![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি আসলে একজন বইপোকা। লেখালেখির অভ্যাস কখনওই ছিলনা। কিন্তু একটা বই পড়ার পর সেটার ভাল লাগা মন্দ লাগা মানুষকে জানাতে ইচ্ছে করত। সাহস করে একদিন লিখে ফেলললাম একটা বইয়ের রিভিউ। পাঠকের অনেক প্রসংসাও পেলাম। সেখান থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। কেউ কেউ বলতো, আপনি রিভিউয়ে কাহিনীর এত সুন্দর বর্ণনা করেন ইচ্ছে করে মূল বই থেকে আপনার লেখা রিভিউটাই বার বার পড়ি। এরকম মন্তব্য হয়তো আমার শুভাকাঙ্খিরা আমাকে খুশি করার জন্য করতো। কিন্তু আমি লেখালেখির সাহস পেয়েছি এসব মন্তব্য থেকেই।
শুক্রবারে অফিসে ডেলিগেটর আসবে, তাই বস বলল “আপনি বাড়ি যেতে চাইলে বৃহস্পতিবার যান”। বৃহস্পতিবার ভোরবেলা রওনা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। প্রায় একমাস পর বাড়ি যাচ্ছি। মনের ভিতর একটা অদম্য আনন্দ হচ্ছিল। আমার যাওয়া উপলক্ষে আমার মা আমার পছন্দের সব তরকারি রান্না করলেন একদিনেই। এবং মায়ের অনুরোধে সবগুলো পদ খেতেও হলো আমার। সারাদিন মা বোনের সাথে খুব আনন্দের কাটলো। কিন্তু সন্ধ্যার আগে আগে মনে হলো পেটে একটু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পেটের সমস্যা নিয়ে তো জার্নি করা যাবেনা। চিন্তিত হয়ে পড়লাম খুব। পরদিন অফিসে এটেন্ড করাই লাগবে, নয়তো চাকরি নিয়ে টানাটানি লাগতে পারে। যেতে হলে রাতের মধ্যেই ঢাকা পৌঁছাতে হবে। সকালে রওনা দিলে যেতে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। কি করব ভেবে পাচ্ছিলাম না।
রাত ৮ টার দিকে একটু সুস্থ অনুভব করলাম, এবং সাথে সাথেই ডিশিসান নিলাম, যেভাবেই হোক রাতের মধ্যেই ঢাকায় ফিরবো। বাড়ি থেকে বের হতে হতে সাড়ে আট টা বেজে গেল। সি.এন.জি পেতে পেতে নয়টা। আমার বাড়ি থেকে নরসিংদী শহরে যেতে ৪৫ মিনিটের মত লাগে। পৌঁনে দশটায় শহরে পৌঁছে শুনলাম ঢাকার লাস্ট বাস আট টায় ছেড়ে চলে গেছে। ওখান থেকে ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে তে গিয়ে দাঁড়ালাম, যদি কোনও বাস পাই। কিন্তু টঙ্গীর কোনও বাস নাই, সব যাত্রাবাড়ি সায়দাবাদের বাস। একজন পান দোকানদার বলল, পাঁচদোনা গেলে টঙ্গীর বাস পাবেন। ততক্ষণে হতাশায় মনটা ছেয়ে গেছে। তাও রওনা দিলাম পাঁচদোনার উদ্দেশ্যে। পাঁচদোনা পৌঁছালাম প্রায় এগারোটায়। ওখানেও বাস নাই। শেষ বাস ছেড়ে গেছে ১৫ মিনিট আগে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ভাগ্যকে গালমন্দ করছিলাম। এমন সময় একটা প্রাইভেট কার আমার সামনে এসে থামলো। জানালার কাঁচ নামিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করল, “ভাই কি ঢাকা যাবেন?”
