![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ যদিও ৮ নভেম্বর নয়, তবু এই ছবিটা আবার দেখা দরকার । একটা ছেলে ট্যাংকের বিরুদ্ধে পাথর হাতে দাঁড়িয়েছে । ছুঁড়েছেও । তারপর শহিদ হয়ে গেছে ।
সন্দেহ নেই, একটা পাথর ট্যাংক প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে না । একটু হাস্যকরই মনে হয় । তবু এটা প্রতিরোধের একটা স্টাইল ।
যেমন— গত সোমবার (১১ ডিসেম্বর) ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৫৬ জন সাংসদ ব্রাসেলসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কাছে ১২ মিলিয়ন ইউরো ফেরত চেয়েছে । এই ১২ মিলিয়ন ইউরো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ফিলিস্তিনের স্কুল-কিন্ডারগার্টেনসহ নানা স্থাপনার কাজে ব্যয় করেছিল, যা ইসরায়েলি সৈন্যরা ধ্বংস করে দিয়েছে । তাই তারা টাকাটা ইসরায়েলের কাছে ফেরত চেয়েছে । এমনকি পার্লামেন্টের সদস্যরা গত শুক্রবার ইসরায়েলি পত্রিকা হার্টেজে একটি বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছে— ‘মিস্টার নেতানিয়াহু, ব্রাসেলসে শুভাগমন, কিন্তু অনুগ্রহ করে আপনার দেনার কথা ভুলবেন না ।’
দারুণ । এটা প্রতিরোধের নতুন স্টাইল । আমার মনে হয়, এই স্টাইলটা ফারিস উদেহ-এর স্টাইলের একটা প্রতিফলন মাত্র । ফারিস ট্যাংকের সামনে পাথর হাতে দাঁড়াতে পেরেছিলো বলেই এখন পৃথিবী জানতে চাইছে যে, এই পাথরটা কেনো তার হাতে? এটা কি শিশুদের স্কুলের ছাদ ধ্বসে পড়া পাথর? না হয় শিশুর হাতে বই না হয়ে পাথর কেনো?
তবে ফারিস উদেহ-এর জন্মটা এমন ডিসেম্বরেই হয়েছিলো । ১৯৮৫ সালে । সে-হিসেবে আমার থেকে ছ’সাত মাসের বড় সে । এবং ২০০০ সালের ৮ নভেম্বর ইসরায়েলি সৈন্যরা তাকে গুলি করে না মারলে সে ৩১ বছরের একটা জোয়ান ছেলে হতো । অন্য ফিলিস্তিনি বন্ধুদের মতো তার সাথেও আমার বন্ধুত্ব হতো হয়তো । একটা নারীর সাথে তার প্রেম-পরিণয় হতে পারতো । আমার ছেলের মতো হয়তো সে-ও তার সন্তানের নাম রাখতো ওসমান ফারিস । হতে পারতো ।
জানা যায়— ফারিস গাজা সিটির জায়তুন এলাকায় মা-বাবা ও আট ভাইবোন নিয়ে থাকতো । আপনার কী মনে হয়, তাদের পরিবারের একজনও এখন বেঁচে আছেন? ২০০০ সালের পর থেকে ১৭ বছর । এর মধ্যে গুলি খেয়েছেন প্যালেস্টাইন কমান্ডার খলিল ওয়াজির (২১ এপ্রিল ১৯৮৮), গানশিপ হামলায় মারা গেছেন হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শায়খ আহমদ ইয়াসিন (২২ মার্চ ২০০৪), বিষক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত (১১ নভেম্বর ২০০৪) । ১৭ বছরে গাজার ৪ লাখ অধিবাসীর অন্তত ৫০ হাজার কি শহিদ হন নি? সুতরাং খুব হিসেব করে বলবেন, উদেহ পরিবারের কেউ কি বেঁচে আছেন?
