![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যক মানুষের জীবনে কাউকে না কাউকে ভালবাসা প্রয়োজন। এম ডি আরিফ
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আলহামদুলিল্লাহ, নাহমাদুহু ওয়া নুসাল্লি ‘আলা রাসূলিহিল কারিম।
আমাদের দেশে মুসলিম মাত্রই প্রায় সকলেই এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন যে কবরে মৃত ব্যক্তিকে তিনটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হবে। প্রশ্ন তিনটি হচ্ছেঃ তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি? এযে ইনি! তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তাঁর পরিচয় কি? এর প্রশ্নগুলোর উত্তরও আমাদের কমবেশী সবার জানা। এ সম্পর্কিত হাদীসটি উল্লেখ করছি তাহলে বিষয়টি বুঝতে সুবিধা হবেঃ
বারা বিন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে একটি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছি ... এতে আছে... নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: এবং তার নিকট দু’জন ফেরেশতা আসবে, তারা তাকে বসিয়ে বলবে: তোমার রব কে? সে বলবে আমার রব, ‘আল্লাহ’। তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন হচ্ছে ‘ইসলাম’। তারা বলবে: এযে ইনি! তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তাঁর পরিচয় কি? সে বলবে: ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। (মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদ, শায়খ আলবানী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
প্রশ্নগুলো পরীক্ষার পূর্বেই সকলকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে সেই সাথে উত্তরগুলোও সবার জানা। ব্যক্তিমাত্র যতই এই প্রশ্নগুলো মুখস্থ করুক না কেন তার মাঝে যদি বিষয়গুলো অনুপস্থিত থাকে তাহলে সে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে না। বিষয়গুলো কি কি? সেই বিষয়েই সংক্ষিপ্ত আকারে কিছুটা পর্যালোচনা করব। ইনশাল্লাহ, বিষয়টি আমাদের বোধগম্য হবে।
প্রথম প্রশ্নঃ তোমার রব কে? সে বলবে আমার রব, ‘আল্লাহ’।
এখানে ‘রব’ বলতে শুধু কর্তৃত্ব, সৃষ্টিকর্তা বুঝায় না বরং ‘রব’ বলতে এখানে বুঝাচ্ছে ‘উলুহিয়াত’ অর্থাৎ দুনিয়াতে কোন ‘রবে’র ইবাদত তুমি করে এসেছ? কারণ, মক্কার মুশরিকরাও আল্লাহ তা‘আলাকে ‘রব’ হিসেবে মানত। মক্কার মুশরিকদের যদি জিজ্ঞাসা করা হত, বলতো, তোমাদের কে সৃষ্টি করেছেন? এই আকাশ-জমিন কে সৃষ্টি করেছেন? আশ্রয় দেয়ার মালিক কে? কার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব? এই প্রশ্নগুলোর জবাবে তারা বলতো, আল্লাহ।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قُلْ لِمَنِ الأرْضُ وَمَنْ فِيهَا إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (٨٤)سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلا تَذَكَّرُونَ (٨٥)قُلْ مَنْ رَبُّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ (٨٦)سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ أَفَلا تَتَّقُونَ (٨٧)قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (٨٨)سَيَقُولُونَ لِلَّهِ قُلْ فَأَنَّى تُسْحَرُونَ (٨٩)
অর্থঃ বল, ‘তোমরা যদি জান তবে বল, ‘এ যমীন ও এতে যারা আছে তারা কার?’ অচিরেই তারা বলবে, ‘আল্লাহর । বল, ‘তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ বল, ‘কে সাত আসমানের রব এবং মহা আরশের রব’? তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করবে না?’ বল, ‘তিনি কে যার হাতে সকল কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর ওপর কোন আশ্রয়দাতা নেই?’ যদি তোমরা জান। তারা বলবে, ‘আল্লাহ।’ বল, ‘তবুও কীভাবে তোমরা মোহাচ্ছন্ন হয়ে আছ?’ (সূরা মুমিনূনঃ ৮৪-৮৯)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالأرْضَ لَيَقُولُنَّ خَلَقَهُنَّ الْعَزِيزُ الْعَلِيمُ (٩)
অর্থঃ আর তুমি যদি জিজ্ঞাসা কর, আসমানসমূহ ও যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, মহাপরাক্রমশালী সর্বজ্ঞই কেবল এগুলো সৃষ্টি করেছেন। (সূরা যুখরফঃ ৯)
