বই না, বউ চাই

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:০৪

অসময়ে মোবাইল ফোনটা করুণ সুরে বেজে উঠল। ছুটির দিন বলে বিছানায় শুয়ে ঝিমুচ্ছিলাম, তখনই মোবাইল বেজে উঠল। রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে বন্ধু আঁতেল মিলনের চিৎকার শুনতে পেলাম। ‘দোস্ত তুমি কই আছো? আমি বইমেলায় আছি, তুমি আসবা?’ ‘না দোস্ত বইমেলায় যাব না।’ আমার কথা শোনার পরে মিলন আমারে ক্ষেপে গিয়ে যে কথা বলল তা ছাপার অক্ষরে দেখার কোন সুযোগ পাঠকের রইল না। তারপর একটু শান্ত হয়ে বলল, ‘তোমারে একটা বই গিফট্ দিতে চাই, কোন রাইটারের বই আনবো কও?’ ‘দোস্ত বই লাগবো না, তুমি পারলে আমার জন্য একটা বউ নিয়া আইসো।’ এবারো মিলন আমাকে যে রগরগে সংলাপ বলেছে তা আমি ছাড়া আর কারো শোনার সৌভাগ্য হলো না। ইস্ যদি মিলনের রসরসে কথাটা চিৎকার করে বলা যেত থুক্কু এখানে লিখে দেয়া যেত, কতই মজা হত! তার চেয়ে যে শুনতে চায়, সে যেন আমার কাছ থেকে কানে-মুখে শুনে নেয়।

শেষে মিলন বলল, ‘দোস্ত তোমার বিষয়টা আমি দেখতাছি। তোমার বাপে এহন কই আছে কও? সামনে যেন কী মাস, ফাল্গুন না? ফাল্গুনই তো, এই মাসেই কামডা করাইয়া দিমুনে বুঝছো?’ শেষে মিলনকে শান্ত করতেই বলি, দোস্ত তোমাকে ক্ষেপানোর জন্যই বইয়ের বদলে বউয়ের কথা বলছি। তুমি তো তা বুঝলা না। তুমি আমার জন্য একটা বই কিনে আনতে পারো, বইটার নাম ‘বাসর রাইতে বিড়াল মারো’ আর লেখকের নাম হচ্ছে..., দোস্তরে এখন নামটা মনে পড়ছে না। তুমি খুঁজে দেখলেই পাবে।’ ‘দোস্ত তুমি এহন এমুন শুদ্ধ কইরা কথা বলতাছো ক্যান? তুমি যে বই আনতে বললা, তাও তো বিয়া নিয়াই। আর এই নামে কী সত্যি কোন বই মেলায় আছে? ঠিক আছে খুঁইজা দেহি পাই কিনা।’ অবাক হয়ে কথাগুলো বলল মিলন। আসলে ওকে শান্ত করতেই ওর সাখে এমন করে কথা বলি। শেষে মিলনকে বিদায় জানিয়ে মোবাইলের পাওয়ার অফ বাটন চেপে বালিশে মুখ গুজে উপুর হয়ে পড়ে রইলাম।

