নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চট্টগ্রামের চাঁদগাও তে আমার জন্ম।বিশেষ কেউ নই আমি।একজন সাধারণ পরিবারের ছেলে আমি। সাহিত্যের প্রতি এক অনড় আকর্ষণ রয়েছে আমার মধ্যে। কাব্য-সাহিত্যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতা পাঠ করে।

মেহেরাজ হোসেন অভি

চট্টগ্রামের চাঁদগাও তে আমার জন্ম।বিশেষ কেউ নই আমি।একজন সাধারণ পরিবারের ছেলে আমি। সাহিত্যের প্রতি এক অনড় আকর্ষণ রয়েছে আমার মধ্যে। কাব্য-সাহিত্যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতা পাঠ করে।

মেহেরাজ হোসেন অভি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুঞ্জয়

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯

কি অধম্য চেষ্টা,আকুলতকা,সংগ্রাম! মৃত্যু-রহস্যে পা রাখতে চলা সেই সংগ্রামী মানব সংগ্রাম করছেই। মৃত্যুক্ষুধাই আসক্ত সংগ্রামী মানব মনোবলের উপর ঠিকরিয়ে বাঁচার জন্যে প্রবল যুদ্ধ করছেই। শক্তি তাঁর যেন আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। চারিদিক যেন ঘন অন্ধকার ছেয়ে যাচ্ছে। সংগ্রামী কিছুই দেখতে পাচ্ছেনা। ভাবছে,তাঁকেও বুঝি কেউ দেখছে না। হায়! এ কি নরক যন্ত্রণা! এই বুঝি আর বাঁচল না সে। যাবে তো এখন!
কিন্তু সংগ্রামী তাঁর সংগ্রাম চালাচ্ছেই। যুদ্ধ করছে মৃত্যুঞ্জয় নামক এক অলিন্দ্য-সম উপাধি লাভের নেশায়। চোখের কোটরে সে যেন কিছু অনুভব করে। মুহূর্তে আবার ভুলে যায়। চিৎকার,আহাজারিতে চারিদিকের পরিবেশ অতিষ্ট। অতিষ্ট সেই মৃত্যুঞ্জয় সংগ্রামী মানব। হয়ত বলছে,'আহা! এত চেচামেচি যেন আমার ফিরে আসার আকুলতাকেই ছিন্ন করতে চায়।' মৃত্যুঞ্জয় তবু সংগ্রাম করছেই। এখন সে টলবেনা। হারিকেনের আলোর মতো তাঁর জীবন-বাতি নিভুক,তবু চাইবে বাঁচতে। তবু বাঁচবে সে। মরতে চায়না সে। আপনদের ছাড়তে চায়না সে। মৃত্যুকে সহজ ভাবে নিচ্ছেনা সে। তাঁকে বাঁচতে হবে। তাঁর জন্য। তাঁর আপনদের জন্য।
খোদার দূত-কে যে আসতেই হবে। পাহাড়সম ব্যথা যে মৃত্যুঞ্জয় কে দিতেই হবে তাঁকে।
সে আসে। এসে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে পড়ে ঘরের কোন এক কোণায়। মৃত্যুঞ্জয় অতিথির দিকে তাকিয়ে থাকে একনিষ্টে,আড়-চোখে। সাপের গতির মতো তীক্ষ্ণ সেই ভয়ার্ত তাকানো। মৃত্যুর দূত কাছে আসে। এসে বসে মৃত্যুঞ্জয়ের ঠিক কাছাকাছি। আহা! কত ক্লেধ! কত দৌড়ে পালানোর চেষ্টা মৃত্যুঞ্জয়ের। কিন্তু না! তাঁর শরীর যে এখন ক্ষমতা হীন। সামান্য ঘুরে তাকানোরও যে তাঁর ক্ষমতা নেই।তাঁকে চলে যেতে হবে।
হাত ঢুকিয়ে তাঁর রুহ্ টেনে আনে মৃত্যুর দূত। রুহ্ যেন পালিয়ে গেল তাঁর হাত থেকে। গিয়ে লুকাই কলসির ভেতরে।
.
কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারল না মৃত্যুঞ্জয়ের রুহ্ টা। চলে গেল মৃত্যুঞ্জয় কে ছেড়ে। আপনজন দের ছেড়ে। রওনা দেয় উর্ধ্ব-গগনের পানে। আর যায়না ফিরে যেতে,তাকায়না পিছনে। চলে যায় খোদার কাছে।
.
