নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন মিটিমিটি হাসে

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৬


বন্ধু ভাগ হয়ে যাচ্ছে, বিছানার মাঝখান দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া বসেছে, হেঁসেলে আগুন লেগে গেছে, খাবি কি?— জীবন-রুটের এই বয়ান যখন প্রথম শুনেছি, মাথা ভোঁ ভোঁ করেছে এবং সেই সময় থেকে বড় আতান্তরে পড়ে গেছি । জীবনের একটা মোহনায় এসে দাঁড়িয়েছি বলতে হবে। কোনটা সামলাবো— সংসার না বেদনা? বেদনা মানে হলো, নিজের মধ্যে, বুকের মধ্যে যে আগুন ধিকি ধিকি জ্বলে সারাক্ষণ— আমি লিখতে পারি, সুতরাং আমাকে লিখতে হবে; আমি রাজনীতি বোদ্ধা, অনেকেই আমার বুদ্ধির প্রশংসা করে, সুতরাং আমাকে ভাবতে হবে; আমি ভালো গাইতে পারি, দুয়েকটা অ্যালবামে সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠও দিয়েছি, তাই আমার গানটা ভালো করে ধরা উচিত; কিংবা থিয়েটার করছি, ছবি আঁকছি ভালো, ক্যামেরার আলো নিয়ে কাজ করে আনন্দ পাই, ডিজাইনে নতুন কিছু করে দেখানোর বারুদ ভেতরে টের পাই ইত্যাদি ইত্যাদি ।

কিন্তু দুঃখের কথা হলো, আমি, আমরা কেউ ফলিয়ে উঠতে পারি নি । সংবাদপত্রের পিছনে ঘুরে ঘুরে লেখা ছাপা হয়েছে ঢের, কিন্তু কোনো পদবী মেলে নি । দেশের অচলাবস্থা কাটাতে শত তরুণ নিয়ে কতো যে আল্পনা এঁকেছি রাজপথে, কিন্তু সত্যিকারের নেতা হওয়া হয় নি । একটা মাত্র একক অ্যালবাম বের হয়েছে বটে, এখনও দুয়েকটা চ্যানেলে ডাক পাই, এফএমে যাই, কিন্তু সত্যিকার সেলিব্রিটি হতে পরি নি । অভিনয়-ক্যামেরা-আঁকাআঁকির অনেক অর্জন-বর্জন-বিসর্জনের পরে এই পর্যায়ে আমার সামনে জীবন এসে দাঁড়িয়েছে আধখেঁচড়া মরা খেজুর গাছের মতো । আদর করতে গেলেই হাতে কাঁটার আচড় লাগে । আমার বয়স বেড়ে গেছে, বিয়ের সময় হয়েছে, করেছিও, একটা চাকরি দরকার । দেখা গেলো, এতোদিনের কোনো স্বপ্নই আমাকে পথ দেখায় নি । তারপরও একটা চাকরি আমি পেয়েছি । মাইনে অল্প, সে-নিয়ে খুব একটা ভাবনা নেই । আমার ভাবনা— আগুনটা নিভতে দেয়া যাবে না । তাই এখনও আমি অভিনয় করি, এখনও তুলি হাতে রাঙাই ক্যানভাস, এখনও শর্টফিল্মের কস্টিউম নাড়াচাড়া করি, এখনও শব্দের নৃত্য বসাই বইয়ের মলাটে যত্ন করে— বিনি পয়সায় বেগার খাটার পাটও পেরিয়ে এসেছি, অথচ জীবনভর শুনে আসছি— যে-কাজের কোনো বিনিময় নেই, সে-কাজেই আনন্দ অফুরান, অতএব, ‘এখনও’র কোনো সুরাহা আর হয় না ।

অধিকাংশ ক্রিয়েটর একটু পাগলা কিসিমের হয় বটে । একটু বোকাও হয় হয়তো । নইলে জীবনের খাদটা পার হতে পারতোই না । খাদের কাঁটাগুলোর দিকে কখনো ভালো করে তাকানোর হুঁশ ফিরে পেলে পৃথিবীটা সত্যিকার একটা খেজুর গাছ হয়েই থাকতো, কখনো মসৃণ পেলবতার ছোঁয়া পেতোই না । অথচ জীবনের একটা রুট আছে, দেনাপাওনার রুট ।

কিছু মানুষ সংসার জীবনে এসে একটা ভালো চাকরির সুযোগ খোঁজে, কিংবা যে চাকরিটাতে আছে, সেটাতেই ফাঁক-ফোকর খুঁজে আয়-উন্নতির ফন্দি করে । এটা আসলে তার জীবনের একটা স্কেপরুট । অফিস, বাসাবাড়ি, বাচ্চাকাচ্চা, বুড়োবুড়ি, সেভিংস, নিমন্ত্রণ, ইত্যকার নানা ফরমায়েশি কাজকারবারের মধ্যে ডুবে থেকে শেষ জীবনে কিছু প্রভিডেন্ট ফান্ড, সন্তানকে কোনো একটা পয়সার মেশিনে ঢুকানো, ঘরদোর পাকা করা কিংবা এ জাতীয় কিছু একটা করতে করতে হাসিমুখে ওপারের পথে হাঁটা দেয় । এভাবে জীবন থেকে পালিয়ে পালিয়ে সে গন্তব্যে পৌঁছে যায় । বাকি আল্লাহ-ভরসা ।