শুনেছি— উদেহ ডানপিটে ও সাহসী কিশোর ছিলো । একবার নাকি এক ভবনের ছাদ থেকে ৮ ফিট দূরত্বের আরেকটি দোতলা ভবনের ছাদে লাফিয়ে পড়েছিলো সে । মরে নি । এমনকি যে-ট্যাংকের সামনে সেদিন সে পাথর হাতে দাঁড়িয়েছে আর এসোসিয়েটেড প্রেসের (AP) ফটোসাংবাদিক লরেন্ট রিবরস তার ছবি তুলেছে, সে-ট্যাংকটাও তাকে মারে নি । ১০ দিনে পরে ইসরায়েলি সৈন্যরা তাকে গুলি করে মেরেছে । কেনো গুলি করে মারতে হলো, এই প্রশ্নের উত্তর ইসরায়েল জানে । কেননা, ট্যাংকে পাথর পিষে ফেলা যায়, কিন্তু পাথর হাতে একটা কিশোরকে পিষে ফেলা সহজ নয় । তার চেয়ে দূর থেকে ‘আত্মরক্ষার খাতিরে গুলি করতে বাধ্য হওয়া’ সহজ ।
সে-বছর সেপ্টেম্বরে দ্বিতীয় ইন্তিফাদা শুরু হয় । জানা গেলো— উদেহ স্কুলে আসে না । হেডমাস্টার বাসায় নালিশ করলেন । বাবা প্রথমে শাসালেন । তারপর হাত পা বেঁধে ছাদে রেখে এলেন । মা চুপি চুপি গিয়ে তাকে রাতের খাবার খাওয়ালেন । কিন্তু ফারিস সুযোগ পেয়ে পালিয়ে গেলো । খুঁজতে গিয়ে মা দেখলেন সে ইন্তিফাদা মিছিলের প্রথম সারিতে । একেবারে ইসরায়েলি সেনাদের মুখোমুখী । কেনো? ১৪ বছরেই কি ছেলেটা বীর হয়ে গেছে? সে বীরত্বের বোঝেটা কী?
তার মা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন— সে টিভি ক্যামেরা দেখলে দূরে থাকতো । কারণ হয়তো টিভিতে তার বাবা তাকে দেখে ফেলবে । এমনকি তাকে বলেছি, ঠিক আছে, তুমি যদি পাথর ছুঁড়তেই চাও তাহলে আড়ালে থেকে ছোঁড়ো । তুমি কেনো একেবারে সামনে চলে যাও, যেখানে বড়রাও যায় না? ফারিস উত্তর দিয়েছে, আমি এসব ভয় পাই না ।
ওকে, বুঝলাম সে ভয় পায় না । কিন্তু সে ইন্তিফাদায় যোগ দিলো কেনো? মাতৃভূমি হানাদার মুক্ত করতে? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিলো তার? যা আজকাল হরহামেশাই আওড়ানো হয় । মাত্র ১৪ বছর বয়স । এই বয়স চেতনার না । সুকান্তের কবিতার ১৮ বছরও হয় নি তার । জানা গেছে— ১৭ বছর বয়সী তার কাজিন সাদিকে ইসরায়েলি সৈন্যরা হত্যা করে । এবং সেদিনই উদেহ সাদির খুনের বদলা নেওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছে।
যদিও উদেহ নেই ১৭ বছর হয়ে গেছে এবং ২০০০ সালের ২৯ অক্টোবর ট্যাঙ্কের সামনে থেকে উদেহের ছবি তুলে এপির সাংবাদিক বিখ্যাতও হয়েছে, কিন্তু একটা নিষ্প্রাণ পাথরকে যেভাবে প্রাণ দিয়েছে, তা বেঁচে থাকবে আরও হয়তো ১৭ শ’ বছর কিংবা আরও বহুদিন । শুধু পাথরকে নয়, অজস্র মানুষের পাথর-বিবেকেও প্রাণ এনে দিয়েছে ফারিস ।
আজ যে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ৫৬ জন সদস্য ইসরায়েলের কাছে ধ্বসের পড়া পাথরের মূল্য ফেরত চেয়েছে, এটাই ফারিস-স্টাইল । খুনের বদলা নিতে গিয়ে দেখিয়েছে সে— বদলা নেওয়ার, বদলা চাওয়ার আরও বহু রীতি আছে, যা সশস্ত্র যুদ্ধের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে । বুঝিয়েছে— বোমার আঘাতে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়ার পরও একটি পাথরকে যদি সঠিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে তা বোমার চেয়েও বুমেরাং হতে পারে ।
সূত্র ও ছবি :
