নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তি তোমায় খুঁজতে গিয়ে...

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ১:২৪


‘ওরে নতুন যুগের ভোরে
দিসনে সময় কাটিয়ে বৃথা সময় বিচার করে।’

বিপদ বা বেদনা সময় দেখে আসে না। যখন আসে, তখন প্রাণপণে মোকাবেলা করতে হয়। কসুর করলে চলে না। তিথি দেখে অতিথি গৃহদ্বারে উপস্থিত হন না। যখন আসেন তখন তার আগমনটাই বড় কথা। তাকে সানন্দে বরণ করে নিতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সময় বিচার করা বৃথা।

তবু যুগসন্ধিক্ষণে সময় বিচার করার প্রয়োজন কিছুটা থাকে। এ সময় কোন কাজটা করা কর্তব্য, কোন পথে চলা ভালো সেটা অবশ্যই নির্ভর করছে এ সময়ের কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্যের ওপর। সাথেই বিস্তর প্রয়োজন থাকে ইতিহাস সচেতনতারও। ঐতিহাসিকের দায়িত্ব, নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ঘটনার নিখুঁত বর্ণনার রেকর্ড রাখা। বলা যায়, ঐতিহাসিকগণ ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী। কিন্তু মানুষ সে তো শুধু স্বাক্ষীই নয়, কর্মীও বটে। সময় তার কর্মের ক্ষেত্র। সময়-বিচার ও ইতিহাস চেতনার অভাবে সেই কর্মী মানুষই ভুল পথে পরিচালিত হয় অনেকটা অবচেতনভাবে। যদিও ইতিহাস সত্যিকার অর্থেই সব প্রশ্নের নির্ভুল সমাধান দিতে পারে না। তর্ক থেকেই যায়। তবু সময়ের পথ ধরে বিতর্কের ভেতর দিয়ে কিছু ভালো বিষয় বেরিয়ে আসতে পারে। আসাটা সম্ভব।

তাহলে অতটা গভীরে না গিয়ে সোজাসুজি মোটাদাগে কথাটা তুলে ধরা যাক। এই সময়ের এবং এই দেশের সমস্যার সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই আলোচনা শুরু করা যায়।
ধর্ম-বর্ণ, জাত-অভিজাত বিবেচনার বাইরে থাকলো। শিক্ষার ব্যাপারটাই সামনে রেখে যদি প্রশ্ন তোলা হয়, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশটিতে এই মুহূর্তে কোন বিষয় সবচে আলোচিত? সামগ্রিক শিক্ষা ক্ষেত্রে কোনটা সমস্যা? অনেকেই, হ্যাঁ, অধিকাংশ ‘স্ব-চেতন’ মানুষই বলবেন, ‘মাদরাসা শিক্ষা’। একধাপ এগিয়ে বলতে চাইবেন ‘কওমি মাদরাসা খুবই বিতর্কিত’। কিন্তু বিতর্কের হেতু কি? এবং কিভাবে বিতর্কের অবসান হতে পারে? উত্তরে অনায়াসে অনেকেই অনেক পথ বাতলে দেবেন। ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে টেনেটুনে জঙ্গিবাদের সম্পৃক্তি সামনে আনবেন।

তাদের সবাইকে সামলাতে গেলে, ঘেঁটে ঘেঁটে শত প্রশ্নের জবাব সামনে আনলেও সুরাহা হবে না। বরং বিরক্তি বাড়বে। তর্ক উঠবে। তাই নিজেদের কথা বলাই ভালো। কেবল দুটি প্রশ্ন উল্লেখ করি। জবাব পাঠকের জিম্মায় রইলো।

কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মাদরাসা শিক্ষিতরা এতোটাই দাম্ভিক, নিজেদের শিক্ষার বাইরে আর কিছুকেই তারা শিক্ষা মানতে রাজি নয়। কুল্লে শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটা কেবল তাদের কব্জায়!’ প্রশ্নটা একদম অমূলক নয়। অন্তত যখন বলেন, ‘আমরা তাহলে ফেলনা শিখছি?’ কীভাবে বলি! আমাদের একজন মুশীরই তো বলে ফেললেন, ‘যে বিদ্যায় রাষ্ট্র চালনা হয়, সমাজ ও সমর চলে, অসুখ সারে, উপকারী আবিস্কার সম্ভব, সে বিদ্যা ইলমে অহির অংশ বৈ নয়। পরিপন্থী তো নয়ই।’ তাহলে সে শিক্ষার বদনাম গাই কী করে। এক কেজি গোশত ও এক লিটার দুধে পার্থক্য আছে। তাই বলে গোশতের খাদ্যগুণ ‘ফেলনা’ নয়। স্বর্ণের চাইতে প্লাটিনামের দাম বেশি। কিন্তু সোনার তাৎপর্য ও মাহাত্ম্য নিজের জায়গায়।

অভিভাবকদের প্রশ্ন নিবেদনও বেশ কঠিন। আমাদের রুটি-রুজির সংস্থান খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকলে কোন ভরসায় সন্তানদের মাদরাসায় পাঠাবো? তারচে’ আপনারা বরং একটা কায়দামাফিক সাজেশান দিয়ে যান। যেন সেটুকু শিখে কোনোমতে ওপারের দরিয়াটা পাড়ি দেয়া যায়।’
অভিযোগটা এখানো ফোটেনি। কেউ হয়ত শোনেওনি। তবু মনে হয় যেন অভিভাবকদের ভাবখানি যতোই ‘আল্লাহ মিয়াই সব দেখবেন’ মতো হোক, ভেতরে সত্যিই বলি বলি করছে, ফুলে ফুলে ফুঁসছে। কারণ তো অবশ্যই আছে।

দুই.
যেকোনো শিক্ষাব্যবস্থাকে মানুষের নিকট একটা ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হয়। মনীষীরা যাই বলুন। যদি গড়পড়তা সাধারণ মানুষের বড় একটা অংশ তাকে অন্যায্য মনে করেন, তবে তা লেজিটিমেশন ক্রাইসিস বা ন্যায্যতার সংকটের মধ্যে পড়ে। এই ন্যায্যতা কেতাবি যুক্তির ধার ধারে না। এটা নির্ভর করে মামুলি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অভিজ্ঞতার উপর। তার খাওয়া-পরা, জীবিকার নিরাপত্তা আর সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার উপর। যুক্তির বিচার যতো অকাট্যই হোক সামাজিকতার নিজস্ব কিছু বিচার আছে। যা তার নিজস্ব যুক্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকে। এই দুটি ভিন্ন যুক্তি, এদের মধ্যে সঙ্গতি আনতে না পারলে প্রাপ্তি সম্ভব হবে না। শিক্ষার ক্রিয়াকলাপ, যার পারস্পরিক সম্পর্ক মিলে একটা সমাজনীতি তৈরি হয়, সাধারণের সমাজেই যার অস্তিত্ব তাকে নানান সামাজিক ও রাজনৈতিক শর্ত মেনেই টিকে থাকতে হয়। তাকে বদলাতে গেলেও সেই শর্ত মেনেই বদলাতে হবে।

বদলানোর কথাটা তুললাম, কারণ ইতোমধ্যেই রাষ্ট্রসরকারের সঙ্গে একতানে আমাদের ভেতর থেকে অনেকে শিক্ষাসংস্কারের শ্লোগান তুলেছেন। কওমি শিক্ষা সংস্কারের যে প্রয়োজন নেই, তা বলছি না। দীর্ঘ শতবর্ষ একাদিক্রমে একই সিলেবাস ও শিক্ষানীতিতে চলাটা আমাদের কাছে প্রায় অভ্যাসের মতো হয়ে গেছে। তবে প্রায় একদশক আগে থেকে এ নীতিতে সামান্য নড়াচড়া হেলাদোলা শুরু হয়েছে। মিডিয়া মথিত হয়ে আমাদেরকে সেকেলে বলার সংবাদ সাধারণ্যের কানে বাজছে কিছুটা বিকৃত ও ভয়ালরূপ নিয়ে। সময় এসেছে। এর জবাব দিতে হবে। প্রতিহত করতে হবে। প্রমাণ দেখাতে হবে আমরা ফর অলটাইম মডার্ণ; সেকেলে নই। সুতরাং সংস্কার চাই। যদিও আমাদের অনেকেই সংস্কারের আনুষঙ্গিক দায় নিতে রাজি নন।

