![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
President and entrepreneur at Muktijoddhar Itihas Songrokkhon Committee Bangladesh
“মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ”
পরিচিতি
নাম আবুল কাশেম চৌধুরী
পিতার নাম মরহুম সৈয়দ আহাম্মদ চৌধুরী
মাতার নাম মরহুমা মজলীশ খাতুন
স্ত্রীর নাম সাজিয়া বেগম
মোবাইল 01814-215138/ 01682-264846
গ্রাম বড়লিয়া
ইউনিয়ন ৯নং, বড়লিয়া
উপজেলা পটিয়া
জেলা চট্টগ্রাম
বিভাগ চট্টগ্রাম
অন্যান্য তথ্য
মুক্তিবার্তা নং : ০২০২০৪০১৫২
ভারতীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট নং : ২১৫৫৬
বাংলাদেশ গেজেট নং : ৬৩২০/জুলাই২২/২০১৩
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রালয়ের সনদ নং : ৩২৯৭/০৯/০৯/২০০৯
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কি না? :
সন্তানদের নাম ও বয়স
নাম বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা
পালিত কন্যা নাসিমা আক্তার ৩৯ বছর ৮ম শ্রেণী
শামীম আকতার ২৯ বছর বি, এ পাশ
শাহিদা আক্তার ২৬ বছর মাস্টার্সের ছাত্রী
সরোয়ার কামাল চেীধুরী ২৫ বছর মাস্টার্স পরীক্ষা সমাপ্ত
যুদ্ধের ইতিহাস
আমি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ১৯৭১ সালে ঢাকা থেকে ভারতের পথে রওয়ানা হই, ফরিদপুর হয়ে কুষ্টিয়া এবং কুষ্টিয়া সীমানেত্মর ওপারে নদীয়ার মুক্তিযোদ্ধাদের বেতাই ক্যাম্পে যাই। জনাব ডঃ তৌফিক ই এলাহি চৌধুরী বীরবিক্রম, যিনি (মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানী বিষয়ক উপদেষ্টা) এবং জনাব মাহবুব উদ্দিন আহাম্মদ বীর বিক্রম এর (উভয়ে প্রবাসী মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্টান পরিচালনা ও গার্ড অব অর্নার প্রদানকারী) জনাব চৌধুরী ছিলেন মেহের পুরের SDO জনাব মাহবুব ভাই ছিলেন ঝিনাইদহের SDPO) পরে ঢাকা সিটি SP উভয়ের সহযোগীতায় ভারতের বিহার প্রদেশের সিংভুম জেলার চাকুলীয়ায় জুলাই ৭১ প্রশিড়্গণ সমাপ্ত করে আগষ্ট (৭১) মাসে অস্ত্র সমেত ঢাকায় আসি। সেপ্টেম্বর ৭১ নিজ জেলা চট্টগ্রামে আসি, চট্টগ্রাম পটিয়া/আনোয়ারা/বোয়ালখালী রাঙ্গুনীয়া অঞ্চলে যুদ্ধরত (মরহুম) জনাব, করিম গ্রুপের সঙ্গে বন্ধুবর বদিউজ্জম্মানের সহযোগীতায় সম্পৃক্ত হয়ে মুক্তিযুদ্ধে লিপ্ত হই। স্ব-শিক্ষিত, ১৯৮৭ সাল থেকে আজ অবধি নিয়মিত জাতীয় পত্রিকার কলাম লিখছি। আমার লেখার বিষয় বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাজনৈতিক ও সমাজিক বিষয়। ২নং সেক্টরের কমান্ডার জনাব খালেদ মোশারফ এর সাথে দেখা হয়নি এমনকি স্বাধীনতার পরেও না। আমাদের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেছিলেন সহকারী কমান্ডার মেজর হায়দার, প্রয়োজনীয় নির্দেশ তিনিই দিলেন শেষ কথা ছিল প্রয়োজনে যেন নিজের জন্মদাতাকেও ক্ষমা করা যেন না হয়। আমরা সবাই বোধহয় সেই শপথের কথা মনে রাখতে পারিনি। লালবাগের খাজা দেওয়ানের মাহবুব আহমদ শহীদের নেতৃত্বে আমরা ৬ জন ঢাকার পথে বেরহলাম। সাথে আমাদের সহযোদ্ধা শহীদ জনাব আবুল হোসেন, আমির হোসেন, ফজলুল হক আর কয়েকজনের নাম এ মুহুর্তে মনে পড়ছে না মাহবুব সহ আমরা ৬ জন ঢাকা শহরে পৌছলাম। এখানে এসে আমাদের থাকা খাওয়ার সমস্যা দেখা দিল। একে একে সবার