নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

“রক্ত বিক্রি করে হলেও তোদের পড়ালেখায় ক্ষতি হতে দেবো না…”

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২২

হোস্টেল জীবনটা খুব মধুময় ছিলো না । কিন্তু বাবার আদরের স্মৃতিটা আজও বড় সুখের আবেশ এনে দেয় । বাসা থেকে হোস্টেল বেশি দূরে ছিলো না, তবু লেখাপড়ার কথা বিবেচনা করে এবং শিক্ষকদের অনুরোধে সেখানেই থাকতে হতো । আর বাবা দু’বেলা খাবার নিয়ে আসতেন টিফিন ক্যারিয়ারে । ব্যাংকের অফিসার । তারপরও এই ছেলের জন্য এতটুকু করতেন সীমাহীন মমতা নিয়ে । হোস্টেলে আসার শর্টকাট রাস্তাটা প্রায়ই থানার কর্মকর্তারা আটকে রাখতেন । বাবা গেটে এসে খাবার বাটি হাতে দাঁড়িয়ে থাকতেন । গেটের ওপাশ থেকে কাউকে দেখতে পেলে অনুরোধ করতেন, যেন আমাকে একটু খবর জানায় যে, তোমার বাবা দাঁড়িয়ে আছেন । কখনো কখনো আমি রাগ করে ঘুমিয়ে থাকতাম । বাবা আবার ঘুরপথে আসতেন । আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে হাত-মুখ ধুইয়ে নিজে ভাত বেড়ে খাওয়াতেন । অফিস টাইম লেট হয়ে যেতো । অথচ বাবা চাইলেই কাজটা অফিসের পিয়নকে দিয়েও করাতে পারতেন ।



এ্যাপেন্ডিকস অপারেশনের সময় মৃত্যুর ছায়া দেখে এসেছি আমি । হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা আর তক্ষুণি হসপিটাল । তিনরাত ছিলাম বেহুঁশের মতো । শুধু মনে আছে একটু পরপর বাবার গলার আওয়াজে, এখনও পেটে ব্যথা আছে আব্বু ?

তিনদিন পর ডাক্তার রিপোর্ট দিলেন, এ্যাপেন্ডিক্স ব্রাস্ট । মুষড়ে পড়লেন মা । কিন্তু বাবা শান্ত, স্থির । ধীরহাতে ওটি পেপারে সিগনেচার করেছেন । দীর্ঘ তিনঘণ্টা পরে এক বিস্ময়কর রোগীকে ওটি থেকে বের করেছে নার্স । সবার মতে শুধু খোদার ইচ্ছাতেই বেঁচে গেছি আমি । হসপিটালে বন্ধু-স্বজনদের প্রচণ্ড ভিড় । সেখানে বাবা অনেকটা উপেক্ষিত । তবু বাবা সেই ভিড়ে পেছনের সারি থেকে তাকিয়ে ছিলেন আমার দিকে । পানির তেষ্টায় ছাতি ফেটে যাচ্ছিলো । ডাক্তারদের কড়া বারণ, ১২ ঘণ্টা পার না হলে কিছুই মুখে দেয়া যাবে না । বাবা একটা রুমাল ভিজিয়ে এনে ঠোট মুছিয়ে দিচ্ছিলেন বারবার ।



আমার বইপড়া নিয়ে আম্মু প্রায়ই অসহিষ্ণু হয়ে উঠতেন । বিশেষ করে খাবার সময়ও পাশে বই মেলে খাবার খাওয়া দেখলে আম্মুর ধৈর্য বাঁধ মানতো না । আব্বু কিন্তু খুব আশকারা দিতেন । আম্মুকে গর্ব করে বলতেন, আমার ছেলে ‘আবু হানিফা’ হবে একদিন, দেখো ।

সংসারের কঠিন সংকটেও বাবা কোনোদিন পড়ালেখা ব্যহত হতে দেন নি । বলতেন, আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও তোমাদের পড়ালেখার খরচ জোগাবো আমি । তোমরা শুধু মন দিয়ে পড়ো ।



মনে পড়ে, একদিন বাবা ঘুমিয়ে আছেন । ঘুমন্ত বাবার বুকে উঠে খেলছি আমি । হাতে কাঁচা ডিম । হঠাৎ ডিম ভেঙ্গে সব তরল বাবার গায়ে পড়ে একাকার । আম্মু তো ভয়ে শেষ । না জানি বাবা রেগে কী কাণ্ড করে বসেন । বাবা কিন্তু আজও সে গল্প বলে হাসেন ।



জানি, পৃথিবীর সব বাবারাই এমন । তবু কেন যেন মনে হয়, আমার বাবাই শ্রেষ্ঠ বাবা । সবার চেয়ে ভালো বাবা আমার ।

আমার চাকরির সংবাদ শুনে আনন্দ লুকিয়ে বাবা প্রথমেই বলেছেন, “আব্বু, বাড়ির কথা চিন্তা করে পয়সা বাঁচাতে গিয়ে কষ্ট করবে না । লোকাল বাসে অফিস টাইমে খুব ভিড় হয় । সিএনজিতে বা রিক্সায় যাবে” ।



বাবা, আজ তোমাকে খুব মিস করছি । জানি, তোমার বেলায় এই ‘মিস’ করা শব্দটা ঠিক যায় না । বাবা দিবস নিয়েও তোমার পিতৃত্বে আলাদা কোনো কৌতূহল জেগে উঠবে না । আমাদের অঞ্চলের হাজারো মানুষের আশ্রয় যেমন তুমি, বাবা । তেমনি আজও আমার নির্ভরতা প্রতীক ।



জানি, তুমি এখন ঘুমুচ্ছ, বাবা । কাল সকালে কথা হবে । ভালো থেকো বাবা । অনেক ভালো থেকো ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৫৯

নানাভাই বলেছেন: ভালো থেকো বাবা । অনেক ভালো থেকো ।
মনটা খারাপ হয়ে গেল।

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১:০৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ভালো থেকো, দাদাভাই...

২| ২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:৪৪

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: বাবা না হলে বাবার কষ্ট, ব্যাথ্যা বুঝা যায় না। এখন বাবা হয়ে বুঝি, বাবা হবার মজা কেমন!

বাবাদের জন্য পাবার কিছু নেই, শুধু দেবার। তবুও কাউকে খুশি করা যায় না।

২৭ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৮

মনযূরুল হক বলেছেন: আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.