নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুয়ানতানামো বে বন্দীদের কবিতা : চেপে রাখা বিবেকের চিৎকার (১)

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৩০



জনপ্রিয় ইউরোপীয় ম্যাগাজিন ‘ডার স্পিগেল’-এ প্রকাশিত টোবিয়াস র‌্যাপ-এর নিবন্ধের একটি চিত্র ।



তিনি লিখেছেন−

মে, ২০০৩; সেদিন গুয়ানতানামো উপদ্বীপের ডেল্টা বন্দিশালায় আটক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুহাল আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে নেয়া হয়েছিলো গান শোনাতে ! সুতরাং প্রথমে কক্ষের মেঝেতে লাগানো লোহার রিং-এ তার পা’দুটি আটকে দেয়া হলো। সাথে হাত দুটোও জুড়ে দেয়া হলো একই রিং-এ পিছমুড়ে বেঁধে। একটু পরেই ঝলকে উঠলো খিঁচুনি । এ অবস্থায় প্রতিদিন তাকে প্রশ্ন করা হয়− তিনি এবং তার বন্ধু বছর দুই আগে শরতে আফগানিস্তানে কী করছিলেন ?



ছিয়াশি বর্গফুটের কক্ষটিতে সেদিন ভিন্নতার মধ্যে ছিলো প্রকাণ্ড একটা সাউন্ড বক্স, সাথে একটি সিডি প্লেয়ার । একজন সৈনিক এসে প্লেয়ারে সিডি ঢুকিয়ে তাতে সর্বোচ্চ সাউন্ড তুলে দিলো, তারপর দরজা বন্ধ করে চলে গেলো । আহমদ বলছেন, আমি বুঝতে পারছিলাম না যে কী হতে যাচ্ছে। ভাবলাম, ওরা সাউন্ড বক্সের কথা ভুলে গেছে। সৈনিকটি যখন আবার ফিরলো আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সে তাকালো ঠিকই আমার দিকে, কিন্তু কিছু বললো না। সাউন্ডের মাত্রা ছিলো অসহ্য, কানফাটানো । এভাবে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা গান শুনতে বাধ্য করা হতো, কখনো এক নাগাড়ে কয়েক দিন রাখা হতো সেই ক্ষুদ্রকায় কক্ষে । মাঝেমধ্যে তার মুখের ঠিক সামনে জ্বালিয়ে রাখা হতো ঝলসানো ফ্লাশলাইট। বাদবাকি ঘুটঘুটে অন্ধকার। অদৃশ্যে চলছে ভারী বাজনার ভূবনকাঁপানো সঙ্গীত। কক্ষের তাপমাত্রা কনকনে বরফ ঠাণ্ডা । অসহ্য যন্ত্রণায় খিঁচুনি খেতে খেতে এভাবে কবে কাকে সঙ্গীত উপভোগ করতে হয়েছে ?



সেই অমানবিক সঙ্গীত নির্যাতনের নির্মম শিকার গুয়ানতানামোর বন্দীরা বিশ্বকে দিয়েছে অন্য এক অভাবিত নান্দনিক সুর-মূর্চ্ছনা। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গুয়ানতানামোর বন্দীদের নি:সঙ্গ বন্দী নিবাসে মুখে মুখে রটে থাকা কাব্য-সঙ্গীতের একটি সংকলন প্রকাশ করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছে সম্প্রতি । কবিতা যে শুধু জীবনের ভাষা নয়, একই সাথে মরণ-যন্ত্রণারও স্বাদ দিতে পারে, তেমনই এক নতুন আখ্যানের জন্ম দিয়েছে ‘গুয়ানতানামোর কবিতা : বন্দীর কণ্ঠস্বর’।



এক.

আমার রক্ত নিন, আমার মৃত্যুকে আবৃত করে এবং গ্রহণ করে/ আমার শরীরের অবশিষ্টাংশ, একাকী সমাধি/ আমার মৃতদেহের ফটোগ্রাফ নিন,/ বিশ্বের কাছে পাঠান বিচারক আপনি,/ বিবেকের মানুষ, মাননীয় পুরুষদের এবং ন্যায্য উদারমনস্ক, তাদেরকে পাঠান/ তাদের আগে বিশ্বের দোষের বোঝা বহন করা যাক এই নির্দোষ আত্মা,/তাদের শিশুদের আগে, ইতিহাসেরও আগে বোঝা বহন করা যাক/এই বরবাদ, নি®পাপ আত্মা,/ যা এই আত্মা ‘শান্তি’র হাতে ভোগ করছে।

