও হিন্দু নারীদের সম্ভ্রম হানির কসরত করে ব্যর্থ হতে।



গোলামে্র একটি ছেলে ইন্টারমিডিয়েটে থার্ড ডিভিশন পেয়েও; ঘোষক জিয়ার মহানুভবতায় সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে ঢুকে। গোয়েন্দা দপ্তরটিকে আই-এস- আই-এর আদলে গড়ার অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ৭১এর অপকর্মের জন্য গোলামের ৯০ বছরের জেল হয়েছে। যে বয়েসে যথেষ্ট ছাগুচাষ হয়েছে; এখন এই বুড়ী ওয়াইফির ঝগড়া, নাক-ডাকা ও কাশি থেকে মুক্তি চাই ভাবছিলেন গোলাম, শেখ হাসিনা দয়া পরবশ হয়ে যেন বললেন, গোলাম সাহেব, বঙ্গবন্ধু হাসপাতাল প্রাসাদে থাকুন। ভাল-খাওয়া, সেবা-যত্ন পাবেন। মাঝে মধ্যে শাহবাগের বাচ্চাদের হৈ চৈ বাদ দিলে ছাগ খামারের মালিক গোলাম বেশ রসে-বশে আছে। হাজার হোক মগবাজারের একটি বাড়ী থেকে সারাদেশে ছাগ-খামার তৈরীতে তার যে সাফল্য; তা পর্বত প্রমাণ।



একটি বাড়ী একটি খামার -৪



মতি-খামার



বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতায় মতি খামার বহুল আলোচিত তৃতীয় খামার। এখানে শিল্প-সাহিত্য-রাজনীতি ও শোবিজের মতি উতপাদিত হয়। মতি খামারটি দেখতে অনেকটা কলকাতার আনন্দবাজারের মতো। সংবাদ বা সাহিত্য যে কোন ক্ষেত্রে 'দাদা' তৈরীর দাদাগিরির পরীক্ষা নিরীক্ষা হয় এ খামারে অবিরাম। এটিকে ফেসবুকের ভাষায় 'সেলিব্রেটি' তৈরীর মেরিল খামারও বলা হয়ে থাকে। মতি খামারের একটি আধুনিক উড্রোউইলসন পরিশোধনাগার রয়েছে। একে চন্দ্রপ্রভাদত্ত (সিপিডি) বলা হয়। মাত্র এক যুগের মধ্যে মতি খামারটি বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের নিয়ামক শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।



মতি খামারে 'ছাগু'দের গায়ে মতির প্রলেপ বুলানোর ব্যবস্থা আছে। ইমরান খান, হামিদ মীর, মেহেরজান প্রমুখ মতি খামারের পারসোনা মতি-স্পা সেন্টারে মতির প্রলেপ বুলিয়ে খুব সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। আই-এস- আই, উলফার মতো সংগঠনগুলোও তাদের ছাগুদের মতি-খামারের স্পা সেন্টারে নিয়মিত পাঠিয়ে জরিমতির কাজ করিয়ে নেয়।



বাংলাদেশে কে কখন নেতা, অভিনেতা, সাহিত্যনেতা, বুদ্ধি নেতা, সংস্কৃতি নেতা, শোবিজ নেতা হবে তা নির্ধারিত হয় মতি-খামারের অঙ্গুলী হেলনে। ফলে গরু, ছাগল, ভেড়া, বানর, সজারু ও উল্লুক সবাই মতির খামারে আসে জরিমতির স্পা নিতে। স্পা শেষে মতিগুরু নেতা- আকাংখী প্রাণীকূলের লেজে তারাবাতি বেঁধে দেন; ফলে তারা দ্রুত তারকা হয়ে ওঠে।



