নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুরু হলো একটি নতুন অধ্যায়

স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি , স্বপ্ন দেখাতে ভালোবাসি । জীবন টা হোক স্বপ্ন ময়....।

মেজবা_স্বপ্ন

আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি

মেজবা_স্বপ্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা তুমি ...............

২৬ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:০৬

গরম চা । ফুরফুর করে ধোঁয়া বের হচ্ছে । চাতে চুমুক দেয়ার আগে সিগারেট ধরাতে গিয়ে প্রচণ্ড উত্তেজনায় আসাদের হাত কাঁপছে । গতকাল রাতে পাকিস্থানি আর্মি এদেশের ঘুমন্ত মানুষদের উপর বর্বর হামলা চালিয়েছে । কুকুরের বাচ্চারা ছোট বাচ্চাদের পর্যন্ত বুটের তলায় থেতলে মেরেছে ।আসাদ আর ফাহাদ , সাইফের বড় ভাইয়ের বিয়েতে রাজশাহী এসেছে । গতরাতে বিয়ের কাজে সবাই ব্যস্ত ছিল বলে ঢাকার ঘটনা কেউ জানতে পারেনি । সকালে চা এর দোকানে রেডিওতে গতকাল রাতের নৃশংসতার খবর শুনে সবাই স্তব্দ হয়ে গেছে । বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে দিছে । এখন শুধু প্রতিশোধ নেয়ার পালা ।এদেশকে জারজদের হাত থেকে মুক্ত করতে হবে । ঢাকাতে মিলিদের বাসায় নিচ তলায় একরুমে ভাড়া থাকে ওরা তিনবন্ধু (আসাদ ,সাইফ আর ফাহাদ ) । আসাদ ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ার সময় মিলিকে পড়াত ।মিলি এখন ঢাকা ভার্সিটিতে ফিজিক্সে পড়ে । আর আসাদ



পাশ করে চাকরি খুজছে । মিলিকে



এখন আর না পড়ালেও মিলির সাথে ওর জীবন জড়িয়ে গেছে । এব্যপারে মিলির বাবা না জানলেও মা কিছুটা জানে । তাই কিছুটা দয়া পরবশ হয়ে মিলিদের বাসায় এক রুমে থাকতে দেয়া হয়েছে তাকে ।



মিলির বাবা ঢাকা ভার্সিটির প্রফেসর । মিলির



মা পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছে চাকরি পাওয়ার আগ পর্যন্ত মিলির বাবাকে কিছুই বলতে পারবেনা ।



মিলির কথা মনে আসতেই অজানা আশঙ্কা ঘিরে ধরলো তাকে । মিলি কেমন আছে এখন ? সেই রাতেই ফাহাদের সাথে ঢাকা রওনা দিল সে । ঢাকা এসে বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো ওর । রাস্তায়



জায়গায় জায়গায় ছোপ ছোপ রক্তের দাগ । বাতাসে লাশের পচা গন্ধ । মোড়ে মোড়ে আর্মির টহল । খুব সাবধানে মিলিদের বাসায় গেল ওরা । মিলিদের স্টিলের গেটে স্পষ্ট লাথির দাগ । মুহুর্মুহু লাথির কারনে চ্যপ্টা হয়ে গেছে



গেটটা । দোতলায় উঠে কড়া নাড়তে লাগলো অনেক ক্ষন যাবৎ । কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়া শব্দ নেই । কিছুক্ষন পর মিলির মা বের হয়ে আসলেন । চোখে তার কেমন যেন নিস্প্রভ দৃষ্টি আর ফোলাফোলা ।



আসাদকে দেখেই গলাধরে



অঝোরে কেঁদে ফেললন ।



-বাবা ! তোমার চাঁচাকে ওরা ধরে নিয়ে গেছে চোখ বেঁধে



আসাদ কিছুক্ষন চুপ হয়ে রইলো । আসাদের চোখে আগুন ।



-মিলি কোথায় ?



-তোমার চাচা আগেই কিছুটা আচ করতে পেরেছিল দেশের অবস্থা ভালো না । তাই মিলি আর ওর বড় ভাইকে মুন্সিগঞ্জ পাঠিয়ে দিছে ওদের দাদুবাড়ি ।



-আপনি কেন গেলেন না ?



