নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"দুইমাত্র প্রতিবেশী"

১৫ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৪২

ঢাকার বাসায় প্রতিবেশী পাওয়া খানিকটা কঠিন, বিশেষ করে আমাদের মত যারা ভাড়া থাকে তাদেরতো পকেটের মাপ আর কর্মক্ষেত্রের সাথে সাথে বাসা পরিবর্তন করতে হয় তাই প্রতিবেশীর বন্ধন কি জিনিস খুব কমই জানতে পারি। আমি যেখানে আছি, সুবাস্তু টাওয়ার সেটাকে পুরোপুরি যান্ত্রিক লিভিং বলা যায়, মানে এপার্টমেন্ট। ঢাকার এই এপার্টমেন্ট সিস্টেম বাসায় জন্মদিন, মৃতের জানাজা, জুমার নামাজ ছাড়া বুঝা যায় না মানুষ আছে কিনা। ওহ আরেকটা সময়, যখন কারো বিয়েতে গায়ে হলুদে ঠাডা-মার্কা গান বাজানো হয়, তখন উপচে পড়া ভিড় হয়।



সবাই সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্যস্ত কাজের দৌড়ে, আর রাতে ব্যস্ত হিন্দি সিরিয়াল আর রাজনীতির খবর নিয়ে। এখন এক ইউনিটে শাকিরার ঢুলাঢুলি করা চিৎকার ফ্লোর কাঁপায়, আর পাশের ইউনিটে কোন এক মেয়ে ‘ইয়াসিন সূরা’ পড়ছে মুমূর্ষ বাবার মাথার মাছে বসে। পাশাপাশি থেকেও জানে না কেউ কারো কথা, জানতে পারে মারা যাবার পর, তাও নিচ থেকে দাড়োয়ান জানালে,



-স্যার তিনতলার মুরুব্বী একটু আগে মারা গেছেন।

-পাশের ইউনিটে আবার বয়স্ক কেউ আছে নাকি??

-আছে স্যার, আইজ ২ বছর ধরে বিছানায় ছিল…।

-ও, জানাজা কখন?



'ভাবি চিনি আছে?’ বা 'আপা এই নিন আমাদের গ্রামের থেকে আনা ফল’ বা ‘আন্টি, বাবুর খুব জ্বর, কি করব?’ বা ‘আরে ভাই যে, কি খবর? বাসায় আসেন না অনেক দিন, রাখেন ব্যস্ততা, বাসায় আসেন চা খেতে খেতে কথা হবে' এইসব কথা আর কেউ বলে না। সম্পর্কের চাওয়া-পাওয়ার চেয়ে এই ছোট আবদারগুলা অনেক সূক্ষ, অনেক খাটি। আর এভাবেই সৃষ্টি হয়ে এসেছে আমাদের জাতির ভ্রাতৃত্বের নিবিঢ় বন্ধন।



মেইন রোডের পাশে থাকায় বারান্দায় দাড়ালে মানুষ কম, রাস্তার যানবাহন দেখা যায় বেশি। পাশের বাসার বারান্দা দিয়েতো আর প্রতিবেশী বানানো যায় না, লুচ্চামি করে কেউ কেউ অবশ্য প্রেম চালাতে যায়, সেই শিক্ষাও নাই। তাই citylife এখন desert মনে হয়।



যাই হোক, এক সিঙ্গেল মাকে প্রায়ই দেখি আমার বারান্দা দিয়ে। দেখা হয় শুধু গোধূলির সময়, মানে সূর্য যখন ডুবে ডুবে আর আকাশ যখন ক্যানভাসের রংতুলির কাজ শেষ করে সেই সময়টায়। কোনদিন তার আগে আসতে দেখিনি। এসেই বাসায় ঢুকে না, কিছুক্ষন এদিক ওদিক ঘুরে তারপর বাচ্চার কাছে যায়। গত তিন মাস ধরে আমি লক্ষ্য করছি তাকে, বাচ্চার বাবাকে দেখিনি, তাই ধরেই নিলাম সিঙ্গেল মা। বাচ্চা এখনো হাঁটতে পারে না ঠিকমত, তাই বাসায় চুপচাপ বসে থাকে মা আসার আগ পর্যন্ত। ইস খুব ইচ্ছা হয় বাচ্চাটাকে একদিন বাসায় নিয়ে আসতে, সম্ভব হলেতো কবেই নিয়ে আসি! মাঝে মাঝে আমাদের বারান্দার অনেক কাছে চলে আসেন মা, কিন্তু একটি বারও তাকায় না এদিকে! শহুরে জীবন বুঝে গিয়েছে বোধ হয়, তাই মানুষ বিশ্বাষ করে না, কার মনে কি মতলব আছে এইভেবে হয়তো।



দূর থেকে দেখি আমার প্রতিবেশীকে। ভোরে আমি ঘুম থেকে উঠার আগেই তিনি বের হয়ে যান, বাচ্চাটা তখনো আধো ঘুমের মাঝেই থাকে। তাদের বাসাটা দেখলে আমার খুব লোভ হয়, এত সুন্দর বাসা, আর এত খোলামেলা, আলো বাতাসের কোন বালাই নেই। খুব নিপূনভাবে গুছানো বাসা তাদের। মা বাসায় আসার সাথে সাথেই বাচ্চার সেকি আনন্দ! মনে হয় যেন ঝাঁপ দিবে মায়ের কোলে, বেচারী হাঁটতে শেখেনি বলেই এখনো চুপচাপ, নয়তো মাকে যে রকম চঞ্চল লাগে মেয়ে কম যাবে কিসে!



ওদের বাসাটা আমার বাসার উল্টোদিকে, আমাদেরটা সুবাস্তু টাওয়ার আর ওদেরটা মোবাইলের টাওয়ারে। এই দু’জনের জন্যে আমার কিছু বিকেল খুব ভালো কাটে। এতদিন মায়ের ডানাটা দেখেছি, এইবার এই বাবুরটা দেখতে অপেক্ষা করছি; কবে ছোট্ট বাবুটা বড় হবে! কবে উড়ে যাবে মায়ের পিছন পিছন! দোয়া করবেন সবাই, কেউ যেন মোবাইলের এই টাওয়ারটা থেকে পরিষ্কারের নাম করে বা কোন অজুহাতে এই চিলগুলোকে তাড়িয়ে না দেয়। বাবু সবে ডানা ঝাপটানো শিখেছে, এখনো ডানা মেলে উড়তে শেখেনি।



আমার দুইমাত্র প্রতিবেশী এরা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.