তবে কেউ আবার এটাকে শুধুই একটা অকেজো জীবন ভাবে । সে বলে— শুধু আল্লা-ভরসা আল্লা-ভরসা করছিস বেটা, আল্লাহ যে তোর ওপর ভরসা করেছেন, তার মান রেখেছিস? ভেতরের আগুনটা তাকে স্বস্তি দেয় না । সে ভরসার মান রাখতে চায় । সে খোঁজে— একটা ভদ্রগোছের মাইনে আছে, কিন্তু সময় অল্প দিতে হয় এমন একটা সোজা কাজ; যা পৃথিবীতে বিরল । সুতরাং সে আঁকে, গায়, লেখে প্যাশন হিসেবে, কিন্তু অফিসের এফিশিয়েন্ট হতে পারে না । ফলত: টাকাঅলাদের সাথে তার খিটিমিটি লেগেই থাকে এবং একটা অবদমিত ক্ষোভও তৈরি হয় । তার জীবনের গতি কোনদিকে যায়, জানি না । হয়তো সে একসময় আমূল বদলে যায় কাঁচা টাকার সন্ধান পেয়ে, যেমন আমরা আজকাল অনেককে আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখি; যারা সমাজে চাপাবাজ হিসেবেও স্বীকৃত । এরা স্বেচ্ছায় জীবনের সঙ্গে প্রতারণা করে । অথবা হয়তো সে একটা থেতলে থাকা সমতালের জীবন নিয়ে পড়ে থাকে; নি:সঙ্গ রাতে একা কাঁদে; পালাতে চায়, ‘কাপুরুষ’ বলে পারে না; যদিও কখনো সে আর আলোর মুখ দেখে না; কিংবা দেখে সে ঠিকই, কিন্তু গ্রহণের আলো তার ললাট চুমে না ।

আরেকদল ডেডিকেটেড মানুষ থাকে, যাদের ধ্যান-জ্ঞান শিল্প-সাহিত্য-অভিনয়-সংস্কৃতি-রাজনীতি । জীবনের আঘ্রাণ সম্ভবত তারা কিছুটা পায়, তাই জীবনের খাদে আগ্রাসী নেকড়ের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে । ফানার জগত । নিজেকে ক্ষয়ে ক্ষয়ে যারা আলো জ্বালতে চায় । এদের কেউ কেউ পোড় খেয়ে খেয়ে অঙ্গার হয়, ফুলকি হয়, কেউ হয় ভিসুভিয়াস— একটা সময়ে এমনভাবে ফেটে পড়ে, জীবদ্দশায় কিংবা মৃত্যুর পরে, যাদের তপ্ত লাভায় পরবর্তী সময়ে আবারও অজস্র নির্বুদ্ধরা সর্বনাশের স্বপ্ন দেখে । তবে এই শ্রেণির মধ্যে হারিয়ে যাওয়া লোকের সংখ্যাই বেশি ।

এ ছাড়াও বহু মানুষ, বহু জীবনের আভাস, বহু প্রাণের আলিম্পন আমাকে, আমাদের সবাইকে বেঁধে রাখে, রেখেছে । এইসবের মধ্য থেকে একটা সত্যিকারের সুন্দর জীবনের পথ, অনায়াস আরামের পথ, চিরায়ত শান্তির পথ বের করে আনা সহজ নয় । সফল জীবন-দর্শনের সারথী যারা, (যদিও আমি মনে করি, ভ্রান্তি দর্শনের নয়, ধর্মমতের নয়, মানুষের গতিপথের বৈচিত্র্যই বিভ্রান্তির মূল কারণ) তাদের জীবনও কাঁটামুক্ত ছিলো না । আশ্চর্যের কথা হলো, একটা হ্যাপি লাইফ যাপন করার পন্থা কেউই বাতলায় নি । সবার এক কথা— সংগ্রাম করো, লড়াই করো, মারো, মরো, সয়ে নাও, উঠে দাঁড়াও, খেয়ো কম, ঘুমিয়ো না— এইসব! প্রতিযোগিতা, দ্বন্দ্ব, সংঘাত ছাড়া কোনো জীবন কি আসলেই সম্ভব নয়? নির্বিবাদে নির্বিকার হয়ে থাকলে ক্ষতি কি! মানবতার ক্ষতি? আমি কি মানব নই? আমার ক্ষতিতে কোনো ক্ষতি নেই?

