নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আয়না

১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:০৬

বুঝ হবার পর থেকে মাকে খুব কম সময়ই খুশি দেখেছে রাজু। কিছু মুহূর্তের কথা মনে পড়ে রাজুর, মাকে দেখতো গুন গুন করে গান গাইছে, তখন মায়ের হাতে একটা আয়না থাকতো, মা সাজতো তখন। সেটা হতো শুধু সন্ধ্যের দিকে, সারাদিনের কাজ শেষে মা শুধু তখনই শুধু একটু সময় পেত। খোপাটা করার আগে মা কালো চুলগুলোকে ছড়িয়ে নিতো, তারপর তাতে তেল লাগাতো বেশ সময় নিয়ে, তারপর আরো কালো হয়ে উঠত মায়ের চুলগুলা। শেষে মা যখন ঘোমটা টানতো, তখন রাজু বিছানার পাশে মাটিতে দাড়িয়ে হেলান দিয়ে মাকে দেখতো, মাঝে মাঝে সে আয়নাটা ধরে রাখতো আর মা সাজতো। তার একটু পরেই বাবা দরজায় এসে আওয়াজ করলে মা আর রাজু দু’জনই ছুটে যেত। বাবাও মায়ের থেকে চোখ ফেরাতে পারতো না কিছুক্ষনের জন্যে। রাজু তখন কিছুটা আক্ষেপ করতো বাবা তাকে কোলে নিতে দেরী করতো বলে। অবশ্য মাঝে মাঝে খেলনা পেয়ে ভুলে যেত সে আক্ষেপ।



রাজুর খেলনাগুলা অনেক দামী তার কাছে। ছোটবেলা থেকেই একা একাই খেলতো, কাউকে সাথে নিত না, যদি ভেঙে ফেলে। দিনের শেষে ভালমত ধুয়ে-মুছে তারপর রেখে দিত। দুষ্টামিতে তাদের গলিতে সে মাঝামাঝি ধরনের, চুপচাপ স্বভাবটা বয়সের আগেই চলে এসেছে তার মাঝে। তাদের কাঠের সোকেসটার একটা গ্লাস ভাঙা, সেটার ভিতর দিয়েই তার খেলনার সবকিছু জমা করে। সে ভাঙেনি এটা, তার মা একদিন পড়ে গিয়েছিল এর উপর। সে খেলা শেষে বাইরের থেকে এসে দেখে মা সোকেসটার পাশে বসে কাঁদছে, মায়ের কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছিল। দৌড়ে পানি এনে দেয় মাকে, তারপর পাশের ঘরের রহিমা খালার বাসা থেকে মলম নিয়ে আসে, রহিমা খালা এসে মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে দেয়। মাকে নিয়ে তার চিন্তাটা একটু বেশি, কারন তার মা অন্য মায়েদের চেয়ে আলাদা, তার মা চোখে দেখে না।



রাজুর মা জন্মান্ধ না; রাজুর বয়স যখন তিন বছর, তখন তার মায়ের টাইফয়েড হয়। রাজুর বাবা সময়মত ডক্তার দেখায়নি, সপ্তাহখানেকের জ্বর কমছিলই না, ডাক্তার ব্লাড টেষ্ট করতে দিয়েছিল। মা বলেছিল টেষ্টগুলা করে ফেলতে, কিন্তু রাজুর বাবা করবে করবে করে অবহেলার কারনে কোন এক সকাল থেকে অন্ধকার হয়ে যায় হতভাগিনির চোখের সব রং। তারপর থেকে রাত হোক আর দিন পৃথিবীর কোন রঙের তফাৎ আর খুজে পায়নি তার মা। তাই বলে সংসারের কোন কাজ থেমে যায়নি, প্রথম প্রথম রাজুর বাবা অপরাধবোধ হোক, আর ভালবাসার জন্যেই হোক সংসারের টুকটাক কাজে মাকে সাহায্য করতো, সেই কটা দিনই তার মায়ের শেষ হাসিটা দেখেছিল রাজু। মাস কয়েক না গড়াতেই রাজুর বাবা আরেকটা বিয়ে করে। মা জানতো না, জানবেই কি করে! যে নিজে বলতে পারেনা পড়নের শাড়ির রঙের কথা, সেই মনুষটা কিভাবে পৃথিবীর দূষিত রঙের বর্ণ খুজে বেরাবে? একদিন রহিমা খালা এসে বলে দিল মাকে। বাবাকে যখনই মা কেঁদে কেঁদে জিজ্ঞেস করলো, তখন থেকেই শুরু হলো মায়ের উপর অত্যাচার এই সংসার ছেড়ে চলে যাবার জন্য। রাজু তখনও ছোট, তারপরেও বাবার মুখের কথা আর মায়ের চোখের পানি এখনো তার মনে পড়ে। সেদিনের সে পা পিছলে পড়াটাও হয়তো বাবার দেয়া গলাধাক্কার কারনে হবে।