-তোমার চাচাকে ছেড়ে আমি যেতে চাইনি বাবা ।তোমার চাচাকে জেভাবে ওরা চোখ বেঁধে নিয়ে গেল । আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম । কিছু করতে পারিনি ।



কথাগুলো বলেই আবার ডুকরে কাঁদতে লাগলেন ।







-চাচি আমাদের সাথে মুন্সিগঞ্জ চলেন ।



-না বাবা ! আমি যাবো না । তোমার চাচা যাবার আগে বলেছিল ফিরে আসবে । আমি এখানেই থাকবো ।



আসাদ অনেক জোরাজুরি করেও মিলির মাকে রাজি করাতে পারলো না । কিন্তু মিলির দাদুবাড়ির ঠিকানা নিয়ে মুন্সিগঞ্জ গেল ।







আসাদ মিলির দাদুবাড়ি গিয়ে মিলিকে পুকুর ঘাটে পেল । মিলি ওর চাচাতো ভাইবোনদের সাথে বসে গল্প করছিলো । আসাদকে দেখে দাঁড়িয়ে যায় ।



-আপনি এখানে ? বাবা মা কোথায় ?



-চাঁচাচাচি ভালো আছেন । এখন ঢাকার অবস্থা তো ভালো না তাই তোমাকে এখানেই থাকতে বলছে । পরে তারা এসে তোমাকে নিয়ে যাবে







আসাদ এখন বরিশাল যাচ্ছে । তার মায়ের সাথে দেখা করতে হবে । সময় বেশি নেই । হয়তো এরপর দেশের প্রয়োজনে তার ডাক আসতে পারে । গ্রামের বাড়ি যাবার সময় মিলির কথা বারবার মনে পড়ছে



মেয়েটার হাসিটা এতো সুন্দর কেন ? আসার সময় মেয়েটার হাত ধরে অনেক্ষন পুকুর পাড়ে দুজন চুপ করে বসে ছিল । দুজনের শ্বাস প্রশ্বাসের মধ্যে অনেক অব্যক্ত ভাষা লুকিয়ে ছিল । মেয়েটার চিবুক ধরে আসাদ



বলেছিল , এই মাটির কোন অপমান আমরা সহ্য করবো না । পাগলি কোন কথা বলছিল না , শুধু পুতুলের মত অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল । চলে আসার ঠিক আগের মুহূর্তে বলল



-মাঝে মাঝে চিঠি দিয়েন



কথাটি বলে দৌড়ে চলে গেল । মিলি এখন ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদবে ।







একসপ্তাহ মায়ের কাছে থাকতে থাকতে মনে হলো , সারাটা জীবন এই সহজ সরল মহিলাটার পাশে কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হতো না । নিজে নুন আর মরিচ দিয়ে নির্দ্বিধায় ভাত খাচ্ছে আর ছেলের প্লেটে



রুই মাছের মাথাটা ঠিকই দিয়েছে । সে অন্য কোন কিছু খাবে না ।পরের বেলায় ছেলে খাবে কি !



মায়ের সাথে বিদায় নিয়ে ঢাকায় চলে এলো আসাদ । পার্টির মুসা ভাই এর নির্দেশে আসাদ তার বন্ধুদের নিয়ে ঢাকার বিভিন্ন অলিতে গলিতে স্বাধীনতার পোস্টার টাঙ্গানো , দেয়াল লিখনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ।



মাঝে মাঝে জয় বাংলার ঝটিকা



মিছিলে বের হচ্ছে । পার্টির কিছু কিছু জুনিওর ছেলের সাথে আসাদের অনেক ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে । সবে মাত্র ভার্সিটিতে উঠেছে কিন্তু এক একটা বারুদ । সবার চোখে একটাই স্বপ্ন " স্বাধীন বাংলাদেশ "



তানিম , আশিক ,মাহির ,মুন্তাসির , দোলন ,শুভ্র ,গোলাপ এক একটা আগুন । পার্টির মুসা ভাই অনেক ত্যাগী আর ভালো মানুষ । দেশের জন্য যেকোনো মুহূর্তে তিনি জীবন দিতে প্রস্তুত ।







