![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খেজুর রসের টানেই সেদিন ঘুম থেকে ওঠা গেলো ভোর বিহানে। তারপর হেঁটে হেঁটে বহুদূর । মলয়ের সঙ্গে দেখাটা এভাবেই হয়ে গেলো আচানক ।
শীতের ভোরে কুয়াশার চাদর ফুড়ে ফুড়ে হাঁটতে ভালো লাগে বরাবরই । সঙ্গে খয়ের গ্রুপের চেয়ারম্যান । এই বয়সে এসে, যখনও কিনা আমরা সমাজের বিচার-বৈঠকে দর্শকের আসন ছাড়া এগিয়ে বসবার হিম্মত পাই না, তখনই এরা কেমন করে যেনো সামনের সারিতে চলে গেছে । এবার বাড়িতে গিয়ে শুনি দু’জন ক্লাসমেট পৌরসভার কাউন্সিলর প্রার্থীও হয়ে বসেছে রীতিমতো । সবই আচানক কারবার ।
খয়েরকে বললাম— বেরিয়েছি তো বটে । কিন্তু নদী পার হবো ক্যামনে ?
— সে হয়ে যাবে চাচা । সকালে মাছ ধরা একটা নৌকার গলুইয়ে উঠে পড়বো বলে কয়ে । রস খাওয়া ছাড়া আজ আর কোনো ভাবনা নেই ।
খয়ের আর আমার সম্পর্ক চাচা ভাতিজার বটে । কিন্তু বয়সে খয়ের আমার থেকে আরো খোকা । সে নিয়ে আমাদের কখনো ভাবনা হয় নি । আমাদের ভাবনাটা আজকাল এমনিতেও বেশ কমই বলা চলে । না চাইতেই পেয়ে যাই ঢের । এই যেমন নৌকা খুঁজতে গিয়ে পেয়ে গেছি আস্ত একখানা ট্রলার । ওপারে যাওয়ার জন্যে যাত্রী মিলেছে আরো দু’জন । অল্প বয়সি দুই ছোড়াছুড়ি । পরনে স্কুল ড্রেস । মর্নিং স্কুল চলছে । তারও আগে মাস্টারদার কাছে প্রাইভেট পড়বে এক ঘণ্টা ।
আমাদের সন্ধ্যা নদীর নাব্যতা কম নয়। পরিসরও মোটামুটি ভালোই । মাঝবরাবর যাওয়ার আগেই বৃষ্টি এলো টুপ টাপ । এত শীতে বৃষ্টি । দু’ফোঁট নাকের ডগায় পড়তেই হাড়ে কাঁপন লাগছে । একটুখানি ছই আছে । ছোড়াছুড়ি দুটি ছুটে সেখানে গিয়ে ঢুকলো । আমার হঠাৎ করেই মনে হলো, ওদের দুজনের সম্পর্কে একটু অস্বাভাবিকতা আছে । মনে হতেই সামান্য কৌতূহলও চাগিয়ে উঠলো ভেতরে । ছইয়ের সামনে চটের দুখানা পর্দা ঢালা । তার ফাঁক দিয়ে আমি দেখতে চাইছিলাম, ওরা ওখানে কেমন করে আছে । মেয়েটা এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে ছেলেটার কাপোলের দিকে । ছেলেটা কিছু বলছে না । একটা চুমু খাবার তাড়না কি ওরা এড়াতে পারবে ? কী জানি । আমি চোখ ফিরিয়ে নিলাম । ভালোবাসার এত গভীর রূপ আমার অকারণেই সয় না । বৃষ্টি এখনও থামছে না ।
খেজুর গাছ খুঁজে পেতে পেতে সূয্যি মামা জেগে উঠেছে আড়মোড়া ভেঙে । ক্ষেতের ফসলকাটা কাস্তে হাতে ধরা অবস্থাতেই রসঅলার ঘাড় ছুঁয়ে বসলাম আমরা । হুমকি দিলাম, যে করেই হোক কাল আমাদের পাঁচ হাড়ি রস চাই, নইলে...। বেরসিক লোকটা হাসলো খানিকটা । আর তখনই মলয়ের আগমন ।
মলয় যে একটা হিন্দু ছেলে তা আমাদের কখনোই মনে হয় নি । আর এখন তো মনে হবার প্রশ্নই আসে না । ও বোধহয় রসুয়াল চাচার কাছে রসের বিল দিতে এসেছিলো । চাচা ওকে ডাকলেন বাশার বলে । আমার অবাক লাগলো না । কারণ, ও যে মলয়, তা আমি তখনও নিশ্চিত নই । তাই মলয় কী করে বাশার হলো, তা-ও আমার কাছে কোনো জিজ্ঞাসার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় নি ।
