নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাম পিরিতের দিন ফুরোলো : সন্ধির বোলচালে হারায়ো না গতি

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৫

রাম-শাম ও যদু-মধুর মতো নক-বাক নামে দুই সহোদর কখনো থাকলে থাকতেও পারে। জন্মের কিছুদিন যেতে না যেতেই জগজ্জননী দু’টি কালো শালে মুড়ে তাদেরকে ফেলে দিয়ে এলেন সীমান্তের ভাগাড়ে। যেখানে বেশক’টি মাথার খুলি পড়ে ছিলো আগে থেকেই। বেওয়ারিশ খুলির পাশেই বেওয়ারিশ দু’টি শিশু পড়ে রইলো লোকচক্ষুর আড়ালে। দীর্ঘদিন। বয়স বাড়লো। কিন্তু বাড় হলো না। খাওয়াতে পরাতে অপুষ্টির ছোঁয়া, পাশে থাকা শুষ্ক মস্তিষ্কের ক্রিয়া, তবু যেদিন ওরা হাঁটতে শিখলো, অঘটনের শুরুও সেদিন থেকেই। কালক্রমে এই দুই সহোদরই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো নকশাল ও বাকশাল নামে। যারা পরবর্তী সময়ে বাংলা অঞ্চলকে-ওপার কিংবা এপার-ট্রেডমিল বানিয়ে ছেড়েছে। অধিকারের আগুন জ্বালিয়েছে, দায়িত্বের আলস্যে জনগণকে ভুগিয়েছে। হাঁক-ডাক আর প্রতাপ-প্রতিপ্রতিপত্তির সঙ্গে অস্ত্রের ঝনঝনানিও শুনিয়েছে। ফলাফল সেই ট্রেডমিল ছাড়া আর কিছুই আসে নি।



ট্রেডমিল হলো, জিমে দৌড়ানোর মেশিন। আবিষ্কারের আগে রচিত এ্যালিস ওয়ান্ডারল্যান্ড গল্পের রানির অমোঘ সেই উক্তিও ইতিহাস হয়ে আছে- তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছো, সেখানে হাজির থাকতে হলেও তোমাকে আপ্রাণ দৌড়তে হবে। নকশাল ও বাকশালের পরিণতি শেষপর্যন্ত এর বাইরে যেতে পারে নি। এই দুই আন্দোলন যে ফাঁদ পেতেছে, সেখান থেকে আর বেরোনো সম্ভব হয় নি বাংলাদেশের। সেই নকশালের শ্রমনীতি আর বাকশালের সংবিধান। সেই গুম-হত্যা-লুণ্ঠন-নৈরাজ্য। সেই বুর্জোয়া শাসনব্যবস্থা। সেই হুজুর-ভুলানি কর্মসূচি। সেই জনক-জননীর পুজ্যোচর্চা। আমরা আপ্রাণ দৌড়াচ্ছি আর দৌড়াচ্ছি, সামনে বাড়ছি না। বাড়তে পারছি না। কেবল স্বস্থানে টিকে থাকার জন্যেই, নিজের পদতলটাকে ব্যায়াম কসরতে মজবুত রাখা পর্যন্তই এ দৌড়। যেন খোকাবাবুর কৌতুকের মতো। মিঠাই খেতে বায়না করলেই বললেন, বাবু একটু ঘুরে এসো। অমনি সে তিনশ’ ষাটডিগ্রি ঘুরে ঠকাস করে এক স্যালুট ঠুকে বললো, ঘুরে এলুম তো, এবার দাও। ভাগাড়ের মাথার খুলি আর কালো শালের তলে বেড়ে ওঠা সহোদর ক্রমশই টেনে নিয়ে যাচ্ছে সেই ভাগাড়ের পূঁতিগন্ধময় রাজ্যে। বৃথাই আস্ফালন।



এক.

