নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অধিকার ছাড়িয়া দিয়া অধিকার ধরিয়া রাখার মত বিড়ম্বনা আর হয় না সময়ের সমুদ্রে আছি,কিন্তু একমুহূর্ত সময় নেই

হিমাংসু বিপ্লব

আগে কারো সাথে পরিচয় হ’লে জানতে ইচ্ছে হতো সে কী পাশ? এখন কারো সাথে দেখা হ’লে জানতে ইচ্ছে হয় সে কী ফেল? ”

হিমাংসু বিপ্লব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্যতার ভাষা

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৮

আমি সারাটি জীবন ধরে শুধু আমার "তাঁর" সাথেই যথেষ্ট কথা বলিনি । মনে হয়েছিল , এটা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় । কিছু শব্দ গুচ্ছ দিয়ে বাক্য সাজিয়ে অন্যকে বলতে হয়, না হলে সে ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারে না যে আমি আসলেই কি বোঝাতে চাইছি । কিন্তু সেক্ষেত্রে কিন্তু আমার মুখ থেকে বেরিয়ে আসা বাক্য গুলোই যথেষ্ট না , এর সাথে সংযুক্ত হয় আমাদের কত না অঙ্গভঙ্গি , চোখের চাহনি ।
যারা বিজ্ঞান পড়েছে বা পড়ছে তারা কিছু না বলেও কত কিছু যে বলে দিতে পারে সেটার সামান্য একটি উদাহরণ হল আপনার বাড়িটি তৈরি করার সময় যে প্লান টি আপনি ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে করিয়ে নেন , সেটি । বিশ্বাস হবে না জানি কিন্তু ঐ প্লানের মধ্যে কি কি যে থাকে সেটা শুধু মাত্র লিখতে গেলেই হয়তো কয়েকশ পৃষ্ঠার একটি বই হয়ে যাবে । বিজ্ঞানের নিজস্ব একটি ভাষাও আছে। সেটি গনিত । বিজ্ঞানের যা কিছু অনুভূতি , যা কিছু অভিমান , যা কিছু বলার , সব সে বলে দেয় এই ভাষাটি দিয়ে । তথাকথিত ভাষা কে এড়িয়ে , যে কোন ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে চিত্রশিল্পীরা । যা ইচ্ছা তাই বলতে পারেন , যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন তাদের নিজস্ব ছবি আঁকার ভাষা দিয়ে এবং এই ভাষার পৃথিবীর যেকোনো মানুষের কাছেই সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে সুন্দর।
পৃথিবীতে তথাকথিত ভাষা ছাড়াও হাজার রকমের ভাষা আছে । আমি তো শুধু দুটির কথা বললাম । এছাড়াও আরও একটি ভাষা আমি জানি । সেটি "কিছু না বলা ভাষা"। ভাষা টি এতই অনন্য যে এই ভাষা প্রতিটি মানুষ থেকে মানুষে আলাদা । এই ভাষা টি সবাই পারে না শিখতে , সবাই পারে না মনের ভাব বোঝাতে। ভেবে দেখুন তো , আপনি খুব সমস্যা মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন অফিসে । বার বার ভাবতে ভাবতে চলে যাচ্ছেন চাকরিটি ছেড়ে দেয়ার দিকে ।পরিবারের কাউ কে একটি বিন্দু মাত্রও বুঝতে দিচ্ছেন না সেটি সম্পর্কে । কেউই বুঝতে পারছেন না আপনার মনের মধ্যে কি ধরনের সিডর আঘাত হানছে বার বার । ঠিক সেই কঠিন সময়ে , শত শত থেকে হাজার হাজার হাজার মাইল দূর থাকা মা ফোন করে বলছেন, " বাবু, কি হয়েছে !!!? তুই ঠিক আছিস তো !!!!?? আমার না ঠিক ভালো লাগছে না !!! তোর কিছু হচ্ছে না তো !!! যাই হোক বাবা, একটুও অসৎ হোস না বাবা ......" আপনি হয়তো ডাবল কনফিডেন্স দেখিয়ে বলছেন , "কই মা !!, কিছুই হয়নি তো ? আমি ঠিক আছি । সব কিছু দারুন চলছে ।" কিন্তু বিশ্বাস করুন , ফোনের ঐ পারে থাকা মা কখনই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না যে আপনি সত্যিই এতটা ভালো আদেও আছেন কি না ?!?! আমার লেখা আর দীর্ঘ করছি না । আমার লেখার প্রসঙ্গে আসি ।
একটু অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল ঘটনা চক্রে । মেয়েকে দেখিনি বিয়ের রাতের আগে । বাম রাজনীতির মূল্যবোধে বিশ্বাসে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল অনেক গুলো বছর । এর মধ্যে একবার আহত অবস্থাতে সঙ্গী সাথী সহ ছিলাম বান্দরবনের সীমান্তবর্তী আলিকদম নামক এক স্থানে । থাকতাম এক রাখাইন বন্ধুর বাঁশের মাচার ঘরে । হটাৎ এক শ্রাবনের রাতে বেশ বর্ষার মধ্যে, শুভ্রদা এসে কলার চেপে ধরে বললেন , ইডিয়েট সত্যিকারের বিপ্লব করতে পারবি।
ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে সেদিন রাজনীতির গুরুদেব কে বলেছিলাম পারব। ভেবেছিলাম হয়তো কোন খুব কঠিন মিশনে যেতে হবে আমাকে । আর হয়তো ফিরে আসা হবে না এই পার্থিব জগতে । আমি প্রস্তুত হয়ে গেলাম । দাদা আমাকে নিয়ে গিয়ে বসালেন এক বিয়ের পিড়ি তে । আমার জন্যই যেন সব কিছু থেমে ছিল । পুরোহিত কটমট করে জিজ্ঞাসা করেছিলেন , নাম কি , গোত্র কি , বর্ণ কি ? শুভ্রদাদা , পুরোহিতের পিছনে গিয়ে কানে কানে কি যেন বললেন । আমি টের পেলাম তার চাইনিজ রিভলবার টি খোঁচা দিয়ে ধরে আছে পুরোহিতের পিঠে । বিয়ে হয়ে গেল খুব সংক্ষেপে। সে রাতেই শুভ্রদা মেয়েটি সহ আমাকে চিটাগাঙের একটি লক্কর-ঝক্কর বাসে তুলে দিলেন আর কিছুই জানালেন না । আমি আন্দাজ করতে পারছিলাম পিছনে ঘটে যাওয়া অনেক অনেক গুলো ঘটনার কথা । কিছু টাকা আর একটি কাগজ দিয়ে বললেন , এখানেই সব দিক নির্দেশনা দেয়া আছে । পরে যোগাযোগ করে নিবেন । মেয়েটি বাসে উঠেই ঘুমিয়ে পরেছিল । আমি ভয়ে অস্থির হয়েছিলাম পুলিশের ভয়ে । এরপর অনেক অনেক ঘটনা ঘটে ছিল ।
শুভ্রদাদা আর কখনোই যোগাযোগ করেননি । পরে জেনেছিলাম আমি নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করায় শুভ্রদাদা আমাকে সেদিন রাতেই গুলি করে ফেলে দিয়েছিলেন বান্দরবনের কোন খাদে । আমার লাশ নাকি শেয়ালে খুব তৃপ্তি করে খেয়েছিল। দারুন ভাবে কথা গুলো রটিয়ে দিয়েছিলেন হয়তো শুভ্রদা। কথা গুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল । বুঝে নিয়েছিলাম , আমার কমরেডরা আসলে সেদিন আমাকে কি মিশন দিয়েছিল । যায় হোক , মেয়েটি জেগে ছিল ভোর হওয়ার একটু আগে । সপ্তবর্ষী শ্যামবর্ণের সেই মুখটির দিকে চেয়ে থেকেই আমার কেটে ছিল সারাটি রাত । ভেবেছিলাম , খুব সকাল সকাল জেনে নিব সব কিছু । কিন্তু পূবের সূর্য ওঠার সামান্য আগে মেয়েটি চোখ মেলেছিল অদ্ভুত কিছু দেখার ভয়ে। আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম তার চোখেতে । এত সুন্দর চোখ আমি দেখিনি কখনো। ভয়ে অস্থির শ্যাম বালিকা কে সেদিন আমি আর কোন কিছু জিজ্ঞাসা করার সাহস করিনি । তার চোখের ভাষাতেই জেনে নিয়েছিলাম যা জানার।
সকালে নাস্তা খেতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটি কথা বলতে পারে না । তখনও ঠিক জানি না যে আমার কথা গুলোও তার কানে ঠিক পৌছাতে পারে না । শুভ্রদাদার দেয়া কাগজে শুধু লেখা ছিল হারাধন নাগ নামে এক শিক্ষকের ঠিকানা । মেয়েটি নাম যে কি ছিল সেটাই জানা হয়নি সারাটা জীবনে । উপায়ও ছিল না । সবার কাছে আমি ওকে পরিচয় করিয়ে দেই নিবেদিতা বলে , যার হাতে সে না আমিই নিজেকে নিবেদন করেছিলাম । হারাধন নাগের কাছে না গিয়ে সেদিন চলে এসেছিলাম সাতক্ষিরাতে ছোট্মামার বাসায় । তারপর কত ইতিহাস হয়ে গেল । নতুন অনেক গুলো পরিচয় হল আমার । এরপর চলে গেছে দুই যুগেরও বেশি সময় । আমি শিখে ফেলেছি "কিছু না বলা ভাষা" । অতিবাম থেকে অতি ডান হয়ে গেছি নিবেদিতার প্রভাবে ।
প্রতিদিন সন্ধ্যায় , অফিস থেকে ফিরে নিজের ঘরের ঝুল বারান্দাতে চুপচাপ নিবেদিতার পাশে বসে থাকার মাঝে আমার একটি মাদকতা আছে । কিছু না বলে অর্থহীন ভাবে দুই জন একসাথে পাশাপাশি বসে থাকার মধ্যেও একটি অনন্যতা থাকে, একটি বিশেষত্ব থাকে , একটি অসাধারন অনুভব থাকে সেটি আমার ছেলে মেয়েরা বোঝে না । এটি নিয়ে তাই মাঝে মাঝেই অন্য রকম কথা শোনায় তারা । যদিও সেটিতে আমার বিন্দু বিসর্গ কিছু এসে যায় না

লেখা: সন্ন্যাসী

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: I enjoy 3H....
Health
Honour &
Happiness

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.