১৭ ই এপ্রিল স্বাধীন সরকার গঠনের পর থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু হয় । ওরা পার্টির নির্দেশে সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিল এর আন্ডারে খুলনা দৌলতপুর চলে আসে ।



এদিকে পাকবাহিনী , কমান্ডার হায়াত খানের নেতৃত্বে খুলনার শিরোমনি, আটরা, গিলেতলা, তেলিগাতি, দৌলতপুর ও শোলগাতিয়া এলাকার একাধিক স্থানে ক্যাম্প গড়ে তোলে । সেখান থেকে



তারা বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে একেকদিন নির্যাতন চালাতো । গ্রামের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দিত । অনেক অভাগী কিশোরী , যুবতী দের ধরে নিয়ে এসে ওদের ক্যম্পে দিনের পর দিন



অত্যাচার চালাতো । মুসা ভাইয়ের নির্দেশে মুক্তিবাহিনীও বিভিন্ন স্থানে গোপনে ওদের উপর অতর্কিত হামলা চালাতো । একদিন ফাহাদের হাঁটুতে গুলি লাগে । প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয় । তবুও গুলি টা বের করার



পর যন্ত্রণা অনেক কমে আসে । তবে ফাহাদকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে । ও এখন ওদের গোপন আস্তানা পাহাড়া দেয় । অপারেশন শেষে ওরা সবাই সারাদিনের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করে , রেডিও শোনে । কখনো দেশের



সর্বশেষ খবর কখনো বা স্বাধীনতার গান । গান গুলো শোনার সময় সবার চোখ উজ্জ্বল হয়ে যায় । কখনো বা দূর হতে নতুন করে আহত কারো গোঙ্গানি শোনা যায় । কখনো কখনো কেউ একা একা চিৎকার করে কাঁদে ।



কখনো সমস্বরে সবাই এক সাথে গেয়ে ওঠে স্বাধীনতার গান । মাঝে মাঝে আগুন সামনে রেখে বিড়ি দিয়ে জুয়া খেলা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত । রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় কারো মায়ের ,কারো বউ , কারো বা প্রিয়ার



লেখা শেষ চিঠি টা পড়ে ঘুমায় । আসাদকে মিলি শেষ চিঠিটা দিয়েছিল গত মাসে । এরপর আর কোন চিঠি আসেনি । আজ নিয়ে সেই চিঠিটা একশত বার পড়া হল ,







"প্রিয় টেবুর বাবা"



আপনাকে টেবুর বাবা ডাকি বলে কিছু মনে করেন নাতো ? মনে আছে , আপনি যখন আমাকে পড়াতেন তখন পড়া না পারলে আমাকে "টেবুর মা " বলে ক্ষেপাতেন । একসময় প্রচণ্ড জিদ উঠতো জানেন ? কিন্তু এখন



নিজেকে টেবুর মা ভাবতে অনেক ভালো লাগে । আমাদের টেবু স্বাধীন বাংলায় বাস করবে । সে যখন ইচ্ছে তখন জয় বাংলা বলে চিৎকার করতে পারবে । আচ্ছা স্বাধীন বাংলার সূর্যটা কি অনেক বেশি লাল হবে ?



জানেন আমার বড় চাচা শান্তি কমিটিতে জোগ দিয়েছে । এদেশের নিরীহ মানুষদের পাকিস্থানি জল্লাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে সে নাকি ইসলামের খেদমত করছে । আচ্ছা ওদের থেকে কি এদেশের মানুষ ইসলামকে



কম ভালবাসে ? আমি তো দেখেছি এদেশের গরীব অন্নহীন কৃষক একটা গামছা বিছিয়ে ক্ষেতের মধ্যে নামাজ পড়ে । যাইহোক , আমি চাচার বাসা থেকে পালিয়ে একটা মুক্তি বাহিনীর সাথে



জোগ দিয়েছি । আমার চাচাতো ভাই নিজেই ঐ মুক্তি বাহিনীর লিডার । আমি অবশ্য যুদ্ধে যাই না । যারা যুদ্ধে আহত হয়ে আসে তাদের সেবা করি । আপনার সাথে কবে দেখা হবে ? আপনার হাত ধরে কবে আবার পুকুর ঘাটে



চুপ করে বসে থাকবো ? আপনি চিঠি দিতে এতো দেরী করেন কেন ? আমার চিঠি পাবার সাথে সাথে আমাকে চিঠি পাঠাবেন । আপনার চিঠির প্রত্যাশায় ......।



ইতি



"টেবুর মা "







এরপর ছোট ভাইয়ের কচি হাতের লেখায় চিঠিটা পড়ে



" ভাইয়া !



