নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা নাকি মানুষ?

৩০ শে জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

১.
বাংলাদেশ জিতেছে, বাঁশ নিয়ে সুশীল-কুশীল সবাই স্ট্যাটাস দিলো, তখন সব ভদ্রলোকরা ভুলে গিয়েছে যে বাঁশ নিয়ে এইভাবে মন্তব্যের অর্থ প্রচন্ড রকমের কুরুচীপূর্ন। তার কিছুদিন আগেই লক্ষাধিক পোষ্ট করা হয়েছিল এটা বলে যে, "ক্রিকেট ছিল ভদ্রলোকদের খেলা, যতদিন না ইন্ডিয়া খেলতে এসেছে" কারন বিশ্বকাপে তারা প্রতারনার কৌশল নিয়েছিল। তাহলে এখন ভারতীয়রা যদি পোষ্ট করে "ক্রিকেট ছিল রুচীশীল মানুষের খেলা, যতদিন না বাংলাদেশীরা খেলতে এসেছে" কি বলবেন? কিছু বলার আগে বলছি, আমাদের বুদ্ধিজীবীমহল হতে শুরু করে মিডিয়া ব্যাক্তিত্ব আর আমজনতা সবাই বাঁশের ছবি, বাঁশ নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করেছেন ভারত সফরের ঐ পুরা সপ্তাহজুড়ে। সত্যিকারের ক্রীড়াপ্রেমী যদি কেউ থেকে থাকেন, ভারতে বা বাংলাদেশে যেখানেই হোক, আমরা লজ্জিত আপনাদের কাছে।

২.
ভারত যাওয়ার আগেই, বাঁশ নিয়ে অশ্লীলতা শেষ করার আগেই সুধীর নামে আরেকটা ইস্যু আসলো। জ্বী, ইহা পরিষ্কার যে সুধীরের সাথে আমরা ভাল আচরন করতে পারিনি, আতঙ্কিত করেছি তাকে, তার সিএনজিতে ঢিল ছুড়েছি আমরা। এবার ভারতীয় নামসর্বস্ব মিডিয়া অপপ্রচার শুরু করল আমাদের নিয়ে। এদেশেও শুরু হয়ে গেল একদলের গালাগালি, ভারতীয় মিডিয়াকে ধোয়া শুরু করলো ভাষা দিয়ে, কেউ কেউ সুধীরের সাথের পুরনো ছবি দিয়ে প্রমান করতে চাইল আমাদের দ্বারা প্রতিপক্ষের সাথে দূর্ব্যবহার সম্ভব না। যেখানে আবাহনী-মোহামেডান, ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা নিয়ে ঝগড়া করে খুন হয়ে যায়, সেখানে অতি আবেগপ্রবন হয়ে সুধীরের সাথে দূর্ব্যবহার অবিশ্বাষের কিছুই না। যাক, সাথে সাথে আরেকদল বিশাল অক্ষরজ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যাক্তিরা শুরু করে দিলো ক্ষমার বহর নিয়ে লিখালিখি। ওনারা ছবি পোষ্ট করল, সেখানে সুধীরের কাছে হাত জোড় করে মাফ চেয়ে কান্নাকাটি করে অস্থির! মজার ব্যাপার হচ্ছে এনারাই তার দুই দিন আগে বাঁশের কভার ফটো দিয়ে রেখেছিল। পকেটের টাকা দিয়ে থাইল্যান্ড বা মালেশিয়া ঘুরতে যাই ক্লাবে/বারে ড্যান্স করতে, মাতলামী করতে, আর ভিন্ন দেশে নিজের দেশকে যারা সমর্থন করতে যান; সেখানে যদি বিন্দুমাত্র অপমানিত হয়ে থাকেন, আমরা লজ্জিত।

৩.
বাঁশ গাছ উজাড়, সুধীরকেও শিক্ষা দেয়া শেষ, এবার কি? এবার শুরু হলো ক্রিকেটার নাসিরের বোনের সাথে ছবি নিয়ে জঘন্য মন্তব্য। শুরু হয়ে গেল, উল্টা-পাল্টা যা ইচ্ছা লিখা। আর এই বিকৃত রুচীর অশ্লীল মন্তব্যকারীদের কারো কারো প্রোফাইলের ছবি বাংলাদেশ ক্রিকেটের লোগো, কারো কারো কভার ফটো হচ্ছে বঁাশ, কেউ বা নিজের গার্লফ্রন্ডের সাথেই প্রোফাইলের ছবি দিয়েছেন। ঘৃণায় নাসির ছবিটা ডিলিট করে দিলো, তারপর সবাই শান্ত। প্রতিবাদে মাসরাফি তার ফ্যান পেজ লিমিটেড করে রাখল, শুরু হয়ে গেল আবার প্রতিবাদের ঝড়, ছিঃ, ছিঃ, ছিঃ কে করেছে এই মন্তব্য, কে? কে? কিভাবে করতে পারলো একজন ক্রিকেটারের বোনকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য! শুরু হয়ে গেল ক্ষমা চাওয়া, ম্যাগী নুডুলসের চেয়েও দ্রুত ফটোসপেও ছবি তৈরি হয়ে গেল, "মাফ চাই ফ্যানদের তরফ থেকে, আমাদেরকে ক্ষমা করো নাসির", আরেকদল শুরু করল মন্তব্যকারীদের ধরার চেষ্ঠা। আপনারা আমাদেরকে গৌরবের জয় এনে দিবেন, আর আমরা আপনাদের স্ত্রী, বোনদেরকে নিয়ে কুরুচীপূর্ন মন্তব্য করব, কারন ছবিটা আমার বোনের বা বউয়ের না। দুই মিনিটেরও চেয়েও ক্ষনস্থায়ী আমাদের আবেগের জন্যে আমরা লজ্জিত।