মানব-সভ্যতা আজ তবুও রুখে নেই। অনবরত চলছেই। কেউ যাচ্ছে তো নতুন কেউ আসছে। সবার বাসস্থান বদলে যাচ্ছে। জমিনে গড়ে উঠছে গোরস্থান। চলে যাওয়া প্রত্যেক মৃত্যুঞ্জয় শুয়ে পড়ছে সেখানে। আর নতুন আগত রা? ওদের তো জায়গা অনেক। মায়ের কোল-ই হয়ত ওদের প্রথম ও প্রধান বাসস্থান। ধীরে ধীরে তারাও বড় হয়। একসময় খুব বড় হয়ে যায়,বৃদ্ধ হয়ে রুগণ হয়ে পড়ে থাকে বিছানায়। একসময় তাঁদেরও সময় চলে আসে জীবনের আসল সংগ্রামটি করার। মৃত্যুঞ্জয় হয়ে ওঠে পরক্ষণেই। চলে যায় সে। গোরস্থানে জায়গা হয় তাঁর।
.
আজ আচমকা এমন একটি লেখা লিখলাম।হয়তো অনেকেই অবাক হবেন।এতদিন চরণের পর চরণ লিখছিলাম কবিতার,গল্পের।আজ এই হৃদয়-পাংশু করা লেখাটি লিখেছি তাঁর একটা কাহিনী আছে।
আজ ছোট খালার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম।বাসায় যাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি উঠানের সামনে এক মহিলা এখান থেকে ওখানে,ওখান থেকে এখানে দৌড়ছে আর প্রচণ্ড আহাজারি করছে। আমি ব্যাপারটা মনে করেছিলাম কেউ পুকুরে পরে গিয়েছে হয়তো। কিন্তু না! কেউ পরেনি পুকুরে। মহিলাটি তাঁর ঘরে ঢুকল কান্না করতে করতে। ভিতরে গিয়ে দেখি এক চল্লিশ-পঞ্চাশোর্ধ্ব মৃত্যপথযাত্রী একপা-হীন বয়স্ক মানুষ কাঁতরাচ্ছে মৃত্যু-যন্ত্রণায়। ছটফট করছিল খুব। আমি খুব মর্মাহত হলাম এই দৃশ্য দেখে। সত্যিই এখনও খারাপ লাগছে মানুষটির জন্য। না হয় এসব লিখতামনা।
সত্যিই আজ আরেকটা জিনিসের প্রমাণ পেলাম যে,গরীবের সবচেয়ে বড় পাওয়া হল অবহেলা। অবহেলাই যেন তাদের প্রাপ্য। মানুষটি যখন মৃত্যু-ক্ষুধায় আচ্ছন্ন হয়ে কাঁতরাচ্ছিল,তখন পাড়ার কেউই দেখতে আসলোনা। অবশ্যই আমরা ছাড়া। কিন্তু চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই মৃত্যুর পর দেখলাম হুড়-মুড় করে তিন-চারটা মহিলা ঘরে ঢুকে পড়ে। বুঝছিনা এরা আসল সময়ে আসেনি কেন। আহাজারি তো ওই মহিলাটি কম করেনি। তবু কি শুনতে পাইনি নাকি শত্রুতা বিষয়ক কিছু?
মেজাজ প্রচণ্ড গরম হয়ে ওঠে আমার। মনে হচ্ছিল যেন কিছু বলি তাদের।
মৃত্যুর পরে আমার মেজো ভাইয়া মৃত মানুষটির চোখ বন্ধ করে দেয়। হাত-পা সোজা করে দেয়। একটা কাপড় বিছিয়ে দেই তাঁর গায়ের উপর। তাঁর বিধবা স্বামীর মাথার কাছে বসে কাঁদছে। মৃত্যু তাঁর দুয়ারে এসে তাঁর স্বামীকে নিয়ে চলে গেল। এখন নিস্তেজ স্বামী কাফন-বন্দি হয়ে পড়ে আছে একপাশে।
.
হায়! এইটাই হয়ত জীবন। দুইদিনের দুনিয়া।কি পারা যাবে,যখন প্রত্যেককের এই সংগ্রামের দিনটা ঘনিয়ে আসবে? কি-ই বা সম্ভব হবে? কোন কিছুই হয়ে ওঠেনা।জীবনে অনেককিছুই-ই হয়ে ওঠেনা। একদিন সবাইকে চলে যেতে হবে। কবরের অতল-অগভীর-আঁধারে থাকতে হবে কিয়ামতের আগ পর্যন্ত। তবু তো মানুষের বিবেকের সামান্যতম পরিবর্তন হচ্ছেনা। ভাবছে না যে তাঁকে তাঁর সমস্ত গুনী-পাপী কাজের বিবরণ দিতে হবে একসময়,সেই মহাবিচারকের দরবারে দাঁড়িয়ে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.