নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মাহীনের স্ত্রী"

০৯ ই জুন, ২০১৪ ভোর ৬:৫৪

"মাহীনের স্ত্রী"



বাবা-মায়ের পছন্দেই বিয়েটা ঠিক হয়। প্রথম যেদিন মাহীন দেখতে যায় বুঝে গিয়েছিল এই মেয়েকেই তার জীবনটা খুঁজছিল এত বছর, আর তাসনোভা নিজেও সেদিন প্রথমে জানতে পারল তার অপেক্ষা করাটা ভুল ছিল না। প্রথম দেখাতেই আংটি বদল। আর সেদিন থেকে বিয়ের দিনের জন্যে অপেক্ষার কষ্টটা দু’জনকেই ভালোভাবেই ভোগাচ্ছিল। আসলে বদলটা আংটির হয়নি, হয়েছে দু’টি হৃদয়ের, তাই আর দূরে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ধুমধামটা বাইরের চেয়েও মনের ভেতরে অনেক বেশি হয়ে বিয়েটা সম্পন্ন হল। বিয়ের প্রথম রাতে দেয়া তাসনোভার উপহারটা মাহীন হাত থেকে সরাতে পারেনি অনেকক্ষন, তাকিয়ে ছিল বোকার মত। পরে বউয়ের বকাটাও প্রথম রাতেই শুনতে হয়েছিল!



২ বছর পার হয়ে গেল তাদের প্রেমের সংসারের, বাবা-মা হবার প্ল্যানটা এখনো করব করব বলেই রয়ে আছে দু’জনের মনে। মাহীনের কাছে সবসময় মনে হয় তাসনোভা খাওয়া-দাওয়া ঠিকমত করে না, তাই শুকিয়ে যাচ্ছে, নিজের খেয়াল রাখে না; আর তাসনোভার তা কখনোই মনে হয় না উল্টো স্বামীকেই গালমন্দ করে সময়মত অফিস থেকে কেন ফিরে না, কেন বাইরে একা কিছু খেতে চায় না, কেনইবা সে নিজে না খাওয়া পর্যন্ত মুখে কিছু দিতে চায় না। এই দু’বছরে কেউ কোথাও এক রাত দূরে গিয়ে থাকতে পারে নি। মাঝে মাঝে অফিসে লাঞ্চ করতে দেরী হলে বাসায় তাসনোভা টেবিলে খাবার নিয়ে বসে থাকতো, কখন মাহীনের ফোনটা আসবে তারপর শুরু করবে; আর ওদিকে মাহীনতো বহু কষ্টে মিটিং এটেন্ড করে আছে, বার বার ঘড়ি দেখছে আর ভাবছে বউটা তার নিশ্চই না খেয়ে বসে আছে ফোনটার দিকে তাকিয়ে! একজন আরেকজনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত না দেখে বলে দিতে পারত।



প্রথম বিবাহবার্ষিকিতে মাহীন তাসনোভার জন্যে একটা হীরার আংটি দেয়। মধ্যম আয়ের চাকরি তার, সামর্থ্য না হবারই কথা; তাই তাসনোভা বার বার জিজ্ঞেস করে টাকা কোথায় পেয়েছে? বহুবার জিজ্ঞাসা, অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে রাখা আর মিছেমিছি রাগ দেখানোর পর সফল হয় জানতে যে ৪ মাস ধরে ছুটির দিন, ওভারটাইম কাজ করে আর অফিস থেকে পাওয়া ল্যাপটপটা বিক্রয় করে তারপর আনতে পেরেছে। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই কথাটা তাসনোভাও আঁচ করতে পেরেছিল, আত্মার সম্পর্কটাতো সেখানেই। আঁচ করতে সেদিনই পেরেছিল যেদিন থেকে দেখতে পেল স্বামী অফিস থেকে ফিরতে দেরি করছে অথচ মানিব্যাগের একটা টাকাও বেশি খরচ করেনি অন্য দিন থেকে। রাতে বাসায় ফেরার পর যখন দেখত মাহীরের মুখখানা শুকিয়ে আছে অথচ অফিসের কাজ নিয়ে একটুও বিরক্তি দেখাচ্ছে না, সেদিনই বুঝে গিয়েছিল। ছোট এই অলক্ষ্যনীয় বিষয়গুলো তখনি ধরা পরে যখন একটা মানুষের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুহূর্তগুলো অনেক বৃহৎ হয়ে যায় কাউকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে।