ব্যবস্থাই হলো। আমি থাকলাম মাহবুব হোসেন এর ওয়ারীর বাসায়। বর্তমানে তিনি বিএনপি নেতা, খালেদা জিয়ার ইপদেষ্টা। তিনি তাঁর স্ত্রী ও তাঁর ভাই খন্দকার শাহদাত হোসেন দৈনিক ইত্তেফাকের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন, আমাকে অসুস্থতার মাঝে সেবা শশ্রুষা করে ভাল করে তুলেন, অতুলনীয় তাদের দেশপ্রেম যা ভোলার নয়। তারা মুক্তিযোদ্ধাকে আশ্রয় দিয়েছেন থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। ঝুকি নিয়ে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাকে ঔষধ সেবা দিয়েছেন আপজনের মত। ইউছুফ নামে হাজারীবাগের একজন রাজাকারের কার্ড ধারীর চেষ্টায় এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের বাসায় আমার থাকার ব্যবস্থা হয়। তিনি স্বাধীনতার পরে সরকারি এডভোকেটের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, গর্ভনর, ডাক্তার আব্দুল মালেক মল্লিকের মামলা পরিচালনা করেছিলেন সরকারে পক্ষে।বাড়ীর কথা মনে পড়তেই আপন জনদের মুখ- আমার চোখে ভেসে উঠলো। অনেক প্রতিকুলতা সত্বেও গ্রুপ কমান্ডার মাহবুব আহমদের অনুমতি নিয়ে নিজ জেলা চট্টগ্রামের পথে রওনা হলাম। চাঁদপুর হয়ে ট্রেনে ২ দিন এক নাগারে চলার পর রাত ১১ টার পর বাড়ীতে পৌঁছলাম। বাড়ীতে পৌছার পর সেখানে আনন্দের কান্নার রোল পড়ে গেল। মা যেন ফিরে পেলেন তাঁর আকাশের চাঁদ, হারিয়ে যাওয়া মানিককে। সে দৃশ্যের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। যে না দেখেছে সে দৃশ্য তাঁর উপলব্ধিতে আসার কথা নয়। শুধু আবুল হোসেন ১৬ ডিসেম্বর ৭১ ঢাকার বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিতে শহীদ হুন। ঢাকায় ফিরে আসার চেষ্টা করলাম কিন' বিপদ সংকুল রাস্তার কথা ভেবে আর আসা সম্ভব হলো না। সিদ্ধান্ত নিলাম নিজ এলাকায় যুদ্ধ করবো। ক্যাপ্টেন করিমের নেতৃত্বে ৪৫০ জনের অধিক অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের সাথে আমিও যুক্ত হলাম। বিদেশে প্রশিক্ষণ ছাড়া ৪ শতের অধিক মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন করিমের নেতৃত্বে যুদ্ধরত ছিল। যাদেরকে এখানে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। পটিয়া চট্টগ্রামের একটি পাহাড়ী এলাকা। পাহাড়ের পাদদেশে একটি মাদ্রাসা ছিল আমাদের ক্যাম্প। চিরমাই নামক গ্রামের মাদ্রাসায়। এখানে দু-একটি সফল অপারেশনের কথা না বলে পারছি না। একটা বিরাট রাজাকার ক্যাম্প চর্তুদিক ঘিরে রাত প্রায় ১ টার দিকে আক্রমন করা হলো। সেখানে অজস্র গুলি বিনিময় হল। রাজাকারেরা ভেতরে আমরা বাইরে। আমি পড়ে গিয়েছি শত্রুর মাঝখানে একা, আমার গ্রুপ লীডার পিছু হটার নির্দেশ দিলেন, কিন' সে আওয়াজ আমার কানে আসেনি, পিছনে চেয়ে দেখি আমার সাথে আর কেউ নেই। অনেক কষ্টে সেখান থেকে বেরিয়ে আসলাম। সে কথা মনে পড়লে আজও আমার গা শিউরে উঠে। আরেকটি অপারেশনের কথা বলছি। চট্টগ্রাম দক্ষিন অঞ্চলের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন পাওয়ার স্টেশন ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হল ক্যাপ্টেন করিম সাহেব সহ ৭ জনের একটি দল ঘটনা স্থলে গেলাম, রাঙ্গুনীয়া থানার করের হাট নামক স্থানে। কথা ছিল একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দিয়ে অপারেশন করানো হবে। বিশেষজ্ঞ পেশার প্রকৌশলী যথাসময়ে সেখানে আসেননি, ক্যাপ্টেন সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়লেন। আমি বিনয়ের সাথে ক্যাপ্টেন সাহেবকে বললাম, যদি অনুমতি দিন তাহলে আমি অপারেশন আমি করতে পারি, কারণ এ বিষয়ে আমার ভাল প্রশিক্ষণ আছে। তিনি দ্বিধা-দন্দ্বের মধ্যেও আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি নিজেই সেই অপারেশন করলাম এবং সফলও হলাম। করিম সাহেব অত্যান্ত আনন্দিত হলেন। সে সময় থেকে তাঁর সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেল। এর মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। ৩রা ডিসেম্বর ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষণা হয়ে গেল। ঐ দিন ক্যাপ্টেন করিম সাহেব আমাদেরকে ডেকে বললেন আমাকে সেক্টরের প্রধান কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে, তোমরা কাজ করতে থাক আমি এক-দুই দিনের মধ্যেই চলে আসবো, একজন সাথী নিয়ে তিনি বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। ১৩ তারিখ পর্যন্ত- আমরা অপেক্ষা করলাম। আমাদের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস দাঁনা বাঁধতে লাগল এক অজানা আশঙ্কায়। দুর্ভাগ্য এ জাতির। ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে তিনি শাহাদত বরণ করলেন আর আমাদের মাঝে ফিরে আসলেন না করিম সাহেব। এদিকে উপরন্ত কর্মকর্তারা এসে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে গেলেন আমরা নিরস্ত্র হয়ে গেলাম এভাবে ১৫ই ডিসেম্বর ৭১ কোন মতে আবার নিজ বাড়ীতে ফিরে আসলাম। (জনাব আবদুল করিম পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট সার্জেন্ট ছিলেন ১৯৭১ সালে ছুটিতে এসে ছিলেন নিজ বাড়িতে, বিয়ে করে সংসারি হবে। দেশপ্রেমের কারণে বিয়ে করেননি, চাকুরীতেও যায়নি। দেশে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত স্বাধীনতার লালসূর্য ছিনিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর হলেন। জনাব করিম ছিলেন দেশ প্রেমিক তাই মুক্তির জন্য জীবন উৎস্বর্গ করেছেন। । ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হল। একদিকে সন্তান হারা মায়ের বুক ফাঁটা আর্তনাদ, ভাই হারা বোনের কান্না, স্বামী হারা স্ত্রীর করুন আর্তনাদ, সম্ভ্রম হারা বিরাঙ্গনার আহাজারীতে সেদিন আমি বিজয়ীর মত হাসতে পারিনি। আমি নির্বাক হয়ে গিয়েছি এমন এক মর্মান্তিক অবস্থা যা বুঝিয়ে বলা যায় না। আমি কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে পড়লাম। আমি বিজয়ের আনন্দ আজও উপভোগ করতে পারিনি। কেন যেন মনে হয় শহীদের আত্মা আমাকে হাতছানী দিয়ে ডাকছে। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্ত আজ যেন বৃথা, মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ও অবমূল্যায়িত। একশ্রেণী মানুষ আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ, মানুষে মানুষে হানাহানি/অপশাসন ও দুর্নীতি নীতিভ্রষ্ট অনৈতিক কর্মকান্ড মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার নয়। অপশক্তিকে রম্নখতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়তে হবে।
©somewhere in net ltd.