সন্ধ্যার দিকে মোবাইলটা ভুলক্রমেই অন করে ফেললাম। মেসেজের টোন বেজে উঠল। হুম গোপনে জানিয়ে দেই, মেসেজ পড়তে কিন্তু আমার ভালই লাগে। আকুল হয়েই মেসেজ পড়ছি...‘এই কাইল্যা ভুত তোর মোবাইল অফ কেন? তুই এখন কার হাত ধরে হাঁটছিস বল? তোরে যদি সামনে পাইতামরে কাইল্যা চাঁন...(শেষটুকু মনে মনে পড়ছি যাতে আর কেউ শুনতে না পারে)। সোনা পাখিটার মানভঞ্জন কোন তরিকায় করতে হয় তাতো এতোদিনে শিখে নিয়েছি। ফোন ধর সোনা পাখি, রিং হচ্ছে কিন্তু এতো দেরি রিসিভ করতে? এতোক্ষনে মহারানীর কন্ঠে হ্যালো শুনতে পেলাম, ‘কীরে হারামি কী বলবি?’ পাখিটা জানে না ওর মুখে হারামি ডাকটা শুনেও বুকের ভিতর দক্ষিনা বাতাস একশ মাইল বেগে বয়ে যায়। ভালোলাগা চেপে গিয়ে বলি, ‘হ্যালো সোনা বউ থুক্কু পাখি, তুমি ফোন রেখে কী ইয়ে ঘরে ছিলা?’ ‘তোর মায়ের কাছে গেছিলাম, বিচার দিতে।’ ‘ভালো করেছো। আমারে খুঁজতেছিলা ক্যান?’ ‘তোর যেন কোন বইটা নেই বলছিলি, বইমেলা থেকে কিনবো ভাবছি, তুই কী কাল যাবি আমার সাথে?’ ওর কথা শুনে মনে মনে বলি, বউয়ের সাথে বইমেলায় যেতে কার না মন চায়? কথাটা না বলে, বলি, ‘এই শোনো আমার না কোন বই লাগবে না, একটা বউ লাগবে। তুমি কী আমারে একটা বউ এনে দিতে পারবা?’ আমার কথা শুনে মিলনের সমপর্যায়ের হাফ একটা বানী দিল মেয়েটা। শেষে বলল, ‘তোর মত কাইল্যার বউ কে হবে রে?’ কথার সূত্র ধরে বীরপুরুষের মত বলে ফেলি কথাটা, যদিও একটু মায়া মায়া ছিল বলাটায়, ‘তুমি কী আমার লাল টুকটুকে বউ হবা?’ হ্যালো হ্যালো করে যাচ্ছি অপরপ্রান্ত থেকে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু শোঁ শোঁ শব্দ আসছে। হয়তো নাগিনী ফোস ফোস করছে। আমাকে দংশন করার জন্য। বেঁচে গেলাম এ যাত্রায় নাগিনীর হাতের কাছে নেই বলে।

কাল সন্ধ্যায় ফোনে আর হ্যালো হ্যালো করার সাহস হল না। যদি কানের কাছেই ছোবল মেরে বসে। তাই লাইন কেটে দিয়ে খুশি মনে হেঁটে হেঁটে বাসা ছেড়ে অনেকটা পথ চলে এসেছিলাম। যাক শেষ পর্যন্ত তো পাগলীটাকে বলতে পেরেছি। বই না, বউ চাই। এদিকে বাপজান লিষ্ট ধরিয়ে দিয়েছে প্রিয় কিছু বই কিনে আনতে বইমেলা থেকে। তখন বাপকে বলতে ইচ্ছে হয়েছিল, তারচেয়ে বউ কিনে আনা যায় না বাবা? আজ একটু পরে সুমনার (চেনেন তো সুমনাকে?) সাথে দেখা হবে। জানি না কী আছে বরাতে? মাথা নিচু করে সামনে এসে দাঁড়াল সুমনা। বুকে বই জড়িয়ে ধরে আছে। আমি বই না এমনি করে বউকে জড়িয়ে ধরতে চাই। মুখ খুলল সুমনা, ‘চল আমার সাথে বইমেলায় যাবি। বই কিনব কিছু।’ কোনকিছু না জানতে চেয়ে স্বল্পস্বরে বলি, ‘চলেছি বউয়ের সাথে বইমেলায়...।’ ‘চুপ করে থাক কাইল্যা...।’ কথাটা সুমনা ছাড়া আমাকে আর কেউ বলে না। বাধ্য স্বামীর মত বউয়ের পিছু পিছু চলছি এবারের ফাগুনের হাওয়ায় ভেসে প্রিয় বইমেলায়।

৯ টি +১/-০