![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যেহেতু পহেলা বৈশাখের দিন ‘পহেলা বৈশাখ’ নিয়ে কথা বললে অনেকের অ্যালার্জি হয়, তাই আজকে বলি । যেহেতু আজ দোকলা বৈশাখ ।
আমি কিন্তু বরাবর এই দিনটা উদযাপন করার পক্ষে । পান্তার সাথে ইলিশ পাওয়া না যাক শুটকি হলেইবা মন্দ কি ! গতকাল সকালেও দেখি ঘরে পান্তাভাত আছে, সঙ্গে আছে মলা মাছ । বউকে বললাম— দুটো ডিম ভেজে ফেলো । সেই ডিমভাজা, শুকনো মরিচ পোড়া আর ছোটো মাছ মেখে ভাত খেলাম— অপূর্ব । এই করেই আমাদের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের শুরু হলো ।
হোস্টেলে থাকতে শিক্ষকদের কড়াকড়ির মধ্যেও পহেলা বৈশাখের দিন উদযাপনের সুযোগটা ঠিকই খুঁজে বের করতাম । বাবুর্চিকে আগে থেকে বলে রাখা হতো পান্তার সাপ্লাই যেনো সকাল সকাল পাই । তারপর যদিবা ভাগ্যে ইলিশ জোটে তো ভালো, না জুটলে টমেটো আর বেশি করে পেয়াঁজ দিয়ে শুটকি রাঁধতাম । রূমের সবাই ছাদে গিয়ে বড় একটা থালায় একসাথে গাপুস গুপুস করে মুখে পুরতাম অনির্বচনীয় তৃপ্তি নিয়ে । খাওয়া শেষে সবাই একগাল পান মুখে দিয়ে ফুচুৎ ফুচুৎ পিক... । আব্দুল্লাহকে দেখতাম কোত্থেকে একটা চুঙ্গা এনে ছাদের চারপাশে দাঁড়িয়ে গলাফাটিয়ে বলছে— এসো হে বৈশাখ, এসো হে বৈশাখ । সম্ভবত, এই দুইটা লাইনই ও জানতো ।
ছোটবেলা মেলায় যেতাম । যেতে ইচ্ছে করতো খুব । আম্মা কিন্তু রাজি হতেন না । একবার মেলার যাওয়ার জন্যে নাছোড় হয়ে পড়েছি । দাবি হলো— বড়চাচীর উপহার দেয়া একটা মুর্গি আম্মা অতিথিসেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন; সেই মুর্গির দামটা আমাকে দিলেই চলবে! আম্মা রাগ করে একটা ইয়া বড় চলা (কুড়াল দিয়ে ফাঁড়া গাছের লাকড়ি) ফিক্কা মারলেন । ভাগ্য ভালো, গায়ে লাগে নাই, পায়ে অল্প লেগেছে । অবশ্য পরক্ষণেই আম্মার রাগ পড়ে গেছে এবং কচকচে পঞ্চাশ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে বলেছেন— আসার সময় গুড়ের জিলিপি আনবি ।
মনে আছে, সেকালে বইতে ‘১লা বৈশাখ’ লেখা দেখলে শব্দ করে পড়তাম— একলা বৈশাখ । যেনো আমিই সবচে’ শুদ্ধ করে পড়তে পারছি ।
মেলা শব্দটা শুনলে সবসময় ভয় ভয় করতো । যদিও মেলায় গেলে ধর্মের কী ক্ষতিটা হয়, সেটা কোনোকালেই বুঝি নাই । ঢাকায় এসে যখন প্রথমবার চুরি করে বইমেলায় গেলাম, তখনও সেই ভীতি কাটে নাই । কিন্তু গিয়ে দেখি আমার মতো কোর্তাওলা মানুষের অভাব নাই । এবং আজকাল তো ‘আগামি দিনে বইমেলা হবে আমাদের’ এমন শ্লোগানও কোর্তাওয়ালাদের মুখে হরহামেশা শুনি । তারচে’ বড় কথা— মেলা যে কেবল বড় পরিসরের একটা বৈষয়িক বাজার মাত্র—মাছমেলা, ফলমেলা, মোবাইলমেলা, জামদানি মেলা, বানিজ্যমেলা, কম্পিউটারমেলা—এইগুলা না দেখলে বোধ করি ভয়টা কখনোই কাটতো না। ধর্মে যেটা সমস্যা সেটা মেলার বাইরেও ভেতরেও— এইটুকু বুঝতে বুঝতে বালকবেলার সোনার সময় ফুরিয়ে গেছে আমার ।