বাম ও রামকে কেন চায় না মানুষ, বাকশাল ও নকশালের পতন হলো কী করে, সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মনুষ্যত্ব ও শিল্পায়ন- এই দুই মেরুতে হানা দেয় উচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পরাজয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পরে বঙ্গবন্ধুর জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামতে শুরু করেছিলো। কেন ? অথচ অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশে ঘটা উচিত ছিলো উল্টোটা। কিন্তু কথায় আছে, ক্ষমতা মানুষকে নষ্ট করে, আর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা মানুষকে পুরোপুরি নষ্ট করে। বামদের নকশাল আন্দোলন সে সময় পশ্চিমবাংলা থেকে আছড়ে পড়েছে পাবনা-সিরাজগঞ্জ পথে পথে। শ্রমিক আন্দোলনের সেই ঘেরাও-অবরোধ কর্মসূচি কোনো নতুন নয়, আগেও ছিলো। তবু সে সময় তাদের তীব্রতর জঙ্গি আন্দোলনে অনেকের ব্যক্তিস্বাধীনতা আর ব্যক্তিসম্পত্তি বিপন্ন হয়ে পড়ে। মুক্তির আনন্দ বরবাদ হতে থাকে। অস্থিরতার ওপর ঘৃতাহুতি দিলো বাকশাল। রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা আর আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে প্রশাসন চালানো যে এক কথা নয় সেটা বঙ্গবন্ধু বুঝে উঠতে পারেন নি। একধমকে ওরিয়ানা ফালাচির মতো সাংবাদিককে পাঠিয়ে দিলেন দূরদেশ অস্ট্রেলিয়ায়। অতএব, দুই সহোদরের লড়াইটা অনিবার্য হওয়াই কি সঙ্গত ছিলো না ? আজ যারা নেমক হালালকরা কীর্তন গাইছেন, তাদের জবনি ফসকে তখন ‘শেখমুজিবের চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর’ ফলিতকলা তো আর এমনি এমনি রচিত হয় নি ? হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে মিষ্টিযজ্ঞ বড় নৃশংসতার দাবি রাখে সত্য, তবে হত্যার পেছনে নিষ্ঠুরতা থাকলে মিষ্টির পেছনেও তো উল্লাসের বরাভয় থাকে। নয় কি ! অনেক কারণ আছে, অনেক। এইসব অনমনীয় অস্থিরতার ঘোঁট পেকেছে সুদীর্ঘ পরিক্রমার ভেতর দিয়ে। মনে রাখা উচিত, এই উপমহাদেশে ৪৭-এর ১৬ আগস্ট যেমন একদল মানুষ বুক ফাটিয়ে ক্রুর হাসি হেসেছিলো, তেমনি ৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর একদল মানুষ কিন্তু মুখ চেপে আরশ পানে কেঁদেছিলোও। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরই ভারতের তালপট্টি দখল, জিন্নাহ হলকে সূর্যসেন নামকরণ, নজরুল ইসলাম কলেজ থেকে ইসলাম বাদ দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থেকে আল্লাহর নাম তাড়ানো, আল্লাহু আকবারের পরিবর্তে জয় বাংলার শ্লোগান- এসবের সঙ্গে নাড়ির সূত্রটা সময়ে অসময়ে বড় কঠিন হয়ে বাজে।



সুতরাং এই গোষ্ঠীর সামনে ফেলানী আনলেই কেন ভাবছেন কলজে চিতিয়ে দেবে তারা ? মানুষের চেয়ে যাদের নিকট পেয়াঁজের দাম বেশি, যারা বাসন্তীদের লজ্জা নিবারণের জন্য মাছধরা জাল সরবরাহ করে এখনও, যাদের দোরগোড়ায় রেশমা নাটকের মঞ্চায়ন হয় প্রতিনিয়ত, রৌমারির গৌরব যারা তিলকে তিলকে মুছে দিয়ে আসে নিমিষেই- বন্ধুদেশের করদ রাজ্যকামী সেই চিত্তরঞ্জন সুতারদের রেকর্ড সংসদে বাজিয়ে শোনা হোক না আবার, পার্টি থেকে ডার্টি বের হতে সময় লাগবে না। ফেলানী কোন ছাড়, পুরো দেশটাই যে রেকর্ডে চলে যেতো সীমানার ওপারে, সেখানে ক’টা ভারতীয় চ্যানেল নিয়ে এত ফালাফালির কী আছে ?



