![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল? ”
আমি খুব সাহসী মেয়ে। শুধু সাহসী
বললে ভুল হবে।ডিভোর্স লেটার এর
জন্য অপেক্ষা
করা কি কম সাহস এর?
গত দু দিন যাবত এই ডিভোর্স পেপার
এর জন্য অপেক্ষা।এমন নয়
আমার বর খারাপ,এমন নয় আমি তাকে
ভালোবাসিনা,দুজন ই দুজনকে
ভালোবাসি খুব,তবুও আমাদের
বিচ্ছেদ হবে।সিয়াম কে যেদিন
প্রথম দেখেছিলাম,ড্রয়িং রুম এ মাথা
নিচু করে বসে ছিল,সেই
৮বছর আগের কথা।আমার খুব মনে
আছে,সিয়াম আমার দিকে
তাকায়নি।যেই শুনলাম আমাকে
দেখার জন্য পাত্র পক্ষ
এসেছে,আমার বুকের মধ্যে কেমন যেন
মোচর দিল।সিয়াম
কে আমি ছবিতে দেখেছিলাম।মা
আমার হাতে ছবি ধরিয়ে দিয়ে
বলেছিল,দেখ একবার,দেখলেইতো
বিয়ে হয়ে যায়না। আমি
মায়ের সামনে ছবিখানা দেখতে না
পারলেও যখন রুম এ কেউ
ছিলনা আমি ছবি দেখেছিলাম।
ছবিতে ওকে একবার দেখার পর ই
কেমন যেন ওকে আমার নিজের ছাড়া
ভাবতে পারিনি।এক বার দেখাতেই
মনের মধ্যে স্বামীর জায়গা
আমি দিয়ে দিয়েছিলাম।
আমার খুব ভয় লাগছিল,যদি আমায় পছন্দ
না হয়।পারিবারিক বিয়েতে এই
এক সমস্যা সহজে মন দেয়া যায়না, মন
একবার দিলেও তার কোন
নিশ্চয়তা থাকেনা।সেদিন
বৃহস্পতিবার ছিল,সিয়াম ওর মা আর
মামা আমায়
দেখতে এসেছিল।সেদিন নিজেকে
কত শত বার যে আয়নায়
দেখেছিলাম তার হিসাব নাই।এর
আগে যে পাত্র পক্ষ আমায়
দেখতে আসেনি তা নয়,তবে সিয়াম
এর মতন কেউ আমার মন
কে স্পর্ষ করতে পারেনি।
হঠাৎ কলিংবেল এর শব্দ...
এই বুঝি তালাক এর কাগজ টা এসে
গেল।সেদিন এর মতন আজ ও
আমার বুকের ভিতর মোচর দেয়।আচ্ছা
তালাক এর কাগজ কি খুব
ভাড়ি হয়?আমি কি হাতে নিতে
পারবো? ৮বছর এর সম্পর্কের
দলিল কি এতো হালকা হতে পারে?
আমি:- মা কই কাগজ এসে গেছে?
মা:- ধূর বোকা মেয়ে কি বলিস
কয়দিন ধরে?তুই সিয়াম কে কল
দে একটা,আমাকে তো দিতে দেস
না।ও ঠিক তোকে নিয়ে
যাবে।
আমি:- না মা,ও আমায় নিবেনা।ও
নিজে আমায় বলেছে ডিভোর্স
পেপার পাঠিয়ে দিবে।
মা:- যত্তসব পাগল এর পাল্লায় পরেছি
আমি।মা কেঁদে রুম থেকে
চলে গেল।
সেদিন ও মা এমন চিন্তিত ছিল,যেদিন
সিয়াম আমায় দেখতে
এসেছিল।মা বার বার আমায় সাজতে
বলেছিল।সিয়াম রা আসার পর ই
আমার ছোট বোন আমার কানের
কাছে এসে বলেছিল,আপু
তোমার সে নীল পাঞ্জাবী পরে
এসেছে,হাস্যকর বেপার
হলেও সেদিন আমিও নীল জামদানী
পরেছিলাম।কাকতালীয় মিল
হলেও বেপার টা আমার কাছে সুখময়
বার্তা মনে হচ্ছিল
আমি দরজার আড়ালে দাড়িয়ে
সিয়াম কে দেখতেছিলাম,ও মাথা
নিচু
করে ছিল।কিছুক্ষন পর মা আমাকে
নিয়ে গেল সবার সামনে।খুব
মনে আছে আমার হাত পা
কাঁপতেছিল।
আমি আর সিয়াম এর দিকে তাকাতে
পারিনি।একটা সময় সিয়াম আর
আমাকে আলাদা কথা বলতে
দিয়েছিল,সিয়াম বার বার ওর চশমা
ঠিক
করতেছিল।অনেককাল আগ থেকেই
চশমার প্রতি আমার দূর্বলতা।
সিয়াম এর চশমা সে দূর্বলতা আরো
বাড়িয়ে দিল।
সিয়াম:- আপনার নামটা বলবেন? মনে
মনে ভাবছিলাম,কি রে বাবা
দেখতে এসেছে নাম ও জানেনা।
আমি:- লুবনা।
সিয়াম:- আমি সিয়াম।
আমি:- হুম জানি।
সিয়াম:- কোন সাবজেক্ট এ পড়ছেন?
