![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার যে, পৃথিবী প্রকাশকদের মনে রাখে নি । পৃথিবী শুধু মনে রেখেছে লেখকদের এবং লেখকরা যাদের মনে রেখেছে তাদের । এমনকি যেসব লেখক প্রকাশকদের আচরণে ক্ষুদ্ধ হয়ে নিজেরাই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন, ইতিহাস তাদের প্রতিও চরম বিরক্ত ।
এর কারণ কি? এর কারণ কোনোমতেই কি এটা বলা যায় যে, লেখকদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিলো না বলেই তাদের এই হাল? যেহেতু লেখকরাই ইতিহাস রচনা করেন এবং তাদের লিখিত ইতিহাসই ইতিহাস হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে । কেননা, ইতিহাস হলো মানুষের প্রতিবিম্ব, মানে শক্ত মাটির ছায়া, কিংবা বলুন ভেজা পায়ের ছাপ— আঁচড়ে আঁচড়ে খুঁচিয়ে খোদাই করে না রাখলে প্রকৃতির নিয়মেই তা সরে যাবে, মুছে যাবে, বিলীন হয়ে যাবে বেলাভূমির আল্পনার মতো ।
অথচ পৃথিবীতে যতো রথী-মহারথী লেখকের জন্ম, সব তো প্রকাশকের হাত ধরেই লাইম লাইটে এসেছে, আসতে হয়েছে; কেননা, লেখকের পকেটে পয়সা নেই । পয়সা আছে প্রকাশকের পকেটে । তাহলে প্রকাশককে অবহেলা কেনো ? তার চেয়েও জঘন্য ব্যাপার হলো, এই দুঃখে যেসব প্রকাশক ইতিহাসে জায়গা পাবার উদ্যোগ নিয়েছেন, লেখকের কাতারে এসেই তাদের তা করতে হয়েছে !
অলি ভাই সেদিন অফিসে এসে চরম এক ঘটনা শোনালেন ।—
লেখালেখির প্রথম দিকে হুমায়ূন আহমেদ ও ইমদাদুল হক মিলন দুজনে কোনো এক দুপুরে এক প্রকাশকের বাসায় হাজির হলেন । এর আগে প্রকাশক মহোদয় বহুবার তাদের টাকা দেয়ার কথা বলেও দিতে পারেন নি । যেহেতু টাকার প্রোসেসটা আদতেই একটা চেইন প্রোসেস । প্রকাশকও হয়তো যথাস্থান থেকে টাকা পাচ্ছিলেন না, হয়তো তার সদিচ্ছার অভাব ছিলো না । যা-হোক, বহু কাঠখড় পুড়িয়ে আজ তারা প্রকাশকের অ্যাপয়েন পেতে সমর্থ হলেন । প্রকাশক তাদের বললেন— ভাই, আপনাদের কী করে টাকা দেবো বলুন, আমার ঘরে বাজার করার পয়সাটাও নেই।
তারা দুজনেই বেরিয়ে এলেন । হুমায়ূন নিজের পকেটের শেষ পেনিটা খরচ করে দুজনের দ্বিপ্রাহরিক সিঙারার ব্যবস্থা করলেন । তারপর ইমদাদুলকে বললেন— তোমার পকেটে কতো আছে? তিনি জবাব দিলেন— পাঁচ টাকার মতো । হুমায়ূন বললেন— চলো ।
দুজনেই প্রকাশকের বাসায় ফিরে এলেন এবং তার হাতে তাদের পকেটের সমুদয় অর্থ তুলে দিয়ে বললেন— ভাই, আমরাও অর্থ-সঙ্কটে আছি বটে, তবে এতোটা নয় যে, ঘরে থাকলে দুটো ডাল-ভাত খেতে পারবো না। যেমনই হোক আমরা তো খেতে পারছি । কিন্তু আপনার বাসায় বাজারের পয়সা নেই শুনে আমাদের যথাসাধ্য অর্থ আপনাকে দিতে এলাম । প্রকাশক হতভম্ব হওয়ার আগেই দুজনে সমস্বরে বললেন— না না ভাই, টাকার জন্যে আর ব্যস্ত হতে হবে না আপনাকে । বইটা একটু যত্ন করে করবেন ।...
