নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

foooysaaal\'s blog

ফখরুল আমান ফয়সাল

সব ব্লগাররাই আমার চেয়ে জ্ঞানী, তাই নিজেকে জাহির করার দৃষ্টতা দেখাচ্ছি না। ফেসবুক: www.facebook.com/foooysaaal.own

ফখরুল আমান ফয়সাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মেয়ের কথা”

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৪৬

“মেয়ের কথা”
- - - ফখরুল আমান ফয়সাল


বিয়ের দিন সবচেয়ে দামী গহনাটা বড় বোন দিক বা বরের মা, বাবা যখন আগের রাতে মাথায় হাত বুলিয়ে কেঁদেছিলো, তখন মেয়ে ভুলে যায় পৃথিবীর কোন গহনার ভার কেমন। সে সময় মেয়েও কিছু সইতে না পেরে বাবার বুকে এসে ঝাপিয়ে পড়ে, খানিকক্ষনের জন্য তখন এই দু'টো প্রাণ নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে, নিঃশ্বাষে কেমন যে একটা হাহাকার আর ছটফট হয়, তা বাবা-মেয়ে ছাড়া কেউই বুঝতে পারে না। বিয়ের দিন কিছু মুহূর্তের জন্য চোখের কাজল সবচেয়ে দামী হয়ে পড়ে, চাপা আর্তনাদ নিয়ে মেয়ে হাসিমুখ করে বসে থাকে কাজল গড়িয়ে জল না পড়ে যায় সে ভয়ে। একটু পর পর কেঁপে উঠা চোখের পাঁপড়ির কোণায় চিকচিক করা বাবার প্রতিচ্ছবিটা আড়ালেই রযে যায় সবার।

শত শুভাকাঙ্খীদের দল ভীড় করে থাকে কনের আশেপাশে, সবার উৎসবের মাঝে ঐ যে এক কোণায় দাড়াঁনো নতুন পাঞ্জাবীতে বাবার ভঙ্গুর হৃদয়টা স্পষ্ট করে শুধু মেয়েই দেখতে পায়। মেয়ের পছন্দেই কিনেছিল সে পাঞ্জাবীটা, মেয়ের বিয়ের দিন পড়বে তাই এই প্রথম এতো দাম দিয়ে কেনা। কিন্তু সে পাঞ্জাবীর ভেতরে একটা যে শুকনা বাঁকা দেহের হৃদয় ধুঁকছে তার উত্তাপ মেয়ের বুকেও লাগছে, তাই এসির নীচে বসে বাবার মতো সেও ঘামছে। আজ বাবার সিগারেট খাওয়া হয়নি, সকাল থেকে প্যাকেট কোথায় রেখেছে মনে নেই, প্রতিদিনের মতো মেয়েকে বলতে পারে নি খুঁজে দিতে। বরের সাথে খেতে বসার আগে সিগারেটের প্যাকেটটা কাউকে দিয়ে আনিয়ে লুকিয়ে মায়ের হাতে দিয়ে বলেছে, “বাবাকে চুপ করে দিয়ে দিও, আমার কথা বোলো না।” সে প্যাকেট হাতে পেয়েই বাবা বুঝে যায়, অভিনয়টা আজ দু দিক থেকেই। সিগারেটের প্যাকেট নতুনই রয়ে থাকবে কয়েকটা দিন, তাকিয়েই থাকা হবে, না খাওয়া হবে, না আর হারাবে।

প্রেমিকের হাত ধরে হোক আর বড় খালুর আনা সমন্ধই হোক, বিয়ের দিন ঘর থেকে বিদায়ের সময় বাবার পা জোড়া ছুঁতে গিয়ে মেয়ের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে, সে পানিতে চকচকিয়ে ওঠে বাবার জুতা জোড়া। যে জোড়া মুছতে কাউকে কখনো হাত দিতে হয় নি, বাবা প্রতিদিন ঘর থেকে বের হবার সময় মেয়ে নিজের হাতে মুছে দিতো। আর আজ যাবার আগে শেষবারের মতো মুছে দেয়া হচ্ছে; কিন্তু এবার, না ছুয়েই।

