নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

।। ।। তমাল আর সুমির পরিণয় ।। ।। - সম্পূর্ণ গল্প

৩১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭



হঠাৎ নাকে এসে সিগারেটের গন্ধ এসে ঠেকলো । সুমি ভৎ করে বমি করে দিলো । ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে একটা সুন্দরী মেয়ে বমি করছে, এটা দেখতে নিঃসন্দেহে ভালো লাগার কথা না । লাগছেও না । তমাল অবশ্য এসবের জন্য একেবারেই রেডি ছিল না । সুমির ঠিক মুখোমুখি জানালার সিটে বসে সেও বাইরে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ । সুমি বমি শুরু করতেই তমাল এগিয়ে এসে সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো । প্রায় মিনিট খানেক বমি করার পর সুমির বমিপর্ব শেষ হলো । তমাল আবার নিজের সিটে গিয়ে বসলো ।

সুমির অনেক দুর্বল লাগছে । সে তমালের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে পানির বোতলটা দিতে বললো । পানির বোতলটা তমালের পায়ের কাছেই ছিল । তমাল সুমিকে দিলো । সুমি পানি খেয়ে সিটে হেলান দিয়েই চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো । তমাল তাকিয়ে আছে সুমির দিকে । একদৃষ্টিতে তাকানো যাকে বলে । সুমির বমিকাণ্ডের জন্য পাশের সিটে বসে থাকা দুইজন লোক উঠে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে । তাই তমালের এরকম লজ্জাহীন দৃষ্টি কারও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । তমাল আর সুমির নতুন বিয়ে হয়েছে । মাত্র দুই মাসের মত হয়েছে । না, লাভ ম্যারেজ না, এরেঞ্জড মেরেজ । তমাল যখন সুমির বাসায় সুমিকে দেখতে যায়, সেটা ছিল তার চতুর্থ কোন মেয়েকে দেখতে যাওয়া । বাবা ব্যস্ত ছিল বলে তমালের সাথে সুমিদের বাসাতে যায়নি । তমাল, তমালের মা আর তমালের ছোট মামা, এই তিনজনই । বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে সুমি, তমালের চেয়ে বছর সাতেক ছোট । তমাল যেখানে একটা বেসরকারী কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার সেখানে সুমি কেবল অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে । তমালের চতুর্থবার হলেও সুমির জন্য প্রথম ছেলে দেখা ।

সুমি যখন মাথায় ঘোমটা দিয়ে চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো, তমাল তখন ঘরের সাজগোজ দেখায় ব্যস্ত । সুমি ঘরে ঢুকলেও তমাল টেরই পেলো না । একটু পর মায়ের গুঁতা খেয়ে সুমির দিকে চোখ পড়লো তমালের । ও মা, এ কি !! এ মানুষ, নাকি পরী ? এই মেয়ে কি তার মত উজ্জ্বল শ্যামলা, ক্যাবলাকান্ত কাউকে বিয়ে করতে রাজী হবে ? মোটেও না । নিজের সাথেই ১০০০০ টাকার বাজী ধরলো তমাল, যে এই মেয়ে তাকে কিছুতেই বিয়ে করবে না । বাজীতে জিতলে ইচ্ছামত এক মাস খাওয়া-দাওয়া করবে, চরম অনিয়ম করে আর বাজীতে হারলে, ১০০০০ টাকা এতিমখানায় দান করবে ।

ঐদিন তমাল শুধু সুমির দিকে তাকিয়েই বাকী সময়টা পার করলো । কে নাস্তা করলো, কে চা খেলো, কে কাকে কি বললো, এগুলোর কিছুই তমালের কানে ঢুকেনি । মেয়ে দেখে তৎক্ষণাৎ কিছুই বললো না তমালের মা । এই মেয়ে যে তার নিজের ছেলের মন জুড়ে বসে পড়েছে, এটা কি আর মায়ের চোখ এড়ায় !! দুই-একদিন পর সিদ্ধান্ত জানাবে বলে যখন সবাই উঠে যেতে চাইলো, ঠিক তখনই তড়াক করে তমাল উঠে দাড়িয়ে নির্লজ্জহীনভাবে দাড়িয়ে সবার সামনেই বললো, মেয়ে আর মেয়ে পক্ষের কোন আপত্তি না থাকলে আমারও কোন আপত্তি নেই । তমালের এহেন কথায় আশেপাশে উপস্থিত সবার মুখ একরকম হাঁ হয়ে গেলো । তমালের মা তো লজ্জায় ছেলের হাত চেপে ধরলো । এই প্রথমবার সুমি তমালের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উল্টো ঘুরে ভিতরে চলে গেলো । তমালের তখন প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছিল, সেও পিছন পিছন দৌড় মারে কিন্তু আশেপাশের সকলের চোখ তখন তার দিকে । হঠাৎ আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কথা যে বলা উচিৎ হয়নি, তখনই কেবল বুঝতে পারলো তমাল ।

একটু পর মায়ের দিকে তাকিয়ে করুণ দৃষ্টি দিয়ে বুঝালো, যেন তাকে রক্ষা করা হয় । যত বড় অপরাধই হোক না কেন, মা তো । তাই সে যাত্রায় তমালের মা-ই বললো, হ্যাঁ, আমারও মেয়ে পছন্দ হয়েছে । সমস্যা নেই, আমরা পরশুদিন এসে আংটি পড়িয়ে যাবো, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে । সুমির বাবা তৎক্ষণাৎ বললো, না, কিসের আপত্তি !! আমরাও রাজী । সুমির বাবার কাছে সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে অবশেষে তমাল যেন প্রাণ ফিরে পেলো ।

হঠাৎ কর্কশ আওয়াজে ট্রেন ব্রেক কষায়, কল্পনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো তমাল । আরেকটি স্টেশন ধরতে চলেছে ট্রেনটি । সুমি এখনও চোখ বন্ধ করে আছে, সম্ভবত ঘুমাচ্ছে । তমাল আর সুমি হানিমুনে যাচ্ছে । প্রথমে ঢাকা থেকে ট্রেনে করে সিলেট, সেখানে একদিন এরপর প্লেনে করে কক্সবাজার । দুইদিন কক্সবাজার কাটিয়ে এরপর সেন্টমার্টিন । সেখানেও তিনদিনের মত থেকে ফিরতি পথ ধরা হবে । তমাল অবশ্য সিলেট পর্যন্তও প্লেনে যেতে চেয়েছিল কিন্তু সুমির অনুরোধেই এই ট্রেন যাত্রা । হানিমুনে দেশের বাইরে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল তমালের কিন্তু অফিস থেকে মাত্র একসপ্তাহের ছুটিই পেয়েছে সে । তাছাড়া সুমির ভার্সিটিতেও ক্লাস মিস যাচ্ছে । সবকিছু ভেবেই দেশের ভিতরেই হানিমুনের প্ল্যান করা হয়েছে । ট্রেন পুরোপুরি থেমে গেলো স্টেশনে এসে । কোন স্টেশন, নাম দেখার জন্য ট্রেনের বাইরে তাকানোর উদ্যত হতেই সুমির কাশির আওয়াজ শুনলো তমাল । ভালো করে নামটা দেখতেও পেলো না, আবার মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে পানির বোতলটা সুমির দিকে দিলো । সুমি পানির বোতলটা নিয়ে প্রথমে মুখে কিছুক্ষণ ছিটিয়ে এরপর পানি খেলো ।

তমালের কেন জানি খুব হাসি পাচ্ছে । সুমির এই সমস্যাটার কথা তার জানা ছিল না, তাছাড়া সুমিও তাকে তেমন কিছু বলেনি আগে । হঠাৎ তমাল ভাবলো, সুমির প্রতি একটু রাগ দেখাতে হবে । সারাক্ষন প্রেম দেখালে পরবর্তীতে এই মেয়ে মাথায় চড়ে বসবে, তখন হবে আরেক জ্বালা । সেই কপট রাগ ভাব নিয়েই তমাল সুমির দিকে তাকালো । সুমি তমালের এই দৃষ্টির সাথে পরিচিত নয় । সুমি ভিতরে ভিতরে একটু ভয় পেয়ে গেলো ।

- এই মেয়ে, তোমার এমন বমি করার স্বভাব আছে, বলোনি কেন ?

তমালের মুখ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে সুমি আমতা আমতা করতে লাগলো ।

- ইয়ে মানে, ইয়ে মানে...

