নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আনন্দেরা এভাবেও আসে

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:১৫

সুযোগ পেলে আনন্দেরাও উল্লাস করে । যদিও আনন্দের আকার সবসময় সমান থাকে না । ঈদগা থেকে ফেরার পরে ফিরনি-পায়েশ খেয়েও নিরস্ত হওয়া যায় না ঈদের দিনে । নিমন্ত্রণের হিড়িক সামলাতে হয় দুপুরজুড়ে । তারপর হঠাৎ করেই নিস্তব্ধ অবসর নেমে আসে নববধূর এলিয়ে দেয়া এলোকেশের মতো ।

অ্যালবামে জমে ক্ষীর হয়ে থাকা ছবির মতো বইয়ের তাকে কবে যে উসখুস করছিলো একটা অনাহূত চঞ্চল বই, এমন উল্লাসচাপা দুপুর ছাড়া নজরে পড়ার কথা ছিলো না । খুবই সাধারণ মানের বই । একটা ছেলে মেলা দেখতে গিয়ে যে ম্যালা কিছু দেখে ফেলেছে, সেই বই । ভাবছিলাম একাকীই, আর সব বই যেমন করে পড়া হয়, ঠিক তেমন করে চুপি চুপি, যেনো বুড়ো ভাম গোপাল ভাঁড়ের বই খুলে পড়ছে, এমন করেই শেষ করা যাবে বইটি । কেনো যেনো হয়ে উঠলো না ।

আমার ভাগ্নেটাও যেতে পারে নি কোথাও, ওর ছোটো মামার কর ধরে ঝুলে পড়ার পরেও হয় নি ঈদভ্রমণ তার, সাথে আছে পিচ্চি একটা খালাতো ভাই, এরই মধ্যে উঁকি দিলো চাচাজান সুলাইমান, চাচা হলেও অবশ্য আমার ছোটোই হবেন, আমরা এই ক্ষুদ্র একটি দল বারান্দার তোষকে আয়েশ করে পড়তে বসলাম ‘নান্টুর মেলা দেখা’ ।

ছোটো বই, সাধারণ বই, হয়তো অখ্যাতও, তার উপর আবার শিশুতোষ, কেমন লাগবে ভাবতে না ভাবতে আমরা পড়তে শুরু করেছি— নান্টু নতুনের কাঙাল ।নিত্যনতুন কিছুর দেখার জন্য ছটফট করে ।...

হায় খোদা, একটা শিশুতোষ বইয়ের এ কেমন সুর । আদতেই বেসুরো লেগেছে শুরুটা । একটু আওয়াজ নিচু রেখেই কয়েক লাইন পড়ে গেলাম । ভাগ্নে হুড়ো দেয়— মামা, পড়ো না ?

পড়ছি.. এবং তার পরই জট খুলতে শুরু করেছে পর্দার আড়ালে থাকা অতিসামান্য ঘটনার কিংবা অঘটনগুলোর পূঞ্জিভূত মেঘটা । এতো সাধারণ, অথচ এমনই চুম্বকের মতো টানছে, ডাকছে, বলছে— কী ঘটবে তা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না, শিশুতোষ পড়ছো বলে শিশুও হতে হবে না, তুমি পড়ে যাও । টুকরো টুকরো স্মৃতি হাতড়ে মিলিয়ে দেখার কসরত করতে হবে না তোমাকে, স্মৃতি তোমার হাতের মুঠোয়, তুমি শুধু পড়ে যাও ।

এ এক আশ্চর্য সাধারণ বইয়ের গল্প । নাকি গল্পের বই ? আমরা পড়ছি, নান্টুর নতুন জমার কথা, তার নতুন করে সাহেবি ভাবের কথা, তারপর মায়ের সঙ্গে অভিমানের কথা, সব শেষে আসে মেলার কথা । নান্টু মেলায় যেতে চায়, তাই সে পয়সা যোগাতে চায়, লোভে পড়ে বাবার পকেট হাতড়ায়, বাড়ির পাট বিক্রি করে । শুনলে মনে হয়, ছেলেটা যেনো বখে যাচ্ছে । অথচ এমনই নন্দন সেই চুরিতে, হয়তো যারা কখনো তেমন চুরিটা ছেলেবেলায় করেন নি, তাদের আফসোসই থেকে যাবে । আক্ষেপ জাগবে, ঘরের খুঁটি কেটে কেনো একটা বাঁশ-ব্যাংক আমার বানানো হলো না কখনো ।

আমরা আবার পড়া শুরু করি । এ পর্যায়ে নান্টু মেলার পথে রওনা হয় । তার প্রতিবেশি বড় ভাইয়ের সাইকেলের রডে চরে সে অতিকাঙ্ক্ষিত কান্দির মেলার পথে যাত্রা শুরু করে । নতুন পরিবেশ-প্রতিবেশ দেখতে দেখতে ঝিম ধরা পা আর মাথাভরা কৌতূহল নিয়ে সে নামে মেলার দোরগোড়ায় । সন্দেহ নেই, মেলাটা তেমন উপভোগ করতে পারে নি নান্টু । ফোরটুয়োন্টি গনি ভাইয়ের নেশার তোড়ে ভেসে যেতোই তার সবটুকুই আনন্দ । কিন্তু নান্টু কিংবা লেখক মেলার আকাশে ওড়া জাহাজ ঘুড্ডির মতোই সুতো ছেড়ে ছেড়ে ক্ষয়িষ্ণু করতে থাকেন তার সমস্ত কৌতূহল এবং বেদনার সূচনা তাড়িয়ে তাড়িয়ে চেনা সুরে হাজির হয় আমাদের সামনে ।