অন্ধ হবার পর সে আয়নাটায় ধুলা জমতে থাকে। বাবাও দেরিতে বাসায় আসে, আর খেলনা আনে না। রাজু আর খেলনা নিয়ে খেলে নি কোনদিন। সেটার জন্যে তার কষ্ট হতো না, কষ্টটা ছিল মায়ের জন্যে। তার মায়ের চুলগুলা আর কালো থাকেনি, কেমন যেন বিবর্ণ হয়ে উড়তো। সেই ঘোমটায় ঢাকা মায়ের চেহারাটা আর খুজে পেল না রাজু। একদিন সে মায়ের হাতে তেলের শিষিটা আর আয়নাটা এনে দিয়েছিল, মা আয়নাটা ধরে শুধুই কাঁদলো অনেকক্ষন, সে আয়নাতে মায়ের হাসিভরা মুখটা আর দেখা যায়নি, চোখের পানি শুধু গড়িয়ে পড়ছিলো, আর তেলের শিষিটা কোনায় সেভাবেই পড়ে রইলো। রাজু মাকে খুব জোর করেছিল, ভেবেছিলো আজও বাবা আসার পর দৌড় দিয়ে গিয়ে সে দরজা খুলবে, আর এসে যখন ঘোমটায় ঢাকা মায়ের কালো চুলগুলা দেখবে তখন তার বাবা আবার আগের মত হয়ে যাবে। নাহ, আয়নাটা মা দূরে ছুড়ে ফেলে দিলো।



রাজুর মা অনেক আগেই মরে গিয়েছে। সেদিনের মাথার ঘা আর সারেনি, ব্যাথাটা আর কমেনি, আবার জ্বর এসেছিল, জ্বরকে অনেক ঘৃনা করে রাজু। মা শেষ দিনটায় যখন রাজুর হাত ধরে বলেছিল, 'বাবা মানুষ হবি তুই, স্কুলে যাবি, বাবাকে জ্বলাবি না।’ রাজু মাকে জিজ্ঞেস করেছিলো, ‘মা, তুমি কই যাও?’ মা কিছু বলেনি, রহিমা খালা শুধু তাকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদতে লাগলো। পরের দিন সবাই তার চোখের সামনে মাকে খাটে করে বাইরে নিয়ে গেল, সেদিন ভাবে নি মা আর আসবে না, তাহলে রাজু যেতে দিত না। বাবা চলে যাবার সময় রাজুকে কিছু খেলনা কিনে দিয়েছিলো। রাজু সেগুলো নিয়েছিলো, কিন্তু সে খেলনাগুলা দিয়ে আর কোনদিন খেলেনি, পাড়ার অন্য ছেলেদের দিয়ে দিয়েছিলো, সেই সোকেস আর নেই, খেলনাগুলা আর রাখার জায়গা নেই তাই হয়তো। কিন্তু মনে করে বাবার কাছ থেকে সে আয়নাটা রেখে দিয়েছিলো। তারপর থেকে রহিমা খালার কাছে বড় হয় রাজু। মায়ের সেই চেহারাটা আজও খুজে রাজু, না ওর স্মৃতিতে না, ঐ আয়নাটায়। আয়নাটা আজও রাজুর কাছে আছে, তার বউ সাজে তাতে। সে আয়নাতে যখন বউকে কপালের টিপ লাগাতে দেখে, সেই কালো চুলের খোপাটা রাজুর চোখে আজও ভেসে উঠে। এই আয়নার মাঝে রেখে দিয়েছে মাকে, শুধু সে দেখতে পায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১১

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:

ভাল লাগল ৷

(লেখাটি দুইবার এসেছে এডিট করবেন আশা করি ৷)

১১ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ, এডিট করে দিলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.