নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেলাশেষে ক্লান্ত-তৃষ্ণার্ত পথিকের ন্যায় আসলাম সামুর তীরে, রেখে যেতে চাই কিছু অবিস্মরণীয় কীর্তি । পারি না আর না পারি, চেষ্ঠার ত্রুটি রাখবো না, এই ওয়াদা করছি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭

একজন শৌখিন লেখক আমি, আবার কবিও বলা যেতে পারে । যখন যা ভালো লাগে তাই লিখি ।

মোশারফ হোসেন ০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Corporate Sustainability Reporting (টেকসই প্রতিবেদন) কি, কেন করে, কে করে, কিভাবে করে ইত্যাদি আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা - পর্ব - ৩ (শেষ পর্ব)

২৬ শে মে, ২০২৩ রাত ১২:৩১



১ম পর্বের লিংকঃ Corporate Sustainability Reporting (টেকসই প্রতিবেদন) কি, কেন করে, কে করে, কিভাবে করে ইত্যাদি আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা - পর্ব - ১
২য় পর্বের লিংকঃ Corporate Sustainability Reporting (টেকসই প্রতিবেদন) কি, কেন করে, কে করে, কিভাবে করে ইত্যাদি আদ্যোপান্ত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা - পর্ব - ২

গত পর্বের শেষ করেছিলাম জিআরআই নিয়ে বলতে বলতে । ঠিক যেন শেষ হইয়াও হইলো না শেষ । এই জিআরআই কিন্তু নেদারল্যান্ড বেইসড একটি প্রতিষ্ঠান যেটি কিনা সারা বিশ্বে ছোট-বড় সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাস্টেনিবিলিটি পারফর্মেন্স বা টেকসই অবস্থা প্রকাশ করার সবচেয়ে বড় সহায়ক প্ল্যাটফর্ম, জিআরআই ষ্ট্যাণ্ডার্ড প্রদান করে । জিআরআই ষ্ট্যাণ্ডার্ড অনুযায়ী রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশ করলে ঐ প্রতিষ্ঠানের (যারা এই রিপোর্ট প্রকাশ করছে) মোট ৬টি বিষয়কে কভার করে । বিষয়গুলো হচ্ছেঃ

১) ঐ প্রতিষ্ঠানের পরিচয়, লক্ষ্য ও ইতিহাস
২) প্রতিষ্ঠানের পর্যালোচনা পরিষদ ও নিয়মতান্ত্রিকতা
৩) স্টেকহোল্ডার বা অংশীদারদের নিযুক্তি এবং ঐ প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তুর মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা
৪) প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
৫) প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা
৬) প্রতিষ্ঠানের সামাজিক অবস্থান ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা

আদতে যে কোন প্রতিষ্ঠানের যে কোন অংশীদার (যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রভাবিত করে অথবা প্রতিষ্ঠান দ্বারা প্রভাবিত হয়) দের জন্য এই ৬টি বিষয়ের উপর তথ্য জানলেই ঐ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রকাশিত হয় ।

জিআরআই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আমি অন্য আরেকটি পোস্টে উল্লেখ করবো ।

এই পর্বের প্রশ্নত্তোর সেশন শুরু করা যাক ।

প্রশ্ন, বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল একটি দেশে যেখানে শিল্পবিপ্লব সর্বদাই উন্নতির সহায়ক, সেখানে আদতে এই প্রতিবেদন বা রিপোর্ট প্রকাশের হার কেমন? এবং সেটি এই শিল্পবিপ্লবে কতটুকু সহায়ক হয়?

উত্তর শুরু করা যাক । বর্তমানে, বাংলাদেশে সাসটেইনেবিলিটি রিপোর্টিং বা টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশের যে প্রবণতা সেটি এখনও স্বেচ্ছাসেবামূলক বা বিশেষ কোন কোন ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক । এই রিপোর্ট কে সজ্ঞায়িত করা যায় এরূপে যে এটি একটি ব্যবসায়িক অনুশীলন এর সহায়ক মাধ্যম যা একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশগত, এবং প্রশাসনিক অনুশীলনগুলি অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত স্টেকহোল্ডারদের কাছে প্রকাশ্যে প্রকাশ করে।

টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশের অনুশীলন ধীরে ধীরে বাংলাদেশে জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়ে উঠেছে। এটা প্রত্যাশিত যে অদূর ভবিষ্যতে এই প্রতিবেদন প্রকাশের হার বর্তমান অবস্থায় তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে ।

এর প্রমানস্বরূপ, আপনাদের একটি বাস্তব ও সত্য গবেষণার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করি আসুন। ২০১৯ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ - ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা এই ৪টি দেশের উপর সাস্টেনিবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশের উপর একটি জরিপ করা হয়। ফলাফল অনুযায়ী, দক্ষিণ এশীয় এই ৪টি দেশের মধ্যে পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানির (পিএলসি) মধ্যে টেকসই রিপোর্টিং প্রকাশের হারে বাংলাদেশের অবস্থান সবচেয়ে নিচে এবং এই সংখ্যাটা শতকরা বা সত্যিকার নাম্বারে যেভাবেই বলি, বেশ কম।

বাংলাদেশে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ৩২০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৪৯টি কোম্পানি, বা ১৫ শতাংশ ২০১৯ সালে টেকসই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে (যেহেতু পাবলিক লিস্টেড কোম্পানিগুলোর জন্য পাবলিকলি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করাটা বাধ্যতামূলক) ।

