![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own
"বলিরেখা"
--- ফখরুল আমান ফয়সাল
কত রকমের বাবা আছেন তা অগনিত, আর আমাদের বাবাদের জীবনটা যে আমাদের রকম ঠিক করার দায়িত্বে শেষ হয়ে যায় তা আমরা নিজেরা বাবা হবার আগে টের পাই না। বাবাদেরকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে লিখছিনা কথাগুলো, বাবা এইসবের ধারধারি না।
আমাদের বাবা বাবা হবার পর হয়ত আর ঘুমাননি, না মায়ের মত করে না, মায়ের জেগে থাকা রাত্রির সাথে তুলনা করছি না, মাতো মা..ই। সংসারটার ভারটা সবসময় বাবার নিজেরই, কোন হেল্পিং কেউ থাকুক বা না থাকুক। এই মানুষটি যখন বাবা হয় তখন তার কর্মস্থল আর ঘরের মাঝে শুধু কয়েকটা নিঃশ্বাষ নেয়ার সময়টুকুর ফারাক থাকে। খুব স্বাচ্ছন্দেই বাবা তার নতুন দায়িত্বকে আলিঙ্গন করে নেয়।
যখন ছেলের বাবা হয় তখন তাকে আর পায় কে? মিষ্টির বন্যা বয়ে যায়, উত্তরাধিকার বলে কথা! সেদিন থেকেই শুরু হয়ে যায় এই ছোট্ট মানুষটাকে মানুষ বানানোর কাজ। আর যখন মেয়ের বাবা হয় তখন আনন্দটা এক স্নেহে আর ভালবাসার এক অন্তিম জায়গায় চলে যায়, কারন বাবার নিজের মায়ের ছোট এক version এসেছে যে! এই ছোট্ট মা'কে রেখে বাবা নড়তেই পারেনা। মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রথম যে কথাটা আসে, "আমার মা...।"
বাবা মানুষরা খুবই স্বার্থপর হয়ে যায় আমাদের কাছে সময়ের সাথে সাথে। না, বাবা নিজে হয় না, আমরা মনে করি। সমসময়ই পড়াশুনা, সমসময় জীবনের পরিকল্পনা, আর মাইর, ধমক এবং রাগের সমার্থক শব্দ হিসেবে আমরা এই বাবাকে দেখা শুরু করি। কিন্তু আমরা জানিনা বাবারা কতটা ভীতু, কতটা সরল আর কতটাই দুশ্চিন্তাগ্রস্থ জীবন তার। বাবা হবার পর থেকে সারাটা জীবন এইগুলার মাঝেই কাটে বাবার, কারন সন্তানকে নিয়ে ভয়। এই পৃথিবীটা কতটা নির্মম তা বাবার চেয়ে বেশী আর কে জানে, সেই নির্মমতার শিকার যে তারা কয়বার হয় তা আর আমাদের কান পর্যন্ত আসে না, বাবা কখনো আসতে দেন না।
বাবা তার জীবনে আর পরিবর্তন আনতে পারেন না, জীবনভর নিজের সবটাই যখন সন্তানকে দিয়ে দেন, শেষ বয়সে নিজের জন্য সন্তানের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার থাকে না, আর তখন যদি সহধর্মিনী তাকে ছেড়ে আগে চলে যায় পৃথিবী থেকে, সে কষ্টটার বর্ণনা করার ভাষা আমার জানা নেই।আজ যখন বুড়ো কোন বাবাকে দেখি, তার চেহারাতে বয়সের ছাপের চেয়ে ক্লান্তি বেশি থাকে। শরীরে একটা ফিরফিরে পাঞ্জাবী আর পায়ের সাদাসিধে জুতাজোড়া তার সম্বল। এক কাপ চা আর খবরের কাগজের বাবাটা হয়ে বসে থাকেন ঘরে।
আমরা বড় হয়ে যাই, বাবা আর ধমক দিতে পারেন না বুড়ো বাবার কথা হয়ত শুনব না তাই; বাবারা বুড়ো হয়ে যান ঠিকই কিন্তু আমাদেরকে নিয়ে বাবার সে ভয়, কপাল থেকে সেই দুশ্চিন্তার বলিরেখা আর যায় না। ওই বলিরেখার প্রতিটা ভাজ, বাবার শরীরের ভাঙা হাড়, আর তার বয়সের ভারে চলতে না পারা শরীরের কুচকানো চামড়াটা বলে দেয়, "বাবা, তুমি কত মহৎ, আজ আমি মানুষ কারন তুমি আমার বাবা।"
©somewhere in net ltd.