নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিয়তির কসম (ছোটোগল্প)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৪

দিনে দিনে ফিরে আসতে চাইলে সকাল সকাল রওনা করতে হয়— এই কথা গরিব বলেই নজুর বাপকে জানতে হয়েছে, এমন নয় । বরং এলাকার রাস্তাঘাটে যেমন আতঙ্ক, তাতে সবাই চায় যেনো অন্তত সান্ধ্যপ্রদীপের আলোটা ঘরে বসে নিশ্চিন্তে পোহাতে পারে ।
সুতরাং নজুর বাপ সকাল সকাল বের হলো । দিনের শুরুটা তার পয়মন্তই ছিলো, যদি নিয়তির একটা সূচ তার দুর্ভাগ্যের জখমটা খুঁচিয়ে চাঙ্গা না করতো ।
বাড়ির অনতিদূরেই রেলস্টেশন । সে পায়ে হেঁটেই যেতে পারবে । এমনিতে কিন্তু হাঁটার অভ্যাস তার বেশি একটা নেই । যেখানেই যায়, রিক্সাটা পায়ে বাঁধিয়ে নিয়ে যায় । বউ ঝামটি মেরে বলে— বড় নোকের লাহান পেরাইভটকারে চড়নের অইভ্যাস ।
— বড় নোক নয় আছি, গাড়ি তো একখান আছে । নজুর বাপ চোখ ঠারিয়ে বলে ।
— হ, নিজের ক্ষ্যামতায় তো কামাও নাই, মোর বাপ দিছে বলিই তো...
— তোরেও তো তোর বাপই দিছে মোর কাছে, সেটি নুকাস ক্যান রে নজুর মা ।
— মদ্দ মাইনষের ক্ষ্যামতা থাহোন লাগে ।...
নজুর বাপ কল পারটা পার হয়ে না গেলে আরো খানিক এলোমেলো কথা শুনতে পেতো । সেদিকে ভ্রক্ষেপ করার সময় এখন তার নেই । ট্রেন ধরতে হবে । শহরে যাবার লোকাল ট্রেন আর দুপুরের আগে মিলবে না । সে জোর পায়ে সামনে আগায় । বাড়ির লাগোয়া রেল লাইন । লাইনের পাতের উপর দিয়েই সে এক্কা দোক্কা করতে করতে এগিয়ে যায় । তার চোখে কি শৈশবের স্মৃতি ভেসে ওঠে ? দুই ভাইয়ে লাইনের দুই পাশের পাতের উপর হাত ধরাধরি করে হাঁটার দৃশ্যটা কি এখন সে অবিকল দেখতে পাচ্ছে ? কোথায় আছে তার ভাইজান ? রমিজ হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় । কিন্তু তাকে তো থমকে থাকলে চলবে না । এখন সে নজুর বাপ । নজুর জন্যে তাকে এগুতে হবে । তবু ভাইজানের কথা বড় মনে পড়ে আজকাল । রমিজ আরো জোরে হাঁটে । লাইনের মধ্যে পাথর আর গজারি কাঠে পা ফেলে সাবধানে, দেখে দেখে । চোখের কোণটা চিকচিক করে অকারণেই । বড় অভাব আজকাল । জিনিসপত্তরের দাম বড় বেশি । একটা রিক্সায় আর চারজন মানুষে পোষে না । শরীরের বলও ক্ষয়ে আসছে । রমিজ ভাবে, অনেক ভাবনার পাহাড় তাকে জাপটে ধরে । সামনেই স্টেশন । সে আবার থমকে দাঁড়ায় । এবার অবশ্য স্মৃতি এসে বাগড়া দেয় নি । প্লাটফর্মে পা তুলে দেয়ার আগে দেখে একটা চকচকে মানিব্যাগ প্লাটফর্মের কংক্রিট আর রেল লাইনের লোহার পাতের মধ্যিখানে সেঁধিয়ে আছে । মোটাসোটা । গাট্টাগোট্টা । ইতিউতি তাকিয়ে কম্পিত হাতে রমিজ মানিব্যাগটা তুলে নেয় । তারপর প্লাটফর্মের লোকজনের দিকে পিঠ আড়াল করে এক ঝলক দেখে নেয় ভেতরটা । তার চেহারার ধাঁধানো ভাব দেখে বোঝার উপায় নেই যে, টাকার অঙ্কটা কেমন । সিধে এক দৌড়ে সে বাড়িতে চলে যায় । ঘরে সদ্য মাচানে ঝুলিয়ে রাখা লেপের ভেতর কোনোমতে ঢুকিয়ে দিয়ে আবার সেই একই পথ ধরে স্টেশনে ছুটে আসে । ততক্ষণে ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে চলতে শুরু করেছে । রমিজ কোনোমতে দরোজার একটা হাতল ধরে হাঁফাতে হাঁফাতে টিটির পায়ের কাছে বসে পড়ে ।
শহরে আগমনটা নেহাৎ বেকার যায় নি রমিজের । একটা চাকরি সে যোগাতে পেরেছে বটে । ভাইজান ঢাকায় যেই মালিকের চাকরি করেন, সেই মালিকেরই একটা নির্মীয়মাণ ভবনের দারোয়ানিতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন তিনি মালিককে বলে কয়ে । বেতন আহামরি না হলেও মন্দ বলা যায় না । তারপর ওভার টাইম করার সুযোগ আছে । রমিজের বাড়ি থেকে শহরে আসতে ট্রেনে চল্লিশ মিনিটের পথ । সুতরাং বাড়ি থেকেই রোজ যাওয়া-আসা করে কাজ করা যাবে । উপরন্তু সপ্তাহে একদিন ছুটিও আছে তার । চাইলে সেদিন রিক্সা চালিয়ে দু পয়সা বাড়তি রোজগারও মিলাতে পারবে ।


