![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি
জীবনটা ত্যনা ত্যনা করার জন্য একটা উরনচণ্ডী বয়ফ্রেন্ডই যথেষ্ট । একটা বয়ফ্রেন্ড সবসময় কেয়ার করবে ।একটা আদর্শ বয়ফ্রেন্ড মিনিমাম একবার হলেও রাতের বেলায় ফোন দিয়ে সারাটা দিন ক্যমন কাটলো
জিজ্ঞেস করবে ।কিন্তু আমার এমন কপাল নেই । আসলে অনেক আগে আরকিমিডস তার বাথটাব থেকে ইউরেকা বলে চিৎকার করে বের হয়ে এসে দুটি কথা বলেছিল । প্রথমটা সবাই জানে । দ্বিতীয়টা নীমুই আমাকে
বলেছে। কথাটা হল " নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারলে মলম দিয়া লাভ নাই " । জানিনা কথাটা সত্য কিনা । তবুও নীমুর সাথে রিলেশনের পর কথাটা হাড়ে হাড়ে বুঝতেছি । তবে শুরু করা যাক জলজ্যন্ত পেইন এর
সাথে
আমার পরিচয় পর্ব । ভার্সিটিতে আমি একটা অর্গানাইজেশনের সাথে যুক্ত আছি । সেটা হচ্ছে সেইভ এ ফ্যমিলি । আমরা দুস্থ একটা ফ্যমিলিকে টার্গেট করে তাদের আয়ের উৎস তৈরি করি । তবে
মাঝে মাঝে এতিম শিশু কিশোরদের ও কর্মসংস্থান এর ব্যবস্থা করি । কিছুদিন আগে আমরা একটা
বিধবা মহিলাকে ড্রাইভিং শিখিয়ে সি এন জী কিনে দিয়েছি । তার দুটি ছেলে মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি । যাই হোক , অর্গানাইজেশনের কাজ শেষে বাসায় আসতে অনেক দেরি হয়ে যায় । ফ্রেন্ড রুপক আমাকে
মেইন
রোড পর্যন্ত পৌঁছে দেয় । এরপর মাত্র মিনিট পাচেক এর পথ আমি রিকশাতে একাই আসতে পারবো বলে ও আর আসে না । কিন্তু ভাবির দোকান নামের একটা ভয়ানক জায়গাতে আমাকে কিছু ছিন্তাইকারি রা ধরে ।
আমি এসব ব্যপারে তেমন ভয় না পেলেও আমাদের অর্গানাইজেশনের কিছু টাকা আমার কাছে ছিল বলে খুব টেনশনে ছিলাম । হঠাৎ করে বলা নেই কওয়া নেই নীল পাঞ্জাবি পরিহিত দেখতে কিছুটা নাদুস নুদুস চশ্মা পড়া
উদাস
টাইপের একটা ছেলে এসে এক ছিন্তাই কারির কলার চেপে কষে থাপ্পর লাগালো ।আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখলাম হাতে রিভালবার থাকা সত্তেও ছিন্তাই কারি দুইটা সমানে থাপ্পর খেতে লাগলো ।
কিছুক্ষন পর ছিনতাই কারি দুজন ছেলেটার পা ধরে ক্ষমা
চেয়ে
দৌড়ে পালিয়ে গেলো । এরপর ছেলেটা আমার দিকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো "ক্যামন আছো নিলা ?" যে মানুষটাকে আমি জীবনেও দেখিনি সেই মানুষটা যখন আমার নাম ধরে ঐতিহাসিক হাসি দিয়ে
চলে গেলো আমি সত্যি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না । এরপর মনে মনে আমি সবসময় সেই অদ্ভুত মানুষটাকে খুজতে লাগলাম । সেদিন অর্গানাইজেশনের কাজে কমলাপুর ষ্টেশনে গেছিলাম আমরা । চারটা টোকাইকে
নিয়ে আমরা একটা প্লান করেছি । আমরা চারটা রেস্টুরেন্টের মালিকের সাথে যোগাযোগ করেছি ।তারা ওদেরকে রান্না শিখাবে । তারপর সেখানে সহযোগী বাবুরচি হিসেবে কাজ দেবে । সেইখানে গিয়ে দেখলাম সেই নীল
পাঞ্জাবি পরা লোকটা বসে ওদের সাথে বিরানি খাচ্ছে । সবার হাতে বিরানির প্যাকেট । আমরা টোকাইদেরকে জিজ্ঞেস করলাম বিরানি কে দিয়েছে । ওরা সবাই একযোগে বলল , নীমু ভাই । আমি আবার লোকটার দিকে
তাকালাম । মনের সুখে দাঁত দিয়ে মুরগীর হাড় থেকে মাংস ছিঁড়ছে । আমি লোকটার কাছে গিয়ে বললাম ,
"আপনার সাথে কিছুক্ষন কথা বলতে পারি ? "
লোকটা আমার দিকে তাকালো প্রথমবারের মত । তারপর বিরানির প্যাকেটে থাকা অর্ধেক ডিমটা ধরে আমাকে বলল "নিলা , এই ডিমটা খাও । "
আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না সে কি বলতেছে । জীবনে এমন অদ্ভুত মানুষ কখনো দেখিনি । প্রথম পরিচয়ে ডিম খেতে বলে ! তাও নিজে অর্ধেক খেয়ে রাখছে আগে !