আমি:- আমার বায়ো ডাটা
আপনি দেখেন নি? সিয়াম লজ্জা
পেয়ে বলেছিল,ও হুম
ইকোনোমিক্স নিয়ে তাইতো?
আমি:- হুম।
থার্ড ইয়ার এ।
সিয়াম:- আচ্ছা DPI কি জানেন?
মনে মনে ভাবছিলাম,এ কি রে
বাবা,বিয়ে করতে আসছে না
চাকরির ইন্টারভিউ নিতে আসছে?
সিয়াম:- DPI হল,disposable personal income.
আমি মুখ বাকিয়ে বলেছিলাম আমি
জানি।
সিয়াম হাসি দিয়ে আবার জিজ্ঞেস
করলো,GDP কি?
আমি:- ওই তো global....
আমার মাথায় কিছুই আসেনা।ভয়ে
গলা শুকিয়ে গেছিলো। যা
জানতাম তাও ভুলে গিয়েছি।এই
ছেলে পড়েছে শুনেছি ম্যাথ
নিয়ে।কিন্তু ইকোনোমিক্স নিয়ে
এতো মাথা ঘামায় কেন?বিয়ে
হলে সারাদিন কি পন্ডিতগিরী
করবে?
সিয়াম:- GDP হল,Gross domestic
product.জানি এটাও আপনি
জানতেন।
আমি:- আগে জানাতেন যে আপনি
আমায় প্রশ্ন জিজ্ঞেস
করবেন,আমি ভালো করে বই দেখে
নিতাম।
সিয়াম:- হা হা হা।
সেই প্রথম ওর হাসি এতো কাছ থেকে
দেখেছি।ভালো
লেগেছিল দুজন এর দুজন কে।এক মাস এর
মধ্যে আমাদের
বিয়ে হয়ে যায়। বাসরঘর এ বসে দেখি
ওর রুম এর টেবিল এ
আমার ইয়ার এর মেক্রো বই।আমি
জানতে চেয়েছিলাম এই বই
দিয়ে উনি কি করে?
সিয়াম বলেছিল আমায় প্রশ্ন করার জন্য
ও আমায় দেখতে যাবার
আগের দিন কিনেছিল।সেদিন
বুঝলাম,মশাই এর আগ্রহ তবে কম
ছিলনা।
পুরনো স্মৃতি এতো বছর পর ঘাটলেও মন
ভালো হয়ে যায়।
সুখের স্মৃতি যা আমার মৃত্যুর আগ অব্ধি
সুখ দিবে।এগুলোই আমার
অবলম্বন।এগুলো ভাবতে ভাবতেই দু
চোখের পাতা লেগে
এলো..
..চলবে
একটা লাল খাম হাতে নিয়ে বসে
আছি।উপরে
বড় বড় করে কালো কালি দিয়ে
লেখা সিয়াম এর নাম।
আমার খাম খুলতে খুব ভয় হচ্ছে।খাম
নিয়ে এক হাত থেকে
আর এক হাত এ নিচ্ছি।
এমন সময় মা ডাক দিল,
চোখ খুলতেই দেখি বিকেল হয়ে
গেছে,এতোক্ষন আমি
স্বপ্ন দেখতেছিলাম।চোখে হাত
দিয়ে দেখি চোখ ভিজে আছে।
বাস্তব এ যখন পাবো হয়তো তখন ও
কাঁন্না পাবে খুব। নয়তো কাঁদার মতন
চোখে পানি খুঁজে পাবনা।
মোবাইলটা নিয়ে ছাদ এ গেলাম।
বার
বার সিয়াম এর নম্বর ক্লিক করছি আর
মুছে ফেলছি,কল
দেয়ার সাহস হচ্ছেনা।এই মোবাইলটা
ও সিয়াম আমায়
উপহার দিয়েছিল।আগেরবার
বিবাহবার্ষিকীতে।এই যা,
আগামীকাল আমাদের নবম
বিবাহবার্ষিকী। হয়তো তার
আগেই আমি আর ওর বউ থাকবো না।
কখনো কি
ভেবেছিলাম সিয়াম কে আমি
সারাজীবন ধরে রাখতে
পারবোনা!