১. ওয়াশিংটন রিপোর্ট অন মিডলইস্ট অ্যাফেয়ার, লিংক : http://bit.ly/2C5iZ4k
২. আন্তন লা গার্দিয়া রচিত ‘ওয়ার উইদাউট এন্ড’, পৃষ্ঠা ২৬৪
৩. ওয়াশিংটন পোস্ট, লিংক : http://wapo.st/2B4mCcR
৪. দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, লিংক : http://nyti.ms/2C3SwEm
৫. দৈনিক প্রথম আলো, লিংক : http://bit.ly/2kZeXq6
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৯
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...
সত্যের জয় হোক। মিথ্যা, জুলুম, প্রতারণা ধ্বংস হোক...
২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৪
আবু তালেব শেখ বলেছেন: ফিলিস্তিনিদের প্রতি আপনার ভালবাসা সমর্থনে ভালো লাগলো। আরো ভালো লাগলো ফারিসের নামে আপনার ছেলের নাম রেখেছেন
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩১
মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ..।
ছেলের নাম রাখার সময় ফারিস নামটা এ-কারণেই রাখতে চেয়েছিলাম.. কিন্তু আব্বা বাঁধ সেধে বললেন, ইসলামের চার খলিফার কারও নামে রাখতে । সে-হিসেবে তার পছন্দ ছিলো ‘ওসমান’ ..। আমি আর আমার বউ মিলে শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম- ওসমান ফারিস.।
ভালো থাকবেন
৩| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:২৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
পুরো ভাবনার পেছনে ভয়ংকর ভুল ধারনা রয়েছে আপনার; ৪টি বড় যুদ্ধে আরবদেশগুলির পরাজয়, ইয়াসীর আরফাতের অসফল গেরিলা যুদ্ধের পর, পাথর মেরে মরাটা হলো বেকুবী।
এ বা্চ্ছাটাকে স্কুলে রাখার দরকার ছিলো ফিলিস্তিনী সমাজের; ফিলিস্তিনীরা চিন্তা না করে, প্রতিশোধে মেতে উঠে, পুরো জাতিকে নিজভুমে রিফিউজী বানায়েছে।
আপনার ধারণাটা ভালো নয়।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৩৬
মনযূরুল হক বলেছেন: এক. এখানে আমার কোনো ভাবনা নেই এবং কোনো নিজস্ব ধারণাও নেই । কেবল যা ঘটেছে, তার বয়ান দিলাম ।
দু্ই. বাচ্চাকে কেউ পাঠায় না, বরং সবাই বাধা দেয়, সে-কথাটাও এখানে আছে ।
তিন. বেকুবী তাদের না । ইতিহাসে এ-ধরনের বেকুবীর নজির বহু । নূর হোসেন সবচে’ বড় বেকুব ছিল । ছিলো ক্ষুধিরাম । ইভেন আমাদের শাহবাগ আন্দোলনে যে স্কুলের ছেলেগুলো এসেছে, তাদেরও বিরাট ভুল হয়েছে । আর যেসব শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, তারাই ভুলেই নিহত হচ্ছে ।
যাদের সম্বল কেবল পাথর, তারা সেটাই মারে । আমরা কি তাদের হাতে ‘অন্যকিছু’ তুলে দেওয়ায় ভূমিকা রাখতে পেরেছি? নিজেদের প্রশ্ন করা দরকার ।
৪| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০২
কানিজ রিনা বলেছেন: চাঁদগাজী বড় ভুল দিয়ে হাজার হাজার
ইরাকী শিশুকে সহীদ করা হয়েছে বড়
ভুল আর মিথ্যে দিয়ে দখলদাররা আজও
দখলে লিপ্ত। রহিঙ্গাদের শিশুরা মারা পড়েছে।
অসংখ্য শিশু মা হাড়া বাবা হাড়া পুরুষ শুন্য
রহিঙ্গা নারীরা বিধোবা সবই দখল দারিত্বের
মহা সমারহ। দুর্বলরা পাথর হাতে করলেও
সন্ত্রাস।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪
মনযূরুল হক বলেছেন: দুর্বলরা পাথর হাতে করলেও সন্ত্রাস..।
ধন্যবাদ..