সুমির এমন আচরণ দেখে তমালের আরও হাসি পেলো । কিন্তু এমন রাগ রাগ অবস্থা থেকে হঠাৎ হেসে দিলে, নতুন বউ আবার তাকে পাগল ভাবতে পারে । তাই তমাল অনেক কষ্টে হাসি চেপে রাখলো । তবু সে সেই কপট রাগ দেখিয়ে অভিনয় চালিয়ে যেতে লাগলো,

- কি ব্যাপার, কথা বলছো না কেন ?
- (সুমি নিচু গলায় মাথা নিচু করেই বললো) এরকম হয় না তো, এই কারণেই বলিনি ।

ইশ, তমালের খুব মায়া লাগছে এখন এই মেয়েটার জন্য । তার মনে প্রচণ্ড ইচ্ছে হতে লাগলো, সুমিকে এখনই বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে, আরে, এ কোন ব্যাপার না । এরকম তো হতেই পারে । আমি আছি না ...... !!! কিন্তু এমনটা বলে ফেললে, সে যে অভিনয় করছে, সেটা ধরা পড়ে যাবে । তাই অনেক কষ্টেই নিজের ইচ্ছেটা দমন করলো সে ।

- হয় না !!?? তো একটু আগে কি হলো ?
- না, মানে, হঠাৎ সিগারেটের গন্ধ আসলো তো নাকে, এই জন্যই হয়তো । আমি আবার সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না ।
- ইশ !! এসেছে কোন মহারানী !!! উনার জন্য একা একটা ট্রেনের বগি ম্যানেজ করতে হবে, এরপর সেখানে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করে সুন্দর গন্ধ সৃষ্টি করতে হবে, কারণ মহারানী আরাম করবেন !! তাই না ?

তমালের এই কথাগুলো সত্যি সত্যি সুমির লেগে গেলো । তার হঠাৎ প্রচণ্ড কান্না পেয়ে গেলো । নতুন একটা মানুষ, যার জন্য চিরচেনা নিজের বাড়ি, নিজের বাবা-মা, ভাই-বোন, আত্মীয়স্বজন সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে চলে এসেছে, সেই মানুষটা কিনা তাকে শাসন করছে, ভাবতেই চোখ দিয়ে পানি দিয়ে চলে এলো সুমির । সুমির চোখে পানি দেখে তমাল ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো । এ কি !! তার অভিনয় তো আনন্দের বদলে আরও হিতে বিপরীত হয়ে গেছে, এখন উপায় ?

সুমিকে কাঁদতে দেখা নিঃসন্দেহে তমালের জন্য খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার আর সাথে সাথে লজ্জাজনকও । আশেপাশে কেউ আবার দেখছে কিনা এটা দেখার জন্য তমাল আশেপাশে তাকাতেই দেখলো, তাদের ঠিক ডান পাশে মায়ের সাথে এক চার-পাঁচ বছরের একটা ছোট্ট মেয়ে বসে আছে । মা ঘুমিয়ে আছে আর মেয়ে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে । তমাল ছোট্ট মেয়েটির দিকে তাকিয়ে একটু খানি শুকনো হাসি দিলো কিন্তু মেয়েটির কোন ভাবলেশ হলো না । ওদিকে সুমির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে তো পড়ছেই । তমাল কিছু বুঝে উঠতে না পেরে পকেটে হাত দিয়ে রুমাল বের করলো । কোন বিখ্যাত একটা উক্তি নাকি এরকম যে, ছেলেদের পকেটে রুমাল থাকেই মেয়েদের চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য । তমাল হাত বাড়িয়ে রুমাল সুমির দিকে এগিয়ে দিলো । সুমি সেটা দেখেও না দেখার ভান করলো । তমাল বুঝে গেছে, সুমি শুধু কষ্টই পাইনি, একটু রাগও হয়েছে । এই সেরেছে !! নতুন বউয়ের রাগ, সে তো সাংঘাতিক ব্যাপার । তমাল অনেকক্ষণ ধরে রুমাল ধরে থাকার পর সুমির নেওয়ার আগ্রহ না দেখে আবার সেটা ভাজ করে পকেটে রেখে দিলো ।

হ্যাঁ, ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, সাথে সুমির চোখ দিয়ে পানি পড়াও বন্ধ হয়েছে । চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সুমি একটা কথাও বলেনি, এমনকি তমালের দিকে তাকায়নি পর্যন্ত । তমাল বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছে । সামান্য একটু অভিনয়, একটু আনন্দের জন্য যে এরকম খেসারত দিতে হবে, সেটা আগে বুঝতে পারলে, কখনই সে অভিনয়টুকু করতো না । ওদিকে ট্রেন ছাড়ার মিনিট পাঁচেক পর তাদের পাশে বসে থাকা লোক দুইজন আবার নিজেদের সিটে এসে বসলো । একজন তমালের পাশে আর একজন সুমির পাশে, মুখোমুখি । ঠিক যেমনটা তমাল আর সুমি মুখোমুখি বসে আছে । এই দুইজন লোক চলে আসায়, আদতে তমালের সুমির সাথে কথা বলার চেষ্ঠাটুকু দমে গেলো । উপয়ান্তর না দেখে তমালও নিজের সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো । তাহলে আবার ফ্ল্যাশব্যাকে যাওয়া যাক...

সুমির বাবার কাছ থেকে সম্মতিসুচক উত্তর পাওয়ার পর মা আর ছোট মামার সাথে বাড়ি চলে এলো তমাল । বাড়িতে এসেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিলো সে । এরপর সোজা মোবাইলে হেডফোন লাগিয়ে হাই সাউন্ড দিয়ে কানে দিয়েই নাচ শুরু তমালের । সে এমন নাচ, যার কোন নির্দিষ্ট মুভমেন্ট নেই । যেমনটা ইচ্ছা, অনেকটা জংলীদের মত । প্রায় আধাঘণ্টা নাচার পর ক্লান্ত হয়েই বিছানায় শুয়েই ঘুমিয়ে গেলো তমাল । সকালে ঘুম থেকে উঠেই হাতের কাছে মোবাইল খুঁজতে লাগলো তমাল । অনেকক্ষণ হাতড়ানোর পর মোবাইল পেয়ে গেলো সে । মোবাইল হাতে নিয়ে সময় দেখেই তড়াক করে লাফ দিয়ে একেবারে খাটে বসে গেলো সে । ও মা, ঘড়িতে তো দুপুর দেড়টার মত বাজে । গতকাল ছিল বৃহস্পতিবার । গতকাল যেহেতু সন্ধ্যার দিকে সুমিদের বাসায় গিয়েছিল তারা, সেখান থেকে খাওয়া-দাওয়া করে আসায় রাতে কিছু খাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি আর । কিন্তু আজ তো শুক্রবার !! তার মানে জুম্মার দিন । শিট !! এই ঘোড়ার ডিমের ঘুমের কারণে তো জুম্মার নামাজই মিস হয়ে গেলো তার । ধুর !! যাই হোক, আফসোস নিয়েই ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো তমাল ।

দরজা লাগিয়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিল তমাল, সকালের দিকে তমালের মা অনেকক্ষণ দরজা ধাক্কা দিয়েও ছেলের ঘুম ভাঙ্গাতে পারেনি । তার উদ্দেশ্য ছিল, সুমিকে নিয়ে তমালের সাথে কথা বলা । মায়ের উপদেশ, আর কি । বলা নেই, কওয়া নেই, হঠাৎ সুন্দরী মতন একটা মেয়েকে দেখে এত লাফানোর কিছুই নেই । এমনও তো হতে পারে, সেই মেয়েই হয়ে গেলো এ বাড়িতে অশান্তি সৃষ্টি করার কারণ । কিন্তু ছেলের ঘুম না ভাঙ্গায় এমন গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো পরেই বলা লাগবে, ভেবেই আবার নিজের ঘরে চলে গিয়েছিল মিসেস আসমা আনোয়ার, মানে তমালের মা ।

১০০০০ টাকা !! ইয়া আল্লাহ্‌, সে তো অনেক টাকা । এতিমখানায় দিতেই হবে, কোন উপায় নেই । হঠাৎ স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তব জগতে এসে আছড়ে পড়লো তমাল । ১০০০০ টাকার বাজী তো নিজের লাভেই ধরেছিল সে । নিজের প্রতি নিজের অনিয়ম, সেটার জন্যও শরীরের অনুমতি আবশ্যক । সেই অনুমতি সহজে পাওয়ার জন্য বাজী । কিন্তু সে যে বাজীতে হেরে যাবে, আর ওরকম একটা সুন্দরী মেয়েই যে তার ভাগ্যে থাকতে পারে, সেটা কি বাপের জনমেও ভেবেছিল !!? এখন তো মনে হচ্ছে ১০০০০ টাকার বদলে ১০০০ টাকা বললে ভালো হতো । সারা মাসের বেতনের এক চতুর্থাংশই তো চলে যাবে তাহলে । যাই হোক, মুসলমানের এক জবান, এখন দিতে তো হবেই । ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে রুমে আসতেই হঠাৎ এই ভাবনা চেপে ধরল তমালকে । ভাবতে ভাবতেই সুমির চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো তার । ভেসে উঠতেই আবার মনটা চাঙ্গা হয়ে গেলো । আচ্ছা, এখন পর্যন্ত যা হয়েছে, সত্যি তো ? স্বপ্নের জগতে নেই তো সে ? হঠাৎ তমালের মনে হলো, ধুর, মেয়েটির সাথে যোগাযোগের কোন রাস্তাই তো সে করে আসেনি । না মোবাইল নাম্বার, না ফেসবুক আইডি । তাহলে এখন কি করবে সে ? অবশ্য মেয়েটির সাথে তো এক মিনিটের জন্যও আলাদা করে কিছুই বলা হয়নি তার । তাহলে মোবাইল নাম্বার কিংবা ফেসবুক আইডিই বা নেবে কিভাবে সে !!