মেয়ের অনুপস্থিতিতেও ঘুম থেকে উঠেই বাবা চা রেডী পেয়ে যায়, খবরের কাগজ বিছানার পাশেই পড়ে থাকতে দেখে। মেয়ে সবগুলোই মাকে বলে গিয়েছে। সবকিছুই রুটিনমাফিক হচ্ছে, শুধু দুটো প্রান দুটি ভিন্ন জায়গায় থেকে অন্ধের মতো মুহূর্তগুলো হাতড়াচ্ছে। বাবার কাপের চা প্রায় প্রতিদিনই ঠান্ডা হয়ে যায়, অর্ধেকটা খেয়ে আর খেতে ইচ্ছে হয় না, কি যেন নেই এই চায়ে! ওদিকে মেয়ের রোজ ঘুম থেকে উঠার সময় মনে হয়, এই বুঝি বাবা দেখতে এলো তাকে, এই বুঝি বাবা চলে এসে ঘুম ভাঙিয়ে বলবে, “মা, ওঠেন মা, আমার চা কই?” এখন বরের বাবার জন্যে চা রেডী হয়, সে চায়েও মনের অজান্তে দু’ফোঁটা জল পড়ে যায় মেয়ের চোখ থেকে, তাই প্রথম ক’দিন একটু দেরীই হয়ে যায় সবাইকে চা দিতে।

তারপর, দিন যায়, অনেকগুলো দিন পার হয়ে যায়। জীবনের বাকি দিনগুলো বাবা তার সেই ছোট্ট খুকির সাথে পার করে। কখনো দেখতে পায়, প্রথমবার কিনে দেয়া চুড়ির গোছা নিয়ে খুকিটি তার পাশে বসে নিজ হাতে চুড়ি পড়ছে, কখনোবা দেখে সকালে চা হাতে দাড়িয়ে ডাকছে, “বাবা! ওঠো না! চা ঠান্ডা হলে আবার কিন্তু বানাতে পারবো না!!” “উঠছিরে মা।” কিন্তু কই? উঠে দেখে, মেয়েতো নেই! বাবা ভুল করে? না, করে না। ভুল মেয়ে করেছে, সে ভুল করে তার রুমের আয়নায় তার কিছু টিপ লাগিয়ে রেখে এসেছে। বাবা এখনো ওগুলোতে হাত বুলায়, ওখানেই সে তার মেয়ের কপালটা ছুতে পায়, এই যে মেয়ে দাড়িয়ে আছে, চুল আচড়াচ্ছে আর বলছে, “বাবা, আমাকে কখনো বিয়ে দিও না, আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারব না।” তাও বাবা বিদায় করে দিলো তার কলিজার টুকরাকে! সে জন্যে বাবার প্রতি মেয়ের ক্ষোভ কখনোই শেষ হয় না, কাখনো না। কাউকে বলতেও পারে না এই অভিমানটার কথা, আজীবন না বলাই রয়ে যায়, আজীবন এই চাপাকষ্ট নিয়ে মেয়ে বাবাকে ছাড়া জীবনের সবচেয়ে কঠিন পথগুলো পাড়ি দিতে শুরু করে।
মেয়েও তার বাকি জীবনের প্রতিটা দিন কাটায় বাবার স্মৃতিকে সাথে নিয়ে। শাড়ির আঁচলটা পেছনে থেকে জড়িয়ে যখন সামনের দিকে এনে টানে, তখন সাথে সাথেই সে টের পায় বাবা তার কপালে এসে চুমু খেয়ে একই মিথ্যা কথাটা আবার বলছে, “আমার মা, তোকে আমি কখনোই কোথাও যেতে দিব না।” “কেন এই মিথ্যা কথা বললা বাবা, কেন?” অন্তত এই কথাটাও মেয়ে জিজ্ঞেস করতে পারে না তার বাবাকে।

যখন মেয়ে তার বাপের বাড়ি যায়, যখন অনেকগুলো দিন পর বাবার সাথে দেখা হয়, যখন প্রথমবারের মতো রেখে চলে যাওয়া বাবার দিকে তাকায়, তখন মেয়ের এতো কষ্ট হয়, এতো কান্না পায় যে বহুদিনের সেই অভিমান নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার ভাষা থাকে না; তখন শুধু দু’জোড়া চোখ কথা বলে, আর দু’টি বুক চুপ করে থেকে, শক্ত করে জড়িয়ে থেকে শুনে নেয় সবকিছু। নিস্তব্ধ বাতাশে তখন গুঞ্জন হয়, “মারে, আর যাস নে আমাকে ছেড়ে।” “বাবা, আমাকে আর যেতে দিও না বাবা।”
পড়ার জন্য ধন্যবাদ।


অনেকে গল্প PDF ফাইল হিসেবে রেখে দিতে চান, পরে পড়ার জন্য। ফোনে কিংবা পিসিতে সেভ করে পরে পড়ার জন্য নিচের লিংকে ক্লিক করলেই গল্পটির PDF ভার্সন পাবেন। তারপর Save করে নিতে পারবেন।

http://bit.ly/214YuP4

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: মানিয়ে নেয় সবাই একসময়। মেয়ে নিজের সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, বাবাও ঠিক হয়ে যান। সময় হলো সবচেয়ে বড় ওষুধ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.