বিয়ের পর থেকে আমার প্রতি ওর
এতো যত্ন আমাকে
মাঝে মাঝে ভয় ধরিয়ে
দিত,ভাবতাম এতো সুখ
সইবেতো,ঠিক তাই হল,সইলো আর কই!
বিয়ের ঠিক এক বছরের মাথায় ও
আমায় একটা গোলাপ
ফুল গাছ দিয়েছিল।আমায় বলেছিল এই
গোলাপ গাছ এ
যেদিন ফুল আসবে সেদিন আমাদের
কোলেও একটা
গোলাপ থাকবে।
তারপর থেকে রোজ দুবেলা আমি ফুল
গাছ এ পানি
দিতাম,সিয়াম ও রোজ ফুল গাছ
দেখতো,একদিন ভোরে
ঘুম ভাঙলো সিয়াম এর চেঁচামেচি
শুনে।
আমি ভয়ে শেষ, ভেবেছিলাম কিছু
হয়েছে ওর,উঠে দেখি
সে ফুল এর টব নিয়ে বিছানার পাশে
দাড়িয়ে আছে।কি
খুশি মুখে।
আমি:- কি হয়েছে?
সিয়াম:- লুবু দেখো, গাছ এ গোলাপ
ফুটেছে, ও আমায়
ভালোবেসে লুবু ডাকতো। আমি
গোলাপ এর দিকে
তাকিয়ে দেখি, ছোট লাল কলি
দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষন
বাদ এ আমার মনে পরলো এ ফুল গাছের
পিছনের কথাগুলি।
আমার কোল জুরে কলির তো দেখা
নেই।সিয়াম কে
বলতেই সিয়াম বলে আল্লাহ যখন
দিবেন তখন ই খুশি।
বলতে বলতে বছর বাড়ছে সাথে
গোলাপ ফুটছে একেরপর
এক।ঝরেও যাচ্ছে। একটা সময় ফুলের
হিসাব ও রাখতে ভুলে
গেছি আমি আর সিয়াম।অনেকদিন পর
গিয়ে দেখি ফুল
গাছ টা মরে গেছে।যত্নের অভাবে
ভালোবাসাও যেমন
কমে যায় তেমনি তাজা গাছ ও মরে
যায়।
বিয়ের এক বছর থেকেই আমরা
আমাদের সন্তান এর নাম
ঠিক করেছিলাম,মনে মনে সন্তান এর
ছবিও এঁকেছি
হাজার বার।তবে সেই সন্তান এর
দেখা মিলেনি।
সিয়াম ওর মা বাবার একমাত্র সন্তান।
তাই আমাদের
একটা সন্তান এর প্রয়োজন বেশি ছিল
ওর পরিবার এ।
আমি সিয়ামকে অনেকবার বলেছি
আর একটা বিয়ে
করতে,আমি আমার বাকি দিনগুলি
কাটিয়ে দিতাম একা,
তবে সিয়াম তা করেনি।ওর সন্তান এর
দরকার ছিল তবে
সেটা আমাকে বাদ দিয়ে নয়।খুব
ভালো মানুষ এর যা হয়
আরকি,খুব সহজেই মায়াকে তাচ্ছিল্য
করতে পারেনা।
আমি ওর পুরোটা মায়া জুড়ে ছিলাম।
ওকে বলেছিলাম
একটা সন্তান দত্তক নেই।ওর মা
কিছুতেই রাজি হয়নি।ওর
মায়ের কাছে এক গাছের ছাল আর এক
গাছ এ নাকি
লাগানো যায়না।আমিতো অনেক
দেখেছি গাছ এর কলম করতে।
কি সুন্দর এক গাছ এর ফল অন্য গাছ এ
দিনের পর দিন
বেড়ে ওঠে। কাক এর বাসায়
কোকিল বেড়ে ওঠে কিন্তু
সিয়াম এর মাকে মানাতে পারিনি।
বিয়ের ৫বছর হবার
পর ও যখন দেখলাম আমি মা হতে
পারছিনা আমি আমার
সন্তান এর আশা ছেড়ে দিলাম।একটা
সময় কোন বাচ্চা
আমার সহ্য হতনা। একটা সময় নিজেকে
ঘর বন্ধী করে
ফেলেছিলাম।গোলাপ গাছ এর মতন
আমিও ধীরে ধীরে
শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।সিয়াম যত
পারতো বুঝাতো আমায়
তবুও আমি ওর সাথে ঘর করতে করতে ওর
ভিতরটা বুঝতে
পারতাম খুব।
আমি দেখতাম ও টেলিভিশন এ কোন
বাচ্চা দেখলেই
তাকিয়ে থাকতো, আগে ওর
মোবাইল এর ডিসপ্লে তে
একটা বাচ্চার ছবি ছিল,তা ও পাল্টে
ফেলেছে,হয়তো
সিয়াম ও মন থেকে বাবা হবার
ইচ্ছেও মেরে ফেলেছে।
একটু ঝগড়া হলেই আমার মনে হত সিয়াম
আমাদের সন্তান
নেই তাই এমন করছে।একটা
ভালোবাসার সংসার কখনই
একজন স্বামী - স্ত্রী আগলে রাখতে
পারেনা।একজন সন্তান
ছাড়া ভালোবাসার ঘর খা খা করতে
থাকে।
হঠাৎ মা এর ডাক,
লুবনা তুই এখানে?আমি সারা ঘর
খুঁজছি।
আমি:- ঘর এ দম বন্ধ লাগে।
মা:- চল সন্ধ্যা হয়ে গেছে,এ
সময় ছাদ এ থাকা উচিৎ নয়।
আমি:- মা ছাদ এ থাকলে কি হয়?