সেদিন গভীর রাতে বৃষ্টিটা বেশ ঝেঁপেই নেমেছিলো । আমি কিন্তু টের পাই নি । ফজর নামাজের পরে তাই একটা বড় কলসি আর একজন সাঙ্গ নিয়ে রওনা দিলাম রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। মসিজদের পাশ দিয়ে যাবার সময় বাবা বললেন— রস তো পানসে হবে আজ । বৃষ্টিতে তারা হাড়ি খুলেছে কি না দেখো ।
খয়েরকেও খুঁজতে গেলাম না। আমার তখন আর তর সইছে না । বহুদিন পরে খেজুরের রস খাবো । আজ কিন্তু ওপারে গিয়ে আর রসুয়াল চাচাকে খুঁজে পেলাম না । তার বাড়ি কোথায় চিনি না । কাল তাকে ধরেছিলাম গাছের পাশেই ধান ক্ষেতে । পাওয়া গেলো মলয়কে । ও এখন কাঠমিস্ত্রীর কাজ করে । হাতের থলেটা অন্তত তা-ই বলছে । পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলো মলয় । কথা হলো টুকটাক প্রথমে । তারপর পরিচয় হতে হতে গল্প বেরিয়ে এলো অর্গল ভেঙে । রসুয়াল চাচার ঘর ওর ঘরের সংলগ্নই বলা চলে । আমার হাত থেকে কলসিটা ও কেড়ে নিলো । আমার সাজ-পোশাকের সঙ্গে নাকি কলসিটা মানাচ্ছে না ।
মলয়ের বউ চা বানিয়ে খাওয়ালো । নাটি বিস্কুট আর দুটো রুটি সেঁকে দিলো বড় যত্নে । আমি শুধু ওকে জিজ্ঞেস করার ফাঁক খুঁজছিলাম, ও কী করে মলয় থেকে বাশার হলো । মলয়ের কিন্তু সেদিকে কোনো খেয়াল আছে বলে মনে হলো না । বরং স্কুলে একসঙ্গে সেই যে অভিনয় করা, স্কাউটিংয়ের ক্যাম্পিংয়ে যোগ দেয়া, শহিদ মিনারের পেছনে আলো করে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়াটার বুকে বসে উন্মাতাল গিটার বাজানো, বিকেল হলে ক্রিকেটের ব্যাট-প্যাড নিয়ে হুটোপুটি— এইসব গল্পেই কেটে গেলো শীতের সুন্দর সকালটা ।
রস তবু পাওয়া গেলো । চাচা বললেন— বাবা, তোমাদের কথা মনে করেই রাতে বৃষ্টির ডাক শুনে আমি আর বাশার গাছ থেকে রস পেড়ে রেখেছি । তবে বাবা, তোমার কলসিটা ভরে দিতে পারবো না। আর কাল যে একশ’ টাকা দিয়ে গেলে, তাতেই হবে । আর লাগবে না । এলাকার বজ্জাত পোলাপান তো জনে জনে এসে হাড়ি খুলে খেয়ে যায়, একটা পয়সাও দেয় না ।
মলয়কে বললাম— চল, এগিয়ে দিয়ে আসবি ।
—আজ থেকে যা। বউকে রসের পিঠা বানাতে বলি ।
—নারে, আমি একা তো খাবো না । বাড়িতে ভাগ্নে-ভাগ্নী আছে । ওরা রস খাবে বলে অপেক্ষা করছে ।
—তাইলে আরেকদিন আসিস ।
ট্রলারে বসে বললাম— চল, ওপারে যাবি । এই ট্রলারে আবার ফিরে আসিস ।
ভাবলাম ট্রলারে বসেই কথাটা জিজ্ঞেস করবো । কিন্তু পুরো নদীটা পেরিয়ে এলাম, একটা কথাও হলো না । সেই ছোড়াছুড়ি দুটির দেখা পেলাম আজো । এগারোটা বেজে গেছে । ওদের মর্নিং স্কুল বুঝি ছুটি হয়েছে । আজ ওরা দুজনেই দুজনার হাত ধরে রেখেছে । আচ্ছা, ওরা দুজন কি ভাইবোন ? হতেও তো পারে । আমি আর আমার বোনও তো স্কুলে হাত ধরাধারি করে যেতাম। আশ্চর্য ! কাল আমার এ কথাটা মনে হলো না কেনো ?