বিয়ের এই ৫ বছর কয়েকটা দিনের মতই মনে হচ্ছে আজ দু’জনের কাছে, মনে হচ্ছে এইতো সেদিনই আংটিটার বদল হয়েছিল, এইতো সেদিনের কথা যেদিন সংসারের প্রথম বাজারটা একজন অন্যের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে করেছিল। এই ভালবাসাটা শেষ পর্যন্ত ভালবাসার কথাই হয়ে ছিল, নাটকিয় কোন রূপ নেয়নি যতদিন না অন্তিম সে সত্যিটা একটু আগে থেকে চলে আসার পরিকল্পনা করে, কারো একজনের চলে যাওয়া; না ভালবাসায় ফাটল না, নিয়তির দেয়া বিদায়। এমন হবার কথা ছিল না, মাহীন কখনো বলেনি এমন করবে সে, তাসনোভা তাকে মাফ করবে না। কিভাবে মাফ করবে সে, মাহীরতো কোন দিন বলেনি সে অসুস্থ, একটা দিন বলেনি তার শরীরটায় খুব কষ্ট হচ্ছিল, যখন বলেছে তখন তাসনোভাই বুঝতে পেয়ে বার বার জিজ্ঞেস করাতে বলেছিল। তার এক চাচা ডাক্তার, সাথে সাথেই তার কাছে নিয়ে গেছে। কিন্ত ডাক্তার কেন এমন কথা বলল, ’দেরি হয়ে গেছেরে মা’ তারপর থেকে আর কোনদিন সেই ডাক্তার চাচার সাথে দেখা করেনি। মাহীরের ক্যন্সারটা অনেক দেরিতে ধরা পড়েছে।



মাহীন একটা ওয়াদা করেছিল বিয়ের রাতে, কখনো ছেড়ে না যাওয়ার, কখনোই না। সে ওয়াদা রাখতে পারেনি বলে মাফ চেয়েছিল, তাসনোভা মাফ করতে পারেনি, সে মাফ করবে না বলে দিয়েছে, ‘তুমি যেওনা, একটু থাকো না, একটু থাকো আমার কাছে...’ আর্তনাদের ভাষাটা মাহীন তাসনোভার চোখ থেকেই পড়েছিল, থাকতে চেয়েছিল, কিন্তু পারল না।



মাহীন চলে গিয়েছে ৩ মাস হল, যাবার সময় আর যে ফিরবে না তা বলেনি। আজ তাদের বিবাহবার্ষিকি, তাসনোভাকে একা কাটাতে দেয়নি মাহীন। সকালেই একটা চিঠি আসে, চিঠিটার প্রেরকের নাম দেখে বুকটায় একটা টান লাগে। মাহীনের নাম। চিঠির ভেতরে তেমন কিছুই লিখা ছিল না, একটা সাদা কাগজ, আর তার নিচের দিকটায় শুধু একটা ই-মেইলের ঠিকানা আর পাসওয়ার্ড লিখা। ই-মেইলটা তাদের দু’জনের নামে করা, আর পাসওয়ার্ডটা তাসনোভার নাম। সাথে সাথেই ঢুকল সেই ই-মেইলে।



শতাধিক মেইল ড্রাফটে জমা পড়ে আছে, বিবাহবার্ষিকিতে করা শুভেচ্ছা, জন্মদিনের জন্য লিখা কবিতা, বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া না বলা ছোট ছোট কথা, আর ভালবাসাটা অপূর্ণ রেখে যাবার হাজারো দীর্ঘ নিঃশ্বাষের বর্ণনা।



“আজও মাফ করনি তাইনা? আমি নিজেও নিজেকে মাফ করিনি জানো? আমি যাবার সময় তোমার শেষ কথাটা কি হবে আমি জানি, থাকতে বলবা তুমি আমাকে, একটু থাকতে বলবা আমাকে তুমি, কসম আমি চাইছি থাকতে, কসম…….”

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৭:৫৬

অবিবাহিত ছেলে বলেছেন: অসাধারণ হয়েছে । আমার জীবনের সাথে অনেকটা মিলে যায় । ধন্যবাদ..

২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৩৩

আজীব ০০৭ বলেছেন: ++

৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১০

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞ

৪| ০৯ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫৮

আরাফ করিম বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০২

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, আরাফ করিম ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.