মা:- অমঙ্গল হয়।
আমি:- আমার আর কি অমঙ্গল হবে মা
তুমি বলতে পারো?
আমি আর কি কিছু ক্ষতি হবার আছে?
মা:- এই চল তো বাসায়,খালি আজে
বাজে কথা।
বাসায় আমার রুম এ আসতেই দেয়াল এ
আমার আর সিয়াম
এর ছবির দিকে চোখ পরলো।
বিয়ের দিনের ছবি মা বাঁধিয়ে
রেখেছে।সিয়াম এর মুখটা
ছবিতে দেখে বার বার ইচ্ছে হচ্ছে
ওকে আমি একটু স্পর্ষ
করতে পারলাম!
দু দিন ওকে দেখিনা,হয়তো কখনো আর
ওমন করে দেখাও
হবেনা।
গত কয়েকমাস যাবত সিয়াম আমার
সাথে রাগ করে একটু
বেশিই।আগে ঘুম থেকে উঠেই ওর মুখ
দেখতাম,কিন্তু কিছুদিন উঠে দেখি ও
আমায় নাবলেই অফিসে চলে গেছে।
বাসায় একটু দেরিতেও ফিরে।
জিজ্ঞেস করলে
বলতো অফিস এ কাজ এর চাপ।আমি
বেশ বুঝতে পারতাম
ও নিজেকে কাজে ব্যাস্ত রাখতে
চাইতো।
গত সপ্তাহে রাতে ঘুম ভেঙে যায়
দেখি সিয়াম বিছানায়
নেই।বারান্দায় গিয়ে দেখি কার
সাথে যেন কথা বলছে।
আমি স্পষ্ট শুনেনি তবে শুনেছি তিনি
ই আমার শেষ
ভরসা।
আমার বিয়ের এতো দিন হয়ে গেল
আমি সিয়াম কে এতো
রাতে বারান্দায় এই প্রথম কথা বলতে
শুনলাম।
আমি তাড়াতাড়ি বিছানায় এসে ঘুম
এর ভান ধরে ছিলাম।
আমি পারিনি ওর চোখে চোখ রেখে
জিজ্ঞেস করতে
কে ছিল?
হয়তো কিছু অপ্রিয় কথা শোনার জন্য
প্রস্তুত ছিলাম না।
সিয়াম রুম এ আসলো, আমি জিজ্ঞেস
করলাম কই গিয়েছিলে?
ও
বলে ওয়াশ রুম এ।
আমার ভয় তখন আরো গাঢ় হল,হয়তো
আমি কিছু না দিতে পারার
শাস্তি কিছু হারিয়ে ফেলে দিতে
হবে।হয়তো আমার খুব মূল্যবান
সম্পদ,হয়তো সেটা
সিয়াম ই...
আমি খুব বুঝে গিয়েছিলাম সিয়াম
আমার থেকে দূরে
সরে যাচ্ছে।যেখানে নিজের প্রান
ই নিজের অধিকারে থাকেনা
সেখানে সিয়ামকে কি করে
অধিকারে রাখি?