দুপুর গড়িয়ে যেতেই ফিরে আসে রমিজ । আসতে আসতে তার মাথায় নতুন একটা আইডিয়া গজায় । এক কাজ করা যাক, রিক্সাটা বেচে দিয়ে নজুর মাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দেয়া যাক । তাইলে পরের ঘরের ঘরপোছার কাজ থেকে তাকে ছাড়িয়ে আনা যাবে ।
দুপুরের স্টেশনে জনশূন্য বিরহের শোক যেনো মাতম করছে । স্টেশনের উত্তর কোণে, যেদিক গলিয়ে রমিজ বাড়ি যায়, একটা চায়ের দোকান সারা বছরই খোলা থাকে । দোকানিও বোধহয় নাইতে গেছে । নয়তো কোনো চিপায় মাথা গুজে ঘুমুচ্ছে । রমিজের সঙ্গে যে কজন ট্রেন থেকে নেমেছে, তারাও পলকের মধ্যে উধাও । রমিজও প্লাটফর্ম থেকে নেমে রেলপথ ধরে বাড়ি ফিরবে— তখনই মনে হলো একটা ভদ্র ঘরের ছেলে উদাস চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে । মানিব্যাগটার কথা ভুলেই গিয়েছিলো রমিজ । ছেলেটাকে দেখে সন্দেহ হলো তার । ছেলেটাই তাকে আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো— ভাই, স্টেশন মাস্টার কোথায় থাকেন, জানেন ?
রমিজ মাথা দোলালো ।
ছেলেটা আর কিছু বলছে না দেখে রমিজ হাঁটার উদযোগ করলো । ইতোমধ্যে ছেলেটা আবার এসে তাকে ধরলো— ভাই, কিছু যদি মনে না করেন, আপনি কি কাছাকাছি কোথাও থাকেন ?
রমিজ আঙ্গুল তুলে বাড়ির দিকটা দেখিয়ে বোঝালো যে, এখান থেকে তার বাড়ির দূরত্ব পাঁচ মিনিট ।
— ভাই, আমার একটা মানিব্যাগ হারিয়ে গেছে । মানে হারিয়ে গেছে না, চুরি গেছে আমি জানি না । তবে ট্রেনে থাকতেও পকেটে ছিলো । তারপর এই দোকানের সামনে বসে চা খেয়ে বিলও দিয়েছি...তারপর আর খুঁজে পাচ্ছি না । কাউকে জিজ্ঞেস করার মতোও....
রমিজ তাকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে, এমনকি ছেলেটাকে অপেক্ষা করতেও না বলে মানিব্যাগটা পেয়ে যেমন বাড়ির পথে ছুটছিলো, তেমন করেই ছুট লাগালো বাড়ির দিকে ।
বাড়িতে এসে লেপের ভেতর হাত ঢুকিয়ে দেখে মানিব্যাগ নেই । তার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে, বউই সরিয়েছে । চিৎকার করে ডাকলো সে বউকে । হাঁকডাক শুনে রমিজের মা নজুকে কোলে নিয়ে উঠান থেকে দৌড়ে এলেন । একটু পরে রমিজের বউও ছুটে এলো। ঘরে ঢুকতেই রমিজ ঝাঁপিয়ে পড়লো বউয়ের উপর— কুত্তি, মানিব্যাগ কই ?
—মুই কি জানি, মানোবেগ না কী আম্নের কোহানে ?
—তুই-ই নুকাইসিছ...বাইর কর, নইলে আইজ তরি খুন...
অবস্থা বেগতিক দেখে বউ ঝাঁঝিয়ে ওঠে— হ, নুকাইছি । তা আম্নে নুকাই রাকসেন ক্যান ? কই পাইছেন কন, এত টেহা ।
রমিজ একটু থমকালো । তারপর খানিকটা শান্ত হয়ে অল্প কথায় বললো যে, টাকাটা সে স্টেশনে পেয়েছে । এখন টাকার মালিককেও পাওয়া গেছে, তাকে সে ফিরিয়ে দিতে চায় ।
জীবনে কখনো এত টাকা একসঙ্গে চোখে দেখে নি বোধকরি রমিজের জীর্ণ অভাবক্লিষ্ট বউ । এই সব সততা ধুয়ে খেয়েছে সে বহুবার । তাতে তার ভাগ্যের বদল হয় নি । তাই এখন আর এসবে ভরসা হয় না তার । তার এক কথা— টেহার গায়ে কাউর নাম লেহা থাকে না গা ! যের হাতে পড়ে, টেহা হের কতাই কয় ।
কিন্তু রমিজ তোলপাড় করে তুললো ঘরবাড়ি । অবশেষে ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে রমিজের বৃদ্ধ মা-ই মাটির বাসনের ভেদ থেকে টাকার থলেটা বের করে দিলেন । মাটি চাপড়ে কেঁদে ফেললো রমিজের বউ । উঠে স্বামীর কলার ধরে মিনতি করলো— টেহাডা আম্নে দিয়েন না । বেডারে গিয়া কন, হেয় কই থাহে হেইডা লেইক্যা দেয়নের । পাইলে হেরে আমরা খবর কমু । আমগো অভাব ফুরাইলে হের সব টেহা আমরা শোধ দিয়া দিমু ।
কিন্তু রমিজের কী হয়েছে কে জানে ? এই অভাবের পাষাণে সে-ও তো মাথা ঠুকে মরছে । সকালে যখন সে টাকাটা পেয়েছে, তখনও কি তার মুখে না হোক অন্তরে এক চিলতে হাসি নেচে ওঠে নি ? সে কি একবারও ভাবে নি যে, টাকাটা সরিয়ে রেখে চুপিসারে এখানে আবার মানিব্যাগটা ফেলে যাবে ? সে কি তাহলে প্রগাঢ় ধার্মিক মানুষ ? রাস্তায় প্যাডেল ফেলতে ফেলতে সে কি খিস্তিখেউরে মুখ নোংরা করে না ? টাকা কি কোনোদিনই সে চুরি করে নি ? বউয়ের আঁচলের গিট খুলেও না ?
মোহাবিষ্টের মতো রমিজ ঝড়ের বেগে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায় । পিছনে আব্বা আব্বা করে ছুটে যায় নজু; রমিজের একমাত্র ধন । যেতে যেতেই শোনে বউয়ের কসম— আম্নে যুদি ওই টেহা ফিরায়া দেন, আইজ তাইলে আম্নে আমার মরা মুখ দেখপেন ।
হা হা করে হাহাকার করে রমিজের বৃদ্ধা মা— কী অলক্ষুণে কতা কলে বউ ?
—আমার মুণ্ডু কয়েছি । নজু কই ?
নজু ততক্ষণে রেললাইনে এসে পড়েছে । রমিজ দৌড়াচ্ছে সততার পরাকাষ্ঠা দেখাতে ।