আম্মা অনেক অসুস্থ । তোমারে খালি দেখতে চায় । বাসায় একটু ও খাওন নাই । তুমি তো টাকাও পাঠাও না । আমার কিছু লাগবেনা । আম্মার ওষুধের টাকাটা কি একটু পাঠানো যায় ?



ইতি



"মায়াজ '







চিঠি দুটো পড়ে চোখে জল ধরে রাখতে পারে না আসাদ । মুসা ভাইকে বলেছে " তিনদিন ছুটি লাগবে । মায়ের অবস্থা ভালো না । দেখতে যেতে হবে । মুসা ভাই বলেন ,



-আচ্ছা ঠিক আছে । তয় সাবধানে যাইয়ো । দেশের অবস্থা ভালো না একদম ।ওরা পাগলা কুত্তার মতো হইয়া গেছে ।



-আচ্ছা ভাই কিছু হবে না । আমরা যাবো আর আসবো ।



খুলনা থেকে বরিশাল যাবার রাস্তা তেমন ভালো না । একটু পর পর নদী । প্রতিটি নদীর পাশে আর্মিদের মিনি ক্যাম্প । ওদের দুজনের সাথে অস্র । কিন্তু সবজী বিক্রেতা সেজে কোনমতে



ওদের চোখ ফাকি দিয়ে যাচ্ছে । তবে পিরোজপুর আসতেই কিছু রাজাকার এর সামনে পড়লো ওরা ।







-ঐ ! তোগো মাথায় কি ঝাপির মইদ্দে ?



-সবজী



-দেহি কি সবজী ব্যাচো ? মুক্তি নাহি আবার তোরা ,হায় ?



-জী না । আমরা সবজী বিক্রি করি



-চেহারা দেইককা তো মনে হয় না । দেহি বাইর কর সব সবজী ।







আসাদ আর সাইফ একে অপরের চোখের দিকে আড় চোখে তাকায় । ওরা ঝাপি মাথা থেকে নামিয়ে অস্র বের করে সাথে সাথে ফায়ার করে । চারজন রাজাকার একসাথে খতম হয়ে যায় ।



কাছাকাছি আরও কিছু রাজাকার ছিল । ওরা মুক্তি মুক্তি বলে চিৎকার করে পাশেই পিরোজপুর জিলা স্কুলে আর্মিদের ক্যম্পে দৌড়ে গেলো । সাইফ আর আসাদ প্রানপনে দৌড়াচ্ছে । আসাদ বলছে , যদি



মরে যাই টাকা গুলো মাকে দিয়ে আসিস । সাইফ বলে " কি সব হাবিজাবি বলিস । কিছু হবে না ।আমরা একসাথেই চাচির লগে দ্যখা করমু । পিছনে গুলির শব্দ শোনা যায় ।পাকিস্থানিরা কাছেই



চলে এসেছে । দুজন একসাথে সামনে থাকা একটা ডোবার মধ্যে ঝাপ দেয় । পাকিস্থানিরা এসে ঘিরে ধরে ওদেরকে । তখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে । সবাই টর্চ লাইট দিয়ে ডোবার মধ্যে আলো ফেলছে ।



রাজাকার রা চিৎকার করে গালি দিচ্ছে



-বাইরাইয়া আয় । শালা শুয়ারের বাচ্চারা । দেশের শত্রু । ইসলামের শত্রু । পলাইয়্যা আছস ক্যান । মুক্তির বাচ্চারা ।







ওদের সবার হাতে সরু বাঁশ । ডোবার মধ্যে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছে । আসাদ বুঝে গেছে ধরা পড়তে ওদের আর বেশি সময় লাগবে না ।



তাই বুদ্ধি করে হলেও অন্তত একজনকে বাঁচতে হবে । আসাদ ডোবা থেকে দুহাত উঁচু করে আত্মসমর্পণের ভঙ্গীতে দাঁড়িয়ে যায় ।ডোবার মধ্য থেকেই সাইফ বলে ওঠে "এই মেজবা ! কি করলি এইটা ? "