অতএব দাবি যারা তুলেছেন তাদের দাবি কতটুকু পূরণ হবে, সেটাই প্রশ্ন। হয়ত কিছুটা হবে। বেশিটাই হবে না। যদি সামাজিকতার ভাষা না বুঝে ভূগোল-বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হয়, আর ছাত্রদের উদাসীনতার প্রতি দোষ চাপানো হয়, তাতে লাভের ফল হাতে মিলবে না। তাছাড়া সংস্কার আর পরিবর্তনটা ঠিক কোথায় প্রয়োজন তা কখনো কেউ স্পষ্ট করে বলেছেন বলে মনে হয় না। আমার ধারণা সম্ভাব্য দুটি দিক বিবেচনা হতে পারে। এক. স্বীকৃতিমূলক সিলেবাস সংস্কার। দুই. তৃণমূল পর্যায়ে গর্ভনিং বডি সংস্কার।

তিন.
সংস্কারের ক্ষেত্রে উপায়-উপকরণের অভাব খানিকটা চোখে পড়ে। সে অভাব আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো। বর্তমান অবস্থাতেও উপকরণের অভাব আমাদের আছে। আর্থিক হোক বা টেকনিক্যালি হোক। দিন আনি দিন খাই গোছের হলেও অভাব আমাদের হার মানাতে পারছে না। মনোবল আছে। পারবেও না। কেননা, উপকরণ আমাদের সখা নয়। দাস মাত্র। বাইরের বিশ্বকে যতোই আমরা ইন্দ্রিয়সুখের উপকরণ করে তুলবো, ততোই ভেতরে ভেতরে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বো। একটা সীমার পরে ধনের আকাক্সক্ষা ধনীকে ক্রমেই ঠেলে দেয় সমৃদ্ধ নিঃসঙ্গতার পথে। ধনের সাধনার যেমন প্রয়োজন আছে, তেমনি বিপদও আছে। জ্ঞানের বিষয়টি তেমনি। বিপদ দু’দিক থেকে। জ্ঞানের অহমিকায় মেতে উঠে বিশ্বকে সমাজকে ভুলে যেতে বসেছি। অন্যদিকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ফলে সাধারণের করুণার দৃষ্টির সামনে ভুল মতবাদের প্রতিবাদ-প্রতিরোধে অসহায় বোধ করছি। ভেতরগত অনৈক্য তো অলিখিতই রইলো। এ কারণেই আমরা এখন তৃতীয় পক্ষ। সংখ্যালঘু এবং অনেকটা নিঃসঙ্গ। এর সমাধান খুঁজতে গিয়ে সমাজের প্রশ্ন দেখতে হয় অনভিজ্ঞ চোখে। সেই সঙ্গে অতিক্রম করতে শিক্ষাসিলেবাস সংস্কারের অপরিচিত সীমানা।

