নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলা আমার, আমি বাংলার

"বাংলা আমার জন্মভূমি, বাংলা আমার প্রাণ; হবনা পিছপা, রাখতে আমার বাংলা মায়ের মান ।"

শহীদ ভূইয়া

”রক্ত ঝরাতে পারি না তো একা, তাই লিখে যাই এ রক্ত লেখা” - কাজী নজরুল ইসলাম। আমি একজন স্বাধীনচেতা মানুষ। বর্তমানের কুৎসিত রাজনীতির বশবর্তী হয়ে কোন সংকীর্ণতাকে ঠাই দেয়া কোন শিক্ষিত লোকের উচিত নয়। কারণ এখনকার রাজনীতির উদ্দেশ্য জনসেবা নয়, বরং জনগণকে বঞ্চিত করে কিভাবে নিজে বড় হওয়া যায় এটাই মূল উদ্দেশ্য। দয়া করে কোন দলের হয়ে অন্য দলের সাথে কামড়া-কামড়ি না করে, আসুন আমরা সকল ভালর পক্ষে এবং সকল মন্দের বিপক্ষে সোচ্চার হই। আমার লেখা পড়ে যদি আমাকে কোন রাজনৈতিক দলের মাতাদর্শী বা কোন দলে ফেলার চেষ্টা করেন, তাহলে বড় ভুল করবেন । আমি একজন দেশপ্রেমিক, দেশকে প্রচন্ড ভালবাসি, ইংরেজীতে যাকে বলে JINGO. দেশের নামে কেউ মিথ্যা কিছু বললে মাথায় রক্ত উঠে যায়, তা সে যে-ই হোক । এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমার এই প্রাণের দেশ বাংলাদেশের গৌরব কোন দিন ভূলুন্ঠিত হবার নয়। শহীদ, বি.বি.এ, এম.বি.এ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শহীদ ভূইয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন, নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?

১৫ ই মে, ২০১৪ রাত ৯:৪১

আজ রক্ত দিতে গেলাম রেড ক্রিসেন্টে। আমার পাশে বসা ছিল এক লোক, সে এই প্রথম রক্ত দিতে এসেছে, তাই খুব ভয় পাচ্ছে। যার রোগীকে রক্ত দিতে এসেছে, সে অনেকক্ষণ তাকে বুঝাল যে কিছুই হবেনা, মাত্র ৫ মিনিটের ব্যপার (অনেকক্ষণ ধরে বিভিন্নভাবে বুঝাচ্ছে, আর আমি শুনে হাসছি তার ভয় দেখে; ডোনারটির মনে হয় একদমই অভিজ্ঞতা নেই এসব নিয়ে) । এই বলে সে কাগজপত্র নিয়ে ভিতরে গেল। তখন ডোনার আমাকে জিজ্ঞাস করছে,

ভাই, রক্ত ক্যামনে নিবে?

আমিঃ ওই যে দেখছেন ব্লেড, ওইটা দিয়ে প্রথমে কাটবে, তারপর ওই লাল বালতিতে জমা করে আধা বালতি ভরে নিয়ে যাবে। ব্যান্ডেজ আনছেন? নিয়ে আসেন, রক্ত দেয়ার পর ব্যান্ডেজ করে দিবে।

ডোনারঃ ধুর মিয়া, ফাজলামি করেন ক্যান। ওই ভাইতো কইল, এটা সুই ডুকাইয়া রক্ত নিব একটা ব্যাগে। আচ্ছা ভাই ব্যাথা লাগব?

আমিঃ কি করেন আপনি?

ডোনারঃ চাকরি।

আমিঃ ছুটি নিয়েছেন? তিন দিনের ছুটি নিবেন। এমন ব্যথা লাগবে যে, জ্বরও আসতে পারে। তাই ছুটি নিয়ে ৩ দিন রেস্টে থাকবেন।

ডোনারঃ আরে, ওই ভাই তো বলল তেমন কোন ব্যথা লাগবে না। শুধু একটু পিপড়ায় কামড় দিব।

আমিঃ ধুর মিয়া। হাসপাতালে এতো পিপড়াঁ পাবে কোথায়। আর পাঁচ মিনিট ধরে পিপড়ায় কামড় দিলে চিন্তা করেন কত ব্যথা লাগতে পারে!! আর কোন পিপড়ায় কামড় দিবে সেটা তো বলে নাই। এইটা হচ্ছে বিষপিপড়াঁর কামড়ের মতন। এখন বোঝেন, কেমন লাগতে পারে।

ডোনারঃ ধুর রক্তই দিমু না। আজাইরা কামে আইলাম। আমার মা,য় না করছিল। অনেক জোড়াজুড়ি করায় আসলাম। জাইগা ভাই.........