গল্পের সত্য-মিথ্যা আমার জানা নেই; যেহেতু কথক কোনো সোর্স উল্লেখ করেন নি । এটাও বুঝতে পারি নি, তাদের দুজনের কথা কি স্যাটায়ার ছিলো, নাকি সিরিয়াস । তা ছাড়া সামান্য কটা টাকার জন্যেই শুধু লেখকরা প্রকাশককে দুষে যাবেন— এটা কেমন কথা?
এটা তো হতেই পারে না যে, সবযুগেই লেখকদের সঙ্গে প্রকাশকদের ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক ছিলো । যদি হয়েও থাকে, তবু সেটা এমন চিরায়ত জগদ্দল পাথর হতে পারে না যে, কেউ সেটা ভাঙতে পারবে না । চাইলে নতুন যুগের সূচনা হতে পারে ।
আমার কথা হলো, লেখক যদি কোনো গ্রন্থের পিতা হয়ে থাকেন, তবে প্রকাশক মা না হলেও দাইমা তো অবশ্যই হবেন; জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যার হাতে পিতা তার সন্তান ও সন্তানের মায়ের ভার ছেড়ে দিয়ে বারান্দায় অস্থির পায়চারি করে বেড়ান । তারপর দাইমার হাত গলিয়ে একটা ফুটফুটে নবজাতক গ্রন্থের মলাটে পৃথিবীর আলো এসে পড়ে।
তাহলে দাইমাকে পিতা অবহেলা করেন কী করে? এটা কি কোনো অবদমিত ক্ষোভ, নিজেই বাচ্চাটা খালাস করতে পারছেন না বলে? কেনো তার কাছে সন্তান ও মাকে ছেড়ে দিয়ে নিরুপায় ছটফট করতে হয়— এখান থেকেই কি ক্ষুদ্ধতার জন্ম? নাকি পিতৃত্বের বড়াই? বাবা কি সন্তান গ্রন্থকে ভালোবাসেন, তাহলে প্রকাশক ধাত্রীকে কেনো নয়? নাকি অর্থই অনর্থের মূল? নাকি...
আরও আশ্চর্যের কথা হলো, কবি বলেছেন—
ঝিনুক নীরবে সহো, ঝিনুক নীরবে সয়ে যাও
ভিতরে বিষের বালি মুখ বুজে মুক্তা ফলাও
০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১০:২০
মনযূরুল হক বলেছেন: নাই... তবে প্রকাশকদের প্যাদানি খেতে খেতে অন্তরে প্রকাশকদের প্রতি যারপরনাই করুণা জাগছে... হোক থ্যাংকলেস
২| ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৪৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: প্রকাশকদের যে মনে না রাখার কারণটা ঠিক জানিনা। অনেক লেখককে দেখেছি, ভূমিকায় অন্তত প্রকাশককে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
আমরাই মনে রাখিনি, পাঠকেরা।
আর মনে রাখার মতো কাজ কজনই বা করেছেন, বলুনতো?
প্রকাশকেরা ব্যবসা করেন। যে বইয়ের কাটতি হবে, সেটা প্রকাশ করবেন। তাই লেখক তৈরঈঈএ তাদের খুব বেশি অবদান আছে, এটা অন্তত মানা যায় না।
আচ্ছা, একজন নবীন লেখকের সাথে প্রকাশকেরা যেমন বিহ্যাব করেন, তাতে তাদের বইয়ের দাইমাও বলা যায় না। আবার আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেলে, ওরা আপনার পিছে পিছে ঘুরবে।
ওদের মনেচনা রাখার কারণ অনেক আছে
১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
মনযূরুল হক বলেছেন: অনেকেই করেন নি, আবার অনেকেই করেছেন । কিন্তু কথা হলো, প্রকাশকেরা এমন কেনো ?
৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৪৪
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার করে গুছিয়ে লিখেছেন। ভালো লাগা রইলো।
ইতিহাস হলো মানুষের প্রতিবিম্ব, মানে শক্ত মাটির ছায়া, কিংবা বলুন ভেজা পায়ের ছাপ— আঁচড়ে আঁচড়ে খুঁচিয়ে খোদাই করে না রাখলে প্রকৃতির নিয়মেই তা সরে যাবে, মুছে যাবে, বিলীন হয়ে যাবে বেলাভূমির আল্পনার মতো ।
১১ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, বস...
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই জুলাই, ২০১৬ সকাল ৭:০৮
হাসান মাহবুব বলেছেন: হু। থ্যাংকলেস জব। আপনার কোন প্রকাশনী আছে না কি?