![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আইনের ছাত্র হিসেবে,সময় সময় কোর্ট ম্যারেজ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন এর সম্মুখীন হয়েছি কিছু ঘটনাও জেনেছি।বাস্তবে, নিউজে এবং আর্টিকেল পাঠের ম্যাধমে কোর্ট ম্যারেজ ও এটার অপব্যাবহারের ম্যাধমে প্রতারণা ও ভোগান্তি সমন্ধে যা জেনেছি তাতে মনে হয়েছে এই কোর্ট ম্যারেজ ধারনাটা এবং এটার ব্যবহার, অপব্যবহার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা থাকা উচিত, সবারই।
ডিটেইলস প্রকাশ না করে একটি সত্য ঘটনার সামান্য জানিয়েই শুরু করি.....
প্রেমে সিক্ত এক যুগল ভালবাসাকে পূর্নতা প্রদানের লক্ষ্যে সিদ্ধান্ত নিল যে তারা পরিবারের ও স্বজনদের অগোচরেই কোর্ট ম্যারেজ করে রাখবে।ছেলেটি নোটারি পাবলিকের কাছ হতে কাগজ সম্পন্ন করে নিয়ে আসলো, মেয়েকে স্বাক্ষর দিতে বলল,স্বাক্ষর দিল আর তখন হতে ভেবে বসে থাকল যে,বিয়ে কমপ্লিট। কিছুদিন পর,সম্পর্কের ভাটা পড়লো,'' ছেড়ে দে মা কেদে বাচি ''অবস্থা।সিধান্ত নিল কাগজটাই নস্ট করে দিই ঝামেলা শেষ।যদিও শেষ পযন্ত গড়ায় নি এখনো,কিন্তু যদি সেটাই করে তাহলে ওই মেয়েটির যে অধিকার তা হতে বঞ্চিত হবে। কারন,বিয়ে প্রমানের কাবিন নেই।প্রশ্ন হচ্ছে,কোর্ট ম্যারিজ কি?আদৌ এই ভাবে বিয়ে হয়? কাগজের মুল্য কতটুকু? ছেলে বা মেয়ের অধিকার বা ব্যাধবাধকতা কতটুকু জন্মায়??
মূলত,কোর্ট ম্যারিজ বলে কিছু নাই।কাবিন রেজিষ্ট্রীর পরিবর্তে কোর্টম্যারেজ অধিকতর শক্তিশালী-এ ভুল ধারণার ফাঁদে পড়ে, অনেক নারী তাদের দাম্পত্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইনের ছদ্মাবরণে একশ্রেণীর নোটারী পাবলিক এ অবৈধ কাজে সহায়তা করে চলেছেন। অথচ বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘কোর্ট ম্যারেজের কোন বৈধতা নেই, এমনকি এর কোন অস্তিত্বও নেই।
৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা ১৫০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিষ্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে(অনেক সময় দু পক্ষকে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না) হলফনামা করাকে কোর্ট ম্যারেজ বলে অভিহিত করা হয়। অথচ এফিডেভিট বা হলফনামা শুধুই একটি ঘোষণাপত্র যে,আমরা সাবালক, সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হচ্ছি।এর কোন কাবিনমুল্য নেই।যদি না কাজি দ্বারা বিয়ে রেজিট্রি হয়।
ভালবাসার বিবাহকে অধিক শক্তিশালী করার ভুল মোহে পড়ে,শুধু হলফনামা দিয়েই,কাবিন রেজিষ্ট্রী না করেই অনেকে বিয়ে সম্পন্ন করছেন। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিষ্ট্রী ও আকদ সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য এফিডেভিট করা যাবে। কিন্তু এ নিয়ম মানা হয় না। টাকায় বাঘের চোখ পাওয়া যায় তা সবাই জানি।মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ বিধি ১৯৭৫ এর ১৯(৩) ধারা অনুযায়ী ‘নিকাহ রেজিষ্ট্রার ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি বিবাহ করান তাহলে সেই ব্যক্তি ১৫ দিনের মধ্যে ওই নিকাহ রেজিষ্ট্রারের নিকট অবহিত করবেন, যার এলাকায় উক্ত বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে’।.......
বিবাহ যেভাবেই হোক রেজিট্রেশন ব্যাধ্যতামুলক।মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ আইন ১৯৭৪-এর ধারা ৫(২) অনুযায়ী বিবাহ রেজিষ্ট্রশন না করার শাস্তি সর্বোচ্চ (তিন) মাসের কারাদন্ড কিংবা পাঁচশত টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে। বিয়ে রেজিষ্ট্রী না করে শুধুমাত্র হলফনামায় ঘোষণা দিয়ে ঘর-সংসার প্রবণতা অমাদের দেশে ক্রমেই বাড়ছে। অথচ এর কোন বৈধতা নেই।....
