নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাবৎ দুঃখীজনের করকমলে...

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯


১.
সকালে ফজর নামাজের পরে সামান্য হাঁটার অভ্যাস। সুনসান নীরবতা থাকে না বটে, তবে দিনের প্রথম বাতাসের সঙ্গে রাস্তার ঠাণ্ডা ধুলার ঝাপটাও বড়ো মনোরম লাগে । কখনো পরিচিত দুয়েকজনের সঙ্গে দেখাও হয়ে যায়। আজ যার সঙ্গে দেখা হলো, পরিচিতির দিক থেকে সে খুব গভীরে আসে নি এখনো । দেখে একটু চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছিলো । তাই পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম— বস, সব ঠিকঠাক তো ?
লোকটা আমাকে অবাক করে দিয়ে কেঁদে ফেললো।
বললাম— পুরুষের কান্নার চেয়ে বিশ্রী দৃশ্য পৃথিবীতে আর হয় না।
একটু লজ্জা পেলো মনে হয় । তারপর চোখ মুছে, বললো— আমার যে এখন আর কোনো উপায় নেই, ভাই । আপনি আমার পিঠে হাত দিলেন । জানেন, আমার পিঠে হাত বুলানোর মতোও কেউ আজ নেই।
বড়ই আচানক জীবন মানুষের । অনেক দু:খের জীবন তার । একাকী, নি:সঙ্গ, জীবনের ঘানি আর টেনে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তাকে খানিক সান্ত্বনা দেয়া গেলো । একটু স্বপ্নও তুলে দেয়া হলো তার অশ্রুভেজা চোখে । যখন বিদায় নিয়ে বাসার পথে পা বাড়িয়েছি, তখন ‘ভালো থাকবেন’ বলে সেই ভেজা চোখে কী যে খুশির ঝিলিক দেখালো সে, আমার নিজের বিশ্বাস হচ্ছিলো না ।....
২.
মহাখালি থেকে বাসে বাসায় ফিরছিলাম । মাথায় একরাশ দুশ্চিন্তা । পারিবারিক সঙ্কটটা কাটাতেই পারছি না । যার কাছে গেলাম, তিনিও আশাহত করলেন । এমনই সময় ফোনটা এলো অপরিচিত নম্বর থেকে । কিন্তু রিসিভ করার পরে বুঝলাম, লোকটা তত অপিরচিত নয় । সে একপ্রকার জোর করেই সে যেনো নিজের দু:খের কথা বলতে চাইছে । কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না বলেই বললাম— বাসে তো, বাসায় গিয়ে কথা বলবো ।
পথে চলতে চলতে ভাবছি, কাজটা কি ঠিক হলো? কে জানে, হয়তো তার সমস্যার কোনো সুরাহা আমাকে দিয়ে হতেও পারে ।
বাসায় ফিরে একটু আয়েশ করে না বসতেই আবার তার ফোন । অনেক সমস্যা তার । সবচে’ বড় সমস্যা তার কিছু অর্থ অন্যের হাতে আটকা পড়ে গেছে, ছাড়াতে পারছে না । ছেলেটা এতো ব্যাকুল, এতো অস্থির হয়ে উঠেছে যে, মনে হচ্ছে কেবল নিজেকে শেষ করে দিতে পারলেই তার মুক্তি মিলবে ।
আমি নিজেই বড় গরিব মানুষ । তাকে অর্থ দেয়ার সাধ্য তো নেই । কেবল একফোঁটা সান্ত্বনার বাণী শোনানোর কোশেশ করলাম তাই । বললাম— জানেন তো, আল্লাহ মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, সম্পদহানি, জীবনের ক্ষতি ও ফসলাদির অভাব দিয়ে পরীক্ষা করে থাকেন । আর এই পরীক্ষা থেকে উত্তীর্ণ হবার পথও তিনি বলে দিয়েছেন। নামাজ ও ধৈর্যের মাধ্যমে তার সাহায্য প্রার্থনা করতে বলেছেন । তো যিনি বিপদ দিয়েছেন, তিনি যে পন্থায় বিপদমুক্ত করবেন বলেছেন, সেটাই করুন, তাহলেই তো কাজে লাগবে, তাই না !
আমার অবাক লাগছে, লোকটা হাসতে হাসতেই গতকাল আমার বাসায় এসে দেখা করে গেছে ।....
৩.
আব্দুল্লাহ আমাদের সঙ্গেই পড়তো । হোস্টেলের ছাদে একদিন ডেকে নিয়ে গিয়ে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে ফেললো ছেলেটা । আমি হতবাক । হাসিও পেলো— কাঁদার জন্যে কত আয়োজন । একজনকে সে কান্না দেখানোও চাই ।
পরে তার দু:খের সংবাদটা যখন শুনলাম, হতভম্ব হয়ে গেলাম । ওর মা স্টোভের আগুনে পুড়ে মারা গেছে । আগুন লেগেছে কাপড়ে । অতিপর্দানশীন বলে কোনো ভিন পুরুষকে কাছে আসতে দেন নি । নারীরা ছুটে আসতে আসতে তিনি অঙ্গার হয়ে গেছেন । আজ বাবাও ছেলেকে আর চোখে দেখতে পারে না । পড়ালেখা চালিয়ে নেবার জন্যে ছেলেটা সপ্তাহে একদিন শহরে গিয়ে রিক্সা চালায় ।
আমরা কয়েকজন মিলে সেদিন হোস্টেল সুপারের সঙ্গে দেখা করে তার খাবারের মাসিক বিলটা মওকুফ করার আবেদন করলাম । একটা ট্রাস্টি ফান্ডের মাধ্যমে সে ব্যবস্থাও হলো । কিন্তু সবচে’ বড় দরকাল ছিলো ছেলেটার বুকের দু:খের উপশম করা । আমার পাশেই ঘুমুতো ছেলেটা । একদিন ওকে একটা ছড়া লিখে দিতে বললাম দেয়ালিকার জন্যে । বেশ ভালো একটা ছড়া গড়ে নিয়ে এলো । তারপর আর ওর আমি নাগাল পাই নি । হোস্টেলে থাকতে দেখেছি, রাত জেগে জেগে টেবিল ল্যাম্প জ্বেলে লিখতো । কেমন করে যেনো একটা ‘রাইটার স্কলারশিপ’ নিয়ে ইউরোপ চলে গেলো ।....

