নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিক্ষা না দিলে কী হয়?

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৪


ধরুন, আজ থেকে আমরা ভিক্ষা দেওয়া বন্ধ করলাম । তাহলে কী হবে ?

আপনি বলবেন, কী আর হবে রিজিকের মালিক আল্লাহ । ব্যবস্থা একটা তাদের হবেই । আগে ভিক্ষা করতো, এখন না হয় চুরি করবে ?

কিন্তু সবাই কি চুরি করার ক্ষমতা রাখে? ঢাকায় যারা ভিক্ষা করে, বিরাট একটি অংশ বিকলাঙ্গ । কোটি কোটি টাকার মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে মুসলমানের সন্তানরা ভিক্ষা করে । অসহায় মানুষেরা মসজিদের জাঁকজমক দেখে আর কাতর মিনতি করে— দুইটা টাকা দেন ।

আজকাল বিলাসী বাড়ির মতো মসজিদেরও দারোয়ান আছে । সুতরাং তাদের ধাক্কা ও ধমকও আছে । এবং বড় বড় উপদেশও আছে— নবীর শিক্ষা, করিও না ভিক্ষা, মেহনত কর সবে । কিন্তু ‘অ-আম্মাস সা-ইলা ফালা তানহার’—এই শিক্ষা মশায় নিজে নিচ্ছেন না ।

তবে মধ্যবাড্ডা মিফতাহুল উলুমে থাকাকালে এক ভিক্ষুককে দেখতাম প্রতিদিন আমাদের হোস্টেল সুপারের কাছে ৫ শত টাকার একটা নোট রেখে যেতো । মাস শেষে পনেরো হাজার টাকা বাড়িতে পাঠাতো । এরা হলো, পেশাদার ভিক্ষুক । এদের ভিক্ষা না দিয়ে তাড়িয়ে দিলে কি গুনাহ হবে?

এ-জাতীয় অভিজ্ঞতা আপনারও থেকে থাকবে ।

এই শহরে ভিক্ষুকদের সিন্ডিকেটও আছে । ভিক্ষুক বানাবার তরিকা আছে । এখানে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য রাজস্ব আদায় করতে হয় । এমনকি ভিক্ষুকদের মনোরঞ্জনের আয়োজনও আছে । এদের রোখার কোনো পদ্ধতি কি আছে ?

বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে । এখানে এখন ১০০ জনের মধ্যে মাত্র ২৪.৩ জন দরিদ্র এবং ১২.৯ জন অতিদরিদ্র । যেখানে ২০০০ সালে দরিদ্র ছিলো ১০০ জনের প্রায় পঞ্চাশ জনই এবং অতিদরিদ্র ছিলো প্রায় ৩৫ জন ।

এই জরিপ আপনাকে কী বলে? আপনার কী মনে হয়, আগের থেকে ভিক্ষুকের সংখ্যা কমে গেছে? আপনার মসজিদের সামনে জুমার দিন আগে ক’জন ভিক্ষুক দেখতেন, এখন কি তারচে’ কম দেখেন? ভিক্ষুকদের কি উন্নয়নের ছোঁয়া মোটেই লাগে নি? তাহলে ভিক্ষা দিয়েই বা কী হয়?

আরও অবাক করা বিষয় হলো, দেশের সবচে’ কম দরিদ্রপ্রবণ জেলা নারায়ণগঞ্জ, যেখানে শতকরা তিনজনেরও কম দরিদ্র । অথচ নারায়ণগঞ্জে গিয়ে দেখেন, অন্য শহরের চেয়ে ভিক্ষুক কোনো অংশে কম নয় । সবচে’ দরিদ্রপ্রবণ অঞ্চল কুড়িগ্রাম, গিয়ে দেখেন, সেখানে এতো ভিক্ষুকের ভিড় নেই ।

এতো উন্নয়নেও যেহেতু ভিক্ষাবৃত্তির কোনো পরিবর্তন আনে নি, তাই বলছিলাম, যদি আপনি-আমি-আমরা ভিক্ষা দেওয়াটাই বন্ধ করে দিই, তাহলে কেমন হয়? ধরুন, প্রাথমিক পরীক্ষা হিসেবে ১ মাস বা ১ সপ্তাহ ভিক্ষা দিলাম না, তাহলে কি ভিক্ষুক জনগোষ্ঠী না খেয়ে মারা যাবে?

আমরা দিই বা কতো? ১ টাকা তো এখন আর নিতে চায় না, দিতেও সংকোচ হয় । ২ টাকা থেকে ১০ টাকা দেওয়ার মানুষ বেশি । অনেকে বিভিন্ন পালা-পার্বণে বেশি-কম দেন । এতে করে কী লক্ষ লক্ষ ভিক্ষুকের পরিবর্তন আসা সম্ভব?