আজ যে আহমেদ শরীফ বায়েজিদ বোস্তামিকে নির্বোধ বলে মায়ের শিয়রে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থাকার অপরাধে, দ্বিতীয় খলিফা উমরকে বলে আহাম্মক, কেন সে প্রভু হয়েও সে ভৃত্যকে উটের পিঠে রেখে নিজে রশি টেনেছিলো, তাই। কেন ? কোন মানবিকতা এদের পূর্বসূরীকে কালোশাল পরিয়ে ভাগাড়ের ময়লা বানিয়েছিলো, বুঝতে কষ্ট হয় ? এইসব হলো সেক্যুলার মনুষ্যত্বের উদাহরণ। শিল্পায়নের বিষয়টা তুললাম, কেননা, বামের শ্রমিক আন্দোলন বললেই শিল্প-কারখানার নির্দয়তা আর স্ট্যালিনের বর্বর কানামাছি সামনে চলে আসে। সেদিকে গেলে, আমিনুলের মতো ট্রেডইউনিয়ন লিডারের পিঠে তাজা গুলি পিটিয়ে পিটিয়ে গেঁথে দিতে পারে যারা, তাদের কাহন শুরু হবে। রাত ফুরোবে না। কে যেন বলেছিলো, রক্তগরমকে সামলানো যায়, কিন্তু মাথাগরমকে সামলানো দায়।



দুই.

সেক্যুলার মানে ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ধর্মের অস্তিত্বহীনতা। আপনি তাবিজ-কবজের তাম্রঝাড় ঝুলিয়ে রাখেন গলায়, নিভৃতে প্রার্থনায় মেডিটেশনে বুঁদ হয়ে থাকেন, স্বপ্নের অগোচরে জিহাদ জিহাদ বলে চিৎকার করেন সমস্যা নেই, নো কমেন্ট, কিন্তু ধর্মকে সমাজে পরিবেশে জায়গা দেয়া যাবে না। এই হলো সেক্যুলার। ইউরোপে এই সেক্যুলার তত্ত্ব ছড়াতে সাড়ে তিনশ’ বছর ব্যয় হয়েছে। বামের লক্ষ্যকাল কতটা- এতো সহজেই ওরা ফাঁস করে দেবে না। অথচ দেখুন, এই প্রথম বাম এদেশে ক্ষমতার স্বাদ পেলো এবং অতিসচেতন বুদ্ধিতে ধর্মকে পাশ কাটিয়ে চলেও গেলো। মনে হয়, অবচেতনে কয়েকবার ধর্মের সাফাইও গেয়ে ফেলেছে বৈকি। তারচে’ আচানক কা- সেক্যুলার বামের উপস্থিতিেিতই প্রগতিশীল সরকারের সংসদে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস। এখানে ভাবনার খোরাক আছে। বিরাট কথা আছে।