আবেগের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে, সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক তরুণ তরুণীর ভুল ধারণা হয় যে, শুধুমাত্র এফিডেভিট করে বিয়ে করলে বন্ধন শক্ত হয়। কাজী অফিসে বিয়ের জন্য বিরাট অঙ্কের ফিস দিতে হয় বলে কোর্ট ম্যারেজকে অধিকতর ভাল মনে করে তারা।
অনেকে আবার মনে করে,কাগজ করে নিয়ে এসে রুমেই সই নিয়ে বিয়ে করা গেলে বেশি গোপনীয়তা রক্ষা হচ্ছে,পরিবার বা আশেপাশের কেউ আপাতত কোনভাবেই জানছে না।....
অনেকে এফিডেবিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে একাধিক বিয়ের কথা গোপন করার জন্য।
আবার, কোন মেয়ের অভিভাবককে জিম্মি করে টাকা আদায় কিংবা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্যও অনেক সময় এফিডেভিটের মাধ্যমে ভূয়া বিয়ের দলিল তৈরি করা হয়।
অনেক সময়,প্রতারক ছেলে অজ্ঞ মেয়েকে বিয়ের মুখোশে লুট করে সতীত্ব।...
এ দলিল তৈরি করা খুব সহজেই সম্ভব এবং এসব ক্ষেত্রে হলফনামা প্রার্থীকে নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না। এর ফলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে। জন্ম নিবন্ধন কার্ডের বয়সের ঘরে ফেক কাগজ দিয়ে কপি করে নতুন কার্ড তৈরি করে বয়স পুর্ন করা হয়।...
এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থেকে রক্ষার জন্য আসামী পক্ষের এরকম হলফনামা তেরীর প্রবণতা দেখা যায়।....
অনেক সময় ফেক কাজির কাছে বিয়ে পড়ানো হয়।লাইসেন্স বিহীন কাজীর নিকট বিয়ে রেজিষ্ট্রী করলে এর কোন আইনত মূল্য নেই। কাজীর কাছে গিয়ে কাবিন না করলে দু’পক্ষই ক্ষতিগ্রস্থ হয়। কাবিননামা না থাকায় নারীরা তাদের মোহরানাও পায়না। কাবিননামার বদলে কোর্ট ম্যারেজের বিয়েতে ছেলেরা একটা সুযোগ খুঁজে। জোর করে দস্তখত নিয়ে এফিডেভিট করেছে মেয়ে পক্ষ এই অজুহাত অনেক সময় দাঁড় করে ছেলে পক্ষ।
কোর্ট ম্যারেজ যেহুতু স্বেচ্ছায় বিয়ে করছি এর হলফনামা তাই এর অন্য কোন আইনগত মুল্য নাই।তাই,কাবিননামা না থাকায়,বিয়ে প্রমান করতে সমস্যা হয়।খোরপোশ আদায়,দ্যাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার, দেনমোহর আদায়ের মামলায় এটা কোন কাজে আসে না।কারন এটা বিয়ের প্রমানপত্র নয়।তাই মেয়েরা বঞ্চিত হয়।
আইনানুযায়ী বিয়ের আসরেই বিয়ে রেজিষ্ট্রি করতে হয়। বিয়ের আসরে সম্ভব না হলে বিয়ে অনুষ্ঠানের দিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করতে হয়। কাজীকে বাড়িতে ডেকে এনে অথবা কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিষ্ট্রী করা যায়।আর রেজিস্ট্রির পরই হলফনামা করতে হয়।কিন্তু,যেখানে মেয়েটি অজ্ঞ (উপরে বর্নিত ঘটনার মেয়ের মত) সেক্ষেত্রে অনেক সময় চালাক ছেলেটি সরলতার সুযোগ নিয়ে বিয়ে না করেই,রেজিস্ট্রি না করেই, শুধু কোর্ট ম্যারেজের নাম দিয়ে টাকার বিনিময়ে অসাধু নোটারি পাবলিক এর কাছ হতে কাগজ করে নিয়ে এসে সই নিয়ে বিয়ের নাটক সাজিয়ে মেয়েকে ফাঁকি দিতে পারে।এমতাবস্থায়, হলফনামাটি নস্ট করে দিলেই সেই সরল মেয়েটির কিছু করার থাকে না কারন,যেখানে শুধু ওরা দুজন ছাড়া আর কেউই জানে না।তাই বিয়ে প্রমান করা সম্ভব হয় না।তাই,মেয়েদের এটা সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
কোর্ট ম্যারেজের বিয়েতে উৎসাহদানকারী নোটারি পাবলিকদের চিহ্নিত করে শাস্তির বিধান করতে হবে। আইন করে কোর্ট ম্যারেজের বিয়ে বন্ধ করা সময়ের দাবী।এবং এ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা উচিত আমাদের সকলের।
©somewhere in net ltd.