তো যাই হোক, উপকরণের ব্যাপারটি হেলায় ফেলছি না। অপরিচিত চোখে হোক, শিক্ষা সংস্কার হোক, চাই না হোক, আমাদের শিক্ষার্থীদের সামনে অন্তত উপকরণ অর্জনের পথটুকু নিষ্কন্টক হওয়া চাই। ক্যারিয়ার গঠনের জন্য চাই বিচিত্র মাধ্যম। অবারিত সুযোগ। আজকের দিনে শিশুদের পর্যন্ত ক্যারিয়ার গঠনের ইঁদুর দৌড়ের তাগিদে নাচ-গান-ছবি আঁকা শিখতে হয়। জানালার বাইরে শরতের আকাশ আর কাশফুল দেখে নষ্ট করার সময় তাদের হয় না। তাই আমাদেরও কিছু করার আছে।
উপকরণের রেশ ধরে আরো একটা কথা বলি। কওমি শিক্ষকদের কথা। শিক্ষকতার কাজ অন্য যেকোনো পেশার চাইতে জটিল ও কঠিন। অন্য যেকোনো শ্রমিক উৎপাদন করে পণ্য। আর শিক্ষকদের কাজের ফলে তৈরি হয় মানুষ। মানুষ তৈরির কারিগরদের জানতে হয় মনোবিজ্ঞান। কেননা, শিক্ষকতার কাজ যান্ত্রিকতা নয়। নিত্যনতুন অনুশীলন ও মননের কাজ। কায়িক শ্রমিক ও মানসিক শ্রমিকের মধ্যে পার্থক্য বিরাট। শিক্ষকদের শিক্ষকতার পবিত্র বৃত্তিতে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে প্রয়োজন উপকরণ হাসিলের দুশ্চিন্তা থেকে মননকে মুক্ত রাখা। অন্যকথায়, প্রয়োজন আর্থিক আনুকূল্যের পঞ্চাশ ভাগ নয়, শতভাগ নিশ্চয়তা।

আর মাদরাসা প্রতিষ্ঠাতাদের ভেবে দেখতে বিনীত নিবেদন জানাই, যদি মাদরাসা কোনোমতে গড়ে ফেললেই ‘দীনি ইলম’ তরতরিয়ে মুখস্ত হয়ে যেতো তবে তো কামারশালার সঙ্গে পাঠশালার পার্থক্য দেখতে পাই না।

গুরুদের কথা যখন এসেই গেছে, কথাটা বলেই ফেলি। সালোয়ার নাকি পাজামা, জোব্বা নাকি কোর্তা, কিস্তি নাকি পাঁচকলি, ধুতিকাপড় নাকি সূতি পপলিনÑ এই খুনসুটি আর ভাল লাগে না। এসব নিয়ে এখন মাথা ঘামানোর সময় আছে! ঐক্য, শক্তি ও সমৃদ্ধির খাতিরে অন্তত আগামী পঞ্চাশটি বছরের জন্য এসব থেকে অবকাশ চাই। আজ আমরা সময়ের সেই সন্ধিক্ষণে পৌঁছে গেছি যখন নতুনভাবে প্রশ্ন উঠে, কী চাই আমরা, কী ধরনের সমাজ কামনা করি! সমাজের ভিত্তিতে থাকবে কী ধরনের মূল্যবোধ, সেই সমাজের বৈশিষ্ট্য নির্মাণে আমাদের প্রস্তুতির মাত্রা এখন কোন স্তুরে রয়েছে?

কেননা, বিশ্বময় এক স্থিতিশীল মানবসমাজ গঠন করা আজ আবশ্যক কেবল মানুষের সভ্যতা ও মানবিকতাকে বাঁচাবার জন্যে। নির্মল দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অভিজ্ঞতার ঝুড়ি কাঁধে বয়ে আমাদেরকেও গাইতে হবে দিনবদলের গান। শিক্ষার ক্ষেত্রেও সমাজকে জড়িয়ে মধ্যমপন্থাই হবে যুগসন্ধিক্ষণে আমাদের সফল অভীষ্টের পথে একমাত্র সহায়ক। মুক্তিও বুঝি সেখানেই।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৫

আবুল হায়াত রকি বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভাল লাগল।

২৭ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:৫৭

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৩

ক্লে ডল বলেছেন:
যদি সামাজিকতার ভাষা না বুঝে ভূগোল-বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক করা হয়, আর ছাত্রদের উদাসীনতার প্রতি দোষ চাপানো হয়, তাতে লাভের ফল হাতে মিলবে না।
মুক্তি খুঁজতে সঠিক পথে পা বাড়াতে হবে, আর সঠিক পথ তৈরি করতে সংস্কারের বিকল্প নেই।

মুক্তির খোঁজে মুক্তি মিলুক আমাদের!

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:০৪

মনযূরুল হক বলেছেন: মুক্তি মিলুক আমাদের!

ধন্যবাদ....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.