নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাদের পক্ষ থেকে...

২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

ঢাকার রাস্তাকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে, বৃষ্টির পানিতে ভিজে কালো চেহারা করে আছে, মন খারাপতো তাই। গাড়িগুলা অনেকক্ষন পর পর এসে চলে যায়, আগের মত আর জ্যাম নেই কেউ থেমে আর তার সাথে গল্প করে না। কাছে এসে টায়ারের হঠাৎ ব্রেক করা আর হর্ণ বাজিয়ে খোজটাও নেয়া হবে না কয়েক দিন। চাকাগুলারও দাঁড়িয়ে আজ ছুয়ে দেখার সময় নেই, শুধুই ছুটে চলা, এখন নগর না, ছোট শহর আর গ্রামের আধা-পাকা রাস্তার সাথে সখ্য করার সময় তাদের।



প্রতিদিনকার ভিক্ষুক আর ছোট হকারগুলোও নেই, যে কয়জন আছে যেন ছুটি কাটাচ্ছে চুপচাপ বসে থেকে, মাঝে মাঝে কোন প্রাইভেটকার এলেই সবাই ছুটে যায় একসাথে কারো যদি মায়া হয় বাড়তি কিছু দেয়ার, ফিতরা, যাকাত বা বখশিস। কেউ গ্লাসটা খুলে, কেউ বা না দেখার ভান করে গাড়ির ভেতরে অন্ধকারে সানগ্লাস পড়ে বসে থাকে। বিচিত্রতা নতুন কিছু না, তবু চোখে পড়ার মত। তারপর সে ভিক্ষুকের দল আবার বসে পড়ে খোশগল্পে, কে কোথায় ঈদ করবে, কি কিনবে, তাদের ছোট হলেও একটা লিস্ট আছে। কারো বাবা, কারো বৃদ্ধ মা, আর কারো ছোট্ট মেয়ের কামিজ কেনার বায়না আছে, সে গল্পই চলছে। ছোট যে ছেলেগুলা প্রতিদিনের নিউজপেপার বিক্রি করতো, তারা আজও আছে, ঈদ ঢাকায় করবে বলে। তাদের একজন একটু পর পর দুই আর পাঁচ টাকার নোটগুলা গুনে দেখে, এখনো হয়নো শখের কিছু কেনার টাকাটা জমেনি ছোট্ট প্যান্টের পকেটে, তাই একটা পেপার বিক্রি হলেই আবার পুরো টাকাটা গুনে। এর মাঝে যখন কেউ তিন টাকার পেপারটা কিনে ২টাকা বখশিস দিয়ে দেয়, তখন তার কাছে মনে হয় দু'হাত ভরে গেছে তার দু'টাকার ভারে।





কিছু রিকসাওয়ালা এখনো বসে আসে তাকিয়ে, আরো কয়েক'শ টাকা হলেই রাতের বাসে রওয়ানা হবে গ্রামে পরিবারের কাছে, এখনো তাদের জন্যে কিছূ কিনতে পারেনি। তাই সুযোগ পেলেই ঠেলাগাড়ির দোকানটার পাশে এসে থামে, মেয়ের জন্যে কিছু কিনতে, কিন্তু দাম শুনে আবার তাকিয়ে থাকে একটা দূরের ট্রিপের জন্যে। কিছু যাত্রীর মনে চাইলে ২/৫টাকা বাড়িয়ে দেয়, এই আশায় দ্রুত পৌছে দেয় গন্তব্যে। ভাড়া দেয়ার সময় তাকিয়ে থাকে স্যারের মানিব্যাগের দিকে, এই বুঝি স্যার বখশিস দিবে কিছু। না দিলে কিছু বলারও থাকে না, খেটে খাওয়ার মানুষ এরা, ভিক্ষা করবে না বলেই ঘাম ঝরাচ্ছে। নাহ, স্যার খুব ব্যস্ত বাসায় ইফতার করবে, সময় হয়ে যাচ্ছে। আজ যে একটু তাড়াতাড়ি এসে গেছে বাসায় তার দিকে আর খেয়াল করতে পারেনি। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল ভাড়াটা নিয়ে, আফসোস আর করে না, রিকসাটা টেনে সামনের গলিতে নিয়ে গেল আরেক স্যারের আশায়। তখন ঘামে বুক পর্যন্ত ভিজে আছে।



প্রানবন্ত চৌরাস্তার মোড়গুলোও খালি হয়ে আছে, ট্রাফিক পুলিশ চুপচাপ দাড়িয়ে, এখন আর সিগনাল হাতে দেখানোর প্রয়োজন নেই তার। যে অল্প সংখ্যক যান, তাই দরকার হয় না। দুই রঙের ছাতিটার নীচে না দাড়িয়ে কথা বলছে পাশের পর্দায় ঢাকা চায়ের দোকানদারের সাথে। বৃষ্টির কারনে ফুটপাতের দোকানির মুখে একটু আতঙ্কের ছাপ, এই ফুটপাতে দোকানে দিতে নগদ পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে স্থানীয় সরকারদলীয়রা, তার উপর পুলিশকে প্রতিদিন দিতে হয় একশত করে। এখনো লাভের মুখ তেমন দেখেনি, আর বৃষ্টি হলেতো না খেয়ে থাকতে হবে এই ঈদ। ডেকে যাচ্ছে সকাল থেকে, কাষ্টমার আসছে কিন্তু বিক্রি তেমন ভাল না। দাম কমিয়ে দিয়েছে, তারপরেও যদি বেচা শেষ করে ঈদটা বাড়িতে ঠিকমত করতে পারে।



রাস্তার পাশে আরো কয়েকজনকে দেখা যায়, সবসময়ের মতই। ওদের খবরটা আর নেয়া যায় না, ওরা কি ভাবছে, কি হবে, কোথায় যাবে, কিছূই জানা যায় না। যাদেরকে 'পাগল' নাম দিয়েছি, না ঈদ, না পহেলা বৈশাখের পান্তা কিছুই নাড়া দেয়না তাদের মনে। সবাই যার যারটা নিয়ে ব্যস্ত, লাভ-ক্ষতির পাল্লার হিসেব আজীবনই চলবে, কিন্তু এই মানুষগুলার কোন হিসেব নেই। সমাজ তাদেরকে অনেক আগেই মুছে ফেলে দিয়েছে, এখন শুধু জীবনটা থেকে মুক্তি পাবার অপেক্ষা যেন। শুধু তাকিয়ে থাকা, পরিশ্রান্ত হবার আগ পর্যন্ত শুধু শুধু হেটে চলা, আর জীবনের কিছু মুহূর্তের কথা বিড় বিড় করে নিজকে বলা, এইতো সারাদিনের হিসেব, শেষ, তারপর রাতে ফুটপাতের বালির উপর শুয়ে পড়ে ঘুম। না ঘর না ঈদের জামা-কাপড়, কিছুরই টেনশন নেই, চোখে সারা জীবনের কথা আর গায়ে নিয়তির ছেড়া চাদর, ঈদ যাপন হয়ে যাবে তাদের এইভাবেই।



তাদের পক্ষ থেকে ঈদ মোবারক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.