মতি খামারের মালেকান খুব নিষ্ঠুর নারী। বাসায় উনি মতিকে কোন পাত্তা দেননা। বলেন, তোমার একটি বাড়ী একটি খামারে গিয়ে মতিগিরি করো। আমার বাড়ীকে আমি মতি খামার হতে দেবোনা কিছুতেই। বিধিবাম মতিপুত্র শাশা বড় হয়ে আরো বড় মতি হয়েছে। সে একজন প্রেস মালিকের কাছ থেকে প্রিন্টিং-এর কাজ করিয়ে টাকা না দেয়ায় প্রেস মালিক আজ মৃত্যু-পথযাত্রী। পত্রিকায় অসহায় মানুষটির ছবি দেখে একদা বাম, এখন এফলুয়েন্ট আন্টি মালেকান, মতিগুরুকে বলেন, সারা দেশে মতি-খামারের "বদলে দাও, উলটে দাও" ঝান্ডা নিয়ে দৌড়াও, এবার ঘরের শাশাকে বদলাও দেখি। মতি গম্ভীর হেসে বলে , এখন মানতে বাধ্য হচ্ছোতো; ইন ফিউচার তোমার বাড়ীটাই মতি-খামারের হেড অফিস হবে। মালেকান চিৎকার করে ওঠেন, ওই বেয়াদ্দপ; গোপালী নাকি!



মতি তৃপ্তির হাসি দেয়; অবভিয়াসলি; আমি আজকাল গোপালীর ভং ধরছি। লাভ-আজকাল।



একটি বাড়ী একটি খামার -৫



একটি বাড়ী একটি মাজার



সিরিজের প্রাককথনেই উল্লেখ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ২২ বাড়ির খামার ঘৃণা করতেন। অন্যদিকে পরমাণু বিজ্ঞানী সুধা ওয়াজেদ একটি ছোট বাড়ী বানানোর সময় বলে নিয়েছেন; এখানে খামার টামার চলবে না। ১৬০ আই কিউ এর অধিকারী মানুষেরা খামারের মতস্যজীবীদের হৈ চৈ একদম সহ্য করতে পারেননা। অগত্যা শেখ হাসিনা গণভবনকেই বেছে নিয়েছেন। 'আমার কাছে তথ্য আছে' জয় গণভবনের হৈ চৈ-এ অতিষ্ট হয়ে একটু শান্ত জায়গায় গিয়ে 'লেটস টক' করে। মনোবিজ্ঞানী পুতুল গণভবনের মাজারটিকে এড়িয়ে কোথাও গিয়ে বোঝায়, অটিজম একটি রোগ। সারিয়ে তুলুন। ফলে গণভবনটি বুবুর নামাজ, রোজা, কোরান পাঠ, খিঁচুড়ী রান্না ও শান্তির মডেলের ঝলকানির মাধ্যমে এক গণতন্ত্রের মাজার হয়ে ওঠে। বুবু খুব নস্টালজিক। কামালের বন্ধু দামাল দরবেশ সে মাজারে আসে। ব্যবসায়ীরা ধোপ-দুরস্ত সাদা পাঞ্জাবী, সম্ভব হলে মুজিব কোট, মুজিবের কালো ফ্রেমের চশমা চোখ নষ্ট না হলেও পরে আসে।



বুবুর পদ স্পর্শ করলেই অনেকেরই ধুলোমুঠি সোনামুঠি হয়। বুবু বুঝতে পারেনা। ব্যাডমিন্টন খেলে। বাবা মায়ের প্রথম সন্তান সাধারণত একটু সরল হয়। বুবুর দুর্নীতির কোন কারণ নাই। কারণ সূধাসদনতো আছে। বেশ কেটে যাবে সময় সেখানে। টিকে থাকার লড়াইটা আসলে তেলাপোকা দরবেশ ও নব্য পেঙ্গুইনদের; যাদের মাথার ওপর বুবুর ছায়া না থাকলে আবার লুঙ্গি, নাইটি পড়ে মেজর মীর্জা গালিবের সঙ্গে ছবি তুলতে হবে।