ডিভোর্স -
শেষ পর্ব___
সেদিন আমার সন্দেহ আরো গভীর
হলো যেদিন সিয়াম
দুটা শাড়ি কিনে এনেছিল।আমি ওর
আলমারি খুলতেই
দেখি একটা প্যাকেট। তাতে দুটা
শাড়ি। ভেবেছি হয়তো
আমায় দিবে তাই লুকিয়ে রেখেছে।
আমি তাই আবার
প্যাকেট টা আলমারিতে রেখে
দিলাম।একটু খুশিও হয়েছিলাম।সিয়াম
আমায় এরকম উপহার নতুন দেয়না।
বিয়ের পর থেকে যতবার আমার
জন্মদিন এসেছে,ও আমায়
আমার পছন্দের রঙের শাড়ি দিয়েছে।
কিন্তু সিয়াম রুম এ
এসে আমার সামনেই প্যাকেট টা
নিয়ে বের হয়ে গেল
বাইরে।আমি পিছন থেকে এত ডাক
দিচ্ছি ফিরেও
তাকায়নি।
কাছের মানুষ এর কাছ থেকে
লুকোচুরি নেয়া যায়না।
আমি তখন ই ভেবে নিয়েছি সিয়াম
হয়তো মুক্তি চায়,তা
বলতে পারেনা।কতদিন হয়ে গেল
আমার চোখের দিকে ও
তাকায়না তার হিসাব নেই।
রাত ১২টা, সিয়াম এখনো আসছেনা।
কল দিতেছি,সুইচ অফ
পাচ্ছি।
রাত যখন ১:৪৫তখন ও আসলো বাসায়।
হাতের দিকে
তাকিয়ে দেখি প্যাকেট টাও নেই।
না আজ সিয়াম এর কাছে জানবোই
যে ও কি চায়? এই
ভেবে সিয়াম কে বললাম, সিয়াম
আজ কাল আমি কি খুব
বিরক্তি হয়ে যাচ্ছি?
সিয়াম:- আচ্ছা এখন কি এসব বলার সময়?
আমি:- তাহলে কখন জিজ্ঞেস করবো?
আচ্ছা শাড়িগুলি
কার জন্য?
সিয়াম হঠাৎ ক্ষেপে গেল,
এমন রাগ আমি কখনোই দেখিনাই।
সিয়াম:- কারো দরকারি জিনিসে
হাত দেয়ার আগে
জিজ্ঞেস করতে হয় সেটা জানোনা?
আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে
আছি।ভাবছি
এতোদিনেও ওর আর আমার মাঝে
"কারো" শব্দটা রয়ে
গেছে!
আমি নিতান্তই খুব অভিমানী কিন্তু
ঝগড়া খুব কম
করতে পারি।
আমি আবারো জিজ্ঞেস করলাম
শাড়িগুলি কার?
সিয়াম প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই ওয়াশ
রুম এ চলে গেল।
বাইরে বৃষ্টি নামলো, আমি তাতে
ভাঙনের শব্দ
পেয়েছিলাম বার বার।৮বছরের তিল
তিল করা বিশ্বাস
এর ভাঙন, ভালোবাসার ভাঙন,
আস্থার ভাঙন।
ওয়াশ রুম
থেকে বের হয়ে সিয়াম শুয়ে পরলো।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম কি
খাবেনা?
সিয়াম:- না, খেয়ে এসেছি।
আমি:- আমিতো না খেয়ে বসে
আছি,আর তুমি খেয়ে
এসেছো?
সিয়াম:- আমি কি তোমায় খেতে
বারন করেছি?
আমি তখন আর কিছু বলতে পারলাম
না,হয়তো আরো কিছু
শুনবো যা আমি হজম করতে পারবো না
তাই, আমি না
খেয়ে শুয়ে পরলাম।
ওপাশ ফিরে শুয়ে থাকলেও পাশের
মানুষ টা যে
ঘুমাচ্ছেনা আমি খুব বুঝলাম।
এতোদিনে ওকে আমি খুব
চিনে নিয়েছি।
সিয়াম এর দিকে ফিরে দেখি ও
চোখের উপর হাত দিয়ে
শুয়ে আছে।আমার সেদিন অকারনেই খুব
কাঁন্না
পাচ্ছিল,জানিনা সে কাঁন্নার
পিছনে কারন তবে খুব
কাঁন্না পাচ্ছিলো, ইচ্ছে হয়েছিল
কোন খোলা জায়গায়
গিয়ে কাঁদি।
শুয়ে শুয়ে বিয়ের পরের সময়গুলির কথা
ভাবি।আমার মন
খারাপ থাকলেই আমি সিয়াম এর
সাথে কাটানো ৮
বছরের কথা ভাবি,তাতেই আমার মন
ভালো হয়ে যায়।
রাত তখন ৩:৩০এর মতন, এর মধ্যেই সিয়াম
এর ফোন এ কল
আসার শব্দে আমার চোখ খুলে যায়।
সিয়াম তাড়াতাড়ি
কল রিসিভ করলো,এমন মনে হচ্ছিল যে
সিয়াম এই ফোন
এর অপেক্ষায় ছিল।ও আবার
বারান্দায় গেল।আমিও
বারান্দার দরজার পাশে দাড়িয়ে
আছি।
ও দেখি খুব খুশি হয়ে বলতেছে," এই
একটা আশা নিয়ে
বেঁচে ছিলাম।ওর জন্য অপেক্ষা করা
আজ সফল।আমি খুব
খুশি আজ,ও শুধুই আমার।"
এ কথা শোনার পর সিয়াম এর প্রতি
আমার কেমন যেন না
চাইতেই ঘৃনা এসে গেলো, কি সহজেই
ও আমায় বাতিলের
খাতায় ফেলে দিল,কি সহজে ও
আমার জায়গা অন্য
কাউকে দিয়ে দিল।সিয়াম ৮বছরে
আমার কাছে মহান
হয়ে গেলেও আজ এক মুহূর্তে একদম
খারাপ মানুষে পরিনত
হল,আমার পক্ষে ওর সাথে থাকা আর
সম্ভব ছিলনা।অপছন্দ নিয়ে কাটানো
গেলেও পছন্দের মানুষ এর কাছে
অপছন্দের হবার পর একসাথে থাকা
যায়না।
ভালোবাসার মানুষ এর কাছ থেকে সব
নেয়া গেলেও
তাচ্ছিল্য নেয়া যায়না।
এর মধ্যেই সিয়াম এর কথা বলা শেষ
হয়ে গেল,ও এসে
দেখে আমি দরজার পাশে দাড়িয়ে
আছি।
সিয়াম:- কি বেপার?তুমি আমায়
লুকিয়ে লুকিয়ে
দেখছো?স্পাইগিরী করো?
আমি :- যা আমার কাছে স্পষ্ট তা
আমার লুকিয়ে দেখার
প্রয়োজন নেই।
সিয়াম:- মানে?
আমি:- এক সাথে দু নৌকায় পা দেয়া
বন্ধ করো।
সিয়াম:- তোমার মাথা ঠিক আছে?
আমি:- ও তুমি আমায় এখন পাগল প্রমান
করে ঘর থেকে
বের করে দিবে?আমায় তো বললেই
পারতে আমি চলে
যেতাম।
সিয়াম:- তুমি তো কবে থেকেই যাই
যাই করছো?ঘর করার
আগেই ভাঙার চেষ্টা করাই তোমার
কাজ।
আমি:- তুমি লম্পট যা আমার চিনতে
এতদিন লেগে গেছে।
সিয়াম:- উফ!আমায় একটু শান্তি দেও।
আমায় একটু ভালো
থাকতে দেও।
আমি আর কিছু বলতে পারিনি।আমার
কাছে সব স্পষ্ট হয়ে
গেল।
এর মাঝেই আবার কল আসলো, সিয়াম
কল রিসিভ করেই
শুকনো মুখ নিয়ে বললো,আচ্ছা আমি
আসছি।
তখন ই আমি ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি
৪.১০বাজে।এই সময়
কে ওকে ডাকে? আর ও যেতে রাজি
হয়ে গেল।
আমি:- আচ্ছা সিয়াম শোন,আমি
জানি যার কিছু দেয়ার
ক্ষমতা নেই তাকে কেউ পছন্দ করে
না।আমায় তার চেয়ে
মুক্তি করে দেও।
সিয়াম:- কিভাবে মুক্তি চাও? তার
মানে তুমি বলতে চাও
আমি তোমায় শিকল পরিয়ে
রেখেছি?
এই বলে ও তৈরী হচ্ছে বাইরে যাবার
জন্য।
আমি:- আমি ডিভোর্স চাই।
কথাটা শুনেও সিয়াম আমার দিকে
তাকালো না।
আমার রাগ তাতে আরো বেড়ে গেল,
আমি:- আমায় দু দিনের মধ্যে ডিভোর্স
দিবে।
সিয়াম:- আচ্ছা বলে বাসা থেকে
বের হয়ে গেল।
সকাল ৫:৩০পর্যন্ত বারান্দায় দাড়িয়ে
ছিলাম।অনেক
ভেবে দেখলাম এ ঘর এ আর থাকা
সম্ভব নয়।আগে
জানতাম তিন বার তালাক বললেই
সম্পর্ক ভেঙে যায়।
হয়তো সিয়াম তা বলেনি তবে সে
যেহেতু রাজি, তার
মানে সে মন থেকে আমায় দূরে
সরিয়ে দিয়েছে অনেক
আগে।যেখানে অবহেলা ভর করে
গেল সেখানে আমি
কিসের আশায় ভর করে থাকি?