আসাদ সাইফের দিকে না তাকিয়েই ফিসফিস করে বলে " চুপ ! কোনো কথা বলবি না । মায়ের সাথে দেখা করিস । যুদ্ধ যদি শেষ হয় তাইলে মুন্সিগঞ্জ যাইয়া মিলির খবর নিস । আল্লাহ হাফেয দোস্ত ।







পাকবাহিনী আর তার রাজাকার বাহিনী বারবার জিজ্ঞেস করছে তার সাথে অন্য মানুষটি কোথায় । আসাদ বলেছে ,



দৌড়ানোর সময় দুজন দু রাস্তায় চলে গেছে । এরপর পাকবাহিনী আসাদের দুচোখ বেঁধে ক্যাম্পে নিয়ে আসে । একটা অন্ধকার রুমে তাকে আটকে রাখা হয়েছে । আসাদকে জিজ্ঞেস করা হয় ,



তারা কোথায় যাচ্ছিল ? কোথা থেকে এসেছে ? আসাদ আর কোন কিছুর জবাব দেয় নি ।



আসাদকে বলা হয় , বল! পাকিস্থান জিন্দাবাদ !



আসাদ বলে, জয় বাংলা !







আসাদের মুখ বরাবর বুটের প্রথম লাথিটি মারা হলো । এক লাথিতেই তার ঠোঁট থেঁতলে গেলো । মুখ থেকে রক্তমাখা লালা ঝরছে । ঠোঁট নাড়তেই



দুটো দাঁত কংক্রিটের মেঝেতে পড়লো । সে " মা ... মাগো " বলে চিৎকার করে উঠলো । পঞ্চাস ঊর্ধ্ব এক পাকিস্থানি কমান্ডার আসাদেরর শার্ট ছিঁড়ে ফেললো । তার মুখে ধরানো সিগারেট টা আসাদের বুকে চেপে ধরলো ।



মাংস পোড়ার উৎকট গন্ধ রুমের বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো । এবার পেট বরাবর আরও দু তিনটি সজোরে লাথি মারা হলো । ব্যাথায় ধনুকের মতো বাকিয়ে উঠলো আসাদের শরীর । যে হাত দিয়ে সে পোস্টার টাঙাতো ,



যে হাত উঁচিয়ে মিছিল করতো , যে হাতে লিফ্লেট বিলাতো সেই হাত লোহার হাতুর দিয়ে ভেঙে ফেলা হলো । যে আঙুলে



মায়ের স্পর্শ ছিল ,ভায়ের স্পর্শ ছিল , যে আঙ্গুলে প্রিয়ার চিবুকের তিলের স্পর্শ ছিল ,যে আঙ্গুল ছুয়েছে সাম্য মন্ত্রে দীক্ষিত সাথীর হাত ,স্বপ্নবান হাতিয়ার , বাটখারা দিয়ে ভেঙে ফেলা হলো সেই দশটি জীবন্ত আঙুল ।



লোহার সাড়াশি দিয়ে তুলে ফেলা হলো প্রতিটি আঙ্গুলের নির্দোষ নখ । ছেলেটা এখন মৃত । তার শরীর ঘিরে কৃষ্ণ চূড়ার মতো ছড়িয়ে রয়েছে তাজা লাল রক্ত । তার একখানা হাত পড়ে আছে এদেশেরই মাটির উপর ,



এদেশের মানচিত্রের উপর । আর সে হাত থেকে ঝরে পড়ছে রক্তের লাল লাভা ......







"যে মাটির চির মমতা আমার অঙ্গে মাখা



যার নদী জল ফুলে ফলে মোর স্বপ্ন আঁকা



যে দেশের নীল অম্বরে মন মেলছে পাখা



সারাটি জনম সে মাটির দানে বক্ষ ভরি







যে নারীর মধু প্রেমেতে আমার রক্ত দোলে



যে শিশুর মায়া হাসিতে আমার বিশ্ব ভোলে



যে গৃহ কপোত সুখ স্বর্গের দুয়ার খোলে



সে শান্তির শিবির বাঁচাতে শপথ করি







মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি



মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি "



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.