৪.
এবার আসি বিশ্বমানের ভাওতাবাজী নিয়ে। আমেরিকাতে সমকামী বিবাহ বৈধ করেছে। দেশটার নাম ভাল করে খেয়াল করবেন, 'আমেরিকা' বাংলাদেশ বা ঢাকাশহর না। এখন সেখানে এ ধরনের সংস্কৃতি বেশ কয়েক দশক ধরেই বহাল, আর বহুদিন যাবত এই সমকামী অধিকারে বিশ্বাসীদের আন্দোলন চলে আসছে। নির্বাচন সামনে, টোপ দিতেই পারে সরকার, দিয়ে দিলো বৈধতার আইন পাস করে। ওরে জ্বালা! নিউ ইয়র্কের জন আর বন্ড খুশী হয়েছে কি না জানি না, আমাদের দেশে আকাশে বাতাশে রঙধনু জ্বল জ্বল করা শুরু করে দিয়েছে।

- ভাই, আপনি কি আমেরিকার সিটিজেন?
- না!

- আপনি কি সমকামী?
- না!

- আপনার বাবা আরেকটা বাবাকে বিয়ে করে ঘরে তুলবে সেটা মেনে নিতে পারবেন?
- না!

- কখনো স্বপ্ন দেখেছিলেন, আপনার বড় আপুর সাথে তসলিমা আপুর বিয়ে হলে ভাল হবে?
- না!

- তাহলে কি কুত্তায় কামড়াইয়া আপনার প্রোফাইলের ছবিটারে রাঙায়া দিছে?
- না!

- আসলে, আই লাইক টু পলো আম্রিকা, ম্যান। ওরা যা করে তা আমারো করতে ভালো লাগে, আপডেটেড মনে হয় নিজেকে।
- আচ্ছা
- ইয়ু নো, ওরা বলে, লাব ইজ লাব, লাবের কোনো লেবেল নাই, তাই বিয়ে করতেও কোনো ভেদাভেদ নাই।
- কোনো ভেদাভেদ নাই?
- না!
- দেখুন, কত্ত কত্ত প্রানীরা না, সমকামী। ইস, আপনি কি হে, কিচ্ছু জানেন না। অনেক পোকামাকড় আছে, ওরা সমকামী। তাতে কি হ্যা? কি পৃথিবীটা নষ্ট হয়ে গিয়েছে তাতে, বলুন, বলুন না, এই!

সমকামীদের সাথে তালে তাল মিলিয়ে আমাদের দেশের কয়েকজন মানুষকে তুলনা করেছেন সমকামী কীটপতঙ্গের সাথে। এইটাই বাকি ছিল, জানোয়ারের সাথে তুলনা। সমকামীতা যতদিন আমেরিকাতে অবৈধ ছিল, ততদিন কারো মাথা, চুল, দাড়ি কিছুই রঙিন হয়নি, কোন খোঁজই কেউ জানত না যে আদালতে যুদ্ধ চলছে এটা নিয়ে। যখনই ফেসবুকে অপশন দিলো রঙধনুর, হয়ে গেলাম মানবতাবাদী। এমন না যে এই মানুষগুলো নাস্তিক, ধর্মে এটাকে জঘন্য বলে দিয়েছে, তবুও এটাই ফ্যাশন, তাল না মিলালে হয়! আফ্রিকার সন্তানের সামনে মা উলঙ্গ থাকে, পরিধানের বস্ত্র নাই। সেখানে ছোট্ট শিশু পানি না পেয়ে গোমূত্র পান করে, আর বাবা যে পানি এনে দিবে, সেতো সন্তান জন্মের আগেই ৩০ বছর বয়সে এইডসে মারা গেছে। সেখানে চোখের সামনে বিশ বছরের যুবক ছেলে অজানা রোগে হাড্ডিসার হয়ে মারা যায়, মায়ের কাছে চোখের পানি ছাড়া কোন ঔষধ নাই। ফিলিস্তিন, মধ্যপ্রাচ্য আর নিজস্ব অধিকারের আশায় থাকতে থাকতে বিলীন হয়ে যাওয়া উপজাতিদের কথা বলে ওদের আর লজ্জা দিতে চাই না। মানবতা নামক রঙিন রঙধনু বিবাহ বৈধতায় আটকে ছিল, অন্য কোথাও মানবতার দরকার নাই। আমাদের টার্গেট এখন অনেক হাই, মনুষ্যজাত হিসেবে উন্নতির শিখরে যাচ্ছি; থামাবি যে, মূর্খ সে। হে প্রজাপতি, উড়ার জন্যে আফ্রিকা নয়; হে রঙধনু, বৃষ্টির পরে আর অন্য কোথাও উঁকি দিতে হবে না, আমরা লজ্জিত।

রঙধনুর ইস্যুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে, নতুন কিছু আসছে সামনে। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, সব ইস্যুইতো ছেড়ে চলে যায়, কিন্তু আবহ দেখে মনে হচ্ছে এবারের রঙধনুর ইস্যু কিছু সমকামী রেখে যাচ্ছে, সামনে হয়তো টের পাওয়া যাবে। জয়, কীটপতঙ্গের জয়! মানবতা দূরে থাক!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৪০

আমি শঙ্খচিল বলেছেন: ইহার নাম বাঙ্গালী । কিন্তু আমাদের কিছু করার নাই , লজ্জিত হওয়া ছাড়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.