নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ধনেপাতার ঘ্রাণ”

৩১ শে মে, ২০১৫ রাত ১১:২৬



গোটা সংসার চলে এই চটপটির টঙ দিয়ে। ছেলে নেই, বুড়ো বাবার একটা মাত্র মেয়ে মনি, ক্লাশ সেভেনে পড়ে। মেয়ের স্কুল ছুটি হয় বিকাল ৪টায়। স্কুল থেকে এসে ভাত খেয়ে মায়ের সাথে টুকটাক কাজ করে, জামা-কাপড় ধোয়, আর তারপর পাড়ার কোচিং থেকে পড়ে আসতে আসতে সন্ধ্যা ৭টা বেজে যায়। এসে কোনমতে বই-খাতাগুলো রেখে চলে যায় তিন-রাস্তার মোড়ে বাবার চটপটির টঙে। বাবা একা, একটা ছেলে রেখে মাসে মাসে বেতন দেয়ার মতো লাভ এই ব্যবসা থেকে আসে না, তাই মেয়ে নিজেই বাবার পাশে থাকে, যতক্ষন সময় পায়। মরিচ আর ধনেপাতার আটি ধুঁয়ে ছোট ছুরী দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে কেটে দেয়া, তার নরম হাতে আলুগুলো ভালো করে ভর্তা করে ভাজা পেয়াজের সাথে মাখিয়ে খুব যত্ন করে প্লেটে গরম চটপটির উপর ফুসকা ভেঙে দেয়ার কাজ করে। তাই প্রতিদিন মেয়ে আসার আগ পর্যন্ত বাবা তাকিয়ে থাকে পথের দিকে, কখন রঙিন প্লাষ্টিকের জুতা পড়ে ছোট্ট ক্লিপে মোড়ানো চুলের উপর ওড়না দিয়ে তার মা আসবে ঐ দিক দিয়ে। আর না আসা পর্যন্ত দোকানে কাস্টমার থাকলেও হাত চলে না।

একদিন মেয়ের খুব জ্বর করেছিল, বাবা মাকে জিজ্ঞেস করল, “অহনো জ্বর কমে নাই?" মা বলল, “চিন্তা কইরো না, আইজ আমি আসুম দোহানে, আমি কইরা দিমু সব।” বাবা বের হয়ে গেল ঘর থেকে, “আইজ দোকান বন্ধ থাকবো, অর জ্বর কমলে তারপর খুলুম।” মনি বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝেনি বাবা কেন রাগ করে চলে যাচ্ছে, মায়ের হাসি দেখেও কিছু বুঝে নি। সেই জ্বর ২দিন পরেই কমে যায়, চটপটির গাড়ী এ দুই দিন বন্ধ ছিল। কিছু নিয়মিত কাস্টমার এসেতো রীতিমতো বকাঝকা করলো, বাবা সেদিকে ভ্রক্ষেপ করেনি, ২ দিন পর তার মেয়ে আসবে দোকানে, এই খুশীতে কিছুই কানে ঢুকে নি! মেয়ে এসে যখন ধনেপাতাগুলো আঁটি থেকে আলাদা করে পানিতে রাখছে, বাবা হঠাৎ করে পানিতে ডুবানো মেয়ের সে হাত ধরলো। ধবধবে আঙুলগুলো পানি থেকে বের করে নিজের হাতের মধ্যে এনে ধরে রাখলো। মেয়েতো অবাক, বাবার দিকে তাকাতেই বাবা বললো, “মারে, মাত্রই জ্বর কমছে, আইজ পানিতে হাত দিছ না, আমি ধুইতাছি, তুই আলুগুলা দেখ।” মেয়ে দেখে নি বাবার ছলছল করা চোখ। “কই কাকা? দুই প্লেট দাও।" বাবার নিজেকে সামলিয়ে জলদি চটপটি রেডি করতে মন দিলো।


একবার বিদেশি দুইজন এসে খেয়েছিল তাদের দোকানের চটপটি। ঝাল বেশি হওয়াতে বেচারারা যখন আহ্ উহ্ করছে, যখন মনি হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে। ওদেরকে পানির বোতল দিতে গিয়েও হাসি থামাতে পারে নি। তখন বিদেশী দু’জনও লজ্জা ভুলে হাসা শুরু করলো। যাবার সময় মনিকে ১০০০টাকা বখশিষও দিয়েছিল। মনি টাকা নিবে কি, তখনো হাসছিল! মনির একটা বান্ধা কাস্টমার আছে, প্রায় প্রতিরাতে দোকান বন্ধ করার সময় আসে। এসে কিছু বলে না, চুপ করে দাড়িয়ে থাকে বিদ্যুতের পিলারটার পাশে। মনি দূর থেকে তাকে দেখলেই এক প্লেট চটপটি বানিয়ে দিয়ে আসে তাকে। সে কাস্টমারটা কখনো চেয়ারে বসে না, মাটিতে বসে খায়। খেয়ে যাবার সময় প্লেটটা ধুয়ে দিয়ে যায়, আর মনির গা’টা মুছে দিয়ে যায়। মনি কখনো টাকা নেয় না সে কাস্টমার থেকে, আর বাবাও কিছু বলে না।

বাবার এই ছোট্ট মা প্রতিদিন একপ্লেট ফুচকা বানায় নিজের জন্যে। নিজের মতো করে বানায়, কড়া ঝাল দিয়ে, সাথে তেতুলের টকতো থাকেই। নিজের প্লেট নিজে সাজায়, আবার বাবাকেও সাধে, বাবা হাসে, খেতে চায় না, না করে, মেয়ে এক পিস হলেও খাইয়ে দেয় বাবাকে। “ওরে মা! এত্ত ঝাল, পানি দে।” মেয়ের তখন কি যে হাসি! বাবা খায় আর বকে, "পেট খারাপ অইবো আর কি।” এটা বলে আর একটা ডিম সিদ্ধ জোর করে তুলে দেয় মনিকে। এই মেয়ের নামেই চটপটির দোকান, ‘মা মনির চটপটি স্টল’। রাতে যখন দোকান বন্ধ করে বাবা আর মেয়ে একসাথে বাড়িতে যায়, তখন মনে হয় ঐ পথটি দুনিয়ার সব সুখের সাক্ষী হয়ে পড়ে, যে পথে বাবা তার ছোট্ট মায়ের ছোট্ট আঙুলগুলো ধরে ধরে হেঁটে চলে, আর সে সুখের সুবাতাস ধনেপাতার ঘ্রাণ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে তাদের পেছনে পেছনে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১:৪৩

কথাকাহন বলেছেন: সেই সুখের ধনেপাতার ঘ্রাণ আমরাও পাচ্ছি।

২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৮

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য। :)

২| ০১ লা জুন, ২০১৫ সকাল ১১:৪৯

নীল আকাশ বলেছেন: লেখা টা পরে খুব ভাল লাগল । ধন্যবাদ ।

২৪ শে জুন, ২০১৬ রাত ১১:৫৯

ফখরুল আমান ফয়সাল বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.