ছোট বেলা থেকেই বুবুর খালা-মামী-চাচী-ফুফুদের বাসায় ঘুরাঘুরির অভ্যাস। পরমাণুবিজ্ঞানীর পাল্লায় পড়ে দেশ-বিদেশ ঘোরার শখ পূর্ণ হয়ে যাবার কথা। কিন্তু না; বুবুর ঐ ছোট বেলার বেড়ানোর নেশাটা রয়েই গেল। এখন বুবু যখনই জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাবেন বলে ঘোষণা করেন; শোফার, বাগান শিল্পী, মাস্টার শেফ ঢাকা, লাইসেন্স না পাওয়া সাংবাদিক, ক্ষেপে যাওয়া কবি, বিদ্রোহী যুবলীগ নেতা, উড়ন্ত পাখি দীপুমণি (এখন নেই), শেখ রেহানাসহ ১৩২ জন নিয়ে বুবু নিউইয়র্ক যান আকাশে অশান্তির নীড় বাংলাদেশ বিমানে চেপে। উনি কাউকে না বলতে পারেন না। অন্যদিকে সিঙ্গাপুরের সরকারপ্রধান হয়তো ইকোনমি ক্লাসে টেকেট কেটে একটা ট্যাক্সি নিয়ে পৌঁছে যান জাতিসংঘে। বুবুর ১৩২ জন লোক টুরিস্ট বাসের টিকেট কেটে বেরিয়ে পড়ে বৈদেশ পরিদর্শনে। জাতিসংঘের অধিবেশনে বিতরণ আকাংখী বুবুর শান্তির মডে্লের বুকলেট পড়ে থাকে হোটেলের সামনে ফুটপাথে। টুরিস্টরা শপিং মলে। ফলে বুকলেট বিতরণের কেউ নেই। টিভির এমবেডেড খাদেমবেশী অনুভূতিশিল্পী বুবুর সঙ্গে খাজুইরা আলাপ করার ফাঁকে গোপনে ব্রেকিং সেনসেশন রেকর্ড করার চেষ্টা করে।



বুবুর গণতন্ত্রের মাজারের খাদেমরা শেয়ার বাজার লুট করে, হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেংকারী করে। টি-আর কাবিখা গিলে খায়। বুবুকে উন্নয়নের কিছু পরিসংখ্যান এনে দেন পন্ডিত অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু বুবুর গণতান্ত্রিক মাজারের খাদেম মুরাদ জং-এর খাদেমের রানা-প্লাজা ধসে পড়লে, বুবুর গণতন্ত্রের মাজারের খাদেম টুকুর খাদেমেরা সাঁথিয়ার হিন্দু পাড়া পোড়াতে বিএনপি-জামাতের সহচর হয়ে পত্রিকার ছবিতে ধরা পড়লে; ঔসব প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যানের পরী ডানা মেলে উড়ে যায়। পড়ে থাকে শুধুই কল্পনা!



একটি বাড়ী একটি খামার -৬



নোবেল খামার



এটি বাংলাদেশের বিকাশমান এনজিওর দোকান খুলে আচানক বাই সাইকেল ছেড়ে প্রায় শুল্ক বিহীন প্রাডোতে চড়ে, ফিল্ডে সরকারী টি আর-কাবিখা টাইপ পুকুরচুরি করে, ডোনারকে কাজের অভিনয়ের ছবি-ভিডিও জমা দিয়ে, নানা-পদের এওয়ার্ড জেতার একটি সেলিব্রেটি খামার।



এই লাইনে আরো অনেক মহাত্মা প্রভূত ম্যাগসেসে, ম্যাগপাই পুরস্কার পেলেও অধ্যাপক ইউনুস নোবেলের শিকে ছিঁড়ে নোবেল খামারের মালিক হয়ে গেছেন। উনি নোবেল পুরস্কার পাবার পর গর্বে আমাদের বুক সাতইঞ্চি বেড়ে যাওয়ায় সে এক বিদি খিচ্ছিরি অবস্থা। আমরা তখন ভাবলুম ইউনুস আমাদের মাহাথির। উনি দশবছরের জন্য প্রেসিডেন্ট হলে আমরা ট্রুলি এশিয়া হয়ে পড়বো। স্যুট-টাই রেডি; হার্ভাড, অক্সফোর্ডে, জার্মানীর সিটিসেন্টারের চিপায় বসে ভাবছি এবার আমরা মন্ত্রী হবো।



আমরা একবারো ভাবলাম না; ক্রিকেট চ্যাম্পিয়ানকে বেসবল খেলতে নামিয়ে দিলে সে কেন ঝলসে উঠবে?