যদিও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আদলে স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব পাস হলো, সেখানে কওমি শিক্ষালয়ের আলোচনা হয় নি। তবে কওমি শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে সরকার। হায় হায় গেলো গেলো বলে কওমি সমাজ একলাফে সেটা প্রত্যাখ্যান করেছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে কওমিকণ্ঠীদের ঈমান আমল- এমন ধুয়া বেশ সরগরম করে ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। সরকারি নিয়ন্ত্রণে না থাকলেও কারো না কারো নিয়ন্ত্রণে তো অবশ্যই থাকতে হবে, তাই না ! তারাও কি একশ ভাগ খাঁটি ? স্বীকৃতি দেবে সরকার। আমরা যাচ্ছি, ধর্ণা দিচ্ছি, মারামারি হাতাহাতি পর্যন্ত করছি বারবার সরকারের দলিজায় বসে। সরকার কোনো নিয়ন্ত্রণ না রেখেই হাল-পাল সব ছেড়ে দেবে, এমন না ভাবাই ভালো। এই যুক্তি অর্থহীন যে, পাক-ভারতে আছে। অনেক দেশেই অনেক কিছু আছে আরো শতাব্দিকাল থেকে। আমাদের নেই। চট করে হবেও না। কেন হবে না, সে প্রশ্ন না করে, আমরা বলি, সরকারি নিয়ন্ত্রণে দেশের কুল্লে শিক্ষাব্যবস্থা থাকতে পারলে, এটায় সমস্যা কি ? মাদরাসা শিক্ষা, বিশেষ করে কওমি মাদরাসা যেখানে স্বীকৃতিদাতাদের নজরে ‘জঙ্গি আস্তানা’ বলে স্বীকৃত এবং মুফতি-রহমানি মার্কা কতিপয় ¯্রােতহারা প-িত তার প্রমাণও জুগিয়েছে বেশ, সেই জাতিকে একফুঁয়েই তুড়ি মেরে উজবুক থেকে মাস্টার্স বানিয়ে দেয়া হবে, কোন বোকার স্বর্গে বাস করি আমরা ? প্রত্যাখ্যান করার ফলে সরকারের আরেকটা লাভ হলো, তারা বলবে আমরা এ জাতিকে জাতে আনতে যথার্থ কোশেশ করেছি, তারা নিজেরাই ওতরাতে চায় না। আমরা কী করবো ? ইন্নাল্লাহা লা ইউগয়্যিরু...। এমনিতেও শেষসময় এসে এই ফাড়াটা কাটানো সরকারের খুব দরকার ছিলো।



আমার মতে, যেই নব্বই পার্সেন্ট লোকের বাহাদুরি দেখিয়ে নাস্তিক বিরোধী আন্দোলন করি আমরা, সরকার সেই নব্বই পার্সেন্ট লোকের ‘নোট দেয়া ভোট নেয়া’ ম্যান্ডেটের বলেই ক্ষমতায় আসা। সে কখনো পক্ষের হবে কখনো বিপক্ষের, এ নিয়েই দেশ-কাল-সামজের মহাপরীক্ষাটা চলছে আমাদের। ‘সরকার’ শব্দটার মধ্যে তো আর কোনো অশুচি লুকিয়ে নেই, তাই না ! নাকি আছে ? তাহলে আমরা আবার সেই সরকার হবার তন্ত্রে মাঠে নামি কেন ? ভোটে যাই কেন ? কই, সেই নব্বই পার্সেন্টের খেল তো ভোটের বেলায় তো আমাদের পক্ষে যেতে দেখি না। আমাদের ইসলামপন্থী সমাজ যোগ্য, নাকি অযোগ্যÑ সেই স্বীকৃতি কে দেবে ? রাজনীতির নব্বই পার্সেন্ট আর নাস্তিক বিরোধী নব্বই পার্সেন্টের মধ্যে ফারাকটা কোথায় খুঁজে দেখা দরকার।



এই প্রশ্নের সম্ভব্য উত্তর হতে পারে দু’টি। প্রথমত: জনগণ এদেরেকে যোগ্য ভাবে, কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে আসুক সেটা চায় না। কেন চায় না ? মানুষ কি বুঝে ফেলেছে যে, ভোট-নোটের কারবার এবং তন্ত্র-মন্ত্রের দরবার ইসলাম সাপোর্টেড নয় ? কিভাবে বুঝলো মানুষ সে কথা ? কারা দিয়েছে সেই ফতোয়া ? আমরাই তো, নাকি ? যেভাবেই হোক, আমরাই ইনিয়ে বিনিয়ে এক একটা সময় মানুষকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলেছি তো ? তাহলে আজ কেন সত্য প্রকাশে এত সংশয় ? কেন এত লুকোচুরি ? দ্বিতীয়ত: হতে পারে মানুষ আমাদেরকে অযোগ্য ভাবে। তাহলে কুল্লে খালাস।