এই ভেবে আমি বাসা থেকে বের
হয়ে গেলাম।
আমার শ্বাশুরি তখন ঘুমায়,তাকে আর
জাগাইনি।সে হয়তো
আমি চলে যাওয়াতে খুশি ই হবেন।
আমার সাথে কিছুই আনিনি,শুধু
ফোনটা আর সাথে ৮বছরের
স্মৃতি নিয়ে আমার বাসায় চলে
আসলাম।
সিয়াম বললো
ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবে,কই
এখনো দিচ্ছেনা!
আমায় একবার খোঁজার চেষ্টা ও
করেনি,মাথার উপর
বোঝা নেমে গেলে কেউ আর তার
খোঁজ নেয়না।
আজ ৭ই আগস্ট, আমাদের নবম
বিবাহবার্ষিকী। আচ্ছা
সিয়াম কি ভুলে গেছে?হয়তো
আজকের দিনের জন্যই ও
বিচ্ছেদ করছেনা।কাল হয়তো
ডিভোর্স পেপার
পাঠাবে।
এমন সময় কলিংবেল এর শব্দ...
বুকের ভিতর হু হু করে উঠল, হয়তো যে
দিনে কিছুর শুরু
হয়েছিল সে দিনেই তার সমাপ্তি
হবে।
দরজা খুলে দেখি কেউ নেই।আশে
পাশে তাকালাম
কাউকে দেখছিনা..
এর মাঝেই বাচ্চার কাঁন্নার শব্দ।নিচে
তাকিয়ে দেখি
মেঝেতে তোয়ালে পেচানো
একটা বাচ্চা কাঁদছে।
বাচ্চা দেখে আমি "থ" হয়ে দাড়িয়ে
গেলাম।কেউ নেই
আশে পাশে,কে এই বাচ্চা রেখে
গেল?
বাচ্চাকে কোলে নিলাম,ও থেমে
গেল।কি কোমল
হাতগুলি।হাত দিয়ে আমার গাল
ধরছে।বাচ্চার ছোঁয়া
পেয়ে আমার কাঁন্না এসে গেল।কত
বছরের প্রতিক্ষা এই
স্পর্ষ এর।বাচ্চার ঘ্রান এ কি জাদু ই না
থাকে।২মিনিট
এর পরিচয় এ এই বাচ্চা আমায় জাদু
দিয়ে বস করে
ফেলেছে।আমি বাচ্চাকে বুকের
ভিতর নিয়ে বসে আছি।
খুব ভয় হচ্ছে ওকে হারাবার?
খুব ভাবতে ইচ্ছে হচ্ছে,হয়তো আল্লাহ
নিজে থেকে এসে
আমায় বাচ্চা দিয়ে গেছে।
আমি যুগ এর পর যুগ কাটিয়ে দিতে
পারি এ বাচ্চার মুখ
দেখে।
কি কোমল মুখ,ছোট ছোট হাত-পা।
বাচ্চার দিকে তাকিয়ে বার বার
বলতেছি,মা কেন তুই
আগে এলিনা?আমায় কেন এত
অপেক্ষা করালি তুই?
বাবুটা আমার দিকে তাকিয়ে
আছে,মনে হচ্ছে ও বলতে
চায়,মা কেঁদনা তুমি,আমি এসে
গেছি।আমি আমার
বাচ্চার মুখে মা ডাক শুনতেছি আমার
মন দিয়ে।একটা
বাচ্চা খানিকের মধ্যে কোন মেয়ের
মাঝে মা এর জন্ম
দিয়ে দিতে পারে।
আবার কলিংবেল এর শব্দ,হয়তো এ
বাচ্চাকে নিয়ে যাবে
কোল থেকে আমার।আমি আর
হারাতে পারবো না কিছু।
এই বলে বাবুকে কোলের মাঝে
লুকালাম।
এর মধ্যে মা আসলো আমার রুম এ,সে
এসে আমার কোলে
বাচ্চা দেখে অবাক হয়ে আছে।
আমি:- কে এসেছে মা?
মা:- কে এই বাচ্চা?
আমি:- আমার বাচ্চা।
মা:- পাগল হইছিস তুই?
আমি:- কে এসেছে বলবেতো?
মা:- একটা ছেলেএই খাম টা দিয়ে
গেল।
আমি খাম টা হাতে নিয়ে দেখি
একেবারে স্বপ্নের মতন
লাল খাম,তার উপরে সিয়াম এর নাম।
এই বুঝি ডিভোর্স
পেপার।আজকের এমন দিনে সিয়াম
কি করে পারলো
আমায় ডিভোর্স পেপার পাঠাতে!