বাংলাদেশে গত ৪২ বছরে তো শুধু চোরেরাই রাজনীতি করেনি। অনেক নিবেদিত রাজনীতিকের ত্যাগ-শ্রম-ঘাম আছে এই মানচিত্র পতাকায়। সেইসব মানুষেরা যেন কিছুই নয়; নিওএলিট অনাবাসী এসে বদলে দেবে; উলটে দেবে বাংলাদেশ। নোবেল পুরস্কার জনিত ইউফোরিয়ায় আমরা ইউনুস সাহেবকে যথারীতি গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নিলাম।



অধ্যাপক ইউনুসের মতো মহাত্মার মূল্যায়ন উনার জীবদ্দশায় না করাই ভালো। তবে উনি নিজেও জানেন; হিলারীর জন্য কিছু গ্রামীণ মানুষ মার্কিন দুতাবাসে এনে দারিদ্র্য বিমোচনের মিড সামার-নাইটস ড্রিম মঞ্চস্থ করলেও, মাইক্রো ক্রে্ডিট 'চিন্তা'তে মানবিকতার উপস্থিতি আশংকাজনকভাবে কম। সে কারণেই অর্থনীতিতে উনি নোবেল পুরস্কার পাননি। জুরীদের মন্তব্যে স্পষ্ট করে লেখা ছিল ক্ষুদ্র-ঋণসূত্রে সামাজিক বোধ ও মানবিক দায়বদ্ধতার ঘাটতি আছে। পরে উনি উনার জোবরা থেকে সাফল্যের শীর্ষে ওঠার কারণে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। এটি বাংলাদেশীদের জন্য গর্বের বিষয়।



নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর সাধারণতঃ মানুষের পার্থিব চাওয়া-পাওয়া কমে যায়। অধ্যাপক ইউনুস তার সামাজিক ব্যবসার সূত্রে সে কারণেই হয়তো সামাজিক বোধ ও মানবিক দায়বদ্ধতার উপাদান যুক্ত করেছেন। উনাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে বলে মনে হয়না। অমর্ত্য সেনের গ্রোথ উইদ ইকুইটির সামাজিক সুবিচার আকাঙ্খার প্রায়োগিক চেহারা হচ্ছে মুহাম্মদ ইউনুসের সামাজিক ব্যবসাসূত্র। ফলে এই দুই বাঙ্গালী নোবেল বিজয়ীর চিন্তার ঐক্য গোলক অর্থনীতির প্যারাডাইম শিফটে ভূমিকা রাখবে বলে মনে হয়।



কিন্তু অধ্যাপক ইউনুসের ঢাকার নোবেল-খামারের এনজিও দোকানীরা ইউনুসকে কারজাই হিসেবে দেখতে চায়। গণতন্ত্রের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চায়। অবশ্য একে একে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-জাতিসংঘ-বৃটেন-এমেরিকার দেউটি নিভে যাওয়ার পর তারা রীতিমত পুঁ হয়ে গ্যাছে। তবে ব্যাংকে টাকা আছে, গাড়ীশালে প্রাডো আছে, ১৩৭টা দেশের ভিসা লাগানো আছে পাসপোর্টে, লিভিং-রুমে নানা চেহারার মুখোশ ঝুলানো আছে। অসুবিধা নেই ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাওয়া যাবে। তারপর আরেকটি নোবেল পুরস্কারের জন্য ডনবৈঠক। ইয়েস উই ক্যান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৫

নানাভাই বলেছেন: অনেক কষ্ট করচেন।
বুঝাই যায় অনেক উন্নত খোয়ারের আতেল আফনে!

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

মাসকাওয়াথ আহসান বলেছেন: অনেক উন্নত খোয়ারের আতেল আফনে!!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.