নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘাতকের হয়না বিচার

২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:৩৯

ঘাতকের হয়না বিচার
===== মোঃ খুরশীদ আলম

সড়ক দুর্ঘটায় প্রতিবছর এমনকি প্রতিদিন কতজন লোক মারা যায় বা হতাহত হয় তার কোন নির্দিষ্ট পরিসংখ্যান আমাদের নেই। কেননা, প্রতিটি ঘটনা মিডিয়াতে আসেনা, প্রতিটি ঘটনার পুলিশ কেইস হয়না বরং বেশির ভাগ ঘটনাই শ্রেনী বিশেষের মধ্যস্থতায় ধামাচাপা পড়ে যায়। তথাকথিত এই মধ্যস্থতারকারীদের ভাষায় একে বলা হয় আপোষ মিমাংসা বা দফারফা।
চট্টগ্রাম শহরে যারা সিটি বাসে চড়ে অভ্যস্থ বা লোকাল পরিবহনে যাতায়াতে অভ্যস্থ তারা জানেন এখানকার বাস চালক ও হেলপারদের চরিত্র সম্পর্কে। যাত্রীদের যত্রতত্র উঠানামা করা এদের কাছে অন্যায় মনে হয়না, কখনোই। যাত্রীদের উঠানোর সময় আদর করে উঠায় আর নামানোর সময় ধাক্কা দিয়ে নামাতে এরা কখনো কুন্ঠাবোধ করেনা। আবার, আমরা যাত্রীরাও খুব হায়ামায়াহীন । উঠার সময় যেকোন জায়গা হতে উঠি কিন্তু নামার সময় স্টপিজে নয় বরং নিজের খেয়াল খুশীমত জায়গায় নামাতে ওদের বাধ্য করি।
প্রতিদিন বাসের হেলপারের সাথে ভাড়া নিয়ে কথা কাটাকাটি বা ঝগড়া করেন এমন অনেক ভদ্র লোককে দেখা যায়। মাত্র এক টাকা ভাংতির জন্য কখনো হেলপারকে যাত্রী আবার কখনো যাত্রীকে হেলপার হাতাহাতি বা মারামারির ঘটনাও ঘটে থাকে। অন্যান্য যাত্রীরা সেটা দেখে বিনোদন অনুভব করে।
গাড়িতে উঠামাত্র অনেক যাত্রী মন্তব্য করেন “ ওডা চল, বউত অইয়্যে” ( হ্যা চল, অনেক যাত্রী হয়েছে), “সামনের তুন লইচ “ ( সামনে থেকে যাত্রী নিও) ইত্যাদি মন্তব্য করে মাথা খায়। কোন কোন যাত্রীর আচরনে মনে হয় যেন এটা তার প্রাইভেট গাড়ী। বললেই ড্রাইভার চলবে।
যা হোক, আলোচনা ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। ড্রাইভার-হেলপার-যাত্রীদের আচরণ আপাতত এখানেই ক্ষান্ত দিলাম।
যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাই সেটা হল সড়ক দুর্ঘটনা; সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা নিরবে বৃদ্ধি পাচ্ছে । সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের পরেও এর কোন কমতি নেই কোন অংশে। এর পিছনে আমরা, আমাদের আচরণ বিধি, আমাদের নিরব ভূমিকা ও মানসিকতাকেই আমি দায়ী মনে করি।
আমাদের মানসিকতার ধরন সম্পর্কে একটা বাস্তব ঘটনা দিয়ে উদাহরণ দিতে চাই । আজ থেকে প্রায় চার বছর আগের ঘটনা। কর্মস্থল হতে ফিরছিলাম। বিআরটিসি ফলমন্ডির ঠিক সামনে একটি বাস ও ভ্যানগাড়ির চালকের মধ্যে কথা কাটাকাটি লক্ষ করলাম প্রায় 50 গজ দূর হতে। আমি মোটর সাইকেলে। হঠাৎ বাস চালক ভ্যানগাড়ির ড্রাইভারের শরীরের উপর দিয়ে বাসটি উঠিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যেতে লাগল। অন্যএকজন লোক নিয়ে আমি বাসটিকে ধাওয়া করে চৌমুহনীর কিছু আগে ফায়ার সার্ভিসের সামনে বাসটির পথরোধ করে দাঁড়ালাম। বিআরটিসি ফলমন্ডি হতে চৌমুহনীর দূরুত্ব প্রায় 02 কিলোমিটারের মতো