এই মানুষ মানে সাধারণ মানুষ। এদের মধ্যে জুমার মুসল্লি আছে শতকরা নব্বইভাগ। তারপরও তারা জুমার খতিবকে ভোটের সমর্থন দিতে রাজি হয় না। রাজনীতির কথা বলতে গেলে ইমামকে শাসায়। তাদের চোখের সামনে থেকে মুয়াজ্জিনকে হেঁচড়ে টেনে নিয়ে যায়, তারা নির্বিকার। হ্যাঁ, আমরা দেখেছি, যেই দল এই মুসল্লিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনকে পীড়ন করেছে, ঝটকা মেরে সেই দলের বিপক্ষে নব্বই ডিগ্রি এ্যাঙ্গেলে ঘুরে দাাঁড়ায় তারা ঠিকই, সীলটা মারে অন্যদলের ব্যালটে। কেন ? এই ইমাম যেই দলের কথা বলে, সে দলে নয় কেন ? এই খতীব যেখানে মুক্তি খোঁজে সেখানেই বা তাদের আপত্তি কেন ? তারচে’ বড় প্রশ্ন, এই ‘ঝটকামারা’ পরিবর্তনটা যে ইমাম-খতীবকে নিগৃহীত করার ফলেই হয়েছে, সেই নিশ্চয়তাই বা কে দেয় আমাদের।



পাবলিককে পাপ-লিক বলে ভর্ৎসনা করার যুগ-জগতটা কবে পার করবো আমরা ? অসহ্য লাগে, অসহ্য। এখনও হলুদ দাঁত বের করে রিক্সাওয়ালা বলে, হুজুর মানুষ, ৫ টাকা কম দেবেন তো, ওঠেন। অসহ্য লাগে। অথচ সেও মুসলিম। তার ছেলেটা শেষবিদায়ের কালে তাকে দুটো সূরা শুনিয়ে বিদায় দিক, এই বাসনা তারও আছে। তবু হুজুরের সম্মান না হোক, অন্তত ভাইয়ের মর্যাদাটাও কেন পাবো না আমরা ? সবই কি বামের তাবলিগি ফসল ?



সুযোগ থেকে ছিয়ানব্বই। নিষ্পেষণের দীক্ষা থেকে দুইহাজার এক। এই নিউমারলজি সত্যি হলে বৃত্তের চাকা দুইহাজার আটের লিপইয়ারে আবারো কেন রাশি বদলালো। সবই বাম আর লাঙলের চালবাজিÑ বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না। নিরাপদ যবনিকা চাই।



তিন.

বাংলাদেশিরা ঠিক কবে থেকে বামের তাড়নায় উথলে উঠেছিলো, সে ইতিহাস নির্ণয় দুরূহ হলেও নকশালের ধর্ম আর বাকশালের অপকর্মের কথা হাওয়ায় মিলিয়ে যায় নি নিশ্চয়। শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতির কেচ্ছা কি হারিয়ে গেছে ? ভাসানির আহ্বান, মুজিব চলো, আমি তোমাকে চীনে লইয়া যাইবোÑ এত শীঘ্রই ধূসরিত হবার কথা নয়। চায়নিজ পণ্য আর চৈনিক পলিটিক্সের তফাত আঁচ করতে খুব বেশি দেরি হয় নি দেশবাসীর। শ্রেণীশত্রু খতমের নামে অগুণতি বুদ্ধিজীবী, পুলিশ, রাজনীতিক, ডাক্তার হত্যার সেই কালোসময়টা কী করে ভুলবে মানুষ। দক্ষিণবঙ্গের মানুষ এখনও সর্বহারা ডাক শুনলে আঁতকে ওঠে। বাকি রইলো রুশ দবার চাল। মিগটুয়েন্টিনাইনের চোরাকীর্তির পরে এ অঞ্চলে অস্ত্র বেচতেও বেশ চুবানি খেতে হয়েছে তাকে। বঙ্গবন্ধু তনয়ার সরকারের নীতিনির্ধারণের ফলেই এবার বামরা যতটুকু শক্তিশালী হয়েছে। সাথে সমানভাবে হারিয়েছে জনপ্রিয়তা। প্রথমবারের মতো ক্ষমতাপ্রাপ্ত বামপন্থীদের বিনাশ করেছিলো দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অক্ষমতা। এর আগে শহীদ মিনার আর ভাস্কর্যের তলায় জ্বালময়ী বক্তৃতা করার বাইরে বাম জননেতাদের আর কিছু করার অভিজ্ঞতা হয় নি। শ্রমিক অধিকারের ইস্যুখোর বামপন্থীরা তাজরীন-রানাপ্লাজাসহ বেশ কয়েকটি শ্রমবিষয়ক আন্দোলনের হেতু পেলেও সরকারের অংশীদার থাকার কারণে কুলিয়ে উঠতে পারে নি একবারও। তেল-গ্যাস রপ্তানির প্রতিবাদে মাঠে নামায় রাজপথে নিজের সতীর্থদেরকে প্যাদানি দিয়ে কাঁদানে গ্যাস খাওয়াতে হয়েছে। দেশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধার যাতাকলে পড়ে কাশ কাশতে ধর্মগুণগানও গাইতে হয়েছে বামকে বহুবার। ফলে স্বকীয়তা হারিয়ে নিজ দেশেই পরবাসী হওয়ার মতো অবস্থা বামের। বিরাগভাজন হয়েছে চীন-রুশ উভয়পন্থীরাই।