নান্টু মেলা দেখতে গিয়ে নানান মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার এভাবেই একটা সুযোগ পায় । আমাদের মনে হয়, এখানে লেখক চাইলে কিছুটা থামিয়ে, কিছুটা সময় নিয়ে তার ঘটনার কলেবর দীর্ঘ করার চেষ্টা করে দেখতে পারতেন । যদিও পাঠক তাতে বিরক্ত হতো । কিন্তু সাহসী লেখক পাঠককে দম ফেলতে দিতে নারাজ । আমাদের সব ভাবনার অগোচরে তিনি নতুন কাহিনী ফাঁদেন যশস্বী গল্পকারের মতো । একেবারেই আনকোরা— হ্যাঁ, নান্টুর কাছে তো আনকোরা বটেই, আমাদের কাছেও মনা চরিত্রের রূপায়ন একটা চেনা গল্পকে অচেনা বাঁকে নিয়ে যায় আমাদের অজান্তেই ।

তারপরই কি নান্টুর বাড়ি ফেরার যুদ্ধটা শুরু হলো ? হওয়া উচিত । তবে খুব কঠোর নয় সেই যুদ্ধ । অথবা নান্টুর বয়সি একটা ছেলে, যে গ্রামের সম্পন্ন গৃহস্থের ঘর থেকে হারিয়ে গেছে—কিংবা নান্টুর ভাষায়, সে হারায় নি, হারিয়েছে তার টাকা মেরে দেওয়া গনি ভাই—গ্রাম থেকে পায়ে হাঁটা পথের চল্লিশ মাইল দূরে অজ্ঞাত বজরার চরে পড়ে থাকা এবং সেখান থেকে কথিত ছেলেধরার কবল থেকে মুক্তি পাওয়া তার জন্যে একটা যুদ্ধই বটে ।

আমরা বইটি পড়তে থাকি, ভাগ্নের চোখে জল চিক চিক করে নদীকূলের রূপালি বালির মতো, যেখানে এককালে নূরীরা মাছ ধরেছিলো নান্টুর সাথে একটা স্বপ্ন দেখানোর ছলে । আমরা পড়তে পড়তেই লক্ষ করি, বইয়ের অল্প কয়েকটি পাতা, তা-ও শেষ হয়ে যাচ্ছে, নান্টু ফিরে আসছে, নতুনের কাঙাল নান্টু, নতুন পোশাক খুইয়ে আসা নান্টু, অনেক দিনধরে গল্প করা যাবে, এমনই অজস্র ভালো, ভয়ঙ্কর, অদ্ভুত অভিজ্ঞতায় ঝালিয়ে আসা নান্টু, সুদীর্ঘ পথ, মায়ের কোলশূন্য কয়েকটি দিন, অশ্রুসিক্ত চোখেও যাকে বড়দের মতো বলতে হয়েছে ‘চোখে পোকা পড়েছে’ — সেই নান্টু আবার ফিরে এসেছে তালতলায় । লালগরু জবাই করে তার বাবা এবার ভোজ আয়োজন করবেন । আমরা বই শেষ করে অপেক্ষা করতে থাকি নান্টুকে মেলায় নিয়ে নিয়ে যাওয়া সেই ফোরটুয়েন্টি গনির জন্যে, নান্টুকে হারিয়ে ফেলার পরিতাপে যে আজও গায়ের লোকের সামনে মুখ দেখানোর ভরসা পায় না । এভাবেই আমরা চারটি মানুষ জল ছলোৎছল চোখে আনন্দের চৌষট্টিটি পায়রা প্রবল উচ্ছ্বাসে আকাশে উড়িয়ে দিয়ে একটি তৃপ্তিময় ঈদের সমাপ্তি ঘোষণা করি ।

পুনশ্চ : এই বই মঞ্জু সরকারের লেখা অগ্রণী শিশু সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছে ১৪০৫ বঙ্গসালে । অথচ দু:খের বিষয়, আমার পড়া এটাই মঞ্জু সরকারের প্রথম কোনো বই । বইটি সেকেন্ডারি এডুকেশান কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ)-এর আওতাধীন । বইয়ের মলাট উল্টাতেই চোখে পড়লো গোটা গোটা অক্ষরে লেখা— আমার নাম : মৌরি, ৮ম শ্রেণী । নিচে সেকায়েপের সিলে লেখা শুভেচ্ছা পুরস্কার-২০১২ । মৌরিকে ধন্যবাদ, ঈদের দিনে শিশুদের নিয়ে এমন একটি বই পড়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্যে । বইটি প্রকাশ করেছে ‘সাহিত্য বিলাস’।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:৪৪

সুমন কর বলেছেন: আপনার বাক্য বিন্যাস অসাধারণ। এমন ভাবে রিভিউ লেখা যায় --তা আপনার এ লেখা না পড়লে বুঝা যাবে না।

ভালো থাকুন।

০৮ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:১৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । রিভিউ আপনার ভালো লাগছে জেনে আমারও লাগছে ।...

আপনিও ভালো থাকুন...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.