ওপারে পৌঁছে মলয়ই বললো— কী কিছু বলবি ?
—তোকে চাচা বাশার ডাকলো কেনো ?
—এমনি ।
—এমনি ? তুই মলয় থেকে বাশার হয়ে গেলি এমনি ?
একটু হাসলো । সে হাসিতে বিপরীত দুটিমাত্র ভাব— কষ্ট ও সুখ । তারপর বললো— নামে আর কী আসে যায় ?
—তোর মাবাবা কোথায়রে মলয় ?
—আমার সঙ্গে থাকবে না বলে ইন্ডিয়া চলে গেছে, ভগবানের দেশে ।
—তুই গেলি না ?
—আমার ভগবান এখানেই থাকেন, এখানেই ভালো রেখেছেন আমাকে।
বলে আবার একটু হাসলো । আবার দুটি বিপরীতভাবের সমান প্রকাশ ফুটে উঠলো।
—তাহলে তুই এখনো ভগবানের পূজা করিস, মলয় ? মনে আছে, তুই টিফিনের সময় আজান শোনা গেলে বলতি, কি বিশ্রী ডাকরে ভাই, হাইয়া হালার ফালা। মনে আছে ?
—আছে তো। আমি কিন্তু আমাদের মসজিদে আজান দিই জানিস ?
—তুই আজান দিস ? এই না বললি, ভগবানের পূজা করিস?
—তার আগে না বললাম, নামে কি আসে যায়?
—বাব্বাহ । ক্যামনে কী হলো মলয়, বলতো ?
—বলবো, সময় করে আসিস । তোর মাকে আশীর্বাদ জানাতে বলিস । আর শোন, আমাকে কিন্তু ‘বাশার’ ডাকিস না । আমার মলয় নামটাই ভালো লাগে ।
আমি সাঙ্গকে বললাম, তুই কলসি নিয়ে বাড়ি যা । বলিস, আমার আসতে দেরি হবে । তারপর মলয়ের হাত ধরে বললাম—চল, আজ সারাদিন তোর গল্প শুনবো ।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২০
মনযূরুল হক বলেছেন: এক সময় খুব প্রিয় ছিল, এখন নয় ? নাকি পাচ্ছেন না বলে আশা ছেড়ে দিয়েছেন
২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১৮
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২০
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, আপনাকেও...।
৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:২০
হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২১
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই...।
৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৪
উল্টা দূরবীন বলেছেন: ভালো লিখেছেন। আমার ব্লগে আমন্ত্রণ।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৩
মনযূরুল হক বলেছেন: আপ্যায়ন করবেন ? তাহলে আসবো
৫| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২০
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: মলয় থেকে কিভাবে বাশার হল সেই গল্প তাহলে আরেকদিন শুনা যাবে।
খেজুরের রস মনে হয় আমি দুয়েকবার খেয়েছি।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৫
মনযূরুল হক বলেছেন: দুয়েকবার খেয়েছেন ? আপনি তাহলে আনখকেশ শহুরে মানুষ ?
আর হুমম, সেই গল্পটা লেখার ফাঁদ খুঁজছি...শোনানো যাবে একদিন...।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
মহা সমন্বয় বলেছেন: এক সময় খেজুরের রস আমার খুব প্রিয় ছিল।
ভাল লাগল।