আজকাল দেখি পান্তা-ইলিশ নিয়েও হুজুগের শেষ নাই । বাঙালি হই বা না হই, পান্তা-ইলিশ খাওয়ার দোষটা কোথায়— বুঝি না । কোনো উপলক্ষ্যে ঘটা করে যদি পোলাও-বিরানি খাওয়া যায়, তাইলে পান্তা-ইলিশ খাওয়া যাবে না কেনো ? সে ক্ষেত্রে বছরের প্রথম দিন তো অবশ্যই একটা ভালো অকেশন এবং উদযাপনের জন্যে পারফেক্ট । এখানে গরিব মানুষকে টিজ করারই বা কী ধাতু আছে ? ধর্মমতে মানুষমাত্রই গরিব এবং ধনী কেবল আল্লাহ পাক । হ্যাঁ, পান্তা-ইলিশ খাওয়া যে সোয়াবের কাজ, তা তো কেউ বলে না। এটা যে খেতেই হবে, তেমন গোঁ ধরেছে কেউ— তা-ও তো জানি না। যার মনে চাইলো পান্তা খেলো, যার মনে চাইলো মিষ্টি খেলো, যার মনে চাইলো, সারাদিন অভুক্ত ঘুরলো কিংবা দুয়েকটা বাদাম মুখে দিয়ে ভাব করলো— তাতে কী সমস্যা ? একদিন ইলিশ-পান্তা খেয়েই যেমন খাঁটি বাঙালিত্বের দাবি করা যায় না, তেমনি একদিনের বাঙালিবেশ ধরামাত্রই কেউ ‘অমুসলিম’ হয়ে যায় না।
পহেলা বৈশাখ আমাদের মনে, বিশেষ করে বাংলাদেশিদের মনে একটা দেশজ আমেজ এনে দেয়— এটা স্বীকার করতে কার্পণ্য করছেন কেনো ? আমাদের ভালো লাগে, বাংলাভাষী হিসেবে আমাদের একটা বাংলাসনও আছে । আরও ভালো লাগে, এই সনটা মুসলিমদেরই হাত ধরে গড়ে উঠেছে কৃষক-শ্রমিক-ব্যবসায়ীদের সুবিধার বিবেচনায় । তদুপরি এদিনটা সরকারি ছুটির দিন । একটা আলাদা আনন্দ মনে জাগেই, জাগাটা সম্ভব, স্বাভাবিক । গত একটা বছরের স্মৃতিগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে এ সময় । নতুন বছরে নতুন করে সাজতে ইচ্ছে করে । দেশবোধ তো বংশবোধের মতোই মানুষকে একটা নির্দিষ্ট সূতোয় বেঁধে রাখে । যে যুগে মানুষ শত চাইলেও অন্য দেশের মাটিতে পা রাখার অুনমতি পায় না সে দেশের অনুমতি ছাড়া, চাইলেই যখন বৈশ্বিক হওয়া যায় না অগাধ দৌলত আর বিলাসী চিন্তা ছাড়া, সে যুগে একটা নিম্নআয়-দেশের মানুষ তার দেশজ পরিচয়কে আরও বেশি করে অনুভব করবে— এই সত্যকে বুঝতে গভীর দর্শনের দরকারের হয় না।
এই মানবীয় অনুভূতি, এই প্রাকৃতিক বোধকে কোন ধর্ম অস্বীকার করে— সেটা কি তবে মানবতার ধর্ম নয়? হ্যাঁ, অশ্লীল-অনৈতিক যা যা ঘটে থাকে, তা মানবতাবিরোধী— সুতরাং তা ধর্ম-বিরুদ্ধও বটে এবং তা সবসময়ই নিষিদ্ধ। আর তা যদি মহামারি আকারে ধারণ করে, তবে মানুষকে বাঁচাতে এবং মানবতাকে উদ্ধার করতেই তা থেকে উত্তরণের পন্থা বের উচিত । সেখানে দেশজ সংস্কৃতিকে আলাদা করে দোষারোপ করার কোনো মনে হয় না।
