নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপনি মানুষ নাকি অন্ধ?

০৯ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৩

লোকাল বাস; এটা নিয়ে লিখতে হলে ডজনখানেক পর্ব ছাড়া শেষ হবে না, আর পর্ব বাড়বে তখন যখন বিষয়ের সাক্ষী চোখে আঙ্গুল দিয়ে লিখতে চাপ দিবে মনের কাগজে। আচ্ছা কঠিন কথার শুরু? নাহ, শেষ করলাম।



লোকাল বাসে বসবাস আমাদের কত্তদিনের! বসবাস কথাটা কেন বললাম?? প্রতিদিন উনি আসবেন তাই অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা ঘন্টার পর ঘন্টা, হোম-টিচারের জন্যে এতটা সময় অপেক্ষা করলে ভালবাসা+দোয়া পাইকারি পেতাম। বাস আসার পর তাতে উঠে আবার দাঁড়িয়ে থাকা, আহা! ঝুলন্ত হাতগুলার ছড়াছড়ি। ব্যায়ামটা রেগুলার করবো কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি শরীরখানা টানা দেওয়াতো দূরে থাক, কিন্তু এইখানে জবরদস্ত হচ্ছে তা। আব্বুর সাথে ১/২টা প্রশ্নের উত্তর দিতে হোক আর তার সাথে নাস্তার টেবিলেই হোক, ১০টা মিনিট কিছু না করে চেয়ারে বসে থাকা?? omg, never! অথচ এই মুড়ির টিনের ভেতরে বসার একটা সিট পেলেই কি যে শান্তি, এইবার ঘন্টাগুলো কাটবে কি যে মজায়! বসে থাকা ঘন্টার পর ঘন্টা, যা ছাত্র হিসেবে আমি পড়ার টেবিলেও এতটা সময় নিয়ে বসি না। আর ঘুম, ওহো! এখানকার চেয়ে দ্রুত আর গভীর ঘুম কি আর কোথাও হয়?!



আজকের ঘটে যাওয়া একটা দৃশ্যের কথা বলতে এই সুচনার উদয়। বসে ছিলাম সেই শান্তির সিটে; শক্ত, নোংরা আর ছোট্র লোহার সিট। (বাসার সোফার চেয়েও মাঝে মাঝে বেশি আরামের মনে হয় যদিও) জ্যামে বসে ঘেমে থাকাটা নিত্যদিনের, ক্লাশের জন্যে দেরী হচ্ছিল, তাই আজ ঝিমাচ্ছিলাম না। এমন সময় ব্যস্ত সে বাসের পেছন থেকে এক লোক উঠে আমার পাশে দাঁড়াল সিট ধরে, নামবেন তিনি নেক্সট স্টপেজে তাই। লোকটির দিকে চোখ পড়তেই বুঝলাম তার দু'চোখই অন্ধ। মধ্যবয়সী লোকটি একদিকে চেয়ে আছে, এমন কাউকে দেখলে সবার মনে যে চিন্তা আসে আমারও তা, আহারে লোকটা কিছুই দেখতে পায় না, আমরা কত ভাগ্যবান। বাস থেমে থেমে এগুচ্ছিল, লোকটি কিছুক্ষন দাড়িয়ে আমার ঠিক সামনের সিটে তার হাত রেখে। তার হাতটার দিকে তাকালাম, তাকিয়ে দেখতে চাইলাম কোন পার্থক্য করতে পারি কিনা সেই হাতের। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম, কই না তো, একইতো আমার, আমাদের হাতের মতই! সবইতো ঠিক আছে, একই রকম মানুষ, সবইতো আমাদের মত, তাহলে কেন এমন হল? কেন বর্ননা করার মত তার জীবনে শুধু একটা রঙই থাকবে??



আমরা অন্ধদেরকে শুধু দেখেই গেলাম, কখনো ভিক্ষা দিতে গিয়ে, কখনো রাস্তায় ফুটপাতে উপরের দিকে তাকিয়ে গান গাইতে গাইতে যাবার সময়, কখনো অবাক হয়ে তাদের হেঁটে যাওয়াটার দিকে, আবার কখনো আমরা চেষ্টা করি খুঁজে বের করতে আসলেই অন্ধ কিনা, কখনো বা জিজ্ঞেসও করে ফেলি, 'কিরে? অভিনয় করিসনাতো??' হায়রে আমাদের চেতনা!



লোকটার রাখা হাতটা আমি ধরে দেখেছি, আলতো করে উপর থেকে ছুঁয়ে দেখতে, কেমন সে রক্ত-মাংশের শরীরটা তা জানতে, গরম রক্ত যে সে শরীরেও প্রবাহিত হয় তার অস্তিত্বটা একটু বুঝতে। নাহ পারিনি, ধরেছি ঠিকই, কিন্তু কই কিছুই বুঝতে পারলাম না, সেখানে কোন ভিন্নতার ছাপ নেই, নেই কোন ব্যাথার চিহ্ন। কথাটা আবারও প্রমানিত হল, 'ব্যাথা যার সেই বুঝে আমরা শুধু বুঝার ভানটাই করতে পারি।'



আমি বুঝিনি লোকটা যে একজন ভিক্ষুক ছিলেন, আমার হাতের স্পর্শ করতে না করতেই সে সাথে সাথেই তার হাতটা বাড়িয়ে দিল সেই ভিক্ষার ভঙ্গিতে। তাকালাম তার দিকে, পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করতে না করতেই দেখি সামনের দিকে চলে গেলেন তিনি বাস থেকে নামার জন্যে। আমিও সামনে গিয়ে কিছু টাকা দিলাম তার হাতটা ধরে, এইবার বুঝতে পারলাম যে তার দেহের প্রানটাও আমাদেরই, আমাদের মতই তার হৃদকম্পন। আরে আমরাইতো, আমিইতো। ফারাক শুধু দুটো চোখের। আর এরই জন্য ভিন্ন তার নাম, ভিন্ন তার জগৎ, অন্ধকার তার আজীবনের স্বপ্নলোক, হায়রে আমরা কি এমন করে ফেললাম আল্লাহ? শুকরিয়া জানিয়ে শেষ করা যাবে না আল্লাহর কাছে।



অন্ধত্ব কেউ কি সাধে নেয়, বরণ করে নেয় কেউ? নেয় নেয়, এই যে আমরা অন্ধ, আমরাতো ইচ্ছে করেই অন্ধ সেজে সমাজে চলছি। বইয়ে পড়েছি, যখন বস্তুর উপর আলোর প্রতিফলিত রশ্মি আমাদের চোখে পড়ে বলেই আমরা দেখতে পাই আশেপাশের সবকিছু। তাহলে সমাজের ভাগ্যাহত মানুষগুলোর জীবনের কষ্টের দৃশ্যমান প্রতিফলন যে মানুষের চোখে পড়েনা সে মানুষটাও কি অন্ধ না? অবশ্য সমাজ সৃষ্টি হয়ে শুধু ভালোকে আরো ভালবাসতে শিখিয়েছে, এখানে দূর্বলদের জায়গা নেই, তাদের জন্যে রাখি হয় ঘৃণা, নয় ভিক্ষা, আর নয়তো আজীবন দাসত্ব; তারা ভালবাসার জন্যে না, আমাদের থেকে করুনা পাবার জন্যে জন্মেছে।



হায়রে মানুষ, আমরা হয়ে আছি নিয়তির দাস! যে যেভাবে জন্মালাম সেখান থেকেই শুধু পৃথিবীকে দেখলাম, আর তার মধ্যেকার মানুষগুলোর সাথে শিখিয়ে দেয়া আচরন করে গেলাম, জন্মসূত্রে পাওয়া ক্ষমতার চর্চাতেই ব্যস্ত রইলাম! মানুষ হওয়া দূরে থাক প্রানী হবার ম্ূল্যটাও যদি দিতে পারতাম!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০৩

উদাস কিশোর বলেছেন: সবার দৃষ্টিভঙ্গি এমন হলে হয়তো এই বৈষম্য খানিকটা হলেও দূর হইতো ।

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০০

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, উদাস কিশোর

২| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৩

ঢাকাবাসী বলেছেন: মনুষ্য জাতি হিসেবে আমরা খুবই নিকৃষ্ট মানের!

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ৮:০২

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: নিকৃষ্ট, উৎকৃষ্ট দুইটাই হওয়া যায়, আমরা যেটা বেছে নেই আরকি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.