হবে। বাসভর্তি যাত্রীদের সবাই যে যার মতো করে চলে যেতে লাগল। কোন ফাঁকে ড্রাইভার, হেলপারও পালালো টের পেলাম না (কারণ আমরা সংখ্যায় ছিলাম মাত্র দুইজন) । গাড়ি আটকিয়ে ডবলমুরিং থানায় ফোন দিয়ে পুলিশের হাতে গাড়িটি তুলে দিলাম। যাত্রীদের জিজ্ঞাসা করলাম ড্রাইভারকে থামাল না কেন। কেউ কোন উত্তর দিলো না। এই হলো আমাদের মানসিকতা। কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত, মনমানসিকতার দিক থেকে আমরা প্রায় সবাই একই ভূমিকায় উর্ত্তীণ হই। আমাদের দেশপ্রেম টুকু আমরা শুধুমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠানেই জাহির করি। অপচয় হবে তাই কোন খাবারই আমরা ছেড়ে আসিনা। দেশী গরু আর দেশী মুরগীর বেলায় আমাদের দেশপ্রেম উতড়ে উঠে।
যা হোক, 02 দিন পরে মিস্ত্রীপাড়ায় অনেক খোঁজা খুজি করে জানতে পারলাম পরিবহন মালিক সমিতি ও অন্যান্যদের মধ্যস্থতায় 25 হাজার টাকা দিয়ে ভিকটিমের পরিবারের সাথে বিষয়টি আপোষ মিমাংসা হয়েছে। যেহেতু ভিকটিম ঘটনাস্থলেই মারা যান সেক্ষেত্রে মামলা- মোকদ্দমা করে তো কোন লাভ হবে না। তাই আপোষ মিমাংসাই এক্ষেত্রে মূল সমাধান। ভিকটিমের স্ত্রী তখন সন্তান সম্ভবা ছিলেন এবং বিয়ের বয়স হয়েছিল মাত্র কয়েক মাস।
এতো গেলো মাত্র একটি ঘটনা। এই ধরণের হাজার ঘটনা দুর্ঘটনা প্রতিদিন আমাদের নজর এড়িয়ে যায়। নজরে এলেও আমরা কথা বলিনা, কিছু বলিনা। চালকের অবহেলায়, আমাদের অসর্কতার দরূন কত যে তরুন, সম্ভবনাময় প্রাণ ঝরে যায় তার হিসাব আমরা রাখিনা। আমরা কথা বলি যখন আমাদের পরিবারের কেউ সমস্যার মধ্যে পতিত হয়। তখন আমরা বিচার চাই। কিন্তু আমাদের কারণেই ঘাতকদের বিচার হয়না।
অথচ আমাদের করার আছে অনেক কিছু :
1) চালক দ্রুত গাড়ি চালালে তাকে বিরত হতে বলি;
2) যত্রতত্র যাত্রী হয়ে উঠানামা না করি;
3) নির্দিষ্ট স্টপিজ হতে উঠি এবং নামি;
4) মেয়েদেরকে অনেক সময় হেলপাররা দ্রুত ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেয়। এমন অবস্থা দেখলে প্রতিবাদ করতে যেন ভুল না করি;
5) রাস্তার মাঝখানে যেন গাড়ি থামিয়ে যাত্রী না তুলে সে দিকে খেয়াল রাখি;
6) মোবাইল ফোন ব্যবহার করলে চালককে নিরাপদ স্থানে গাড়ি থামিয়ে কথা বলতে বলি;
7) অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে গাড়িতে না উঠি;
8) কোন দুর্ঘটনা ঘটালে “আপনি বাঁচলে বাপের নাম মনে না” করে চালক ও দোষীদের আইনের আওতায় আনি।
মনে রাখতে হবে, কোন সরকার, আইন, প্রশাসন দুর্ঘটনা রোধ করতে পারে না। পারে শুধু আমাদের সচেতনতা। সচেতন মানুষই সুখী মানুষ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:২৭

নাদিম আহসান তুহিন বলেছেন: আজ আমাদের কলেজে কাঞ্চন সাহেব এসেছিলেন। এই ব্যাপারে বক্তব্যও দিয়েছেন।

২৩ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৯

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: কাঞ্চন স্যারের এই মহৎ উদ্যোগকে আমি সম্মান করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.