নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভগ্ন খন্ডাংশ

১৭ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৭

~ ~ ~ ভগ্ন খন্ডাংশ . . .



আমার এক বোন এবারের এস এস সি পরীক্ষার্থী ছিল। সবাই জানেন আজ ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। A+ না পাওয়া ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশুনা আসলেই করেছে কিনা তা নিয়ে ফি বছরগুলোতে আমরা অনেকেই সন্দিহান। আমার বোনটি A+ পায় নি, ওর ফলাফল শুনলে মনে হবে এত বাজে রেজাল্ট তাও এ প্লাসের যুগে! ঢাকার মেয়ে, ভাল স্কুলে পড়েছে, টিচার, রুটিন সবই ঠিকঠাক ছিল, তরপরও সে কোনরকম A পেয়েছে; কাটায় কাটায় A, য কিনা নিতান্তই তুচ্ছ আজকালকার ভাল ফলাফলের দৌড়ে।



কারনের কথায় পরে আসছি, আগে এটু বলছি ও কেমন মেয়ে। আমার ডজন খানেক কাজিনের মাঝে ওকে আমি ওর ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছি, নম্র শব্দটার জন্ম হয়তো এটা মেয়েটার জন্যই। । তাই আমি জানি কেমন মেয়ে সে, একদম চুপচাপ, বাবার খুব আদুরী, আর একদম শান্ত পিচ্চি এক খুকি যেন সে। ও আট-দশটা মেয়ের টিন-এজারের মত না, প্রেম, আড্ডা বা উড়ু মন নিয়ে ঘুরে বেড়ায়নি, স্কুল ফাঁকি দিয়ে বান্ধবিদের সাথে মাসতি করারও হয়নি তার, না ও প্রতিবন্ধিও না। তাহলে?



বলছি...

৩ বছর আগে আমি ওর বাবার লাশের খাট কাঁধে নেবার সময় ওর দিকে একবার তাকাতে চেয়েছিলাম, পারি নাই, তাকাইনি, ঐ চেহারা আমার দেখার শক্তি ছিল না। জানাজা পড়েছি ওর ভাইয়ের পাশে দাঁড়িয়ে যে কিনা জীবনার যুদ্ধ কি তা দেখার আগেই নেমে পড়ল। দীর্ঘদিনের অভাবের ভারে শেষ হতে থাকা সংসার-তরীর শেষ টুকরাটা ঐদিন ডুবে যায়। সংসারে অভাব কাকে বলে তা এই মেয়েটার চেয়ে বেশি কেউ হয়তো জানেনা। ওর একমাত্র ভাই পড়াশুনা শেষ করতে পারেনি, আজও পারে নি সংসারের হাল ধরার নূন্যতম উপার্জন করতে।



ওর গলার স্বর আর বাগানের সবচেয়ে বড় সুপারী গাছটার ডালে বসে থাকা কোন এক দোয়েল পাখির কথা বলা, কোনটাই কানে লাগে না। হুম, আমার বড় আদরের বোন সে। বারা মারা যাবার পর, সেই দিন থেকে মায়ের ছায়াটাই সব হয়ে যায় এই মেয়েটার জন্য। একটা মেয়ের জন্য বাবাকে হারানোর কষ্টটা কেমন, পাঠকদের মধ্যে কেউ বাবার আদরের কলিজার টুকরা সেই মেয়েটা হয়ে থাকলে হয়ত বুঝবেন।



ঐদিন বছর ২ আগে, আমি ওর সুস্থ মায়ের লাশটা কবরে নামিয়েছি। কাউকে কিছু না বলে, কোন অসুখে একটুর জন্যেও আর্তনাদ না করে, হঠাৎ চলে গিয়েছে মেয়েটাকে একবারেই একা করে। আমার সাহস হয়নি সেদিনও ওকে একটু দেখার, ওকে একটু সান্তনা দেবার সাহস হয়নি, আমার কোন শব্দ জানা ছিল না। ওর চেহারা দেখার ভয়টা আমি পেতে পারি নাই, সেদিনও দেখা করিনি এই হতভাগা বোনটার সাথে। ওকে দেখলে ওর কান্নার শব্দটা আমার কানে আসতো না জানি, কিন্তুু কান্নার ভাষাগুলো পড়তে পারতাম, সেগুলা পড়ে স্থির থাকার শক্তি আমার ছিল না।



গত বছরের এস এস সি পরীক্ষাথর্ী ছিল সে, পরীক্ষাটি দিতে পারেনি, নিজের মনকে হয়তো গুছাতে পেরেছে এই সময়টাতে। আল্লাহ শক্তি দিয়েছে ওকে জীবনে এগিয়ে যাবার, এতিম হওয়াটা কেমন কষ্টের সে কথাগুলা লিখার মত কোন অক্ষর আমার জানা নাই।



আজকের দিন পর্যন্ত কতগুলো ফলাফল শুনলাম, অনেক A+, অনেকগুলা হাসিভরা মুখ, মা-বাবাকে বুকে নিয়ে তোলা শত শত ছবি, তার মাঝে ওর ছবিটাও আছে হয়তো প্রকৃতির এক এলবামে, সেখানে ও সবচেয়ে ভাল ফলাফল করার স্বীকৃতিটা পেয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.