দরজা খুলে রুম থেকে বেরুতে বেরুতেই ২টা বেজে গেলো । ইতিমধ্যে বাবা আর ছোট ভাইটা বাইরে থেকে জুম্মার নামাজ পড়ে চলেও এসেছে । তমালদের বাসায় একটা নিয়ম চলে, আর সেটি হচ্ছে সপ্তাহের কোনদিন সম্ভব না হলেও, কমপক্ষে শুক্রবার দিনটা বাড়ির সকলে একসাথে খাবার খায় । সকালে, দুপুরে এবং রাতে - তিনবেলাতেই । দেরী করে ঘুম থেকে ওঠার কারণে সকালের খাবার তো মিস হয়েই গেছে তমালের । বাবা না জানি কি বলে, সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই উপর থেকে নিচে নামলো তমাল । কনট্রাক্টর বাবার বড় ছেলে তমালের রুম ২ তলায় । বাসাটা ২ তলা । এমন ভাবে তৈরি যে, সিঁড়ি একেবারে বিল্ডিঙয়ের ঠিক মাঝে । ২য় তলায় মোট ৪ রুম । এক রুমে তমাল থাকে, এক রুমে তাদের বাবা-মা, এক রুমে তমালের ছোট ভাই তাসিন আর একটা গেস্ট রুম । নিচ তলায় ডাইনিং । খাবার টেবিলটা ডাইনিং - এ । তমাল নিচে নেমে দেখল ইতিমধ্যে তার বাবা আর তাসিন খাবার টেবিলে বসে আছে । তমালকে লক্ষ্য করে তাসিন দুষ্টু হাসি দিলো । অনার্সে নতুন ভর্তি হওয়া এই ছোটভাইটা বেশ দুষ্টু হয়েছে, তমাল মনে মনে বলতে লাগলো । তমাল টেবিলে বসা মাত্রই বাবার দিকে দৃষ্টি গেলো । বাবাকে দেখে মনে হলো, তিনি যেন রেগে আছেন । তমালের মা হাই স্কুলের বাংলার শিক্ষিকা । সপ্তাহের এই একটা দিন তিনিও সময় পান পরিবারের সবার সাথে একসাথে খাওয়ার কিন্তু তিনি খান সবার পরে । খাবার পরিবেশন করার পর । অবশ্য খেতে খেতে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো নিতে তিনিও সাহায্য করেন সেসময় । তমাল টেবিলে বসেই লক্ষ্য করলো, মা রান্নাঘর থেকে খাবারগুলো টেবিলে নিয়ে আসছেন । তমাল বাবার দিকে লক্ষ্য করলো, আনমনে মোবাইল টিপছেন তিনি । হঠাৎ মোবাইল রেখে দিয়ে দুইবার কাশি দিলেন আনোয়ার সাহেব, মানে তমালের বাবা । এই দুইবার কাশি দেওয়ার অর্থ হচ্ছে, তিনি এইবার কথা শুরু করবেন । প্রায় সময়ই তিনি এই কাজটা করেন, তাই পরিবারের সবাই এই ব্যাপারটা জানে ।

তমালের দিকে লক্ষ্য করে আনোয়ার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন...

- মেয়ে কেমন দেখলি ?
- কেন, মা কিছু বলেনি ?
- তোর মা কিছু বলেছে কি বলেনি, সেটা বাদ দে । তুই নিজে মেয়ে কেমন দেখলি ?
- ভালো তো ।
- কেমন ভালো ?
- কেমন ভালো মানে ?
- তুই ১০ এর মধ্যে কত নাম্বার দিবি মেয়েটিকে ?
- ৭ ।
- মাত্র ?
- কেন, বাবা, তুমি কি আশা করেছিলে ,আমি আরও বেশি দেবো ?
- হুম, সেটাই আশা করেছিলাম । তোর মা তো বললো, তুই নাকি মেয়ে দেখে লাফালাফি শুরু করে দিয়েছিলি সেখানে ?

বাবার মুখ থেকে এই কথা শোনা মাত্র তমাল তার মায়ের দিলে তাকালো । মিসেস আসমা আনোয়ার মুখে তখন হাসি । বাবা-ছেলের কথোপকথন তিনি খুব উপভোগ করছেন, বুঝাই যাচ্ছে ।

বাবার প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দেওয়া যায়, সেই চিন্তা করা শুরু করতেই বাবার দিকে তাকিয়ে তমাল দেখতে পেলো বাবার চেহারার রুঢ় ভাবটা সরে গিয়ে এখন বেশ হালকা ভাব, যেন এতক্ষণ তিনি বড় ছেলের সাথে মজা করছিলেন । বাবার এরকম চেহারা দেখে তমালও বেশ রিলাক্সড হলো । এরপর খাওয়ার টেবিলে আর তেমন কথাই হলো না । শুধু আনোয়ার সাহেব তাসিনের পড়াশুনার খোঁজখবর নিলেন, এই যা । লাঞ্চ শেষ করে তমাল আবার নিজের রুমের দিকে গেলো । খাটে বসেই মোবাইল হাতে নিয়ে প্রথম সে তার বন্ধু এবং কলিগ রুম্মানকে ফোন করলো । রুম্মান তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু, অবশ্য দুইজন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টের । তমাল যে মেয়ে দেখতে যাবে সেই খবরটা রুম্মান জানতো । রুম্মান তমালকে অনেক করে ধরেছিল যে মেয়ে দেখার সময় সেও যাবে কিন্তু তমাল সেটা চায়নি । অবিবাহিত বন্ধুদের এমন কিছুতে সাথে নিয়ে না যাওয়াটাই মঙ্গল । যাই হোক, বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর রুম্মান ফোন ধরলো ।

- হ্যালো রুম্মান, দোস্ত কি খবর ?
- আরে মামা, তোমার খবর বলো ? মেয়ে পছন্দ হয়েছে ?
- হুম, এবারের যাত্রায় পছন্দ হয়েছে ।
- ওহ, কংগ্রাচুলেশন । তা সানাই বাজছে কবে ?
- দেখি, বললেই তো হয় না । মেয়েটার ভার্সিটিতে সামনেই সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা, আর আমাদের অফিসের বড় কনসাইনমেন্টের কথা তো তুই জানিসই । অফিস থেকে ছুটি চাইলেও তো এখন ছুটি গ্রান্ট হবে না । তাই এই বছরের লাস্টে ছাড়া তো পসিবল না ।
- তার মানে, মামা, লং টার্ম লাভ লাইফ শুরু হবে তোমার, তাই না ?
- তা বলতে পারিস বটে । জীবনে তো আর কাউকে পটাতে পারলাম না, এখন বিয়ের আগে হবু বউকেই না হয় প্রেমিকা বানালাম । তাও তাতে যদি মেয়েটির সম্মতি পাওয়া যায় তাহলেই, নয়তো সব চিন্তা বাদ । একেবারে বিয়ের চিন্তা ।
- আরে, যাবে, যাব,এ সব মেয়েরাও এরকমই চায় । যাই হোক, মেয়ের নামটাই তো বললি না এখনও ?
- সুমি । সওরোজ মুজাফফার সুমি ।
- ওরে, বাবা, নামটাই তো অস্থির, তাহলে মেয়েটা তো আরও অস্থির হবে । তুই কিন্তু কালকে অফিসে এসেই আমাদের মেয়ের ছবি দেখাবি ।
- আরে অবশ্যই অবশ্যই, তবে শর্ত আছে কিন্তু...
- এ্যা, কি শর্ত আবার ?
- নজর দিতে পারবি না একেবারেই ।

তমালের এই কথা বলা মাত্রই রুম্মান হো হো করে হাসিতে ফেটে পড়তে লাগলো, সাথে তমালও যোগ দিলো । দুই বন্ধু মিলে হাসতে হাসতেই কথোপকথন শেষ করলো, তমাল কল কেটে দিলো ।