পিরগাছার ছোট্ট গ্রামটাতে বিকালে সূর্যের আলোটা নিদারুণ শোকে নুয়ে পড়ছে ক্রমশ । আজ বুঝি গ্রামে কারো ঘরেই সান্ধ্যপ্রদীপ জ্বলে নি আর । একটু আগের দুর্ঘটনার সূত্র ধরে রেললাইনের ধারে জমে আসা জটলাটা তখনও ভাঙে নি । শীর্ণ একটা হাত, থেতলানো একটা মাথা আর নিস্পন্দ একটা পা কাফনে ঢাকার জন্যে তখনও পুলিশি অর্ডার এসে পৌঁছে নি । পাশে মূহ্যমান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রমিজ । তার একটা উরু জড়িয়ে ধরে বারবার মুখ লুকাচ্ছে নজু । বাড়ি থেকে রমিজের মায়ের আর্তনাদ ভেসে আসছে ত্রাহি ত্রাহি করে । সেই মানিব্যাগের মালিক ছেলেটাও ছেড়ে যায় নি তাদের । ধনাঢ্য ঘরের ছেলে সে । তার সহায়তা না পেলে তো রমিজের বউয়ের পোস্টমর্টেমটা আটকানো যেতো না । হঠাৎ পাশ থেকে একটা গুঞ্জন ওঠে— অসি সাব আসিচ্ছেন ।
অসি সাহেবও ভদ্র মানুষ । তিনি মায়ের মমতা বোঝেন । অলমোস্ট তিনি প্রতিদিন দুবার করে ফোনে মায়ের খোঁজ নেন । কথাও বলেন বিশুদ্ধ বইয়ের ভাষায় । তিনি বড় আফসোস করে বললেন— একেই বলে মা । ছেলের জীবন বাঁচাতে গিয়ে মায়ের জীবনদানের এমন বহু ঘটনা ইতিহাসে লেখা আছে । ছেলেটা কই দেখি ।
রমিজ তখনও মোহাবিষ্টের মতো দাঁড়িয়ে । আর নজু বাবার উরু জড়িয়ে ধরে বারবার মুখ লুকাচ্ছে কেবল ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮

পুলহ বলেছেন: "এই সব সততা ধুয়ে খেয়েছে সে বহুবার । তাতে তার ভাগ্যের বদল হয় নি । "
অসাধারণ গল্প, একটানে পড়ে গিয়েছি। লেখা সাবলীল ও সুন্দর....
সত্যি খুব ভালো লেগেছে। এমন গোছানো, এমন প্রফেশনাল আরো কত লেখা না জানি ব্লগের মণি-মাণিক্য হয়ে এখানে সেখানে ছড়িয়ে আছে, ভাবতেই ভালো লাগে! আমাদের মত পাঠকদের কাজ শুধু, সেগুলো খুজে খুজে বের করা :)
শুভকামনা জানবেন লেখক :)

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫০

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ..শুভ কামনা রইলো ।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০১

সুমন কর বলেছেন: বর্ণনা আর গল্প দু'টোই চমৎকার হয়েছে।

ভালো লাগা রইলো।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:২৮

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ.. আপনার জন্যে রইলো শুভ কামনা ।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৯

উল্টা দূরবীন বলেছেন: আপনার বর্ণনা ভালো লেগেছে। গল্পটাও চমৎকার।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪৪

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই... কষ্ট করে পড়ছেন বলে ।

৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ট্রাজিক। শকিং। কমপ্লেক্স।

+

ভাষাটা কি রংপুরের ওদিককার?

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪০

মনযূরুল হক বলেছেন: হুমম । রংপুরের । কিন্তু পুরোপুরি মনে হয় মিলাইতে পারি নাই । নাকি পারছি জানি না ।

৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৯

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: গল্পটা সুন্দর করে লিখেছেন। ভাষাটা মনে হয় কাছাকাছিই হয়েছে।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪৩

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই । ভাষার বিষয়ে একটুখানি কনফিউশন অবশ্য আমারও আছে । আঞ্চলিক ভাষাটা এগ্জ্যাক্ট জানার জন্যে কোনো সাজেশন কি আছে ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.