আমিঃ আরে ভাই শোনেন, ওই রোগীর মত যদি আপনিও অসুস্থ হতেন অথবা দুর্ঘটনায় পড়তেন, তাহলে কি বলতেন যে, ধুর এত কষ্ট, থাক, রক্তই নিব না, মরলে মইরা যাব। নাকি গরু, ছাগল বা ‍মুরগির রক্ত নিতেন!

ডোনারঃ নাহ্, যারা সচরাচর রক্ত দেয়, তাদের কাছ থেকে নিব। অথবা ব্লাড ব্যাংক থেকে নিব।

আমিঃ ব্লাড ব্যাংক কি রং মিশিয়ে রক্ত বানায়? আর আপনি যে ব্যথা নিজে পেতে চাচ্ছেন না, সেই ব্যথা অন্যকে দিবেন কেন? অন্যকে ব্যথা দেয়ারতো আপনার কোন অধিকার নেই।

ডোনারঃ হুম তাইতো। না ভাই, আগে দেই নাই তো, তাই ব্যথার জন্য ভয় পাচ্ছিলাম।

আমিঃ এখন যে ব্যথার ভয়ে রক্ত দিতে চাচ্ছেন না,আল্লাহ না করুক আপনার কোন সমস্যা হলে সেই একই প্রক্রিয়ায়ইতো আপনাকে রক্ত নিতে হবে, নাকি ভাবছেন গ্লাসে করে রক্ত দিবে, আর আপনি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলবেন?

ডোনারঃ সরি ভাই, এতো কিছু ভাবি নাই। নাহ্, আসছি যখন রক্ত দিয়াই যামু যত ব্যথা লাগে লাগুক।

আমিঃ ধন্যবাদ ভাই। নিজের একটু ব্যথায় যদি অন্যের জীবন বাচেঁ, তাহলে খারাপ কি। রোগী তো আরো অনেক কষ্ট করছে, আর ভাবুনতো তার পরিবারের মানসিক অবস্থা এখন কেমন। সে সময় আপনি আমি যদি একটু সাপোর্ট দেই, তাহলে ভাবুন কত সোওয়াব হবে। মানুষের ভাল করার জন্য এটা তো একটা অপরচুনিটি। আপনি ভাগ্যবান যে এই অপরচুনিটি আপনি পেয়েছেন।

ডোনারঃ হুম, ঠিক বলছেন। আমি এখন থেকে প্রায়ই রক্ত দেয়ার চেষ্ট করব। আমার বন্ধুদেরও বলব রক্ত দিতে।

আমিঃধন্যবাদ আপনাকে। আসলে রক্ত দিতে তেমন কোন ব্যথা লাগে না; শুধু সুই ডুকানোর সময় একটু ব্যথা লাগে। তারপর আর টেরই পাবেন না। আর অন্যের ব্যথার কথা যখন চিন্তা করবেন, তখন এটা কোন ব্যথাই মনে হবে না। সম্ভব হলে রোগীকেও একটু দেখে যাবেন। তাহলে বুঝবেন যে, আপনার শারীরিক একটু কষ্টে যে কতটা মানসিক প্রশান্তি হয়, আপনি কতটা মানসিকভাবে তৃপ্ত হন। অন্যের উপকার করার এই এক শান্তি।

"One of the best things in life is seeing a smile on a person’s face and knowing that you put it there."

তারপর আমার পেশেন্ট আসায় সেই লোকটার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম রক্ত দিতে...

বিভিন্ন সময় প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ করতে যে কত জনের কত মিথ্যা কথা, ভয়ের কথা শুনতে হয়েছে, তার হিসাব নেই। এই লোক যদি কিছুটা ভীতু হয়, তাহলে ভাবেন ওরা কেমন? আমি না হয় না,ই বললাম।

শুধু কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের কবিতার একটা পংক্তি বলি......

”পরের অভাব মনে করিলে চিন্তন

নিজের অভাব ক্ষোভ রহে কতক্ষণ ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.