জীবনের এই শ্রেণিবিন্যাস ভাবতে ভাবতে আমি ভুলে যাই পরজগতে কথা, আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, পরকাল, বেহেশত, কেয়ামত! তাহলে সংগ্রাম, লড়াই, সংঘাত মরা, মারা— এসবের দরকারটা কি? আমি পৃথিবীতে পার্থিব বিষয়-আশয়ে হ্যাপি থাকবো এবং সংগ্রাম করতে হলে, তিতিক্ষার পরাকাষ্ঠা দেখাতে হলে পরজগতের জন্যে করবো, দেখাবো— এমন কি হতে পারে? পরজগতই এ-জগত, এজগতের মাধ্যমেই পরজগত— যারা বলেন, তাদের কথার অর্থ আমি আর উদ্ধার করতে পারি না । নিজের কাজটাই করতে পারি না, খোদার কাজ করবো কখন? আমাকে কী করতে হবে, কোন পথ আমাকে সুখ দেবে, আমি কোনো আলো দেখি না । আলোর সন্ধানে বেরুবার তাগিদও অনুভব করি না ভেতরে । যেমন আছি, মন্দ তো নয়! জীবনের সুরে যদিও উজ্জীবিত হই, বইয়ের পাতায় যদিও সুখ পাই, সংসারের ঘানি যদিও টেনেই চলেছি, ছবি আঁকছি, গান গাচ্ছি, অভিনয় করে চলেছি, লিখছি যা-ই ভাবছি, মানুষের ডাকে সাড়াও দিচ্ছি, কিন্তু জীবনকে ধরতে পারছি না । কেবলই মনে হয়, কেমন করে চুপিসারে আলতো করে ফসকে যাচ্ছে জীবন । আবার মনে হয়, অদূরে দাঁড়িয়ে আমায় দেখে দেখে সে মিটিমিটি হাসে । কে বলে দেবে, আমার জীবনের রুট কোনটা, আমি কোন পথে যাবো । গন্তব্য তো পরের কথা ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫৬

গোফরান চ.বি বলেছেন: জীবনের এই শ্রেণিবিন্যাস ভাবতে ভাবতে আমি ভুলে যাই পরজগতে কথা, আল্লাহ, সৃষ্টিকর্তা, পরকাল, বেহেশত, কেয়ামত! তাহলে সংগ্রাম, লড়াই, সংঘাত মরা, মারা— এসবের দরকারটা কি? আমি পৃথিবীতে পার্থিব বিষয়-আশয়ে হ্যাপি থাকবো এবং সংগ্রাম করতে হলে, তিতিক্ষার পরাকাষ্ঠা দেখাতে হলে পরজগতের জন্যে করবো, দেখাবো— এমন কি হতে পারে? পরজগতই এ-জগত, এজগতের মাধ্যমেই পরজগত— যারা বলেন, তাদের কথার অর্থ আমি আর উদ্ধার করতে পারি না । নিজের কাজটাই করতে পারি না, খোদার কাজ করবো কখন? আমাকে কী করতে হবে, কোন পথ আমাকে সুখ দেবে, আমি কোনো আলো দেখি না । আলোর সন্ধানে বেরুবার তাগিদও অনুভব করি না ভেতরে । যেমন আছি, মন্দ তো নয়! জীবনের সুরে যদিও উজ্জীবিত হই, বইয়ের পাতায় যদিও সুখ পাই, সংসারের ঘানি যদিও টেনেই চলেছি, ছবি আঁকছি, গান গাচ্ছি, অভিনয় করে চলেছি, লিখছি যা-ই ভাবছি, মানুষের ডাকে সাড়াও দিচ্ছি, কিন্তু জীবনকে ধরতে পারছি না । কেবলই মনে হয়, কেমন করে চুপিসারে আলতো করে ফসকে যাচ্ছে জীবন । আবার মনে হয়, অদূরে দাঁড়িয়ে আমায় দেখে দেখে সে মিটিমিটি হাসে । কে বলে দেবে, আমার জীবনের রুট কোনটা, আমি কোন পথে যাবো ।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৪

মনযূরুল হক বলেছেন: এতোখানি কপি করে কী বোঝাতে চাইলেন, বুঝলাম না তো...

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:১৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন।
এই শিল্প সাহিত্য ইত্যাদির জগতে অঙ্গার হতেই হয়। শখ চলে না

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৪

মনযূরুল হক বলেছেন: অঙ্গার হতে পারলে তো ধন্য.. ছাই হয়ে গেলে তখন...?

৩| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০২

সুমন কর বলেছেন: আপনার প্রতিটি লেখাই চমৎকার। এটিও ব্যতিক্রম নয়।

+।

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২৫

মনযূরুল হক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, ভাই... সব লেখায় আপনার উৎসাহব্যঞ্জক কমেন্ট পাই...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.