ফোন কেটে দিতেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো তমাল । শোয়া মাত্রই সুমির চেহারা ভেসে উঠলো তমালের চোখের সামনে । আসলেই মেয়েটা অনেক সুন্দর । আচ্ছা, শেষপর্যন্ত এই বিয়ে হবে তো !! মেয়েটা আবার বেকে বসবে না তো !! দেখা গেলো, একদিন ওদের বাসা থেকে ফোন এসে সব কিছু ভেস্তে গেলো । আর সাথে সাথে ভেঙে গেলো তমালের স্বপ্নও ।

কিছুক্ষণ এভাবেই চিন্তা করতে করতে ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে এলো তমালের । ঘুম থেকে উঠতে উঠতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো । সন্ধ্যা ৬ টা । আজকে সারাটা দিন ঘুমের মধ্যেই কেটে যাচ্ছে তমালের । আচ্ছা, মানুষ কি ঘোরের মধ্যে পড়ে গেলে খালি ঘুমায় ? নাকি ঘুমাতে খুব ইচ্ছে করে ? ঘোরই তো, প্রেমের ঘোর । ফ্রেশ হয়ে মোবাইল হাতে নিলো তমাল, নেট প্যাকেজ অন করে ফেসবুকে ঢুকলো । ফেসবুকে ঢুকে নোটিফিকেশন চেক করলো, এরপর হঠাৎ কি মনে হলো সার্চবক্সে গিয়ে সার্চ করলো, সওরোজ মুজাফফার সুমি লিখে । এই নামে বেশ কয়েকটা রেজাল্ট আছে । তমাল স্ক্রল করে করে দেখতে লাগলো । কিন্তু সুমির চেহারা সম্বলিত ফেসবুক আইডির সন্ধান পেলো না । এরপর আবার সার্চবক্সে এত বড় নাম কেটে শুধু সুমি লিখে সার্চ দিলো । তাও একই অবস্থা, কোনরকমেই খুঁজে পেলো না সে সুমিকে । বাধ্য হয়েই মোবাইলের নেট প্যাকেজ অফ করে মোবাইল রেখে দিলো পাশে ।

হঠাৎ বিকট আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলো তমালের । ট্রেনটি সম্ভবত কোন ব্রিজের উপরে উঠেছে, হ্যাঁ ঠিক তাই । ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে সহসাই ফ্ল্যাশব্যাক থেকে বাস্তবে ফিরে এলো তমাল । চোখ খুলতেই তমাল দেখল সুমি জানালা দিয়ে মাথা বের করে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে । তার মানে হচ্ছে, তমালের ঘুম ভাঙ্গার অনেক আগেই সুমি জেগে গেছে । আর তমালকে একেবারেই না দেখে বাইরের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মেয়েটা । এই কথা ভাবতেই তমাল একটু মুচকি হাসি দিয়েই পায়ের কাছের পানির বোতলটা হাতে নিয়ে সিট থেকে উঠে ট্রেনের দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো । পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে চোখেমুখে পানির ছিটা দিয়ে কোনরকমে ফ্রেশ হলো তমাল । এরপর পানির বোতলটা পাশে রেখে ট্রেনের দরজা দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো তমাল ।

আশেপাশে অনেকেই বসে আছে । অনেকেই সিটে না বসে এখানে দাড়িয়ে আছে । তমাল সিগারেট খায় না, তবে খেলে এখন একটা সিগারেট ধরাতে পারলে খুব ভালো হতো । বেশ একটা ফিলিংস পাওয়া যেতো । খেয়ে দেখবে নাকি একটা, মনে মনে ভাবনা আসলো তমালের । তবে পরক্ষনেই আবার ভাবল, না থাক । সামান্য সময়ের ফিলিংসের জন্য এরকম বিধ্বংসী একটা নেশায় না যাওয়াই ভালো । ট্রেনের দরজার কাছে দাড়িয়ে তাদের সিটটা দেখা যায় । তমাল দূর থেকে সুমিকে দেখতে পাচ্ছে । মেয়েটার চোখেমুখে একরকম সরলতা আছে, মায়া আছে, মাধুর্য আছে, এই কারণেই যে কেউই এই মেয়েটার প্রেমে পড়বে । কঠিনভাবে পড়বে, এমন পড়া যে আর উঠতেই পারবে না । কতক্ষণ দাড়িয়ে ছিল তমাল ঠিক নেই, হঠাৎ তমাল খেয়াল করলো সুমিও তার দিকে তাকিয়ে আছে । তমাল কোনরকমে সাহস সঞ্চার করে সুমিকে ইশারা করে তার কাছে আসতে বললো । তমাল ভেবেছিল সুমি যেহেতু তার সাথে রাগ করে আছে, তাই সুমি মোটেও আসবে না বরং এরকম ইশারা করায় রাগ করে আরও মুখ ঘুরিয়ে ফেলবে । কিন্তু তমালকে অবাক করে দিয়ে, সুমি নিজের সিট ছেড়ে তমালের কাছে গিয়ে দাঁড়ালো । শুধু দাঁড়ালোই না, একটু পর তমালের হাত ধরে দাড়িয়ে রইলো । তমালের চোখেমুখে তখন বিস্ময় । এই মেয়েটাকে মিনিটে মিনিটে অচেনা লাগছে তমালের ।

কিছুক্ষণ নিরবতা থাকার পর তমাল সুমির দিকে তাকিয়ে প্রথম বললো,

- একটা কথা বলবো ?
- (সুমি এতক্ষণ বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিল, তমালের কথা শুনে তমালের দিকে তাকালো সুমি । তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু ভেবে নিয়ে সুমি জবাব দিলো) হুম, বলেন ।
তাদের বিয়ের মাত্র দুইমাস হওয়াতে এখনও সম্বোধন তমালের প্রতি সুমির 'আপনি'-ই রয়ে গেছে ।
- আমার উপর তোমার রাগ কি এখনও আছে ?
- (তমালের কথা শুনে সুমি বেশ অবাক হলো, এমনটাই মনে হলো তমালের) রাগ !! কখন করলাম ?
- মানে কি !! রাগ করোনি ?
- না তো , রাগ করবো কেন ?

সুমির মুখ থেকে এমন কথা শোনার পর তমাল আশ্বস্ত হলো । তাহলে যদি মেয়েটি এতক্ষণ রাগ না করে থাকে, তাহলে তার সাথে কথা বলেনি কেন, এটা ভেবে আরেকটু অবাক হলো তমাল । তবু সুমির কাছে তার এই অবাক হওয়ার ভাবটুকু গোপন করে কথা চালিয়ে গেলো তমাল ।

- আরেকটা কথা বলবো ?
- (তমালের মুখ থেকে বারবার কথা বলার অনুমতি চাওয়াতে এবার সুমি একটু বিরক্ত হলো বলে মনে হলো) আপনার কথা আপনি বলবেন, আমার কাছে অনুমতি চাওয়ার কি আছে, আজব তো ।
- না, যদি তুমি রাগ করো, এই জন্য ।
- না, আমি রাগ করবো না, আপনার অবশ্যই আমার সাথে সব ধরনের কথা বলার পূর্ণ স্বাধীনতা আছে । সেটাকেই বিয়ে বলে, তাই না ?
- আচ্ছা, ঠিক আছে । তোমার খারাপ লাগছে না তো ?
- না ।
- একেবারেই না ?
- ওহ, বললাম তো, না লাগছে না ।
- সিলেট গিয়েছিলে কোনদিন ?
- না যাইনি ।
- কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন ?
- কক্সবাজার গিয়েছিলাম ছোটবেলায় একবার কিন্তু সেন্টমার্টিন যাওয়া হয়নি ।

একবার হলেও যে জায়গাগুলোতে জীবনে যাওয়া হয়, সেখানে পরবর্তীবার গেলে আগ্রহ প্রথমবারের মত থাকে না । আনন্দও সেরকম থাকে না । যাক, সুমির না যাওয়া জায়গাগুলোতে সুমিকে নিয়ে যেতে পেরে তমাল মনে মনে একটু খুশি হলো । যাওয়া জায়গায় গেলে সেই আনন্দটুকু নাও পাওয়া যেতো । একটু পর আবার সেই নীরবতা । তমালকে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলতে না শুনে, এবার সুমিই নীরবতা ভাঙ্গলো ।

- এবার আপনাকে একটা কথা বলি ?
- (সুমির মুখ থেকে এই অনুমতি চাওয়া শুনেই তমাল হাসিতে ফেটে পড়লো) কে যেন একটু আগে স্বাধীনতার কথা বলেছিল !!
তমালের মুখ থেকে এরকম কথা শুনে সুমিও মুখে হাসি ফুটলো ।
- আচ্ছা বলছি । তখন যে আপনি আমাকে আপনাকে আগে থেকে আমার বদভ্যাসটার কথা বলিনি বলে বকছিলেন, আপনি কি সত্যি সত্যি রাগ করেছেন যে আমি আপনাকে বলিনি আগে থেকে ?
- আরে না, আমি তো শুধু মজা করছিলাম ।
- কি !! আপনি মজা করছিলেন ? আর ওদিকে আমার অবস্থা তো টাইট । আমি তো আরও ভাবলাম, ভুল করে ফেলেছি আপনাকে না বলে ।

সুমির এই কথা বলা মাত্রই তমাল আর সুমি দুইজনই একসাথে হাসতে লাগলো । বেশ খানিকক্ষন হাসার পর সুমিই প্রস্তাব করলো, সিটে গিয়ে বসার জন্য । সুমির প্রস্তার শুনে তমাল সুমির সাথে সিটে এসে বসলো । সিটে বসার পর সুমি তার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটি আপেল বের করলো, বের করেই তমালের দিকে বললো, নিন, খান । তমাল আপেলটি নিয়েই কামড় বসালো । কিছুক্ষণ পর সুমি তমালকে বললো,

- আচ্ছা, আপনার মনে আছে, আপনি আমার ভার্সিটিতে গিয়ে কি ধরনের সিন ক্রিয়েট করেছিলেন ? শুধুমাত্র আমার কন্ট্রাক্ট নাম্বারটা পাওয়ার জন্য ।

ওহ, হ্যাঁ, তাই তো । সুমির কথা শুনে তমাল আবারও ফ্ল্যাশব্যাকে চলে গেলো ।

ফেসবুকে সুমিকে খুঁজে না পাওয়াতে সুমির সাথে যোগাযোগের তৃষ্ণা যেন আরও পেয়ে গেলো তমালের । কিছু একটা তো তাকে করতেই হবে । পরদিন অফিসে যেতেই অফিসের কয়েকজন কলিগ ঘিরে ধরলো তমালকে । তাদের প্রতিনিধি হিসেবে রুম্মানই কথা বলতে লাগলো ।

- (সবার সামনে সিরিয়াস হবার ভান করে) কি খবর তমাল সাহেব ? মেয়ে কেমন দেখলেন ?
- (তমালও রুম্মানের এই অভিনয়টুকু ধরতে পারলো, তবে সেও তো অভিনয়ে কম যায় না) হুম, খারাপ না । আপনাদের সবার দাওয়াত হয়তো চূড়ান্ত হওয়ার পর্যায়ে, ইনশাআল্লাহ্‌ ।
- আলহামদুলিল্লাহ্‌, তবে কবে মিলছে সেই দাওয়াত ?
- খুব শীঘ্রই, দোয়া রাখবেন । আর এখন দয়া করে, আমাকে একটু কাজ করতে দিন, ধন্যবাদ ।

তমাল এটা বলা মাত্রই ভিড় কমে গেলো, সবাই যে যার কাজে চলে গেলো শুধু রুম্মান বাদে ।

- শালা, সবাই ভাগলেও ভাবীর ছবি না দেখে আমি যাচ্ছি না । দ্রুত দেখা ।

রুম্মানের জিদ দেখে অগত্যা মোবাইল বের করে সুমির ছবি দেখালো তমাল । সুমির ছবি দেখে তো রুম্মানের চোখ কপালে ।

- মামা, এটা মেয়েমানুষ নাকি পরী ?

রুম্মানের মুখ থেকে এই কথা শোনামাত্রই দুই বন্ধু একসাথে হাসিতে ফেটে পড়লো । এরপর যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলো । অফিস শেষ করার কিছুক্ষণ আগেই তমাল রুম্মানকে বলে দিলো, দোস্ত একটু বসিস তো, তোর সাথে কথা আছে । তো অফিস শেষ করে দুইবন্ধু অফিসের পাশের একটা কফিহাউজে গিয়ে বসলো । দুই কাপ কোল্ড কফির অর্ডার করে রুম্মানই প্রথম কথা বললো,

- হুম, বল । কি বলবি...
- একটা প্রব্লেম হয়ে গেছে রে ।
- হুম, কি ধরনের প্রব্লেম ?
- সুমিকে মানে তোর ভাবীকে দেখতে গিয়েছিলাম, এখন সেখান থেকে সম্মতিসূচক উত্তর নিয়েও চলে এসেছি কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঐ মেয়ের নাম্বার তো নেয়নি, ওর আব্বুর নাম্বার আছে শুধু আমাদের কাছে ।
- তো সমস্যা কি ? এখন ওর আব্বুকে ফোন দিয়েই মেয়েকে খোঁজ কর, এরপর ওর সাথে কথা বল ।
- তুই কি পাগল হয়েছিস নাকি ? এভাবে খোঁজ করলে আমাকে তো নির্লজ্জ ভাববে ওরা । তাছাড়া সবে তো সম্মতি দিলো, মাস ছয়েক উল্টাপাল্টা কিছুই করা যাবে না ।
- তাহলে কি করবি ?
- সেটাই তো । তার জন্যই তো তোর কাছে বুদ্ধি নিতে এলাম । কি করবো, একটা বুদ্ধি দে ।
- দাঁড়া, একটু ভাবতে দে । উহু, পেয়েছি একটা । ওর কোন বন্ধু-বান্ধবীকে চিনিস ?
- না, তা চিনবো কি করে !! তোর আসলেই মাথা খারাপ ।
- আরে দাঁড়া, ভাবী যেন কোন ভার্সিটিতে পড়ে ?
- ঐ যে, ওদের বাড়ির একটু কাছেই একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ।
- তাহলে তো একটাই সমাধান বন্ধু, তুই তার ভার্সিটিতে চলে যা । তার সাথে দেখা কর । এমনিতে সে কোন ডিপার্টমেন্টে কোন ইয়ারে পড়ে, সেটা তো নিশ্চয়ই জানিস ?
- আরে হ্যাঁ, অবশ্যই । জানবো না কেন । সে-ই তো আমাকে বলেছিল ।
- ওহ, এত কথা হয়ে গেছে ?
- ধুর, মজা করিস না তো । এমনিতে আমার অবস্থা টাইট, ওর সাথে কথা বলতে না পেরে ।
- ইশ !! এই মেয়েটা আমার বন্ধুকে এতটা উতলা করে দিয়েছে ? তাহলে যা বলছি জলদি কর । পারলে কালকেই চলে যা ।
- কিন্তু অফিস ?
- ধুর, চুলায় দে তো এই অফিস । আগে জীবন, এরপর কাজ । জীবনই না থাকলে কিসের কাজ !! তুই কাল অর্ধদিনের ছুটি নিয়ে চলে যা । বাকীটা কিছু হলে, আমি তো আছিই, তাই না ?
- হুম ঠিকই বলেছিস । ঠিক আছে, তাহলে ফিক্সড । কালই যাচ্ছি । সুমি, HERE I COME...

তমাল ঠিক তার পরদিন শুধু অর্ধদিবস না, পুরো দিনের ছুটি নিয়ে নেয় অফিস থেকে, অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে । সকালে দ্রুত ঘুম থেকে উঠেই রেডি হয়ে ভার্সিটি চলে যায় তমাল । সুমি বিবিএ এর স্টুডেন্ট । বিবিএ অনেক বড় ফ্যাকাল্টি । তাছাড়া প্রতি সেমিস্টারে নতুন ব্যাচ । এভাবে হিসেব করলে পুরো অনার্সে ব্যাচের সংখ্যা অনেক, সেখানে একজন সিংগেল কারও খোঁজ পাওয়াটা একটু কঠিনই বটে । তমাল ভার্সিটি গিয়েই হেল্প ডেস্কে গিয়ে খোঁজ নেয় । কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্য কোন ভার্সিটিই অপরিচিত কাউকে দেয় না । তাহলে এখন কি করা যায় !! তমাল হেল্প ডেস্কের কাছ থেকে শুনে নিলো বিবিএ ফ্যাকাল্টি টা তৃতীয় তলায় । কোনকিছু না ভেবেই তমাল সিঁড়ি দিয়ে তৃতীয় তলায় উঠে গেলো । এরপর সোজা বিবিএ এর অফিসে । সেখানেও একই ঘটনা ঘটলো, ব্যক্তিগত তথ্য সেখান থেকেও পেলো না তমাল । অফিস থেকে বেরিয়ে এসে তমাল আশেপাশে তাকালো । কি আর করার, তাহলে !!আশেপাশে অনেক ছেলে-মেয়ে নিজের মধ্যে গল্প করাতে ব্যস্ত । তমাল দেখতে পেলো এদের মধ্যে দুইটি মেয়ে সাইডে দাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে গল্প করছে । হঠাৎ কি যেন মনে হলো, তমাল এগিয়ে গেলো ঐ দুইটা মেয়ের দিকে । কাছাকাছি যাওয়া মাত্রই তমালই প্রথম কথা বললো,

- এক্সকিউজ মি, আপনারা কি আমাকে একটু হেল্প করতে পারবেন ?

তমাল কথা বলতেই এই প্রথম মেয়ে দুইটি তমালকে খেয়াল করলো । তাদের মধ্যে একজন তমালের কথার জবাব দিলো ।

- জী বলুন, কি ধরনের হেল্প ?
- আমি আসলে একটা মেয়েকে খুঁজছিলাম । কিন্তু ভার্সিটি হেল্প ডেস্ক কিংবা আপনাদের ফ্যাকাল্টির অফিস থেকে তেমন সাহায্য পেলাম না ।

তমালের মুখে এমন কথা শুনে মেয়ে দুইটি বেশ অবাক হলো । তবে অবাক হওয়া সত্ত্বেও যে মেয়েটি প্রথম তমালের সাথে কথা বলেছিল, সে কথা চালিয়ে গেলো ।

- কি নাম মেয়েটির ? আর কোন ইয়ারে কোন সেমিস্টারে ?
- সেকেন্ড ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টারের ছাত্রী সুমি । আসলে মেয়েটির কোন কন্ট্রাক্ট নাম্বার নেই আমার কাছে । ওর কন্ট্রাক্ট নাম্বার ম্যানেজ করতেই এত কষ্ট করে আসা এখানে ।

তমালের মুখ থেকে এমন কথা শুনার পর যে কারোরই কপালে চিন্তার ভাজ পড়ার কথা । অপরিচিত যে কেউ এভাবে কারও খোঁজ করতে করতে ভার্সিটি পর্যন্ত চলে আসা, নিঃসন্দেহে ভালো কোন ব্যাপার হতে পারে না । মেয়ে দুইটা হঠাৎ নিজেদের মধ্যে ধীরে ধীরে কিছু একটা বললো, এরপর তমালকে একটু দাড়িয়ে থাকতে বলে পিছন থেকে হেঁটে আলাদা হয়ে গেলো দুইজন । ঘটনার আকস্মিকতায় তমালের একটু খটকা বাধলো ঠিকই, কিন্তু তমাল ঠিকই দাড়িয়ে রইলো মেয়ে দুইটির কথামত । বেশিক্ষন না, হয়তো মিনিট পাঁচেকের মত এক জায়গায় দাড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ তার চারপাশে অনেকগুলো ছেলে-মেয়ে এসে জড়ো হয়ে গেলো । হ্যাঁ, মেয়ে দুইটিই সবাইকে ডেকে নিয়ে এসেছে, স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে । এতগুলো মানুষ হঠাৎ একসাথে দেখে তমাল ভয় পেয়ে গেলো । তার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নিয়ে করা কাজটি যে ঠিক হয়নি, তা এখন সে হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছে । তমালের কপালে ধীরে ধীরে ঘাম জমতে শুরু করেছে । ছেলে-মেয়েরা তমালের চারপাশে জড়ো হয়ে একরকম ভিড় তৈরি করে ফেলেছে, সেই ভিড় থেকেই একটা ছেলে এগিয়ে এসে তমালের সাথে প্রথম কথা বললো...

- ভাইয়া, আপনি কে, আগে বলবেন কি !! আর সুমিকেই বা আপনার দরকার কি, সেটাও বলুন ।

তমাল সত্যিই অনেক নার্ভাস হয়ে গেলো । সেই নার্ভাসনেস নিয়েই ছেলেটির করা প্রশ্নের উত্তর দিতে লাগলো তমাল কিন্তু তার গলা কেমন জানি বেধে বেধে যেতে লাগলো ।

- দেখুন, আমার নাম তমাল । তানভীর আহমেদ তমাল । আমি OWAKUK INDUSTRIAL নামের একটি কোম্পানিতে সহকারী ম্যানেজার পদে কর্মরত আছি । আর সুমি !! এতটুকু বলতে পারি যে, ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে খুব বেশিদিন হয়নি ।

তমালের পরিচয় পর্বে সবাই সন্তুষ্ট হলো না । বিষয়গুলো যাচাই করারও তো তেমন সুযোগ কম । এর থেকে ভালো হয় সুমিকে ডেকে নিয়ে আসলে, ভিড়ের মধ্যেই একটা মেয়ে মতামত দিলো । মেয়েটির এই আইডিয়ার সাথে সবাই একমত হলো । ভিড় থেকে দুইটি মেয়ে ক্লাসে গিয়ে ক্লাস থেকে ডেকে নিয়ে আসলো সুমিকে । অথচ ক্লাস তখন চলছিল । সুমি প্রথমে তো ক্লাস থেকে বেরুতেই চায়নি, কিন্তু একান্ত জরুরী বলেই বাধ্য হয়ে বেরিয়ে এসেছে । ভিড় ঠেলে সুমিকে যখন তমালের সামনে দাড় করানো হলো, তমালকে সামনে দেখেই সুমির চোখ তখন প্রায় কপালে । আসলেই তমালকে এখানে দেখা সুমির অনুমানের মধ্যেও ছিল না । সুমিকে দেখতে পেয়ে তমাল যেন পুরাই প্রাণ ফিরে পেলো । ক্লাস থেকে সুমিকে বের করে নিয়ে আসা দুইটা মেয়ের মধ্যে একজন সুমিকে জিজ্ঞেস করলো, তমালকে সে চিনে কিনা ? সুমি সম্মতিসূচক জবাব দিলো । সুমির পরিচিত বলেই এ যাত্রায় তমালকে ছেড়ে দেওয়া হলো । আর সাথে সাথেই যে যার কাজে চলে গেলো । সুমি তমালের দিকে একবার তাকিয়ে সোজা বাইরের দিকে হাঁটা শুরু করলো । তমালও পিছন থেকে সুমিকে অনুসরণ করতে লাগলো । বাইরে এসেই সুমি দাড়িয়ে গেলো । তমালও ঠিক এসে সুমির পিছনে দাড়িয়ে গেলো । সুমি এখন প্রচণ্ড রেগে আছে । এত রাগ যে মুখ থেকে কথা বের করতেও তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে । কোনরকমে সময় নিয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা করে তমালের দিকে তাকালো সুমি । তমাল অবশ্য ভাবতেই পারেনি, তার এই ভার্সিটি আসাটা কোনোরকম বুমেরাং হতে পারে তার নিজের জন্য । সুমিই প্রথম কথা বললো তাদের মধ্যে...

- আপনি... আপনি এখানে কি করেন ?
- (সুমির প্রশ্নের জবাবে তমালের কি বলা উচিৎ, সেটা তমাল জানে না । তবে কোনোরকম ভেবে তমাল জবাব দিলো) এই তো, এমনি ঘুরতে এলাম । তোমার ভার্সিটি দেখতে এলাম ।
- (তমালের উত্তর শুনে সুমির রাগ আবারও বেড়ে গেলো । বেশ অনেকক্ষণ লাগলো রাগ ঠাণ্ডা হতে । রাগ সামান্য ঠাণ্ডা হতেই সুমি আবার কথা বললো) ঘুরতে এসেছেন !! এখন ? আর সময় পাননি ?
- কেন, এখন কি সমস্যা ?
- বিরাট সমস্যা । সামনে আমার পরীক্ষা, একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস হচ্ছিল । আপনার জন্য মিস হয়ে গেলো । ধুর !!
- ওহ, আমি সত্যিই দুঃখিত ।
- বাদ দিন তো এসব নাটক !! এবার সত্যি করে বলেন তো এখানে এসেছেন কেন ?
- (তমাল এবার সত্যি সত্যি ধরা পড়ে গেছে । কি আর করার !! ধরা যেহেতু পড়েই গেছে, সত্যিটা বলে দেওয়াই ভালো হবে) আসলে, তোমাকে দেখতে এসেছিলাম ।
- আমাকে দেখতে !! কেন, আমি কি সার্কাসের জোকার যে আমাকে দেখতে আসবেন ? তাও আবার সকল কাজ-কাম রেখে ।

সুমির কথা শুনে তমাল বেশ অবাক হলো । এই কি সেই মেয়ে, যে আগেরদিন বাসায় ট্রে তে করে নাস্তা নিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে সবার দিকে তাকিয়ে ছিল !! যে পুরোটা সময়ই চুপ থেকে মুরব্বিদের কথা শুনছিল !! যে আড়চোখে তমালের দিকে একটু পর পর তাকিয়ে মুচকি হাসি দিচ্ছিল !! আবার যে কিনা, তমালের নির্লজ্জহীনভাবে বিয়ের প্রস্তাবে রাজী হওয়াতে হাসি দিয়ে পিছন দিকে দৌড় মেরেছিল !! নাহ, সেই মেয়েটার সাথে এই মেয়েটাকে কোনভাবেই মিলছে না । সেই মেয়ে ছিল স্বপ্ন আর এই মেয়ে বাস্তব । সেই মেয়ে ছিল ইনফ্যাচুয়েশন আর এই মেয়ে প্র্যাক্টিকাল । তমাল এসব কথা ভাবতে ভাবতে বেশ খানিকটা সময় পার হলো । এই সময়টুকু তমাল একেবারেই নীরব হয়ে গেলো । তমালকে নীরব থাকতে দেখে, সুমি আবার জিজ্ঞেস করলো, এই ভেবে যে হয়তো তমাল শুনতে পায়নি ।

- কি বললেন না !! আমি কি সার্কাসের জোকার নাকি ?
- না তা হবা কেন ? আসলে কথা হচ্ছে, তোমাকে আগেরদিন ফেসবুকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু পাইনি । তাছাড়া তোমার মোবাইল নাম্বারটাও তো নেই আমার কাছে । এই জন্যই...
- এই জন্য কি !! আপনি সোজা চলে আসবেন ভার্সিটিতে ? বিষয়টা কেমন হয়ে গেলো না !! এখন সবাই কি ভাববে আমাকে নিয়ে ? আপনার বিষয়ে ।
- ভাবলে সমস্যা কি, বলে দিও আমি তোমার ফিওনসে ।
- কি !! দাঁড়ান দাঁড়ান !! এখনও তো সব ফাইনাল না । আগে সব ফাইনাল হোক, তারপর না হয়...

সুমির মুখ থেকে এই কথা শুনে আচমকা তমালের বুক মোচড় দিয়ে উঠলো । বলে কি এই মেয়ে !! তমাল যেখানে বিয়ে পরবর্তী জীবন নিয়ে বারংবার স্বপ্ন দেখা শুরু করে দিয়েছে, সেখান এই মেয়ে কিনা বলছে সব কিছু ফাইনাল না । এর মানে কি !! তার জীবনে কি অন্য কেউ আছে !! তাহলে তো তমালের সর্বনাশ । নাহ, এই বিষয়টা আগে ক্লিয়ার হওয়া দরকার । তমাল সংশয় নিয়ে থাকতে চায় না, তাই সাহস করেই সে সুমিকে জিজ্ঞেস করলো,

- ফাইনাল না !! এর মানে কি ? তোমার জীবনে, সরি, আপনার জীবনে কি অন্য কেউ আছে ?
- (তমাল হঠাৎ ‘তুমি’ থেকে ‘আপনি’ সম্বোধনে চলে যাওয়াতে সুমির বেশ হাসি পেয়ে গেলো) আপনি !! হঠাৎ-ই ? যাই হোক, জী, না মশাই, আমার জীবনে অন্য কেউ নেই । আপনি এই একটা ব্যাপারে পুরোটুকু আশ্বস্ত হতে পারেন ।
- (সুমির জবাব শুনে তমাল যেন প্রাণ ফিরে পেলো) তাহলে ?
- আছে, ব্যাপার আছে, আমার বড় চাচা । তিনি সিঙ্গাপুর থাকেন, সপরিবারে । দুই মাস পর তিনি দেশে আসবেন । দেশে এসে আপনার সাথে, আপনার পরিবারের সাথে দেখা করবেন । তারপর যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তিনি যদি খুশি হন, একমাত্র তাহলেই সব চূড়ান্ত হওয়া সম্ভব । তার আগে না । বুঝলেন মশাই ?

সুমির মুখ থেকে ‘মশাই’ সম্বোধনটাও কত মিষ্টি । আহা !! কিন্তু সুমির বাবা যে হ্যাঁ বলে দিলেন, সেটার কি । এখন যদি বড় চাচা রাজী না হন, তাহলে তো সর্বনাশ । মেয়ে পটানোর আগে, মেয়ের বড় চাচাকেই পটাতে হবে, কি সর্বনাশ !! তমালকে হঠাৎ নার্ভাস হতে দেখে সুমির ভীষণ হাসি পেয়ে গেলো । তমালের নার্ভাসনেস কাটানোর জন্য সুমি প্রস্তাব করলো,

- ক্লাস তো মিস হয়েই গেছে । তাহলে আজকে সব ক্লাস বাদ । চলুন, আপনার সাথে ঘুরতে যাবো । আপনার আপত্তি নেই তো ?
বলে কি এই মেয়ে !? আপত্তি !! এই মেয়ে বললে তো গাড়ির নিচে লাফ দিতেও তার কোন আপত্তি নেই আর সামান্য ঘুরাঘুরি । ইশ !! তমালের প্রেমময় জীবনের শুরু বোধ হয় হয়েই গেছে । তমাল সম্মতিসূচক উত্তর দিয়ে বললো, না, আপত্তি নেই মোটেও ।

সেই দিনটার কথা আসলেই ভোলা সম্ভব না তমালের পক্ষে । ভার্সিটি থেকে রিকশাযোগে নিকটস্থ একটা কফি হাউজে যাওয়া, এরপর সেখানে কফি খেয়ে অটোতে করে হাতিরঝিল । সেখানে বিকেল পর্যন্ত কাটিয়ে, এরপর রিকশায় করে সুমির বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয় তমাল । নিঃসন্দেহে সেই দিনটি ছিল তমালের জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন ।

কিন্তু আসলে যেটা দরকার ছিল, মানে কন্ট্রাক্ট করার মত মোবাইল নাম্বার কিংবা ফেসবুক আইডি সেটাই হয়তো তমাল ভুলে যেতো যদি একেবারে শেষের দিকে সুমি মনে করিয়ে না দিতো । এরপর থেকে শুরু হয় তাদের প্রায় প্রতিরাতে ফোনে কথা বলা পর্ব । গভীর রাত পর্যন্ত কথা চলতো তাদের । প্রথমে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করা দিয়ে শুরু, এরপর খাওয়া-দাওয়া, কাজ-কর্ম, বন্ধু-বান্ধব, পরিবার ইত্যাদি সব কিছু নিয়েই কথা হতো । একেবারে প্রথমদিনই সুমি তমালকে জিজ্ঞেস করেছিল, তার পুরো নামটা তমাল কিভাবে মনে রেখেছে, মাত্র একবার শুনেই !! তমাল এর আসল উত্তর জানে না, কিভাবে জানি ওর মনে গেথে গেছে । তমাল আর সুমি দুইজনই জানতো তাদের সম্পর্কের পরীক্ষার আসল পরীক্ষক সুমির বড় চাচা । দুই মাস পর ঠিকই বড় চাচা দেশে এলেন পরিবার নিয়ে । পরিবার বলতে সুমির চাচি আর চাচাতো ভাই আর বোন । সুমির বড় চাচা এমনিতে বেশ রসিক মানুষ, কিন্তু পরিবারের সকল সিদ্ধান্ত তিনিই নেন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে । বংশের বড় ছেলে বলে কথা । সুমির বাবা-চাচারা মোট ছয় ভাই-বোন, তাদের মধ্যে সুমির বাবা তৃতীয় অর্থাৎ সেজো ।

বড় চাচা দেশে আসারও প্রায় দুইদিন পর সুমির বাবা-ই প্রথম সুমির বিয়ের কথাবার্তা সম্পর্কে বড় ভাইকে অবহিত করলো । বড় চাচা সবকিছু শুনে তমাল আর তমালের বাবা-মাকে আরেকবার আসতে বললেন । যদিও এমন ক্ষেত্রে ছেলেপক্ষের পরিবার মেয়েপক্ষের বাড়ি আসার কথা না কিন্তু সুমির বাবার বারবার অনুরোধের প্রেক্ষিতেই তমালের বাবা-মা বিশেষ করে তমালের বাবা রাজী হলো সুমিদের বাড়ি যেতে । বললেই তো যাওয়া সম্ভব না, এমনিতে সবাই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত । তাই সবার সিদ্ধান্তক্রমে শুক্রবার বিকেলের দিকে তমাল ও তমালের বাবা-মায়ের সুমিদের বাসায় যাওয়া ঠিক হলো । তাহলে তমাল আর সুমির সম্পর্কের পরীক্ষার দিন ধার্য করা হলো শুক্রবার বিকেল । বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তমাল বিশাল আকারে নার্ভাস । তবে আশেপাশের কেউ যাতে টের না পায়, সেই ব্যাপারটা খেয়াল রাখলো তমাল । পরীক্ষার আগের দিনটাতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অফিস করে বাসায় এসেই ফ্রেশ হলো তমাল । এরপর হালকা নাস্তা করে এসেই ল্যাপটপ নিয়ে বসলো । অফিসের সামান্য কাজ শেষ করলো এক ঘণ্টার ভিতরেই । এরপর কফির মগ নিয়ে বারান্দার রোলিং চেয়ারে বসে মৃদু শব্দে বাংলা ক্লাসিক্যাল গান !!

এভাবে চলতে চলতে পাক্কা দুই ঘণ্টা যে কখন কেটে গেলো, বুঝাই গেলো না । এই দুই ঘণ্টা তমাল কেমন জানি হারিয়ে গিয়েছিল । ভুলে গিয়েছিল সকল ধরনের চিন্তা, ভালো করে বললে দুশ্চিন্তা । এরপর ফ্রেশ হয়ে ডিনার । তারপর আবার রুমে এসে ল্যাপটপ খুলে বসলো, এবার অবশ্য উদ্দেশ্য ফেসবুকিং করা । ঘণ্টা খানেকের মত ফেসবুকিং করে মোবাইল হাতে নিয়ে সুমিকে ফোন করলো তমাল । প্রথমে ভেবেছিল তার নার্ভাসনেসের কথা কিছুতেই সুমিকে বলা যাবে না কিংবা বুঝানো যাবে না । কিন্তু কিছুক্ষণের কথাতেই সুমি বুঝে গেলো । তখন মেয়েটার আনন্দ দেখে কি !! তার পরের আধাঘণ্টা কথা চললো সুমি তমালকে ক্ষেপিয়ে । যদি বড় চাচা না করে দেয় কিংবা অন্য কোন ছেলে আগে থেকেই ঠিক করে রাখে কিংবা যদি তমালকে দেখে তার পছন্দ না হয় ইত্যাদি ইত্যাদি । ওদিকে সুমির কথা শুনে যে তমালের অবস্থা হালুয়া টাইট হয়ে যাচ্ছে, সেই ব্যাপারটি কেন জানি সুমি বুঝলোই না ।

পরদিন বিকেলে তমাল তার বাবা-মাকে নিয়ে সুমির বাসায় পৌঁছালো । বড় চাচাকে যতটা ভয় লাগছিল একটু আগেও, কিছুক্ষণের কথাবার্তায় সেই ভয় সত্যিই চলে গেলো । ভদ্রলোক আসলেই অনেক রসিক । দেশে থাকতে নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া মজার মজার ঘটনা আর বিদেশে যেয়ে ঘটা মজার ঘটনা বলেই প্রায় পার করে দিলেন পুরোটা সময় । সন্ধ্যার দিকে শেষ হলো কথোপকথন পর্ব, তমালের কাছে পরীক্ষা পর্ব । তমালের বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে সবাই সন্তুষ্ট, তবুও তমালের মনে কিঞ্চিৎ ভয় আছে এখনও । বাসায় গিয়ে আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ জপতে লাগলো সে । পরদিনই এলো পরীক্ষার রেজাল্ট । এই একটা দিন তমালের নাওয়া-খাওয়া, কথাবার্তা, চলাফেরা সবকিছুর মধ্যে ছিল অস্বাভাবিক পরিবর্তন । হ্যাঁ, পরীক্ষায় তমাল পাশ করেছে । সুমির বড় চাচাও রাজী । এখন আর অফিসিয়ালি কোন বাধা নেই । রাতের বেলা সুমিও তমালকে ফোনে কংগ্রাচুলেশন জানালো ।

ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো তমাল । সেইদিনগুলো আসলেই অনেক ইন্টারেস্টিং ছিল । একটু ভয়, একটু অস্বস্তি, একটু প্রেম, একটু কাছে আসার ফিলিংস – সব কিছু মিলিয়েই ছিল একটা প্যাকেজ । হ্যাঁ, মনে আছে । সবকিছুই মনে আছে তমাল আর সুমির । মাত্র তো এক বছর আগেরকার ঘটনা । লাইফের এত ইন্টারেস্টিং গল্পগুলো কি সহজে ভুলা যায় ? তাদের ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনির কাছে গল্প করতে হবে না ?

তমাল দেখলো সুমি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে । হঠাৎ কি মনে হলো, তমাল খপ করে সুমির হাত ধরে ফেললো । এই আকস্মিক কাণ্ডের ধাক্কা সামলাতে সুমিকে সামান্য বেগ পেতে হলো । তমাল যে এই মুহূর্তে এমন কিছু করতে পারে তা সুমির অনুমানেই ছিল না । সুমি বেশ লজ্জা পেয়ে গেছে, বারবার আশেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছে তমালের এই হাতধরা ব্যাপারটা কেউ খেয়াল করছে কিনা । ওদিকে তমাল এখন সুমির হাত ধরে আছে । এখন ঘড়িতে রাত ৮ টা । খুব বেশি রাত না হলেও ট্রেনের ঝাঁকুনি আর নিয়মিত বিরতির শব্দ প্রায় সবার মধ্যে ঝিমানো ভাব এনে ফেলেছে । তমাল আর সুমির পাশের বসে থাকা লোকদুইটাও ঝিমুচ্ছে । এমনকি পাশে বসে থাকা সেই মা-মেয়েও । স্বভাবতই তমাল আর সুমির হাতধরা এই মুহূর্তটুকু কারোরই দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । এই হাতধরা ব্যাপারটি ঘটার পর থেকে সুমির আড়ষ্ট ভাব বেড়েই চলেছে ।

- কি করছেন ? হাত ছাড়ুন, আমার লজ্জা করছে ।
- না, ছাড়বো না ।
- ছাড়বো না, মানে ?
- ছাড়বো না মানে হচ্ছে আমি তোমার হাত ধরেছি, ছাড়বো না ।
- আহা !! আশেপাশের মানুষ কি ভাববে, দেখে ?
- কি ভাববে ?
- যান !! আমি বলতে পারবো না ।
- (সুমির কথা শুনে তমালের হাসি পেয়ে গেলো) তুমি বলতে না পারলে আর কি পারবে বলতে ?
- কেউ না । হয়েছে ? এবার ছাড়ুন ।
- ও মা, হাত কি ধরেছি ছাড়ার জন্য ?
- তা আমি কি করে জানবো ? কিন্তু আমার তো ভীষণ লজ্জা করছে ।
- ঠিক আছে, হাত ছাড়তে পারি এক শর্তে ।
- কি শর্ত ?
- আজ, এখন, এই মুহূর্তও থেকে তোমাকে এই ‘আপনি’ সম্বোধন থেকে ‘তুমি’ সম্বোধনে আসতে হবে ।
- (তমালের কথা শুনে সুমির লজ্জায় পুরোপুরি লাল হয়ে গেলো । লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো । এই জন্য কিছু সময় তাদের মধ্যে নীরবতা চলে এলো) ‘তুমি’ করে ? এখন থেকেই ? সেটা কিন্তু কষ্টকর হবে । তবে চেষ্ঠা করবো অভ্যাস করে নেওয়ার ।
- না, এখন থেকেই বলতে হবে । আর যদি না বলো তাহলে তো হাত ছাড়ছিই না ।
- ও মা, কি মুশকিল !! ঠিক আছে, ছাড়ো ।

এই ‘তুমি’ সম্বোধনটা সুমি করতে একরকম বাধ্যই হলো । তমাল তাকে বাধ্য করে কোনকিছু করতে বলবে সেটা তার কখনই ভালো লাগে না । সুমি চায় তাদের সম্পর্কে সবকিছু ভালো লাগা থেকে হোক, বাধ্য হয়ে বা বাধ্য করে নয় । তমাল হাত ছেড়ে দিতেই সুমি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে পরক্ষনেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো । তমাল বুঝতে পারলো, তার সাময়িক পাগলামি করাটা উচিৎ হয়নি । এবার তমাল প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য সুমির পাশে এসে বসলো, একেবারে সুমির কাছে । সুমি তমালকে জায়গা করে দিতেই হয়তো আরেকটু জড়সড় হয়ে বসলো । তমাল সুমির দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে রেখেই বললো,

- দুঃখিত, আসলে কোনকিছু জোর করতে আমারও ভালো লাগে না, জানি তোমারও ভালো লাগে না । এও জানি সম্পর্কের ভিত্তি হওয়া দরকার ভালোবাসা, ভালোলাগা, প্রেম আর সবকিছুর ঊর্ধ্বে একে অন্যের প্রতি সম্মান । আমি কথা দিচ্ছি এমন কিছু আর জীবনেও করবো না । তুমি শুধু আমার পাশে থেকো সারাটা জীবন, চলার পথের পাথেয় হিসেবে ।

তমালের বলা কথাগুলো এবার সত্যি সত্যি সুমিকে ছুঁয়ে গেলো । এরপর সুমি যা করলো তমাল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না । সুমি তমালের বুকে মাথাটা হেলিয়ে দিলো । এখন তমালের বুকে সুমির মাথা । তমাল এতে অবাক হয়েছে বটে কিন্তু পরক্ষনেই নিজের হাত দিয়ে সুমির চুল বিলি কেটে দিতে লাগলো । এরকম সুখের ট্রেন যাত্রার মত তাদের জীবনের যাত্রা সুখের হবে কিনা, সেটা তো একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই ভালো জানে । কিন্তু ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো কিছুর প্রতিক্ষা তো করাই যায়, তাই না ?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১২:৪২

আহা রুবন বলেছেন: বড় গল্প। হাজার দুই শব্দের মত পড়েছি, শুরুটা ভাল। পরে পড়ব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.