সবিশেষ- মানুষের সমাজের একটা বৈশিষ্ট্যের কথা আমরা বহুবার শুনেছি। অন্যান্য জীবের সমাজ গঠন ও চরিত্র অপরিবর্তিত থেকে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। মানুষ কিন্তু তার ব্যতিক্রম। গোষ্ঠীবদ্ধ জীবনে মানুষের সামনে নানা সমস্যা ধরা দেয়। সমাধান খুঁজতে গিয়ে তৈরি হয় নতুন নতুন বিধি-বিধান, নবরূপের সংগঠন। মানুষ ও পরিবেশের ভেতর আসে নতুন সম্পর্কের বন্ধন। ইতিহাসের গতি পাল্টে যায়। নবীন ইতিহাস রচনার কাজে কতটা দক্ষতার পরিচয় দিতে পারবে, তারই ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে মানুষের ভবিষ্যত। ধর্ম এখানে গেয়ে যায় মিলনের গীত-সঙ্গীত। ধর্মহীন সাম্প্রদায়িকতায় রয়েছে গোপন অথচ প্রবল এক অহংবোধের প্রকাশ। ভয়ের অথবা লোভের তাড়নায় সেই বোধ একসময় আক্রমণমুখী হয়ে ওঠে। তাই নিরীশ্বরবাদী মার্কসবাদীদের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন রূপায়িত হয় নি এবং বিজয় কেবল কল্পনাই থেকে যাওয়ার পেছনে কারণ একটাইÑ অমানবিক মানবতা। মানবতারও কি তবে মৃত্যু হয় ? যদিও বা হয়ে থাকে, তবু কিন্তু মৃত্যু কোনো অতিক্রমণের পথে বাধা নয়। বরং মৃত্যুই উন্মুক্ত করে দেয় নবীনের অন্তহীন সম্ভাবনা। মানবতা না হোক, ব্যক্তি তো অমর নয়, পুনরুত্থানে বিশ্বাস থাকলেও পুনর্জন্মে বিশ্বাস নেই আমার। তবু জানি বৃদ্ধের প্রস্থানই রচনা করে নবীনের প্রতিষ্ঠা।

