![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা ডিবি পুলিশের দফতরের ক্যান্টিনে খাবার পানিতে খারাপ গন্ধ পান পুলিশের এক সদস্য। ওয়াসার পানিতেও এমন গন্ধ হতে পারে ভেবে তিনি বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি । পরদিন পানিতে আর বেশি দূরগন্ধ পায় আর অনেকেই । সেদিন থেকে ডিবি অফিসের কলের পানি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয় । পানির লাইনের সমস্যা সমধান করতে মিস্ত্রী ডেকে নিয়ে আসেন । কিন্তু তারা লাইনের কোথাও কোনো ত্রুটি পেলেন না । পরে তারা অফিসের ছাদে পানির ট্যাংকিতে ময়লা জমার কারণে এরকম দুর্গন্ধ হতে পারে এমনটি ভেবে ট্যাংকি পরিষ্কারের জন্যে বাইরে থেকে দুজন লোক ডেকে আনা হয় । তাদের নিয়ে পুলিশের কয়েক সদস্য মই বেয়ে দোতলা ভবনের ছাদে উঠেন । তারা সিমেন্টের তৈরি ট্যাংকির ভারী ঢাকনা একটু খুলতেই ভিতর থেকে প্রচন্ত পচা গন্ধ বেরোতে থাকে । তারা ভেবেছিলেন হয়ত এর ভেতরে ইঁদুর মরে পচে আছে তাই ট্যাংকির ভেতর থেকে গন্ধ বেরোচ্ছে । ঢাকনাটি ট্যাংকির ওপর থেকে অর্ধেক সরিয়ে ভিতরে উঁকি দিতেই ভয়ে কুঁকড়ে ওঠেন সবাই । ইঁদুর নয় একজন যুবকে লাশ ।
পচেগলে ফুলে যাওয়া লাশটি থেকে বিকট গন্ধ বেরোচ্ছিল । ট্যাংকি পরিষ্কার করতে আসা দুজনের একজন ভয়ে সেখানেই জ্ঞান হারান । ভীতসন্ত্রস্ত পুলিশ সদস্যরা কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ছাদ থেকে তারা নেমে আসেন দ্রুত । পুলিশ কর্মকর্তাদের জানান বিষয়টি। ফায়ার সার্ভিস এসে লাশটি ছাদ থেকে নামিয়ে আনেন । ১৬ বছর আগে ৩৬ মিন্টো রোডের ডিবি ভবনের ছাদে পানির ট্যাংকি থেকে এভাবে একটি লাশ উদ্ধার হয় । পচেগলে যাওয়ায় লাশটি শনাক্ত করা যাচ্ছিল না । পাঁচ দিন পর শনাক্ত হয় লাশটি । লাশটি ডিবির সোর্স জালাল উদ্দীনের । তার স্বজনেরা ছবি দেখে লাশ শনাক্ত করেন । গোয়েন্দা পুলিশের কতিপয় সদস্য ভবনের ছাদে নিয়ে জালালকে নৃশংসভাবে হত্যা করে । লাশটি লুকিয়ে রাখতে পানির ট্যাংকিতে ফেলে ঢাকনা দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয় । ১৯৯৯ সালের ২৫ মার্চ জালালের লাশ উদ্ধারের এই ঘটনাটি আলোড়ন তুলেছিল সারা দেশে । মানুষের জানমাল রক্ষা করা যাদের দায়িত্ব সেই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই দানবীয় কায়দায় নৃশংসভাবে এক ব্যক্তিকে খুন করায় ক্ষুব্ধ হয় সাধারণ মানুষ । মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছিল ডিবি পুলিশ । এই হত্যার মধ্য দিয়ে ডিবি পুলিশের আসল রূপ তখন প্রকাশ পায় । তদন্তে কেঁচো খুঁড়তে যেন সাপ বেরিয়ে আসার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় । ফাঁস হতে থাকে ডিবি পুলিশের কতিপয় সদস্যের অন্ধকার জগতের অজানা কাহিনী । সোনা চোরাচালানসহ নানা অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ার নানা তথ্যও বের হয় জালাল হত্যার তদন্তে । এই ঘটনাটিকে ডিবির কলঙ্ক বলেও মনে করেন পুলিশ কর্মকর্তাদের অনেকেই । জালাল খুনের পর গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা চালানো হয় । কিন্তু পত্রপত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় সেটি আর করতে পারেনি তারা । তবে বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন এই মামলার আসামিরা জালালের পরিবারকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান । তারা এখনো নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত । এখনো বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় জালালের পরিবারের সদস্যরা এখন হতাশ । জানা গেছে তদন্ত শেষে ডিবির তিন সদস্যসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয় । এরপর শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া । ২০০৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের ২০তম সাক্ষী ইমান আলী আংশিক সাক্ষ্য দিয়ে আর কখনোই আদালতে যাননি । তখন থেকেই মামলার কার্যক্রম আটকে আছে । মামলার নথি থেকে জানা যায়, জালালউদ্দীন ছিলেন ডিবির পরিদর্শক জিয়াউল আহসানের সোর্স ও মাইক্রোবাসের