যাই হোক । মাথা গরম করলে চলবে না । যেভাবেই হোক লোকটার রহস্য উদ্ঘাটন করতে হবে । এমন হতে পারে সে কোন পুলিশের সোর্স ।আমার ব্যপারে আগে থেকেই সবকিছু জানে ।আমাকে জাস্ট ভরকে দিতে
চাইছে । আমি বললাম ,
"নো থ্যঙ্কস । আপনি এত প্যাকেট বিরানির টাকা কোথায় পেয়েছেন ? "
"আমার এক ভক্ত দিয়ে গেছে "
"আপনার ভক্ত মানে ? "
"মানে উনি আমাকে মানেন । ওনার কোন সমস্যা হলে আমার উছিলায় দূর হয়ে যায় "
"আপনি কি পীর ফকির নাকি ? "
"জী সেইরকম ই কিছু একটা "
" আমার একটা সমস্যা আছে । আপনি সেটা দূর করে দিতে পারবেন ? "
"এখনি নাকি আজকের মধ্যে ? "
"আজকের মধ্যে সমাধান করে দিলেই হবে "
"আচ্ছা "
"আপনার মোবাইল নম্বর আছে ? "
"হম আছে । কিন্তু আমি কোনদিন কল দিতে পারবো না । ইচ্ছে হলে আপনি দেবেন । "
"আচ্ছা ঠিক আছে । "
আমি সেদিন রাতে বাসায় এসে লোকটার কথা ভাবতেছি । হঠাৎ একটা আননউন নম্বর থেকে কল আসলো । কল ধরেই বুঝতে পারলাম কে । যে ছেলেটা আমাকে গত এক বছর যাবৎ নতুন নতুন সিম থেকে ফোন
দিয়ে ডিস্ট্রাব করে যাচ্ছে তার ফোন । আমি ঝাড়ি দিতে যাবো ঠিক তখন ছেলেটি কান্না শুরু করে দিলো । সে আমার কাছে ক্ষমা চাইলো ! আর কোনদিন আমাকে ফোন দিয়ে ডিস্ট্রাব করবে না বলে দিল । এরপর
সত্যি সে আর কোনদিন ফোন করেনি । আমাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরিক্ষা চলছিল বলে লোকটাকে আর ফোন করা হয়নি । আমার পরিক্ষা শেষ হতে এক মাস সময় লাগলো ।
এরপর একদিন বিকেল বেলায় লোকটাকে ফোন দিলাম
"কেমন আছেন ? "
"ও নিলা ! এই তো ভালো আছি । "
কিন্তু কেন জানি মনে হচ্ছিল লোকটা জ্বরে কাপছে ।
"আপনি অসুস্থ ? "
"হম "
হঠাৎ করে আমার মাথায় পাগলামি চাপলো ।লোকটাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করলো ।
"আপনি এখন কোথায় ? "
"সংসদ ভবনের পিছনের একটা রোডে মিনিকে নিয়ে বসে আছি "
"মিনি কে ? "
"আমার বন্ধু "
"আচ্ছা ঠিক আছে ।আপনি থাকেন আমি আসছি "
আমি ফোন কেটে দিলাম । ঠিক এক ঘন্টা পর দেখলাম লোকটা সেই নীল পাঞ্জাবি পড়ে ভ্যপ্সা গরমের মধ্যে গায়ে চাদর দিয়ে বসে আছে । লোকটার পাশে খুব ছোট একটা বিড়াল ছানা ।
লোকটা হাত দিয়ে মাথায় আদর করে দিচ্ছে ।আমি লোকটার সামনে গিয়ে সরাসরি বললাম
"চাদরটা সরান । এই গরমে চাদর গায়ে রাখলে ঘামিয়ে আরও বেশী অসুস্থ হয়ে পড়বেন "
লোকটা হাসি দিল । এই প্রথম কোন পুরুষের হাসি দেখে আমার বুকের ভেতর ধাক্কা খেলাম । মনের অজান্তেই লোকটার কপালে হাত দিলাম । গরমে আমার হাত পুড়ে যাচ্ছিল ।লোকটার কমপক্ষে একশ চার ডিগ্রী জ্বর হবে ।
"আমার সাথে চলেন "
"ডাক্তারের কাছে যাবো না "
"একটা কথাও বলবেন না "
তখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছিল । ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে লোকটার হাতে ধরিয়ে দিলাম । লোকটা আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষন ।তারপর আমার হাতে ওষুধগুলো দিয়ে বলল , এই রাস্তার শেষ
মাথায় একটা বৃদ্ধ বসে বসে ভিক্ষা করছে । তার তিনদিন যাবৎ অনেক জ্বর । তাকে ওষুধ গুলো দিয়ে বাসায় চলে যান । লোকটা এই কথা বলেই অন্যদিকে হাটা দিল ।রাস্তার মোড়ে সত্যি একটা বৃদ্ধ লোককে দেখলাম
জ্বরের ঘোরে কাতরাচ্ছে । বৃদ্ধ লোকটাকে ওষুধগুলো দিয়ে বাসায় এসে সারারাত কান্না করলাম । আমি এই হতাচ্ছাড়াকে লোকটাকে ভালোবেসে ফেলেছি ।
©somewhere in net ltd.