কাজেই, আমাদের মাঝেও যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ‘রব’ হিসেবে মেনে নিচ্ছে কিন্তু ইবাদত করছে অন্য কারো তাহলে সেই ব্যক্তি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না! যারা মৃত ব্যক্তির নিকট দোয়া করে, মাজারে যেয়ে তার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে, কারণ ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত’ (আবু দাউদ, তিরমিযি, ইবনে মাজাহ) আর যাবতীয় ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যেই ‘খাছ’ করতে হবে। যারা তা করবে না তারা এই প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না চাই সে দুনিয়াতে এই প্রশ্ন যতই মুখস্ত করে রাখুক।
দ্বিতীয় প্রশ্নঃ তারা বলবে: তোমার দ্বীন কি? সে বলবে: আমার দ্বীন হচ্ছে ‘ইসলাম’।
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ঐ সকল ব্যক্তিরা ব্যর্থ হয়ে যাবে যারা ইসলামকে নিজের ‘দ্বীন’ তথা ‘জীবন ব্যবস্থা’ হিসেবে গ্রহণ করেনি। উদাহরণ স্বরুপঃ যারা শাসন ব্যবস্থায় অধিষ্ঠিত হয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন চালায় না, তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। যে সকল নারী পর্দা করেন না বরং হিন্দি কিংবা ওয়েস্টার্ন স্টাইলে চলাফেরা করছেন তারাও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবেন। যারা সুদী ব্যবস্থাকে উত্তম মনে করেন এবং সুদকে আরো বিস্তার করার জন্যে সহযোগিতা করেন তারাও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে যাবেন।
তৃতীয় প্রশ্নঃ তারা বলবে: এযে ইনি! তোমাদের নিকট পাঠানো হয়েছিল, তাঁর পরিচয় কি? সে বলবে: ইনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্মপন্থা অনুসরণ করবে না বরং ভিন্ন পন্থা, নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতীতে ইবাদত করবে তারাও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে যাবে। উদাহরণ স্বরুপঃ যারা হিন্দু মুনী ঋষি কিংবা গৌতম বুদ্ধের জীবনাচরণ অনুসরণ তথা ধ্যানের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করার চেষ্টা করছে যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ তথা কর্মপদ্ধতীর বিপরীত তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে যাবে। যারা শবে বরাত, শবে মেরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবী, মিলাদ তথা বিভিন্ন বিদআতকে অত্যাবশ্যকীয়ভাবে মেনে নিচ্ছে, হকের দলীল সামনে উপস্থাপিত করার পরে তা অস্বীকার করছে তারাও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ “তোমাদের মাঝে কেউ ঐ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তার প্রবৃত্তি আমি যা নিয়ে এসেছি তার অনুসারী না হবে।” ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
লক্ষ্যণীয় বিষয়, এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘প্রবৃত্তি’র কথা উল্লেখ করেছেন কারণ মানুষের ‘প্রবৃত্তিই তাকে বাধা দেয় হকের পন্থা অনুসরণ করতে। সে তখন বলে বেড়ায়, আমি মনে করি ইসলামে এই বিষয়টা বৈধ..., আমি মনে করি ইসলামে ঐটা করলে সমস্যা নেই..., আবার বলে, আমার বাপ-দাদাদের তো কখনও এরুপ করতে দেখি নাই কিংবা অমুক হুজুর অমুক আলেম এত বড় পণ্ডিত তিনি কি হাদীস কম বুঝেন ইত্যাদি বিষয় সামনে উপস্থান করে ‘প্রবৃত্তি’ তাকে বাধা দেয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহীহ সুন্নাহ অনুসরণ করতে! যারা সহীহ সুন্নাহ ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দিয়ে যা মানত তাই নিয়ে পরে থাকবে তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে যাবে।
এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার সারমর্ম হচ্ছে, ‘রব’ আল্লাহ তা‘আলাকে শুধুমাত্র ইবাদতের জন্যে ‘খাছ’ করে নেয়া, ইসলাম কে নিজের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এই দুইটি বিষয় বাস্তবয়ন করতে যেয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহীহ সুন্নাহ তথা কর্মপদ্ধতীর কোন প্রকার দিধা-দ্বন্দ ছাড়াই অনুসরণ করা।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতা‘আলা আমাদের হক কথা বুঝার তৌফিক দান করুন এবং হকের দাওয়াত সামনে উপস্থাপিত হওয়ার পরও যেন আমরা তা থেকে পিছপা না হই সে বিষয়েও আল্লাহ তা‘আলার নিকট সাহায্য চাইছি। আমীন।
©somewhere in net ltd.