নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"রানির ভাতের হোটেল”

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

হোটেলটার নাম দিয়েছে বউয়ের নামে, ‘রানির ভাতের হোটেল’। এখানে গ্যারেজের রিকসাওয়ালা ছাড়াও ড্রাইভার, যুগালী আর খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষগুলা খেতে আসে। অল্প কয়েকদিনেই হোটেলের সুনাম ছড়িয়ে যায় আশেপাশে, রাতে-দুপুরে ভাতের টাইমে খুব ভালই ভিড় থাকে, আর সারাদিন চা তো চলছেই। তপ্ত রোদে এই খেটে খাওয়া মানুষগুলা যখন ভাতের প্লেটের সামনে তিনটা কাঁচা মরিচ আর পেঁয়াজটুকরার বাটি নিয়ে বসে তখন পেটে রাজ্যের ক্ষুধা এমনিতেই চলে আসে, আর রানির হাতের কাঁচকি মাছের ঝোলটা পেটুক করে ছাড়ে সবাইকে।



বিয়ের সময় সোলেমানকে রানির বাপ যৌতুক হিসেবে দিতে চেয়েছিল দুবাই পাঠানোর খরচ, একটা ষ্টীলের আলমারি আর সাথে নাকের আর গলারটাতো আছেই, মানে গয়না। রানি সবার চেয়ে ছোট আর একমাত্র মেয়ে, তাই রানির বাবাকে বাকি বাবাদের মত যৌতুক দিতে দিতে এখনো নিঃস্ব হতে হয়নি, আর সেজন্যই রানির মত করেই ভরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু বাঁধ সাধল সোলেমান। সে একটা কিছু যৌতুক নিবে না, নিবেনা তো নিবেনা! সোলেমানের বাবা নেই, মা আর তার চাচারা এসেছিল; তাদের কয়েকজনের যৌতুকের পক্ষে মত থাকলেও সোলেমানের মেজাজ দেখে সবাই একবাক্যে স্বীকার করতে লাগলো ‘যৌতুক ভালা মাইনসে নেয় না’।





সোলেমানের দুইটা রিকসার গ্যারেজ আছে। তার বাবা রিকসা চালাতো, রোড এক্সিডন্টে মারা যাবার পর সোলেমানকে ছোটবেলাতেই রিকসা ধরতে হয়। তারপর আস্তে আস্তে এই দুই গ্যারেজের মালিক হয় সোলেমান। বিয়ের পর দিনই সোলেমান বুঝতে পারে তার রানির হাতের রান্না কোন রানি না, বরং পাক্কা রাধুনির মতই। একদিন হঠাৎ মাথায় চিন্তা আসে একটা ভাতের হোটেল দিবে তার গ্যারেজের পাশে। রানিকে বলতেই সেও রাজি হয়ে যায়। আর সেদিন থেকেই শুরু হয় এই গল্পের। দিন কয়েক না যেতেই চাপ বেড়ে যায় কাষ্টমারের। তাই সোলেমান হোটেলটা পাশে ছয় হাত বড় করে, আর গ্যারেজটাকে একটু চাপিয়ে মাচা করে উপরের দিকে বাড়িয়ে নেয়। ভিড় লেগেই থাকে রানির ভাতের হোটেলে, সে ভিড়ের মাঝেও কারো প্লেটের কাঁচকি মাছের ঝোলের উপর ভাঙা কাঁচা মরিচের ঘ্রাণটা খুব ভালভাবেই পাওয়া যায়।