কারো প্রতি ইঙ্গিত-সমালোচনা না করেও বলা যায়, আমাদের পূর্বসূরীরাও কিন্তু ইংরেজ বয়কট করেছিলেন। শুধুই বয়কট, নিজেরা নতুন কৃষ্টি না-গড়েই, পৃথক সভ্যতা সৃষ্টি না-করে বাঁধিয়ে তোলা সে বয়কট এখনো শোবার ঘরে এসেও চড় মারে। ইংরেজ পাখা ছাড়া যে রাতের ঘুম হারাম। না, ভুল নয়। প্রবীনের প্রতি, পুরাতন কৃতিত্বের প্রতি কোনো অনাস্থা নেই আমাদের। কিন্তু নতুন যুগের ভোরে বৃথা সময় না কাটিয়ে জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলাই কি কাক্সিক্ষত নয় ? বাম তো বুড়ো হয়েছেই, আমাদের বিশ্বাসের গতিপথেও কি বার্ধক্যের মলিনতা ছুঁয়ে যায় নি ? আরেকটু সাহস করে বলি, ইসলাম শান্তির ধর্ম। গণতন্ত্রের দর্শনকেও শান্তির সহায়ক বলা হয়। আমাদের দেশের গণতন্ত্র ত্রুটিতে ভরা। তবুও এই ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রও স্বৈরতন্ত্রের তুলনায় অনেক ভালো। আমি চাইছি না, গণতন্ত্রের বৈধতা নিয়ে কথা বলতে। কিন্তু আমরা আসলে কী চাইছি, সেটাও কি স্পষ্ট করা উচিত নয় ? যদি গণতান্ত্রিক ধারায় চলতেই হয়, তাহলে তো একটা ঐক্যবদ্ধ সংগঠন আছেই আমাদের, সেটা নিয়েই নতুন উদ্যমে রাজপথ কাঁপানো হোক। নয়তো গণতন্ত্র বর্জন করার স্পষ্টাস্পষ্টি ঘোষণা আসুক। উম্মাহকে সন্দেহের নাগর দোলায় দোলানোর ‘রুখসত’ আজো শেষ না হলে, কবে শেষ হবে ?



বাংলাদেশের রাজনীতি বিশ্বের সামনে দুর্বোধ্য হয়ে উঠেছে দিনকে দিন। সঙ্ঘের ফাঁদে ভেটো ক্ষমতার অধিকারী দুই দেশের মমতায় জড়ানোর সর্বশেষ অভিলাষ আজো বামকে স্পন্দিত সুখ দিতে পারে। রাসায়নিক বিক্রিয়ার টানাপোড়েনের ভেতরেও যদি রিপাবলিক আর ডেমোক্র্যাট এক বালিশে শুতে পারে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স বলে, জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনের পরপরই ঝুলবে কমিউনিটি কম্বিনেশনের সবচে’ বড় টোপ। হয়তো গিলে আপোষ করতে হবে, নয়তো লড়াই। আপষের ইচ্ছা থাকলে খেয়ে আপোষ করাই ভালো। নইলে আরো বড় সমস্যা। সাধারণের সামনে আবার একটা তেঁতুল জাতীয় মুলা ধরিয়ে দেবে। তখন মান-সম্মান নিয়ে টিকে থাকাই মুশকিল হবে ফের।

বিশ্বপ্রকৃতি বাংলাদেশকে গ্রহান্তরে নিয়ে যাবে না ঠিকই, কিন্তু আমোদের রঙ্গমঞ্চে ভাসানোর ফুরসত হাতছাড়া করবে না কিছুতেই। সময়ই বলে দেবে ‘অরাজনৈতিক ফসল’ কার ঘরে ওঠে। মহাকালের শূন্যতায় ঘুরছে সব প্রশ্নের উত্তর। আমাদেরকে শুধু কাজ করে যেতে হবে খণ্ডকালের সীমার ভেতরে, আমরণ প্রাণের সম্ভাবনায় আস্থা রেখে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:১১

মোহাম্মদ মজিবর রহমান বলেছেন: কঠিন কঠিন সত্য কথাগুলো বলছেন।
পোষ্টে +

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ৮:৫২

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ............এত বড় একটা লেখা পড়ে কমেন্ট কার জন্য...

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩

সুপান্থ সুরাহী বলেছেন:
সময় নিয়ে পড়লাম। যথার্থ বিশ্লেষণ। তবে এতবড় লেখা!

কম কম করে ধারাবাহিক দিলে ভালো হতো...

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০৬

মনযূরুল হক বলেছেন: আমারও তেমন মনে হয়েছিলো একবার...পরে আর ভাবা হয় নি...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.