বড়ই আচানক জীবন মানুষের । এখানে যারা বাস করে, তাদের সবাই নিত্যদিন নানা সঙ্কটে ভুগছে । আমিই যে সবচে বড় দু:খী, তা কিন্তু নয় । চারপাশের মানুষের বুকে এতো এতো দু:খ, এতো বেশি সঙ্কটে তারা জর্জরিত— যেখানে আমার দু:খ নেহাৎ সামান্য বৈ নয় । আমরা কেবল একে অপরকে একটুখানি সান্ত্বনা দিতে পারি, একটু ভালো কথা, একটা ভালো স্বপ্ন দেখিয়ে তার চলার পথটা আরো একটু এগিয়ে দিতে পারি, ব্যস। নিজের দু:খ এ ছাড়া ভুলে থাকার আর কোনো উপায় তো নেই, ভাই । আমরা নিজেরা ছাড়া আর কে-ইবা এসে আমাদের দু:খ ভোলাবে বলেন ?
আখেরে কিন্তু এটাই মানতে হবে— “জব তক হাম এক দোসরে কো হামদর্দ নেহি বনতে, না; তব তক হাম দর্দ সে আওর দর্দ হাম সে জুদা নেহি হোতা”...

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫০

সুমন কর বলেছেন: বড়ই আচানক জীবন মানুষের। লেখা ভালো লাগল। নিজেকে একটু সময় দিতে হবে....!!

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ... ভাই

আসলেই নিজেকে একটু সময় দিতে হবে....!!

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মানুষের দু:খে মানুষের পাশে দাড়ানোর চেয়ে মহৎ কর্ম বোধকরি আর কিছূ নেই।
সব সময় যে অর্তকড়ি লাগবে তাও মূখ্য নয়। দুটো কথা, আশ্বাস সান্তনা... ভরসা....অনেক বড় কিছু। হয়তো জীবনটা বাঁচিয়ে দিতে পারে ! ঘুরিয়ে দিতে পারে..
যেমন আপনার অভিজ্ঞতায় প্রমাণ পেলাম :)

ধন্যবাদ .দু:খি জনের পাশে দাড়ানোয় এবং শেয়ারে :)

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২০

মনযূরুল হক বলেছেন: সব সময় যে অর্তকড়ি লাগবে তাও মূখ্য নয়। দুটো কথা, আশ্বাস সান্তনা... ভরসা....অনেক বড় কিছু। হয়তো জীবনটা বাঁচিয়ে দিতে পারে ! ঘুরিয়ে দিতে পারে..