একবার এক সাহেব মানুষ এসে ঢুকেছিল এই হোটেলে। দুপুরে পাশের মীর রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকাতে, নয়তো কখনো তার চোখে পড়েনি রানির ভাতের হোটেল। ঢুকেই কি যে নাক সিটকানি, এই হাত ধোয়ার পানি দে, গ্লাস ধোয়া? প্লেটটা ফিল্টার পানি দিয়ে ধুয়ে আন! হোটেলে বাকি কাষ্টমাররা ওনার দিকে একবার তাকিয়ে যার যার মত খেতে লাগলো, ওনার ভাব দেখার চেয়ে মাছের ঝোলমাখা প্লেট চাটা নিয়েই ব্যস্ত সবাই। বাঁশের বেঁড়ায় রোদ এসে উঁকি দেয়া এই হোটেলের বাঁকা টুলে বসা মানুষগুলা কেউ তার ফিটফাট চেহারার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নেই! যাক তিনিও খাবারের দিকেই মনযোগী হবেন, এমন সময় দেখলেন তার টেবিলে তখনো ভাত, ভর্তা ছড়া কাঁচকি মাছ অসেনি। ‘এই মাছ নাই??’ বেশ চিৎকার করেই বললেন। সোলেমান নিজে এসে বললো, ‘স্যার মাছতো পেরায় শেষ, হাফ-প্লেটের মতো আছে, দিমু?’ ‘কি মাছ?’ ‘স্যার কাঁচকি মাছ।’ মুখ বাঁকা করে বলল ‘কাঁচকি?? দে, কি আর করবো!’। সোলেমান নিজ হাতে এনে দিলো। সেদিন সাহেবের খুব যে ক্ষুধা লেগেছিল তা নয়, আর সেদিন রানিও আলাদা করে কিছু রান্না করেনি। সেই একই তরকারি, ঝাল করে তাজা কাঁচকি মাছ আলু দিয়ে ভূনা করেছে, যা সে গত ছয় মাস ধরে করে আসছে। সাহেব মানুষটি যাবার সময় সোলেমানকে ডেকে বলল, বহুদিন পর আমার মায়ের হাতের রান্না খাওয়াইলিরে! বলেই মানিব্যাগ থেকে কড়কড়া পাঁচশ টাকার নোট ধরিয়ে দিলো। সোলেমান সেই টাকাটা হোটেলের ক্যাশে রাখেনি। পরদিন বউয়ের জন্যে একজোড়া নুপুর কিনে নিয়ে আসে সে টাকাটা দিয়ে। বউতো পুরোই অবাক! উপহার না উপহারকারীর চোখ বেশি অবাক করে এই মানুষগুলোকে। রানি তাই লজ্জায় তাকাতে পারছিল না সোলেমানের সে চোখগুলোতে। সোলেমান যখন নিজের হাতে রানির পায়ে নুপুরজোড়া পড়িয়ে দিতে চাইল, লজ্জায় তখনকার মত দৌড়ে পালায় পাগলী।





সোলেমান আর রানির ছোট্ট সংসারের ভালবাসাকে আরো বাড়িয়ে দিতে এক ছোট্ট রাজকুমারী আসে তাদের ঘরে, তাই প্রায় তিন মাস হোটেল বন্ধ ছিল। গ্যারেজে কত যে মানুষের আনাগোনা তখন! কবে খুলবে কবে খুলবে একই প্রশ্ন সবার। পাশের মীর হোটেল খোলা থাকলেও এখানে একবার হলেও ঢুঁ মেরে দেখে যায় সবাই সেই কাঁচকি মাছের আশায়। বেশিদিন বন্ধ রাখতে পারেনি, কারন রানিরও প্রাণ পড়েছিল এই হোটেলের প্রতি। তাই রাজকুমারীকে কোলে নিয়েই আবার ব্যস্ত হয়ে যায় রান্নায়। আর তারপর থেকে দুপুর হবার আগেই শেষ হয়ে যায় রানির ভাতের হোটেলের সব খাবার। সেই সাহেবও আসেন, মীর হোটেলের এসি আর ভাল লাগে না তার, প্রতিদিন এখানেই ভাত খায়। সোলেমান তার জন্যে একটা স্পেশ্যাল চেয়ার রেখেছিল, কিন্তু সাহেব সেখানে বসে না। সে চেয়ারে বসে খেতে নাকি স্বাধ লাগেনা তার, বাঁশের উপর বাঁকা কাঠ বসানো টুলটাই বেশি পছন্দের সাহেবের।





সোলেমানের হোটেল খুব ভাল চলছে। এখনো এখানে প্রতিদিন ঝাল করে কাঁচকি মাছ রান্না করা হয়, শুকনা মরিচের গোল করে সাজানো আলু ভর্তা বানানো হয় আর সাথে ডাল ফ্রি; ৩৫ টাকায় পেট ভর্তি খাবার। রাজকুমারীটা একটু বড় হয়েছে, হাতে তার ছোট ছোট রঙিন কাঁচের চুড়ি, সাজুগুজু করে মায়ের পাশে চুপটি মেরে বসে থাকে আর মায়ের হাতের যাদু দেখে। সেই স্পেশ্যাল চেয়ারটিতে সোলেমান নিজে বসে, আর এখনো রানির পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখে। বাঙলার এই রানির ভাতের হোটেলটিতে নিমন্ত্রন সবার, হয়তো ঝালটা একটু বেশি লাগবে আপনাদের, তাইতো ডাল ফ্রি! ঠিকানা? বলছি লিখুন, 'ঐ পথের ধারের আনাচে’।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.