নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিঁপড়াবিদ্যা

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৩৩


এলিটাকে একটি কথা বলতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তার আগেই আমাদের বিচ্ছেদ হয়ে গেছে । অবশ্য খুবই ভালো লাগছে, কেননা, বলি নি বলেই বেঁচে গেছি আজ । আমাকে আত্মদহনে পুড়তে হচ্ছে না ।

এলিটাকে বলা হয় নি, শৈশবে সেদিন সেই উজ্জ্বল সকালে ওর গোলাপি কপোলে জমেছিলো অপূর্ব এক দৃশ্য— মসৃণ গালে ধীরে সুধীরে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে একটি লাল পিঁপড়ে । ও চিৎকার করছে, বাঁচার জন্যে আকুতি জানাচ্ছে কেঁদে কেঁদে রেগে রেগে । এমনিতেই ও বকবক করতে ভীষণ ভালোবাসে । রাগলে তো কথাই নেই । কাঁদছে, রাগছে আর বকবক করছে । কিন্তু দৃশ্যটা এত সুন্দর ছিলো— ভয় হলো আমার, চোখ সরালেই ছবিটা হারিয়ে যাবে। অবশেষে পিঁপড়ার কয়েকটা কামড়ও খেতে হলো ওকে। গাল ফুলে হলো ঢোল, রাগলে যতটা ফোলে তারচে’ অনেক বেশি।

রাগ করার অবশ্য আরেকটা যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে । আমার জন্যে তখন কোচড় ভর্তি পাকা খেজুর কুড়িয়ে এনেছে সে সকালের ওমঘুম উপেক্ষা করে । জানে, আমি সকালে মক্তবে পড়তে যাই, সুতরাং ঠিক এ সময় আমাকে একা পাওয়া যাবে । কিন্তু সেই খেজুরের সাথে থাকা লাল পিঁপড়া যে তার কপোলে উঠে এমন একটা দৃশ্য গড়বে এবং সেই দৃশ্যে পাগল হয়ে ছেলেটা তাকেই ভুলে যাবে, যে কিনা তার জন্যে এই ভোরবিহানে একা ছুটে এসেছে— এতকিছু বেচারি কী করে জানবে?

চাকরির সুবাদে আব্বার পোস্টিং হলো, আমার আর এলিটার প্রথম বিচ্ছেদ ঘটলো সেবার। তারপর আমি একটু বড় হয়েছি, এলিটাও একটু বাড় পেয়েছে— সে সময় আবার দেখা হলো আমাদের । স্কুলে শহিদ স্যার দুদিন গ্যাপ দিয়ে এসে ক্লাসে বিরাট গল্প শুনিয়ে দিলেন— পুলিশ কোয়ার্টারে তিনি এলিটা নামের একটা মেয়েকে পড়াতে যান। পরশুদিন মেয়েটা তাকে কাঁচা আম মাখিয়ে খাইয়েছে দারুণ। সুস্বাদু সে আম খেয়ে জিভ জ্বলে গেছে প্রচণ্ড ঝালে। তারপর রীতিমতো ডায়রিয়া।

আমার এলিটা এখানে আসতে পারে কি না, সে হিশাব-নিকাশ না করেই স্যারের সঙ্গে একদিন হাজির হলাম সে-বাসায়। সংশয় অবশ্য ছিলো আগাগোড়াই । কিন্তু দেখার পরে মনে হলো, না এলেই ভালো করতাম । আমূল বদলে গেছে সে। আমাকে বিলকুল চেনে না বলে একরকম অপমান করে দিলো । হা, খোদা ! মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে মানুষ এভাবে ভুলতে পারে কাউকে? তা-ও আমাদের এত সুন্দর সম্পর্ক ছিলো !

মাথাটা হেঁট করে বাসায় ফিরলাম । কষ্টে স্কুলে যাওয়ারও রুচি হলো না। শহরে নানা জায়গায় উদ্দেশ্যহীন ঘুরলাম একা একা । দুপুরে বাসায় ফিরে অবাক । ডাইনিং টেবিলে আপু আর এলিটা একসঙ্গে বসে ভাত খাচ্ছে। আমার হতভম্ব মুখের দিকে না তাকিয়ে কিংবা আড়চোখে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসলো খানিকক্ষণ । খাওয়া শেষে আবার আগের মতো সব । উচ্ছল হাসি, ছলছলে অভিমানী এবং ভীষণ বকবকানি । যার সারকথা— সেবার চলে আসার সময় ওকে বাই বলে আসি নি কেনো, তাই ওর ভীষণ অপানিত বোধ হয়েছিলো, তার চেয়েও বেশি হয়েছিলো অভিমান । আজ সেই অপমান ও অভিমানের চরম প্রতিশোধ নিয়েছে সে।

তারপর আবার পোস্টিং। আবার সুদীর্ঘ বিচ্ছেদ ।

বিশ বছর পরে আজ আবার দেখা হলো এলিটার সাথে— নির্জনে; কিন্তু উন্মুক্ত সাক্ষাৎ নয়। এলিটা সংবাদ পড়ছে টিভির পর্দায়, ঠিক আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হেসে হেসে। আমিও তাকিয়ে আছি তার দিকে, ভাষাহারা, নিশ্চুপ। যদিও একদম একা সে এবং আমিও একা । দেখে ফেলারও কেউ নেই । তবু আজও কথাটা বলা গেলো না। বলার উপায় ছিলো না । একনাগারে বকবক করে যাচ্ছে সে । আর আমি কাপুরুষের মতো চেয়ে আছি অপলক— সেই গোলাপি কপোল, যেখানে ধীরে সুধীরে হেঁটে হেঁটে গিয়েছিলো একদিন একটা লাল পিঁপড়া...।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৬

সুমন কর বলেছেন: শেষটা ভালো লাগল।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৯

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই.।

২| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৫৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০১

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, বস.।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.