আজকে
বিবাহবার্ষিকী তে আমি সবচেয়ে
সেরা উপহার
পেয়েছি আর তার প্রতিদান সিয়াম ও
সবচেয়ে বড় কিছু
কেড়ে নিবে।
হয়তো কিছু পেতে হলে কিছু দিতে
হবে। এটাই কপালের
লেখা।
খামটা খুললাম,কেন যেন কোন ভয়
করছেনা,এ বেপার
নিয়ে আর চিন্তা নিতে পারছিলাম
না।
খাম খুলে দেখি সিয়াম এর হাতের
লেখায় একটা চিঠি।
লুবু.....
আজ আমাদের নবম বিবাহবার্ষিকী,
তুমিও হয়তো ভুলে
যাওনি।
আমার কাছে তুমি ডিভোর্স
চেয়েছিলে,ওই কাগজ তো
আমি দিতেই পারতাম, তবে তুমি
আমার কোন কাগজের
দলিল নয় যা আমি কাগজ দিয়ে শেষ
করতে
পারতাম,যেদিন প্রথম তুমি আমার হলে,
সেদিন ই মনের
দলিল দিয়ে দিয়েছিলাম,আর মন কোন
ডিভোর্স এর
জায়গা দেয়ানা।
সেদিন রাতে আমি কথা বলেছিলাম
আমার এক বন্ধুর
সাথে,যে ডাক্তার। ওর হাসপাতালে
এক পাগলিকে
ভর্তি করানো হয়েছিল,যে অন্তসত্ত্বা
ছিল।
আমার বন্ধু আমাকে জানায়,ও তো
জানতো আমাদের
একটা সন্তান এর খুব দরকার,আর ওই
বাচ্চার একটা
নিশ্চিন্ত আশ্রয় এর দরকার,যা ওর
পাগলি মা দিতে পারতো
না।আর আমি শাড়ি এই বাচ্চার
মায়ের জন্য
কিনেছিলাম।
আর তুমি আমায় ভুল বুঝলে?
যেদিন রাতে কথা বলেছিলাম
সেদিন বাবু পৃথিবীতে
এসেছিল।
আমি খুশির খবর দিতে যাব এর মাঝেই
তুমি ভুল ক্ষেপে গেলে।
তারপর সকালে জানতে পারি বাবুর
মা মারা গেছেন,তখন
তোমার সাথে চাইলেও ভালো আচরন
করতে পারিনি।বাসায় এসে
দেখি তুমি নেই।
ভেবেছিলাম আমাদের
বিবাহবার্ষিকীতে বাবুকে
উপহার দিব।ওই যে বাবুটা তোমার
কাছে সেই আমাদের
সন্তান।আমাদের এত দিনের অপেক্ষার
ফসল।আমি জানি
এতোক্ষনে মেয়ের সাথে ভাব করে
ফেলেছো।তুমি তো এমন একজন যে খুব
সহজে কাউকে অধিকারে নিয়ে
যায়। আমার মনের মতন ই,আমার লুবু।
সিয়াম।
চিঠি টা পড়ে আমি কাঁন্না
থামিয়ে রাখতে
পারিনি।আমার সারা শরীর ঠান্ডা
হয়ে গেল।এত সুখ কি
আমার প্রাপ্য ছিল?জীবনে আমি ই
মনে হয় প্রথম মেয়ে যে এরকম ডিভোর্স
লেটার পেল।যা পেয়ে শরীরের সমস্ত
সুখ বের হয়ে আসতে চাইছে।আমি আর
অপেক্ষা না করে সিয়াম কে কল
দিলাম।আমার কাঁন্নায় গলা ধরে
যাচ্ছিল,
সিয়াম:- লুবু
আমি কাঁন্না করতেছি।
সিয়াম:- বাবুটার মা আর নেই।
আমি:- কি বলো? আমি আবার মারা
গেলাম কখন?আমার
এতো সকালে মরলে হবে?মেয়ে
বিয়ে দিব না?
সিয়াম কিছু বলছেনা,ওপাশ থেকে
ফুস..ফুস শব্দ।আমি খুব
বুঝেছি সিয়াম কাঁদছে।
আমি:- এই খারাপ লোক,তাড়াতাড়ি
এসে আপনার বউ আর
মেয়েকে নিয়ে জান। আমরা দুজন ই
কাঁদছি আপনার
জন্য।
সিয়াম:- দরজাটা না খুললে ভিতরে
কি করে আসবো? কখন থেকে বাসার
সামনে দাড়িয়ে আছি।মেয়ের বাবা
হয়েছি,বয়স হয়েছে,এখন কি আর শক্তি
আছে দরজা ভাঙার?........
সমাপ্ত
বেশ আগের লেখা তবে আমার না আমি আমার সংগ্রহে রেখেছিলাম
©somewhere in net ltd.