সবশেষে, বাবার কাছে লেখা রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র একটি পত্রাংশ উদ্ধৃত করছি—কেনো করছি জানি না—
“বাবা, ...ছেলেবেলায় আমার খেলতে ভালো লাগতো। খেললে আমি ভালো খেলোয়ার হতাম। আপনি খেলতে দিতেন না। ভাবতাম, না খেললেই বোধ হয় ভালো। ভালো মানুষেরা বোধ হয় খেলে না। আবার প্রশ্ন জাগতো, তাহলে আমার খেলতে ভালো লাগে কেনো? আমি কি তবে খারাপ মানুষ? আজ বুঝি, খেলা না খেলার মধ্যে মানুষের ভালো-মন্দ নিহিত নয়।”
অমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫
মনযূরুল হক বলেছেন: হতেই পারে । বৈশাখ পালনের তো কোনো অবশ্যনীতিমালা নাই । যখন মনে চাইলো, কিছু যোগ করলো, কিংবা ছেটে ফেললো....
২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫
হাসান মাহবুব বলেছেন: "যার ইচ্ছা সে পান্তা-ইলিশ খাইলো এতে সমস্যা কী!"।
সমস্যা নাই। তবে কথা হলো আমাদের ইচ্ছাগুলো আজকাল কর্পোরেট চালিত। এরা আমাদের ভেতর হাইপ তৈরি করে যে পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ না খাইলেই না, সুতরাং আমাদের খাইতেই হইবো। আর এই সুযোগে ইলিশের দাম বাইড়া হয়া যায় ৮-১০ হাজার। বড়লোকদের কাচে ব্যাপার না! সমস্যা হৈলো উচ্চ- অথবা শুধুই মধ্যবিত্তদের। কর্পোরেট নীতি মাইনা চলতে পারলো না, না জানি কী ক্ষতি হয়া গেলো! এইসব বাল্ছাল অং বং আর কী!
প্রধানমন্ত্রী যখন ডিক্লেয়ার দিলেন যে পহেলা বৈশাখে তিনি ইলিশ না খেয়ে খিচুড়ি-গরুর মাংস খাবেন, এর প্রতিক্রিয়ায় কী হইছিলো জানেন? একটা বড় সাইজের ইলিশ তেরশ টাকায় পাওয়া গেছিলো।
সুতরাং, যেমনে ইচ্ছা অমনে পালন করেন, সেইটা সমস্যা না। কিন্তু অন্যের ব্যবসার সুবিধার্থে তাদের তৈরি "আধুনিক নগর সভ্যতা"র পাপেট হওনের কী দরকার!
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৩
মনযূরুল হক বলেছেন: দারুণ একটা কথা বলেছেন । আগে তো এমন করে ভাবি নাই...
৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০২
সুমন কর বলেছেন: বাঙালী হুজুগের মাতাল। লেখা ভালো লাগল।
আমি এসব হুজুগে গা ভাসাই না !! সামর্থ্য অনুযায়ী করার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত ১লা বৈশাখে বাহিরে বেরই হইনি।
১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৪
মনযূরুল হক বলেছেন: আমারও বের হওয়া হয় না । এত ভিড় আর এত উচ্ছৃঙ্খল অবস্থা থাকে যে, বের হবার রুচি হয় না...
©somewhere in net ltd.
১|
১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১:৪১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ইলিশ টা নূতন যোগ হয়েছে।।
আগে বৈশাখ উদযাপন হতো বিভিন্ন মেলা দিয়ে।। আজ!!