−ডেথ পোয়েম (মৃত্যুর কবিতা), জুমাহ আল দুসাইরি।



এমনই মর্মবিদারক ২১ টি কবিতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ‘পোয়েমস ফ্রম গুয়ানতানামো: দ্য ডিটেইনিস স্পিক’ (গুয়নাতানমোর কবিতা : বন্দীর কণ্ঠস্বর) শিরোনামে একটি কাব্য সংকলন প্রকাশ করে ২০০৭ সালে । তখন থেকেই বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। পৃথবীর সবচে’ ভয়ঙ্কর কারাগার বলে খ্যাত কিউবার গুয়ানতনামো বে কারাগারের ১৭ জন বন্দীর কবিতা স্থান পেয়েছে এই সংকলনে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তেমনই এক বন্দীর কবিতা পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়।



জানা গেছে, ভারতের কেরালা রাজ্যের কালিকট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য করা হয়েছে আল কায়েদা সন্দেহে বন্দী ইবরাহীম আল রুবাইশের কবিতা । টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে বলা হয়, মানবিক ও বিজ্ঞান অনুষদের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য কবিতাটিকে পাঠ্য করা হয়েছে বলেই এই বিতর্কের সূত্রপাত ঘটেছে । একের দৃষ্টিতে মুক্তিযোদ্ধা অথচ অন্যের দৃষ্টিতে সে সন্ত্রাসী− এমনই আলোচনা চলছে বোদ্ধা মহলে । নোবেল বিজয়ী কবি পাবলো নেরুদা ও মায়া অ্যাঞ্জেলুর ন্যায় বিখ্যাত কবিদের কবিতার সঙ্গে একই সারিতে স্থান পেয়েছে সৌদী নাগরিক ইবরাহীমের কবিতা ।



কবিতাটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে সহকারী অধ্যাপক সি আর মুরুগান বাবু বলেছেন, বর্তমান সময়ের একটি গুরুতর বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ করে দেবে কবিতাটি। যেহেতু মানবাধিকার ইস্যু, লিঙ্গ প্রশ্ন ও বিশ্বায়নের প্রভাবকে কেন্দ্রে রেখে নতুন করে পাঠ্যসূচি সাজানো হয়েছে । তিনি বলেন, গুয়ানতানামোর কবিতা বিশ্ব কাঁপিয়েছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে, তার সবকিছুতে বিশ্বাস করার কিছু নেই। অবশ্য সি মুরুগানের মতো সাহসিকতার পরিচয় দিতে পেরেছেন খুব কম শিক্ষকই । অনেকেই মুখ লুকিয়ে কিংবা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমর্থন করেছেন বটে । তারা বলেছেন, ইবারহীমেরর কবিতা দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে উদার । তাঁর কবিতায় নির্বাসন, নিঃসঙ্গতা, প্রেম ও ব্যাকুলতার বৈশ্বিক অনুভূতি ভাষা পেয়েছে । একজন মানুষ বন্দী থাকাকালে নিজেকে প্রকাশে কতদূর এগোতে পারে, এ কবিতাটি তারই অনন্য উদাহরণ । তবে তাদের ভয়, এর ফলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তাদেরকে হয়রানির স্বীকার হতে হবে । যদিও এক্ষত্রে কয়েকজন শিক্ষক কবিতাটির বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো আপত্তি তুলতে না পেরে উন্নাসিক ভাব দেখিয়ে বলেছেন, কবির পরিচয়টি আপত্তিজনক । এমন কবিতা তো আরও অনেক ছিলো। তাছাড়া ইবরাহিম আল-রুবাইশের পরিচয় এখনো পুরোপুরি জানা যায় নি। আর তিনি যে এখনো আল-কায়েদার সদস্য নন, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই।



প্রসঙ্গত: ইবরাহীম আল রুবাইশকে ২০০১ সালে পাকিস্তান থেকে আটক করা হয়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত গুয়ানতানামো উপসাগরে অবস্থিত কারাগারে পাঁচ বছর ধরে বন্দী ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

(ক্রমশ...)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ২:৫৪

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: ++++++++

১৩ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৮:১৫

মনযূরুল হক বলেছেন: =========

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:৪৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


ভাল লাগল

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৫

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ....

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৪ সকাল ৯:৩১

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: ইবরাহীম আল রুবাইশকে ২০০১ সালে পাকিস্তান থেকে আটক করা হয়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অধিকৃত গুয়ানতানামো উপসাগরে অবস্থিত কারাগারে পাঁচ বছর ধরে বন্দী ছিলেন। পরবর্তীতে তাঁকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

কেন?

১৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০৬

মনযূরুল হক বলেছেন: সামনে পর্বগুলোতে চোখ রাখুন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.