হঠাৎ করেই নিউজে দেখি সরকার ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে ভিক্ষুক জরিপের জন্য । একবার শুনলাম, সরকারের সদিচ্ছায় ১১ জন হিজড়াকে চাকরি দেওয়া হয়েছে । পরে অভিযোগ উঠলো, তাদের মধ্যে অ-হিজড়াও আছে । পরীক্ষা করে দেখা গেলো, ৮ জনই হিজড়া নয় । সরকারি বরাদ্দ আসলে এমনই হয় ।

তারচে’ যদি আমরা এইভাবে ভিক্ষা না দিয়ে সেই ২ থেকে ১০ টাকা যা দিতাম, সেটা সঞ্চয় করি, ধরুন, যখনই কারও কাতর মিনতি শুনে আপনার হৃদয় গলে গেলো, কিন্তু আপনি টাকাটা তাকে না দিয়ে অন্যপকেটে রেখে দিলেন এবং বাসায় এসে সেটাকে মাটির ব্যাংকে রেখে দিলেন । তারপর একজনকে একসঙ্গে ৫ হাজার টাকা দিলেন বা ৪ জন মিলে ২০ হাজার টাকায় তাকে একটা কাজ ধরিয়ে দিলেন । কী মনে হয়, এই ফর্মুলা কাজে দেবে ?

মসজিদে ইমাম চাইলে তার জুমার সময়, নিয়মিত যেসব ভিক্ষুকরা আসে, তাদের হিসেবে করে টাকা তুলতে পারেন । মসজিদের জন্য যদি ৫ কোটি টাকা তুলতে পারেন, তাহলে তাদের জন্য কি এমন বিরাট একটা অংক তোলা কঠিন কাজ ? রোহিঙ্গাদের জন্য আমার যেভাবে অর্থ কালেক্ট করেছি, আমাদের দরিদ্র সাধারণ মানুষের জন্য সে-রকম কি আদৌ করা হয়েছে ?

ভিক্ষাবৃত্তি মুসলিম জাতিকে কতটা নীচে নামিয়েছে, ভাবা যায় না । যখন জরিপে উঠে আসে, বিশ্বের বেশিরভাগ ভিক্ষুক মুসলিম ধর্মাবলম্বী (বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কিন্তু পেশাদার নয়) এবং জনসংখ্যার বিচারে এ-দেশে শতকরা ৯০ জন মুসলিম হলেও ভিক্ষুক বিচারে শতকরা ৯৮.২ জন ভিক্ষুক মুসলিম তখন লজ্জায় মাথা কাটা যায় ।

আচ্ছা, ভিক্ষাটা না দিয়ে কোনোভাবেই কি পারা যায় না ? ভাবুন, ভিক্ষা দেওয়া আজ থেকেই বন্ধ করে দিয়ে অন্যকিছু করা যায় কি না ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:১১

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: জাকাত সিস্টেম চালু থাকলে ভিক্ষা সিস্টেম লাগতো না...

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৮

মনযূরুল হক বলেছেন: এ-ব্যাপারে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই..। কিন্তু দেশের দুর্নীতির যে অবস্থা, তাতে জাকাত সিস্টেম থাকলে জাকাতের টাকা প্রাপ্যদের আদে উসুলকারীরাই গাপ করে দিতো..

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:২৪

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: মধ্যপ্রাচ্যের কোন দেশে ভিক্ষাবৃত্তি নিষিদ্ধ।। এরা যা করে যাকাতের টাকায়।। আমাদের দেশেও এমনটাই করা উচিৎ।।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৯

মনযূরুল হক বলেছেন: আমাদের দেশে তার আগে ভিক্ষুক পুনর্বাসন জরুরি..।

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০১

নতুন বলেছেন: ভিক্ষা নেয় অলস মানুষ যারা কাজ করতে চায় না।

ভিক্ষা না দিলেই এরা কাজ করতে বাধ্য হবে।

বিকলাঙ্গ, শিশু, বয়স্ক যারা তাদের জন্য সরকার ব্যবস্হ নেবে।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৩৯

মনযূরুল হক বলেছেন: সরকার ব্যবস্থা নিলে তো ভালো..। নেয় তো না..।

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:২৫

জগতারন বলেছেন:
সুন্দর পর্যবেক্ষণ !
মুসলমান, দেশ, জাতি নিয়ে লেখকের চিন্তার জন্য লেখকের প্রতি সুভেচ্ছা জ্ঞাপন করি।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ ভোর ৬:৪০

মনযূরুল হক বলেছেন: আপনার জন্য রইলো শুভ কামনা...

৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৪

সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বিশ্লেষণমূলক পোস্ট। কেউ কেউ আবার কাজ করতে অনিহা করে, তাদের কাছে ভিক্ষা করে অর্থ উপার্জন করাটাই সহজ মনে হয়। তবে সত্যিকারের বিকলাঙ্গ এবং বয়স্ক যারা, কাজ করার সামর্থ্য নেই তাদের কথা ভিন্ন। কিছু ভিক্ষুকের আয় কিন্তু আমার-আপনার চেয়ে বেশি !!

মনে হয়, বাংলাদেশ থেকে ভিক্ষুক কখনো দূর করা যাবে না।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:২৪

মনযূরুল হক বলেছেন: বাংলাদেশের মানুষ সবকিছু ফাও পেতে ভালোবাসে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.