![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অতিসাধারণ, সাধারণই থাকতে চাই।ঝামেলা অসহ্য লাগে।ঝামেলা জিনিসটা হলো আধোয়া থালা-বাসনের মত বিরক্তিকর।
ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা
আজ ভয়াল ১৫ নভেম্বর। ২০০৭ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্কারী ঘূর্ণিঝড় 'সিডর' উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানে। এরপর আট বছর অতিবাহিত হলেও দুর্যোগ কবলিত মানুষ আজও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। শত শত পরিবার খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পুনর্বাসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ হয়নি। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি। প্রতিনিধি এবং সংবাদদাতাদের পাঠানো খবর : শরণখোলা (বাগেরহাট) : সিডরের ৮ বছর অতিবাহিত হলেও শরণখোলাবাসীর প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ আজও নির্মাণ হয়নি। প্রায় ৫০ হাজার গৃহহীন পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়নি। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সেদিনের ঝড়ে ৬৯৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এখনো ৭৬ জনকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গৃহহীন হয় ১৩ হাজার ৪৬৩ পরিবার। সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। গবাদি পশু ও হাস-মুরগি মারা যায় এক লাখ ৫০ হাজার ৩৫৪টি। ৬ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির ফসল ধ্বংস হয়ে যায়। গাছপালা ও অন্যান্য সম্পদের ক্ষতি হয় অপরিসীম। অন্যদিকে, স্থানীয় হিসাবে শরণখোলায় সেই দিন প্রাণহানী হয়েছিল সহস্রাধিক। শত শত পরিবার এখনো নদীর চরে, বেড়িবাঁধের পাশে ঝুপড়ি ঘর তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সিডর পরবর্তী সময়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন দাতা সংস্থা হাজার হাজার কোটি টাকার সহায়তা করলেও প্রকৃতপক্ষে নিম্ন শ্রেণির মানুষের স্থায়ীভাবে ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। এখনো শত শত পরিবার দুঃসহ জীবনযাপন করছে। সিডরের পর থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, একটি টেকসই বেড়িবাঁধের। কিন্তু তাদের সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মো. হাসানুজ্জামান পারভেজ জানান, সিডর পরবর্তী সময় বিভিন্ন দাতা সংস্থার দেয়া ঘরগুলো অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ অঞ্চলের মানুষের ঘুরে দাঁড়াতে হলে আবাসনসহ টেকসই বেড়িবাঁধ ও বিকল্প কর্মসংস্থান একান্ত প্রয়োজন। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এসও আলতাফ হোসেন জানান, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে শরণখোলায় ৬২ কিলোমিটার টেকসই বেড়িবাঁধ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমতলী (বরগুনা) : আমতলীতে সিডরে ৩৮৫ জন প্রাণ হারান এবং প্রায় ১৪০০ জন নিখোঁজ হন। অর্ধশতাধিক জেলে-নৌকা নিখোঁজ হয়। হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। সহস্রাধিক গবাদিপশু মারা যায় এবং অসংখ্য বৃক্ষরাজি বিধ্বস্ত হয়। বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লবণ পানি ঢুকে পড়ায় শত শত একর জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। সিডরে নিঃস্ব পরিবারগুলো আজও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সিডরে নিখোঁজ বাবাহারা চরকগাছিয়ার কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী মরিয়ম আজও তার বাবাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমতলী ও তালতলী উপজেলার গুলিশাখালী, ঘটখালী, জয়ালভাঙ্গা, ফকিরের হাট, আশার চর, হরিণবাড়িয়ার জেলে পরিবারের কান্না আজও থামেনি। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এই দিনটি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে স্মরণ করে।
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) : সিডরের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এর ক্ষত আজও রয়েছে। আজও উপকূলের মানুষ সিডরের ভয়াবহতা বয়ে বেড়াচ্ছে। সিডরে মোরেলগঞ্জে ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমির উফসি ফসল এবং ১২ হাজার ৭৮৮ হেক্টর জমির আমন ফসল সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়। সিডরে রিভার ক্রসিং সুউচ্চ টাওয়ার দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ২৬ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ছিল। সিডরে মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ ১৬ ইউনিয়নে ১০ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের জেলে পল্লী কুমারখালীর ক্ষতিগ্রস্ত ১৪৩টি জেলে পরিবারের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। আজও তারা সিডরের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারেননি। সিডর দুর্গত এলাকায় দেশি-বিদেশি সহায়তাসহ ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও এখনো শত শত পরিবার খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের দাবি, বলেশ্বর নদীর তীরঘেঁষে একটি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ।
গলাচিপা (পটুয়াখালী) : গলাচিপার আমখোলা ইউনিয়নের ২৭ জন সেদিনের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণ হারান। এখনো ঝড়ের সেই ক্ষত ঘুচেনি। আমখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য কাঞ্চন বাড়িয়া গ্রামের আলী হোসেন ফকির জানান, প্রতিবছর ১৫ নভেম্বর এলে এ গ্রামের মানুষের মনে অজানা এক আতঙ্ক দেখা দেয়। তবুও তারা জীবীকার প্রয়োজনে সাগরে ছুটে যান।
মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী) : মির্জাগঞ্জে সিডরের আঘাতে ১১৫ জনের প্রাণহানী এবং ১০ হাজার ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়। আংশিক বিধ্বস্ত হয় ১৪ হাজার ৫ শত ঘর, গবাদিপশু মারা যায় ২ হাজার ৫০০। হাঁস-মুরগি মারা যায় ১ লাখ ৩০ হাজার। ১১ হাজার ৯৯০ একর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। ৭ হাজার ৯৮৭টি পুকুরের প্রায় কোটি টাকার মাছ ভেসে যায়। এছাড়াও উপজেলার ৮০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ২৪০টি মসজিদ সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। ৩৪ কিলোমিটার পাকাসড়ক, ১৫৬ কিলোমিটার কাঁচাসড়ক ও ৩৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেউলী সুবিদখালী ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে বিধ্বস্ত হয় ১ হাজার ১৭০টি ঘর এবং মৃত্যু ঘটে ৮৫ জনের। এর মধ্যে চরখালী গ্রামে মারা যায় ৪৫ জন। আট বছর পেরিয়ে গেলেও মির্জাগঞ্জ উপজেলার ক্ষতিগ্রস্তদের ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। এখনো তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। অনেকেই এখনো মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পাননি।
©somewhere in net ltd.