৫| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
@কানিজ রিনা ,
প্যালেষ্টাইন, ইরাক, আরাকানে যা ঘটছে, তাতে বাচ্চাদের জড়িত করে লাভ নেই, তারা অকালে প্রাণ হারাবে; যা করতে হয়, বয়স্কদের করতে হবে।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪০
মনযূরুল হক বলেছেন: বাচ্চাদের কেউ জড়িত করে না । কিন্তু বাচ্চারাই সবচে’ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় । তারা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেই চেষ্টা পৃথিবীর সকল মানুষই চায়.. তবু আমাদের সামনে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ দৃষ্টান্ত হয়ে আসে । এবং আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বনিম্ন বয়স ১৫ বছর করার সময় সবচেয়ে কম বয়সী বীরপ্রতীক ‘শহীদুল ইসলাম লালু’ আসেন, যিনি মাত্র ১১ বছর বয়সে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন ।
আপনার ধারণা ভালো হোক..
৬| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:২৬
মাহিরাহি বলেছেন: ইইউ যে টাকা ফেরতে চেয়েছে তার কোন লিংক আছে কি?
পোস্ট খুব ভাল লাগল। হাজার বছর তেলাপোকা বা ইদুরের মত বেচে থাকার চাইতে, একদিন মানুষের মত বেচে থাকাটা অনেক শ্রেয়।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪২
মনযূরুল হক বলেছেন: আর্টিকেলে যে তথ্যসূত্র দেওয়া আছে, তার শেষের লিংকটা প্রথম আলোর । পড়ে দেখুন..।
http://bit.ly/2kZeXq6
৭| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৫৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
এই ছেলের মৃত্যুর জন্য হামাস, পিএলও ও মুর্খ ফিলিস্তিননীরা; এই ধরণের মৃত্যু ফিলিস্তিনী মায়েদের জন্য ভয়ংকর; আপনি সেইদিকের কথা না বলে, ওর পাথর মারাকে বড় করেছেন, যেটা ভুল।
পাথর মারা সমাধান নয়, সেটাকে বড় করে দেখাও সঠিক নয়।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৮
মনযূরুল হক বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...।
৮| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১৬
স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে বিষণ্ণ হলাম।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:২০
মনযূরুল হক বলেছেন: বিষণ্ন হয়েছেন জেনে কষ্ট পেলাম । তবে প্রমথ চৌধুরী বলেছেন, সাহিত্যে যার নাম আনন্দ, তার নামই বেদনা এই টুকুই ভরসা
আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো..।
৯| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩৭
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন: ফারিসের বিদেহী আত্মার প্রতি সম্মান।
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৫
মনযূরুল হক বলেছেন: ++++++
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৮
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: অসাধারন ফারিসি উপস্থাপনা!
হৃদয়কে নাড়িয়ে দেয়া।
সত্যের জয় হোক। মিথ্যা, জুলুম, প্রতারণা ধ্বংস হোক।