২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঢাকাতে সিটিজেন প্ল্যাটফর্ম ফর SDGs (সাস্টেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বাংলাদেশ শাখা, UNDP বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচি দারিদ্র্য-পরিবেশ অ্যাকশনের সাথে একত্রিত হয়ে প্রায় সোয়া ৩ঘন্টা ব্যাপী জাতীয় পর্যায়ে একটি সংলাপ আয়োজন করে। এই সংলাপ এর শিরোনাম ছিল "বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের টেকসই প্রতিবেদন সংক্রান্ত প্রত্যাশা এবং অভিজ্ঞতা" । যদি কেউ এই সম্পূর্ণ সংলাপটির ভিডিও দেখতে যান, যা কিনা ইউটিউবে পাওয়া যাবে (Sustainability Reporting by the Private Sector in Bangladesh: Expectations and Experience), তাদের জন্য আমি ইউটিউব লিংকটি শেয়ার করলাম । বলে রাখা ভালো, এই সংলাপের আলোচনা শুরু হয়, ঐ দক্ষিণ এশীয় ৪টি দেশের মধ্যে টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশে বাংলাদেশী কোম্পানিগুলোর দৈন্যতা নিয়ে ।

এই সংলাপে ঐ ৩টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন সরকারী পর্যায়ের নীতি নির্ধারক, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিনিধি, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং স্বনামধন্য কিছু বেসরকারী খাতের নেতারাও অংশগ্রহণ করে।

সংলাপে বক্তারা বাংলাদেশে টেকসই প্রতিবেদনের অবস্থান নিয়ে আলোচনা করে এবং এই মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে যে, বাংলাদেশে শক্তিশালী এবং টেকসই বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধির স্বার্থে এই অনুশীলনের (টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ) প্রচার ও নির্দেশনা দেওয়ার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো থাকা প্রয়োজন, আরও ভালো হয় যদি সরকারী নীতি নির্ধারক পর্যায়ে সেটা নিয়ে কোন সিদ্ধান্ত আসে।

মানে বুঝলেন তো? মানে বক্তারা এই টেকসই প্রতিবেদন নিয়ে ছোটখাট কোন আইন বাংলাদেশে জারি হওয়ার দাবি জানিয়েছেন, যেখানে বেসরকারি খাতের সকল প্রতিষ্ঠান তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি বছর এই সাস্টেনিবিলিটি রিপোর্ট বা টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে । আইনটি পাশ হয়ে গেলে কিন্তু কোন উপায় নেই । আপনি যে কোন প্রতিষ্ঠানের সাথেই সম্পৃক্ত থাকেন না কেন, আপনাকে তখন এই টেকসই প্রতিবেদনের বিষয়টা জানতেই হবে । শুধু জানলেই হবে না, আপনার প্রতিষ্ঠানের তখন এরকম একটি রিপোর্ট বানাতেও হবে, তাও আবার নিয়মিত । আমি কিন্তু এখন আগ বাড়িয়েই আপনাদের জানাতে এসেছি এটা নিয়ে । যা যা জানতে চান, জলদি প্রশ্নের ডালা খুলে বসুন ।

আমার ব্যক্তিগত একটি গবেষণায় সেই কোম্পানিগুলির নাম খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি যেগুলি তাদের টেকসই অবস্থার জানান দিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যদিও নামগুলি খুঁজে পাওয়া একটি খুব কঠিন কাজ ছিল কারণ এমন কোন তালিকা কোথাও পাওয়া যায় না৷ তবে আমি মোট ৬৩টি আর্থিক সংস্থা এবং আরও ৭৬টি তালিকাভুক্ত এবং নন-তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের উপর স্টাডি করেছি। এই ১৩৯টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১২টি কোম্পানি ২০২২ সালে তাদের টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। অবশ্য এর মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে তাদের স্থায়িত্বের পারফরম্যান্স রিপোর্ট করেছে (আমরা এক্সেল শীটে কিছু টেকসই অবস্থানের রেফারেন্স দিয়েছে। যারা আলাদা টেকসই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই রিপোর্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য জিআরআই স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার করেছে।

আমি ব্যক্তিগতভাবে আমার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানের জন্য এই সাস্টেনিবিলিটি রিপোর্ট প্রকাশে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সহায়তা করে থাকি । সে যাই হোক, যে কোন প্রতিষ্ঠানের জন্য জবাবদিহিতা, সঠিকভাবে পরিচালনা ও ব্যবসায়িক সম্পর্কের মান উন্নয়নের জন্য বিশ্বের যে কোণ দেশের জন্য অন্যতম সহায়ক ও জনপ্রিয় এই অনুশীলন বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারি প্রতিটা খাতে ছড়িয়ে পড়ুক, এটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আশা রাখি । কারণ এই প্রাণপ্রিয় পৃথিবীর জন্য আমাদের দায়িত্ব অনেক, এই দায়িত্ব পালন করাটা যদি জনসম্মুখে প্রকাশ করার মাধ্যমে আমাদের আশেপাশের লোকদেরকেও আগ্রহী করে তুলা যায়, এর চেয়ে মহৎ প্রচেষ্টা তো আরও হয় না ।

(সমাপ্ত)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০২৩ দুপুর ১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: গুড।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.