ধন্যবাদ, বস... এমন করে বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে তুলেছেন বলে ।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১০

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। আসলেই সামান্য সহানুভূতিই অনেক সময় অনেক শক্তি দেয়, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জাগায়।
জব তক হাম এক দোসরে কো হামদর্দ নেহি বনতে, না; তব তক হাম দর্দ সে আওর দর্দ হাম সে জুদা নেহি হোতা”...
সুন্দর একটা কোট

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪২

মনযূরুল হক বলেছেন: আসলেই আমরা সবাই সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে বেঁচে আছি । নইলে....

ধন্যবাদ...

৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০১

আহসানের ব্লগ বলেছেন: আবার দেখা হবে ।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫৭

মনযূরুল হক বলেছেন: এ দেখাই শেষ দেখা নয় :)

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১৪

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: বড়ই আচানক জীবন মানুষের । এখানে যারা বাস করে, তাদের সবাই নিত্যদিন নানা সঙ্কটে ভুগছে । আমিই যে সবচে বড় দু:খী, তা কিন্তু নয় । চারপাশের মানুষের বুকে এতো এতো দু:খ, এতো বেশি সঙ্কটে তারা জর্জরিত— যেখানে আমার দু:খ নেহাৎ সামান্য বৈ নয় । আমরা কেবল একে অপরকে একটুখানি সান্ত্বনা দিতে পারি, একটু ভালো কথা, একটা ভালো স্বপ্ন দেখিয়ে তার চলার পথটা আরো একটু এগিয়ে দিতে পারি, ব্যস। নিজের দু:খ এ ছাড়া ভুলে থাকার আর কোনো উপায় তো নেই, ভাই । আমরা নিজেরা ছাড়া আর কে-ইবা এসে আমাদের দু:খ ভোলাবে বলেন ?

আসলেই।

কিন্তু আজকাল সান্ত্বনা না দিয়ে বরং অনেকেই দুঃখকে আরো উস্কে দেয়।

ভালো লেগেছে লেখাটা।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০২

মনযূরুল হক বলেছেন: আজকাল সান্ত্বনা না দিয়ে বরং অনেকেই দুঃখকে আরো উস্কে দেয় নিজেকে বড় দেখানোর একটা ব্যাপার আছে না ! তাই আর কি ! দুঃখ না পেলেই হলো । অথবা মনে করা যেতে পারে, সে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষাটা ঠিক রপ্ত করতে পারে নি ।

লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে । ধন্যবাদ...।

৬| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০১

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: ভাল লিখেছেন। মানুষ মানুষের জন্যে...

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৫

মনযূরুল হক বলেছেন: পৃথিবীর সকল প্রাণীই কিন্তু মানুষের জন্যে নিবেদিত । কেবল মানুষের বেলায়ই আমরা ধন্দে পড়ে যাই - মানুষ মানুষের জন্যে তো ?

৭| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

উল্টা দূরবীন বলেছেন: খুব সুন্দর একটা লেখা। ভালো লেগেছে অনেক।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২১

মনযূরুল হক বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে । ধন্যবাদ...।

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১০

হাসান মাহবুব বলেছেন: When we are lonely love will keep us alive

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৪

মনযূরুল হক বলেছেন: শুনছি । ভাবছিলাম ডাউনলোড করে রাখবো । কিন্তু ইদানিং ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করতে সমস্যা হচ্ছে ।
তার থেকেও বড় সমস্যা হলো, গানটা এতো ভালো লাগছে যে, সুরটা আরো লোনলি করে তুলছে মনে হচ্ছে । ধন্যবাদ বস...।

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৮

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো। অযুত শুভেচ্ছা।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:১২

মনযূরুল হক বলেছেন: আপনার জন্যে রইলো অজস্র শুভেচ্ছা...।

১০| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৫

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: চমৎকার, আশা জাগানিয়া, পজেটিভ একটি লেখা পড়লাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এমন সুন্দর একটি লেখা উপহার দেয়ার জন্য। +++

ভালো থাকুন সবসময়, শুভকামনা সতত।

০১ লা মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ভালো থাকুন সবসময়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.