![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own
'নতুন বউ'
বিয়ে দেরীতে করেনি, কিন্তু একমাত্র সন্তানের মুখ দেখতে দেখতে বয়স তার ৪০ পেরিয়ে গেছে। কিছু মানত, দোয়া আর অনেকগুলা রাত সিজদায় কাটানোর পর সেই দিনটা এসেছিল যেদিন এক লাল টুকটুকে বুড়ি কোলে নেবার পর তার সার্টের কলার খামচে ধরেছিল। মনে হচ্ছিল বলছে, বাবা, এইতো আমি এসেছি, তোমাকে আর ছুটির দিনে একা থাকতে হবে না, আর বার বার চা দিতে বলে মায়ের চোখ রাঙানিকে ভয় পেতে হবে না। সেদিন মেয়ের মুখটা দেখে বুঝতে পারলেন খোদা কেন এত দেরি করল ওকে পাঠাতে; জীবনের এই অনুভূতিটা এখনকার চেয়ে বেশি গভীর হয়তো আগে লাগতো না।
সেদিন থেকে বাবা অফিস থেকে ফিরতে দেরি করেনি আর, বরং সব কাজ ঘন্টাখানেক আগে থেকেই শেষ করে চলে আসেন বাসায়। আসার পথে মানিকের দোকানে বসে আর ঘন্টা ধরে খোসগল্পও করে না। বেচারা মানিকের চায়ের দোকানের এক আড্ডাবাজ কমে গেলেও মানিকের মনখারাপটা থাকে নি বাবার উচ্ছাস দেখে। বাবা প্রতিদিনই আসার সময় মানিককে বলত কিভাবে কিভাবে তার মেয়ে ঘুমের মধ্যে হাই তুলে, কিভাবে হাসে আর কিভাবে তার কোলে আসলেই ঘুমিয়ে পড়ে।
আজ ২১ বছর হয়ে গেছে বাবার সেই লালটুকটুকে বুড়িটার, অথচ বাবা আজও অফিস থেকে ফিরতে দেরি করেন না, আজও চায়ের দোকানে বসা হয় না। বাবা এখন ষাটউর্ধ্ব, বেসরকারি চাকরিটা থেকে অবসর নেবার সময় হল বলে, কিন্তু একমাত্র মেয়ের বিয়ে না দিয়ে অবসর নিতে চাচ্ছেন না, আবার মেয়েকে দূরে পাঠিয়ে দেওয়ার সাহসটা অনেক চেষ্টা করেও অর্জন করে পারে নি। মাঝে মাঝে বাবা একা বসে কাঁদেন, কাউকে দেখতে দেন না, এমনকি মাকেও না। কিন্তু মেয়ে বুঝতে পারে সবই, বাবার মুখখানা দেখেই সে বুঝে যায় রাতে বাবা বসে কাটিয়েছে পুরনো এলবামের ছবিগুলা দেখে। সে নিজেও কিছু বলতে পারে না, কি বলে বুঝাবে এই বাবাকে, তাকেই বা কে বুঝাবে যখন বাবাকে ছেড়ে যাবার কথা ভাবলে সবার সামনে থেকে হঠাৎ মুখ লুকিয়ে কাঁদতে হয়?
বাবা আজ বিদায় দিল তার সেই ছোট্ট বুড়িটাকে; অনেক সাজিয়ে, সবাই বলছিল পরীর মত নাকি লাগছিল তার মেয়েটাকে আজ, কিন্তু বাবার কাছে যেন সার্টের কলার খামছে ধরা সেই টুকটুকে বুড়িটাকে কেউ সরিয়ে নিচ্ছিল চিরতরে। যাবার সময় মেয়ে অনেকগুলা প্রতিজ্ঞা করিয়েছে বাবাকে, নিয়মিত হাঁটবে, ডায়াবেটিকস বাড়তে দিবেনা, ঔষধ সময়মত খাবে, মায়ের সাথে রাগ করবে না, প্রতি সপ্তাহে মেয়েকে দেখতে যাবে, আর কাঁদতে পারবেনা। দু’জনই জানে মিছেমিছি দুটো প্রতিজ্ঞা করেছে, প্রতি সপ্তাহে না, বাবা প্রতিদিন দেখতে চাইবে মেয়েকে, যার জন্য একই শহরে বিয়ে দিয়েছে। আর কাঁদবে না সে! তা অসম্ভব, চোখ বুঝার আগ পর্যন্ত হয়ত কোন বাবা তা বন্ধ করতে পারেনা।
আজ বাবা আবারও মানিকের দোকানে গিয়ে চা খেতে বসেছে, মানিক ভাইও আজ কান্না থামাতে পারেনি। বাবার চা কখন ঠান্ডা হয়ে গেছে হাতে নিয়ে বসে কি যেন ভাবতে ভাবতে। মানিক ভাই আরেক কাপ দিতে চেয়েছিল, বাবা নেয়নি, ঠান্ডা চা খেয়েই চলে গেছে বাবা। আজ বাবার অনেক অভিমান মায়ের সাথে, কেন তাকে বাঁধা দিল না মেয়ের বিয়ে ঠিক করানোর সময়, কেন বার বার তাকে মনে করিয়ে দিল যে তার বয়স হয়েছে, মেয়েকে বিয়েটা তাই বেঁচে থাকতেই দিতে হবে, তাই কাল থেকেই বাবা কথা বন্ধ করে দিয়েছে মায়ের সাথে। বাবা আজ ঘুমাবেন না, রাতে নামাজ পড়ে চেষ্টা করেছিলেন কিছুক্ষন ঘুমাতে, পারেন নি। অন্তত আজ রাতটা বাবা চেয়েছিলেন মেয়ের দেয়া ওয়াদা রাখতে, পারেন নি বাবা। কিছুক্ষন মাকে বকে কান্নাটা থামিয়ে রেখেছিলেন, পরে যখন ঔষধ খেতে গিয়ে দেখলেন তার মেয়ে সবগুলা বক্সে আলাদা করে লিখে গিয়েছে প্রতিবেলার ঔষধের হিসেব, তখন আর পারেন নি। রাতটা সেভাবেই কেটেছে।
আজ বাবা তার ছোট্ট নাতনিকে কোলে নিয়ে বসে আছেন ঘরের দোড়গোড়ায়, আজও তেমনি এক লাল টুকটুকে বুড়ি তার পাজ্ঞাবীর বুতামটা খামচে ধরে রেখেছে চোখগুলো বড় করে তাকিয়ে।পাশে তার মেয়ে বাবার ঘারে মাথা রেখে হাসছে আর বলছে, 'বাবা তোমার নতুন বউ, তোমাকে চোখ রাঙাচ্ছে।'
২| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৫০
আহমেদ নিশো বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:০৯
আমার শৈশব বলেছেন: কি বলার আছে আর . !
৪| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:১৬
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
খুব ভাল লাগল লেখাটা পড়ে+++
৫| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৪৯
মিনুল বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন। শুভকামনা রইলো।
৬| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:৪১
ফয়সাল খালাসী বলেছেন: বাবা হইতে মুন্চায় :#>
৭| ০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ৩:৪৬
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম ..
শুভকামনাও রইলো ...
৮| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৫২
বটের ফল বলেছেন: সকাল বেলায় অসাধারন এক লেখা পড়লাম ভাই আপনার সুবাদে।
একদম সহজ ভাষায় , ছোট ছোট কথায় অসাধারন একটি লেখা।
বলার মত কিছু নেই। শুধু জানিয়ে যাই পোষ্টে +++++++++ না দিয়ে পারলামনা ভাই।
ভালো থাকুন অনেক বেশি।
৯| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৪
স্বপ্ন কাঠি বলেছেন:
১০| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০১
তাসজিদ বলেছেন: এই মনেহয় জীবন।
লেখায় ++++++++++++++++++
১১| ০৭ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৫২
নিঃসঙ্গ অভিযাত্রিক বলেছেন: আমি তো এখনো বাবাই হইনি; তাহলে চোখে পানি এসে গেলো কেন?
আমার চোখে পানি আনানোর জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ...
১২| ০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৪
ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: আপনাদের মন্তব্য না পেলে জানতাম না লিখাটার গভীরতা। আমি কৃতঞ্জ আপনাদের কাছে।
১৩| ০৭ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ২:১১
আমি ইহতিব বলেছেন: দারুন লিখেছেন। বাবার জন্য মেয়েদের ভালোবাসা অন্যরকম। আপনার লেখায় তা আরো সুন্দরভাবে ফুটে উঠেছে।
২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৭
ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
১৪| ১২ ই জুন, ২০১৪ রাত ২:৩৭
এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন: আমার চোখ দিয়েও অজান্তে পানি এসে জমেছিল। আমিও বাবা এখন। আমার পুত্র রত্ন আমার সামনে ১৬ বছরের এক মেধাবী যুবক। বছর দুইয়ের মধ্যে উচ্চতর পড়াশুনা করার জন্য (আমেরিকা যুক্ত রাষ্টের বিমান বাহিনী একাডেমী) দূরে চলে যাবে। জানিনা কিভাবে থকবো।
১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৬
ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: আপনার এবং আপনার ছেলের জন্য শুভকামনা রইল।
১৫| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
এম হাবিব আহসান বলেছেন: অসাধারন। +++++
২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৫২
ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৩৫
নিয়ামুল ইসলাম বলেছেন: