নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দুই পরী"

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:৫৭

"দুই পরী"



আমাদের বেবুর বয়স ৩ মাস, এই তিন মাসে কিভাবে তার ছোট্ট মুখটাকে ইয়া বড় করে, মনভুলানো একটা হাই তুলতে হয়, আর কিভাবে ছোট্ট কালো মার্বেলের চোখগুলোকে উল্টিয়ে এদিক ওদিক ঘুরাতে হয় তা শিখে গেছে। তুলার মত নরম হাত-পাগুলোকে টান করার স্বভাবটা ১দিনের বয়স থেকেই। তবে তার ঘুমটা আমার জন্যে খুব কষ্টের! না, জেগে থাকে বলে না, বরং ও ঘুমিয়ে গেলে আমি কার সাথে নাক ঘষবো! জেগে থাকলে আল্লাদি করে কত কথা বলতে পারি, ঘুমালেতো শুধু একটু আদর দিয়েই শেষ!



বেবু নামটা আমি দিই নি, দিয়েছে ওর মা, উর্মি। বাবা আমি, নাম আমিও ভেবে রেখেছিলাম, গর্ভকালীন অবস্থায় ওর কষ্ট দেখে বাবা হিসেবে গর্ব করার মত তেমন কিছু খুজে পেলাম না। শেষ ৬টা মাস আমি উর্মিকে দেখেছি কিভাবে ব্যথায় কষ্ট পেয়েছে, কখনো আমাকে বলেছে, কখনো একাই যন্ত্রনাটা সহ্য করেছে, জানায়নি আমাকে। আমি যতদিন পেরেছি অফিস থেকে দ্রুত চলে এসেছি। ওর পাশে শুধু আমার মা আর ছোট বোনকে রেখে আশ্বস্ত করতে পারিনি নিজেকে, তাই চলে আসতাম। আমি জানতাম ও আমাকে সব জানাবে না, জানিয়েই বা কি হয়, আমরাতো শুধু বাবা হয়েই থাকি, কোন মায়ের এতটুকু কষ্টের ভাগ কি কখনো নিতে পারি! এই যন্ত্রনাটা যার সেই বুঝে। বেবু হবার আগে আমি উর্মিকে কাঁদতে দেখেছি অনেক রাতে, কখনো ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি ও ব্যথায় কাঁতরাচ্ছে। ঘুম আমারও হতো না, কিন্তু আমার রাত জাগাটা ছিল শুধুই চোখ খুলে রাখার, আর ওরটা অনেক কষ্টকে চাপা দিয়ে ঘুমানোর ভান করার। শুধু দেখেই থাকতে পেরেছি, কিছু করতে পারিনি, আফসোস করতাম, একটু যদি ওর ব্যথাটা শেয়ার করে নিতে পারতাম!



নার্স যখন বেবুকে আমার কোলে দিচ্ছিল, তখন আমার চোখ খুজছিল উর্মিকে। দেখলাম বেডে শুয়ে তাকিয়ে আছে, আমি আর থাকতে পারলাম না, ওর কাছে গিয়ে পাশে বসে হাতটা ধরলাম। আমার উর্মি শত হাসি দিয়েও ওর চোখ-মুখের ক্লান্তি আর এত দিনের বেদনার ছাপ লুকাতে পারেনি আমার থেকে। আমি বেবুকে তখনো কোলে নেয়ার কথা ভাবতে পারছিলাম না। ওর হাতটা ধরে যখন বুকে লাগালাম, যে ধন্যবাদটা বুকে করে নিয়ে এসেছিলাম উর্মির জন্যে, মুখে বলতে হল না, ও যেন বুক থেকে শুনে গেল; মৃদু হাসি দিয়ে বলল, ‘আপনাকেও’।



মেয়ে হবার পর আমি কতটা খুশি হব আমি তা ও ভালো করেই জানে, বিয়ের প্রথম থেকেই আমার চাওয়া ছিল একটা মেয়ের, কত যে বোকার মত ঝগড়া করেছি দু’জন! কতগুলা নাম যে ঠিক করে রেখেছিলাম আমার রাজকুমারির জন্যে, তারপরও যখন ওকেই বললাম নামটা রাখতে, ও অবাক হয়ে তাকিয়েছিল। আমি ওর কপালটায় একটা চুমু দিয়ে বললাম, তুমি বল কি নাম দিবে? বিয়ের প্রথম দিন ওয়াদা করেছিলাম ওর সাথে, ওকে কাঁদতে দিব না কখনো; কিন্তু আমার কথা শুনে ও কেন যেন কেঁদে দিল। সে কান্নাটায় এক আনন্দ ছিল ওর চোখে। আমি ওর চোখ মুছার আগে ওর লাল হয়ে থাকা নাকটা একটু টেনে দিয়েছিলাম, আর বলেছিলাম, ‘দেখলে আমাদের মেয়ে হলো তো?'



অফিস থেকে টানা বেশি দিনের ছুটি পাব না জানতাম, অনেক ম্যানেজ করে ১০দিনের ফুরসত করতে পারলাম মা-মেয়ের সেবা করতে। বেবুকে কোলে নিয়ে ঘুরতে এই ছুটি নেইনি, মূল উদ্দ্যেশ্য উর্মিকে সার্বক্ষনিক আমার নজরে রাখা, এই সময়টায় ওকে পুরোটা বিশ্রামে রাখা, পাশে পাশে থাকা, আর বেবুকে ঘুমা পাড়ানো। আমি খুব ভাল করে জানি ও নিজের যত্নটা আমি না থাকলে একটুও নিতে পারবে না। কাজের মেয়ে, মা আর আমার ছোট বোন, সবাই থাকার পরেও নিজের মনকে বুঝাতে পারিনি ঐক’টা দিন। আমি উর্মিকে হাতে করে খাইয়ে দিয়েছি, ওর যাবতীয় যা যা দরকার আমি নিজে থেকে দেখাশুনা করেছি। ও নিষেধ প্রতিদিনই করতো। আমি কিভাবে পারবো ভুলে যেতে সেই দিনগুলো, যখন উর্মি পেটে চাপ দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা মুখ বুঝে ব্যথা সহ্য করতো বাবু নড়াচড়া করতো বলে? কিভাবে ভুলে যাব যে ও রাতে এক পাশ থেকে অন্য পাশে ফিরতে পারেনি শেষ কতগুলা দিন? আমি রাতে ওর জন্যে জ্যুস বানিয়ে রাখি, খেতে চায় না, তাই নিজের হাতেও এক গ্লাস নিয়ে রাখি, ‘তুমি না খেলে আমিও খাবো না!’ না খেয়ে কই যাবে!





উর্মি আর আমি সংসারের সবকিছু গুছিয়েছি ধীরে ধীরে, খুব সুন্দর ভাগাভাগির জীবন আমাদের। কিন্তু বেবুকে উপহার দেবার সমস্ত কৃতিত্ব আমি ওকেই দিব। একটা মায়ের কষ্টের কথা সবসময় শুনেই এসেছি, কিন্তু দেখিনি, আর ওকে যতদিন এই কষ্ট পোহাতে দেখলাম, তাতে সামান্যই হয়তো উপলব্ধি করতে পেরেছি, যা সেই রাতের ব্যথার একটা মুহূর্তেরও সমকক্ষ নয়। একটা স্বামী যখন খুব অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের বেডে পরে থাকে রাতের পর রাত, তখন আর কেউ পাশে না থাকলেও নিজের স্ত্রী পাশে নির্ঘুম রাত কাটায়, কখন কি দরকার হবে তা ভেবে। আর এইটুকু আমি করতে পারবো না আমার স্ত্রীর জন্যে!



উর্মিকে সকালে জাগাই না, আমি উঠে নিজে নাস্তা করে রওনা হই অফিসে। ঘুমাক আমার পরীটা, যাবার সময় যখন দেখি পাশাপাশি দু’টি মুখ ঘুমাচ্ছে, আমার কলিজার দুটি টুকরা, আমার পৃথিবীর সব সুখ তখন যেন সেখানে উপচে পড়ছে, মন কি আর যেতে চায় কোথাও! চুপ করে পাশে বসে দুজনকে প্রানভরে দেখি, হাত বুলিয়ে দেই দুজনের মাথায়। কি যে মিল আমার দু’টি বাবুর! আজও আমার প্রার্থনাতে আমি বেবুকে আগে আনতে পারিনি, উর্মিই সর্বাগ্রে থেকেছে। আল্লাহকে শুকরিয়া, আমার এই ছোট্ট দুনিয়াটা যেন চিরদিন এমন ভরাট হয়ে থাকে এই দুই পরীর পদচারনায়।



(কল্পনাকে পঁুজি করে লিখা)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:০৯

গরম কফি বলেছেন: কল্পনাকে পুজিকরে লিখা তাই হয়তো হৃদয় ছুয়ে গিয়েছে । বাস্তবতা সর্বাঙ্গিক এমনটা কেন হয়না !

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৩

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: বাস্তবতা এর চেয়ে বেশি হৃদয়াঙ্গম হোক সবার। মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ "গরম কফি" সাহেব।

২| ২০ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২১

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: আসাধারণ ভাবে বর্ননা করলেন।(যদিও মুলত আপ্নার ফিলিং নট রিয়েল লাইফ, জাস্ট "বাবা বাবা লাগে")

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৪

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মৃদুল সাহেব।

৩| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৪

অথৈ শ্রাবণ বলেছেন: অস্থির বর্ণনা ॥

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৫

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। :)

৪| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০২

রাইসুল সাগর বলেছেন: কাল্পনিক গল্প কথন অনেক অনেক ভালো লাগলো।

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৫

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: ৈধর্য ধরে পড়েছেন, তাই ধন্যবাদ।

৫| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৯

is not available বলেছেন: খুব ভাল লাগল!

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৬

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: 'is not available' সত্যি দারুন নাম।

৬| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:০১

এম হাবিব আহসান বলেছেন: সত্যিই সুন্দর। +++++++

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৪৭

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ হাবিব সাহেব।

৭| ২২ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

ঘুম হ্যাপি বলেছেন: অসাধারন

২৫ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.