নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দুই হাত"

১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪৮

আম গাছের পাশে বাড়ির সাদা উঠানটা আমাগো ছিল। কড়া রোদ, আর আম পড়া তুফান, দুইজন একসাথেই দাপড়াইছি এখানে, দুই ভাই একসাথেই জ্বালাইছি মাকে আজীবন, একসাথেই লাকড়ির বাড়ি খাইছি। আর বাবার সাথেতো একলগেই বাজারে যাইতাম, দু’জনকেই বাবা দু’পয়সার আইসক্রিম কিনা দিত; লাল রঙের বরফগুলা কি যে মজা করে খাইতাম! প্রতিযোগিতা লাগতাম কে বেশিক্ষন মুখে নিয়া থাকতে পারবো। স্কুল ফাকিটাও কখনো একলা দেইনাই, আর হেডস্যারতো মজা করেই দুইজনকে একসাথে ন্যাংটা করে বেত লাগাতেন পাছায়, "দুইয়ে মিলে বাঁদরামি!!!” মারপিট আমরা আমরাতো করেছিই,আবার ও’পাড়ার কেউ ফুটবল খেলায় আমাদের সাথে জিতে গেলে একসাথেই দিতাম মাইর, কত মাইর যে একলগে খাইছি তারও শেষ নাই! কোন টু শব্দ ছাড়া পাশের বাড়ির মুরগী চুরি করা আমাদের থেকে শিখতে পারবো এই আমলের ছিঁচকা চোরেরা। পেয়ারা চুরির ভাগযোগে অবশ্য কখনোই জিততে দেই নাই ভাইরে, পারলে বড় দুইটাই নিয়া দিতাম দৌড়, দৌড়াতে দৌড়াতে খাওয়াও শেষ হয়ে যেত, শেষে দিতাম ঐ গাঙয়ে লাফ। ভাই কি করবে, পরে নিজেও দিত লাফ। তবে সাঁতারে ভাই সেরা, আমিতো কতবার মাঝ নদীতে তলিয়ে যাইতে নিছি, ভাই এক ডুবে নদীর তল থিকা আমারে বাঁচাইছে, বাপেরেও কয় নাই। অবশ্য তার জন্যেও কোনদিন ভাইয়ের সাথে পেয়ারা ভাগাভাগিতে আপোস করি নাই!



আপন ভাই আমরা, কিছু দিন আগ পর্যন্ত আপন ছিলাম। আজ আমরা আলাদা থাকি। অনেক যুক্তি আছে আমাদের আলাদা থাকার, থাকি আলাদা তো কি হইছে, বাপে কি কম দিছে নাকি? ওরে একা ভোগ করতে দিমু কেন! আমারটা আলাদা, ওরটা আলাদা। আর ওতো একটা অমানুষ। আমাকে দেখলে তার নাকি রক্ত গরম হয়ে যায়! আমার ছেলেগো দেখতে পারে না, আমি না হয় একটু রাগ হইছিলাম বইলা তার ঘরটা একদিন জ্বালাইছি, তার বেড়ায় আগুন দিছিলাম একদিন, তো কি হইছে? তাই বলে আমার গোয়ালেতো সেই আগুন দিছে, আমার গরুগুলারেও তো সেই মারলো, তারপর আবার বাড়ির সামনে আইসা হুমকিও দিছে সামনের বার নাকি আমাকে সহ পোড়াইবো, কেমন ভাই সে?। আমিও দেইখা নিব, লাঠিয়ালদের খবর দিছি আইজ রাতেই আসবে তার ঘাড় ভাঙতে। এই বয়সে আর দাঁড়ানো লাগবো না, বলছি অবশ্য জানে মারতে না, শুধু ঠ্যাং ভাঙাতে। লুলাটারে দেখতে কি যে ভালো লাগবো আমার!!! মামলাটাও আমি আগে দিমু এইবার, মাতবরসাব কইছে যে আগে মামলা দেয় বিচার নাকি তার পক্ষেই যায়; দেইখা ছারমু গত বছর তুমি আমার নামে ওয়ারেন্ট আনাইছিলি না, এইবার বুঝবা।



কাল রাতে বড় ভাই মারা গেছে হাঁপানিতে, অনেক দিন পর শান্তি লাগতেছে মনে, এই ভরদুপুরে আজ মনে হয় তামাকটায়ও মজা পাইতাছি বেশি।

-কইগো বউ, পোলা দুইডা কই?

-নদীতে গেছে গোসল করতে, কইছি কম ডুবাইছ শেনে না আমার কথা, বেলা পইড়া গেলো অহনো আসার কোন নাম আছে!!

-এর চেয়ে বেশীক্ষন আমরা ডুবাইতাম, সেই বিকাল পর্যন্ত। পরে মায় যে কত মারতো! তুই কিন্তু বউ কিছু কবিনা পোলাগরে।

-হ, বুঝছি, বাপের মতই হইছে পোলা।

-হাঃ হাঃ, বুঝলি বউ, আমি যে কতবার মরতে নিছিলাম, ওই হারামজাদা ভাই আমারে বাঁচাইছে। এবার না, করবার যে মরতে মরতে বাঁচছি! বুঝলি বউ, নদীর তলে যাওয়া ভাইয়ের জন্যে খেইল ছিল।



এমন সময় এক আর্ত চিৎকার ছোট ছেলের, “মা, মাগো!!!”

-কিরে, কি হইছে???

-ভাইরে পাইতাছিনা, হেইপাড় গেছিলো সাতরাইয়া, আওনের সময় দেহি মাইজ গাঙয়ে আইসা থাইমা গেল, পরে আর দেখলাম না, আমি অনেক ডাকছি, অনেক চিল্লায়া ডাকছি...

ভাতের হাঁড়িটা উপুর হয়ে পড়ে গেল বউয়ের হাত থেকে, দৌড়িয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখি সাড়া গাঁয়ের মানুষ দাঁড়ায়া তামাশা দেখতেছে, কিছু মাঝিরা জাল ফেলে খুঁজতেছিল আধমরা নদীর এদিক ওদিক। ডুব দিয়েও খুজতেছিল কয়েকজন। আমিও নামতে চাইছি এই বুড়া শরীর নিয়া, কেউ দিল না আমারে নামতে। সন্ধ্যা হইতেই একে একে সবাই উঠে গেল, পাইল না কেউ আমার পোলাটাকে। আমি তখনো পাড়ে দাঁড়ায়া চিৎকার করতেছিলাম

-কেউ একটু ডুব দিয়া দেখনা পরাণ আমার কই, বাপজান তুই কই গেলিরে, দেখনা তোরা একটু ডুব দিয়া, তোগো পায়ে ধরি, আমার মানিকরে তলায়া যাইতে দিস নারে তোরা। নদীরে, এত বছরের পুরনো ক্ষুধা আইজ মিটাইলি তুই? ভাইরে, কই তুই.......

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০১৪ রাত ১:৩১

মাসুম বকাউল বলেছেন: আমাদের সমাজের কঠিন এক বাস্তবতা ।

১১ ই জুন, ২০১৪ সকাল ৮:৫৮

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: আসলেই!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.