![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
President and entrepreneur at Muktijoddhar Itihas Songrokkhon Committee Bangladesh
“মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস সংরক্ষণ কমিটি বাংলাদেশ”
পরিচিতি
নাম মোঃ নুরুল ইসলাম
পিতার নাম মৃত কলিম উদ্দিন বিশ্বাস
মাতার নাম মৃত সালেহা খাতুন
স্ত্রীর নাম মনোয়ারা ইসলাম
মোবাইল ০১৭১২৫২৫৭৯৪
গ্রাম দফরপুর
ইউনিয়ন আমঝুপি
উপজেলা মেহেরপুর সদর
জেলা মেহেরপুর
বিভাগ খুলনা
অন্যান্য তথ্য
মুক্তিবার্তা নং : ০৪১০০১০৩৬৮
ভারতীয় কল্যাণ ট্রাষ্ট নং : নাই
বাংলাদেশ গেজেট নং : ২৩৫
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রালয়ের সনদ নং : ম-১৩৯৩৫
মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পান কি না? : yes
সন্তানদের নাম ও বয়স
নাম বয়স শিক্ষাগত যোগ্যতা
মোঃ মনিরুল ইসলাম ৩৬ বছর এম,টি,আই,এস
মোঃ মোমিনুল ইসলাম ৩৫ বছর এম,টি,আই,এস
মুকতাদিরুল ইসলাম ২৬ বছর এম,টি,আই,এস
যুদ্ধের ইতিহাস
১৯৭১ সালে আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ২য় বর্ষের ছাত্র ছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের পর আন্দোলন সংগ্রামে দেশ উত্তাল ক্লাশ বর্জন সহ আন্দোলন সংগ্রামের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করি। ২৫ মার্চের ভয়াবহ কালোরাত্রিতে পাক বাহিনী কুষ্টিয়া শহরে ভরে যায়। পুলিশ লাইন, ডিসি কোর্ট ভবন, জেলা স্কুল, সার্কিট হাউজ সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থানে পাক বাহিনী অবস্থান করে। পাকবাহনীর আগমণে শহরের লোকজন বাসাবাড়ি ছেড়ে গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিতে থাকে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে বড় বড় গাছ কেঠে রাস্তার উপর রেখে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। আমি ঐ সময় কুষ্টিয়ার পাশ্ববর্তী গ্রাম জগতিতে অবস্থান করি এবং আমরা যুবকেরা সংঘবদ্ধভাবে জনসংযোগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখি। কুষ্টিয়া শহর পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও অন্যান্য এলাকা থেকে আনসার, মুজাহিদ, মিলিশিয়া, পুলিশ ও ইপিআর বাহিনীন লোকজন কুষ্টিয়া শহরের চারিদিকের গ্রামে একত্রিত হতে থাকে। তাদেরকে মুক্তি ফৌজ নামে অবহিত করা হয়। এমন খবর পেয়ে আমি আমার বন্ধু সহ বারখাদা (ত্রিমোহনী) গ্রামে মুক্তিফৗজের সাথে দেখা করি। আমার এলাকার (মেহেরপুর) পরিচিত কয়েকজনের সাথে দেখা হয়। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে কোন মূহূর্তে সম্ভবতঃ আজ রাতেই পাক হানাদার বাহিনীর উপর আক্রমণ হতে পারে। তাদের কাছে অস্ত্র বলতে রাইফেল আর কয়েক রাউন্ড গুলি রয়েছে এই নিয়েই তাদেরকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে মোকাবিলা করতে হবে। বিকালে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। পথিমধ্যে রাস্তার উপর রাখা বড় একটা গাছ পার হতেই আমার সম্মুখে কয়েকটি আর্মির জীপ গাড়ী এসে থামলে প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। সম্মুখের গাড়ি থেকে ডিসি স্যারকে নামতে দেখে একটু আস্বস্থ হলাম (ডিসি স্যারকে চিনতাম)। ডিসি স্যার নেমেই আমাকে জিঙ্গাসা করলেন শহর থেকে যারা গ্রাম অঞ্চলে গিয়েছে তাদের কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা? আমি সংক্ষেপে হচ্ছেনা বলে জানালাম। ইতোমধ্যে কয়েকজন আর্মি কাছে আসতেই ডিসি স্যার বললেন রাস্তার গাছগুলো সরিয়ে নিতে। আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জ্ঞাপন করায় ডিসি স্যার আর্মিদের নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের দিকে ফিরে গেলেন। আমরা জগতি গ্রামে এসে সকলকে অবহিত করি এবং সতর্কতা অবলম্বন করতে বলি। ঐ রাতেই অর্থাৎ ৩০ মার্চ রাতে মুক্তিফৌজরা আকস্মিকভাবে কুষ্টিয়া শহরের চারিদিক থেকে পাক বাহিনীর উপর হামলা করে। গভীর রাতে গোলাগুলির শব্দ আর লাখো জনতার কন্ঠে “জয়বাংলা” “নারায়ে তাকবীর, আল্লহ আকবর” ধ্বনিতে মুখরিত হতে থাকে। আমরা যুবকরা মুক্তি ফৌজদের জন্য খাবার, ডাব ও পানি সংগ্রহ করে সরবরাহের কাজে নিয়োজিত ছিলাম। সারাদিন এভাবে চলতে থাকে। সন্ধার পর গোলাগুলির শব্দ কমে গেল, রাত্রি নিঃস্তবদ্ধ, কোন শব্দ নেই। পরের দিন সকালে জানা গেল পাক বাহিনী শহর ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা শহরে ঢুকতেই একজন আর্মি ও কুষ্টিয়ার এডিসি (পাঞ্জাবী) এর লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখলাম। কয়েকদিন কুষ্টিয়ায় অবস্থান করে আমার গ্রামে ( বর্তমান মেহেরপুর জেলা ও উপজেলা অন্তর্গত আমঝুপি ইউনিয়নের দফরপুর গ্রাম) চলে আসি। ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথ তলা (মুজিবনগর) আম্রকাননে গনপ্রজাতন্তী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের সংবাদে পাক হানাদার বাহিনী মেহেরপুর অভিমূখে যাত্রার প্রাক্কালে আমঝুপি কোলার মোড়ে ৩৭ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে মেরে ফেলে (এর মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহঃ প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার আমার স্যারও ছিলেন)। পাক হানাদার বাহিনী আমঝুপি বাড়ী বাড়ী তল্লাশী চালায়। সংবাদ পেয়ে আমার বাবা-মা আমদেরকে বাড়ী ছেড়ে ভারতে চলে যেতে বলেন। আমার গ্রামের ২৫/৩০ জন যুবক ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়ে রাত্রিতে ভারতের সীমন্ত গ্রাম ব্রহ্মনগর পৌছায়। ঐ গ্রামের লোকজন আমাদের মুখে পাক হানাদার বাহিনীর লোমহর্ষক কাহিনী শুনে আমাদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থাকার ব্যবস্থা করে। কয়েকদিন থাকার পর আমি আমার বড় ভাই শরিফুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই গিয়াস উদ্দিন ছাড়া সকলেই বাড়ীতে চলে যায়। আমরা তিন ভাই ঐ বিদ্যালয়ে অবস্থান করি। মেহেরপুর মহকুমার মুজিব বাহিনীর (বিএলএফ) কমান্ডার আব্দুল গাফফার কুতুবীর সাথে পরিচয় ঘটে। তিনি আমদেরকে সাথে করে কাগজীপাড়া ক্যাম্প (বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার কাথুলী, কুতুবপুর গ্রামের ভারত সীমান্ত) এ নিয়ে যান। স্থানীয়ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে তার দলভূক্ত করে নেয়। পরবর্তীতে তিনি আমাকে কাগমারী ক্যাম্পের (বাংলাদেশের মেহেরপুর জেলার মুজিনগর থানার অন্তর্গত আনন্দবাস গ্রামের সীমান্ত) দায়িত্ব প্রদান করেন। আমি তার (এজিকুতুবী) নির্দেশনা মেনে চলি এবং তার সাথে থেকে মুক্তিযুদ্ধ চলকালীন সময়ে সকল কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থাকি। ১৯৭১ সালের ৫ ডিসেম্বর আমরা মেহেরপুর শহরে ঢুকে পড়ি, ৬ ডিসেম্বর মেহেরপুর মুক্ত দিবস পালন করি। মেহেরপুর শহরের একটা পরিত্যাক্ত বাড়ীতে ক্যাম্প স্থাপন করে গেরিলা, পুলিশ, সেনাবহিনীর সাথে শন্তি-শৃংখলা ফিরিয়ে আনতে গ্রেনেড, বোমা, ককটেল সরানোর কাজে সকলে সম্পৃক্ত হই। ঢাকা স্টেডিয়ামে অস্ত্র জমা দেওয়ার পর আমি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করি। আমি ১৯৭২ সালে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং (পাওয়ার) পাস করি। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বি,এ,ডি,সি) এ সরকার চাকরিী দেয়। ২০১২ সালে অবসর গ্রহন করি। বর্তমানে সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত থেকে, যুদ্ধকালীন সময়ের আমার কমান্ডার আব্দুল গাফফার কুতুবী এবং অধ্যক্ষ আব্দুল আহাদ চৌধুরী এর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। মোঃ নুরুল ইসলাম।
©somewhere in net ltd.