আচমকা এই কথা শুনে আমি আর আগু-পিছু চিন্তা না করেই জানিয়ে দিলাম, “হ্যাঁ ভাই যাবো”। তখন উনি বললেন, “আমার বাসা উত্তরা। এখানে এসেছিলাম “ড্রিম হলিডে” পার্ক এ। সাথে আমার গার্লফ্রেন্ডও ছিল। আসার সময় ওকে নিয়েই এসেছি। ওর বাড়ি এখানেই, বাড়িতে থাকবে কদিন। এখন এত রাতে একা যেতে তেমন একটা সাহস পাচ্ছিনা আমি। শুনেছি এদিকের রাস্তাও তেমন সুবিধার না। আপনি আমার সাথে গেলে আমার অনেক উপকার হয়” । মনে মনে অনেক খুশি হয়েই তার গাড়িতে উঠলাম।
গাড়িতে উঠে বসার পর তারদিকে নজর দিলাম। বয়স আমার থেকে বছর দুয়কের বেশি হবে। চেহারায় আভিজাত্যের ছাপ লক্ষণীয়। হাসি-খুশি প্রানবন্ত। আমার প্রতিটি কথার উত্তরে সে হেসে হেসে জবাব দিচ্ছিলো। ঘোড়াশাল পার হবার পর আমি মোবাইল ফোন বের করে একটু ফেসবুক ব্রাউজ করছিলাম। কিছুক্ষণ পর বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি রাস্তাটা অপরিচিত। ঢাকার রাস্তা আমি ভালকরেই চিনি। কিন্তু এ রাস্তা টা চিনতে পারছিনা। হয়তো রাতের বেলা বলে চেনা রাস্তাই অচেনা লাগছে। আরও কিছু সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করলাম। এবং বুঝতে পারলাম আমরা ভুল রাস্তায় চলেছি। এই প্রথম একটু ভয় ভয় করতে লাগলো আমার। কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য যেইনা লোকটার দিকে ঘুরেছি, সাথে সাথে লোকটা কিজানি একটা স্প্রে করল আমার দিকে তাক করে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
কতক্ষণ অজ্ঞান ছিলাম জানিনা, যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম তখন প্রথমে বুঝতে পারিনি আমি কোথায় আছি। মিনিট দুয়েক পর বুঝতে পারলাম আমার হাত পা বিছানার সাথে বাঁধা। আমার চোখ কোনও কিছু দিয়ে বাঁধা । সেজন্যে বুঝতে পারছিলাম না কোথায় আছি। আরও কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারলাম আমার পুরো মুখ ব্যান্ডেজ করা। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছিনা। নিজেকে খুব অসহায় লাগছে। ডেলিগেটর চুলায় যাক, বাসার জন্য মন খারাপ লাগছে খুব। কদিন ধরে আমি এখানে আছি? আমার স্ত্রী নিশ্চয় আমার খোঁজে পাগল হয়ে গেছে। আমার মা নিশ্চয় বিছানা নিয়েছে। আবার একটু পরেই মনে হচ্ছে, হয়তো বেশি সময় হয়নি আমি এখানে আছি। সেক্ষেত্রে এখনি ওরা কিছু জানার কথা না। প্রায় বিশ মিনিট পর টের পেলাম ঘরে লোক ঢুকেছে। মুখে ব্যান্ডেজ থাকায় শব্দও করতে পারছিনা। আমার বা হাতের শিরায় ইঞ্জেকশন দেয়া হলো। হাত পা বাঁধা থাকায় আমি নড়তেও পারছিলাম না। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এল। মনে হচ্ছিল, যদি সারাজীবন এভাবে ঘুমাতে পারতাম।
আজ প্রায় ২০ দিন যাবত আমি এখানে আছি। এই ২০ দিনে আমি কিছু খাইনি। আমার শরীরে স্যালাইনের মাধ্যমে খাবার দেয়া হচ্ছে। ওরা আমাকে নিয়ে কি করছে আমি বুঝতে পারছিনা। যদি নিজের পরিণতি টা আঁচ করতে পারতাম তাহলে হয়তো দুশ্চিন্তা একটু কমতো। আমার মাথা এখন পুরোপুরি ফাঁকা। নিজের মা, বোন, স্ত্রী, অফিস- এসব নিয়ে আর চিন্তা করছিলাম না। এখন একটাই দুশ্চিন্তা আমার মাথায়, ওরা আসলে কি করতে চাচ্ছে আমাকে নিয়ে?
একুশতম দিনের মাথায় আমার ব্যান্ডেজ খোলা হল। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম। আমার সামনে একজন ডাক্তার মত লোক। সেদিনের সেই লোকটাকে কোথাও দেখলাম না। রুমটা একটা হাসপাতালের কেবিনের মতই লাগছে। বিছানার পাশে আধুনিক সব যন্ত্রপাতি দিয়ে ভর্তি। ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করলাম, আমাকে এখানে বেঁধে রাখা হয়ে কেন? আমাকে নিয়ে কি করা হচ্ছে? ডাক্তার সাহেব আমার প্রশ্ন শুনেও নির্বিকার রইলেন। বুঝতে পারলাম উনি জবাব দিতে নারাজ। কিছুক্ষণ এটা সেটা পরীক্ষা করে তিনি বের হয়ে গেলেন। এবং তার কিছুক্ষণ পরেই একজন মহিলা ট্রেতে করে খাবার নিয়ে আসলেন। মহিলাকে দেখে নার্সই মনে হচ্ছিল।
ব্যান্ডেজ খোলার পর সাতদিন ধরে আছি এখানে। বেডের উপরেই পটের মধ্যে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হতো। একয়দিন আমাকে খাবারের সময় ডান হাত খুলে দেয়া হতো। আমি প্রতিদিন খাবারের ফাকে নার্সের চোখ বাচিয়ে একটু একটু করে আমার বাম হাতের বাঁধন আলগা করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তেমন সুবিধা করতে পারছিলাম না। নার্স যদি কিছু সময়ের জন্য চোখের আড়াল হত তাহলে ভাল হত খুব। আজ হঠাৎ সুযোগটা এসে গেল। অন্যান্য দিন খাবার দেয়ার পর নার্স পাশে বসে মোবাইল টেপাটেপি করত। কিন্ত আজ খাবার দেয়ার পরপরই তার মোবাইলে ফোন আসাতে সে কথা কথা বলতে বলতে অন্যমনস্কভাবে হেটে বাইরে চলে গেল। সাথে সাথে আমি বাম হাতের বাঁধন খোলায় লেগে গেলাম। পনের মিনিটের চেষ্টায় খুলেও ফেললাম। দুইহাত খোলা থাকায় পায়ের বাঁধন খুলতে সময় লাগলো না। প্রায় একমাস শুয়ে থাকার পর আমি যখন দাঁড়ালাম, আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। মনে হচ্ছিল আবার অজ্ঞান হয়ে যাবো। বেডের স্ট্যান্ড ধরে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ধাতস্থ হলাম। গায়ে শক্তি ফিরে পেতেই আস্তে আস্তে দরজা খুকে বাইরে বের হলাম। বাইরে একটা লম্বা করিডর। এক সারিতে আরো কয়েকটা রুম আছে। করিডরটা অন্ধকার। আস্তে আস্তে ছায়ায় ছায়ায় এগিয়ে গেলাম সামনের দিকে। প্রথম যে রুমটা পড়ল সামনে, সেটার ভিতরে অন্ধকার। পরের রুমে আলো জ্বলছে। দরজায় লাগানো কাচের ভিতর দিয়ে বাইরে আলো আসছে কিছুটা। আবছাভাবে উকি দিয়ে দেখলাম ভিতরে। একটা লোক শুয়ে আছে বিছানায়। চেহারা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছেনা, তবে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সারাজীবনে অনেকবার দেখেছি এই চেহারা। যাইহোক, সেটা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সামনের দিকে এগোতে লাগলাম। সামনে একটা কলাপসিবল গেট, খোলা। গেট পার হয়ে একটা ফাঁকা জায়গায় আসলাম। এখান থেকে বাম দিকে একটা আর সোজা আরেকটা করিডর চলে গেছে। এবং খেয়াল করে বুঝলাম, আমি যে করিডর থেকে বের হলাম সেটা আর এ দুটা একই দৈর্ঘ্যের। ডান দিকে বড়সড় একটা দরজা দেখা যাচ্ছে। দরজার পাশেই একটা ইনফর্মেশন ডেস্ক এর মত, এই মুহূর্তে খালি। দরজা খুলে চুপিচুপি বাইরে আসলাম। বাইরে বের হয়ে দেখলাম বাড়িটা চারতলা। চারপাশে উচু পাঁচিলের দেয়াল। মেইন গেটে তালা নেই আপাতত। একটু অবাক হলাম মনে মনে। বাইরে কোনও সিকিউরিটি নাই কেন? মনে দ্বিধা নিয়ে গেট দিয়ে বের হয়ে হাটতে লাগলাম। প্রায় বিশ মিনিট হাটার পরে বড় রাস্তাউ উঠলাম। রাত প্রায় এগারোটা। সামনে কিছু দোকানপাট দেখে এগিয়ে গেলাম। কিছু না চাইতেই দোকানদার ভয়ে ভয়ে আমার দিকে সিগারেটের প্যাকেট বাড়িয়ে দিল। এতকিছু চিন্তা না করে প্যাকেট টা হাতে নিলাম। এই মুহূর্তে নিকোটিন দরকার। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানছিলাম, আর ভাবছিলাম কি হল এ কদিন।
সিগারেট শেষ হওয়ার আগেই একটা পুলিশ ভ্যান এসে থামল আমার সামনে। সাথে সাথে দশ বারোজন পুলিশসহ একজন অফিসার নামলেন। এবং আমি কিছু বোঝার আগেই আমার হাতে হাতকড়া পড়িয়ে দিলেন। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় ঠিকভাবে চিন্তা করতে পারছিলাম না। আমাকে ভ্যানে তুলে তারা রওনা দিল। আমি বারবার জিজ্ঞেস করেও কোনও উত্তর পেলামনা, কেনো আমাকে এরেস্ট করা হল। রাতটা রমনা থানায় কাটালাম। পরদিন সকালে বেশকিছু সাংবাদিক এসে আমার ছবি তুলতে লাগল। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। সাংবাদিক রা চলে যাওয়ার পর একটা স্টিলের থালাইয় করে আমাকে খাবার দেয়া হল। চুপচাপ খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষে থালায় তাকিয়ে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে চমকে উঠলাম। ভাল করে থালাটা সামনে এনে নিজের চেহারা দেখলাম। থালার ওপাশ থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ঢাকা শহরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী ক্ষুর মাশুক। বিভিন্ন মামলার রায়ে ওর ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েছিল, সেই মুহূর্তে পালিয়েছিল মাশুক।
এখন সবকিছু পরিষ্কার হয়ে গেল আমার কাছে। আমার আর মাশুকের স্বাস্থ্য প্রায় একই রকম, দুজনের উচ্চতাও এক। তাই আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে প্লাস্টিক সার্জারি করে ওর চেহারা দিয়েছে আমাকে। এখন বুঝতে পারছি, কেন আমি পালাতে পেরেছি ওখান থেকে। কারন আমাকে পালাতে দেয়া হয়েছিল। পালানোর সময় যে লোকটার চেহারা দেখে খুব পরিচিত মনে হয়েছিল, সেটা আমারই চেহারা।
২| ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২২
মাসুম আহমেদ আদি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।
৩| ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:০০
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৪
মাসুম আহমেদ আদি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই
৪| ৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৮
চাঁদগাাজী বলেছেন:
বকবক চকচক। আপনি ব্লগার হতে পারবেন না। আপনি আফগানিস্তান চলে যাবেন।
০১ লা জুন, ২০১৬ সকাল ১০:১৪
মাসুম আহমেদ আদি বলেছেন: ব্লগারের সংজ্ঞাটা বলেন ভাই। জেনে ধন্য হই।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:০৮
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: ভাল লেগেছে তবে কি যেন একটা মিসিং মনে হচ্ছে।মনে হয় বর্ননাতে ।
লিখতে থাকুন শুভ কামনা রইল