চালক । ১৯৯৯ সালের ১৯ মার্চ মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে শেষবার বের হয়েছিলেন । এরপর ২৫ মার্চ ডিবির ছাদ থেকে জালালের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয় । ৩১ মার্চ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডির কাছে ছবি দেখে জালালের পরিবার লাশ শনাক্ত করে । লাশ উদ্ধারের পর রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) এস এম আলী আজম একটি মামলা করেছিলেন । এরপর নিহত জালালের ছেলে আব্বাস উদ্দিন ৪ এপ্রিল আরেকটি মামলা করেন । তদন্ত শেষে ডিবির পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি । আসামিরা হলেন ডিবির পরিদর্শক মো. জিয়াউল আহসান, হাবিলদার মো. বিল্লাল, কনস্টেবল আবদুর রউফ এবং আনোয়ার হোসেন ও আবদুল মালেক । প্রথম তিন আসামি জামিনে আছেন । আনোয়ার মারা গেছেন । মালেক প্রথম থেকেই পলাতক । ২০০৩ সালে আংশিক জবানবন্দি দিয়ে সাক্ষী ইমান আলী আর কখনো আদালতে হাজির হননি । তাকে ও অন্য সাক্ষীদের হাজির হতে বারবার সমন জারি হলেও ফল হয়নি । এরপর ইমান আলীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় । অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পরও সাক্ষীদের হাজির করা যায়নি । মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সোনা ও মাদক পাচারের তথ্য পাওয়ার জন্য জালালকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করতেন পরিদর্শক জিয়াউল আহসান । এ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিরা জালালের তথ্যের ভিত্তিতে চোরাকারবারিদের আটক করে চোরাচালানের পণ্য বিধিসম্মতভাবে উদ্ধার না দেখিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিতেন । কিন্তু জালালকে কয়েকবার এর ভাগ দেওয়া হয়নি । সেই ক্ষোভে জালাল ১৯৯৯ সালের ১৩ মার্চ একটি সোনা চালানের তথ্য ডিবির অন্য একটি দলকে দিয়ে দিলে ক্ষুব্ধ হন জিয়াউল । ১৯ মার্চ রাতে অন্য আসামিদের মাধ্যমে জালালকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে খুন করা হয় । পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার পর ২০০১ সালের মাঝামাঝি সময়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয় । ৪৫ জনের মধ্যে ১৯ সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় । সর্বশেষ ২০০২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯তম সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয় । ২০০৩ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে রিকশাচালক ইমান আলী আদালতে আংশিক সাক্ষ্য দেন । এরপর থেকেই তার আর কোনো খোঁজ নেই ।
এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন এই মামলা তদন্ত করেছেন সিআইডির বিশেষ সুপার মুন্সী আতিকুর রহমান । তদন্তে অবহেলার অভিযোগে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তাকে আসামি করা হয় । তিনি বর্তমানে কারাগারে । আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালনকারী সংস্থার সদস্যরা অভিযুক্ত হওয়ায় হত্যা মামলাটি সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল । তবে চাঞ্চল্যকর মামলার জন্য গঠিত মনিটরিং সেল কোনো সরকারের আমলেই মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়নি । মামলাটির বিচার আটকে থাকার জন্য আসামিদের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাবকেই প্রধান উপাদান হিসেবে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা । এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন কখনো কখনো আসামিরা আইন-আদালতের চেয়েও বেশি প্রভাবশালী হয় । ভাই পুরনো পোস্ট বলে অবহেলা নয় আমার কথা হলো সত্যিকারের আসামিরা যদি আইনের চেয়ে উদ্ধে হয় তাহলে তারা যাদের ধরে আটকায় তারা নিঃসন্দেহে নির্দোষ আসামি । আর আসামিরাই যখন আইন ওপরে তাহলে আর আইন বলে থাকলো কি ?
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬
রিয়াদ ফেরারী বলেছেন: মনে করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ ।