নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপন আলো. .

মীর আকতার

মীর আকতার › বিস্তারিত পোস্টঃ

সবুজ বনাম সভ্যতা

৩০ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮



সময়টা খুব সম্ভব ২০০৬ ইন্টারমিডিয়েটে পড়ি তখন, ঈদের পর দিন খুব ভোরে আমার চাচাতো ভাইয়ের প্রথম ঢাকায় আগমন। বেশ মনে আছে সেই সকালের কথা, এতটা পথের ক্লান্তি ছাপিয়ে ওর চোখ জোড়া চক চক করছিলো অবসন্নতার ছিটেফোঁটাও ছিলোনা চোখে-মুখে। শুরু হয় গল্প, প্লাটফর্ম বিহীন রেলগাড়ির মতো অনবরত ছুটতে থাকে ওর গল্পের ঝাঁপি যার প্রায় পুরোটা জুরেয় ছিলো আসার পথে শহরের সাথে তার প্রথম সাক্ষাতের গল্প।

সপ্তাহ দুয়েক পরের কাহিনী, একদিন কলেজ শেষে বাড়িতে ফিরে দেখি ও কান্নাকাটি জুড়ে দিয়েছে গ্রামে চলে যাওয়ার জন্য। শহরের প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া এই ছেলে মাত্র ১৪ দিনেয় সম্পর্কের ইতি টানতে চায় কেন? অবাক আমি ঘটনা কি জিজ্ঞাসা করতেয় ওর কান্না জড়ানো উত্তর; আপা দম বন্ধ বন্ধ লাগে, খালি বিল্ডিং বাড়ি গাছপালা নাই, সবুজ নাই। ঐ সময়টাতে খানিক্টা বিরক্ত হওয়া শহুরে আমি সময়ের পালাবদলে আজ খুব অবাক হয়ে ভাবি শহরের সাথে সবুজের রেষারেষির গল্পটা মাত্র ১৪ দিনেয় যেনে গিয়ে ছিল আমার কিশোর গ্রামের ভাইটা। বেশ অনেক বছর আগ থকে শুরু হওয়া সেই গল্পটা কিন্তু সত্যি তথাকথিত ইট- কাঠের সভ্যতার সাথে সখ্যতা করতে গিয়ে আমাদের ্রিয় ঢাকা শহরটার প্রানের সবুজের সাথে আড়ি হয়ে গেছে বহু আগে। বাংলা সিনেমার জুনিয়র আর্টিস্টদের মতো,শহরে সবুজের ব্যাবহার এখন নিতান্তই সৌন্দর্যবর্ধনে। শহুরে আমাদের চিন্তা রুমের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে রাস্তা কিংবা ফুটপাত দখল নেয়া সবুজ নামক সতীনের জন্য যায়গা ছাড়া সেখানে রীতিমতো বোকামি। সত্যি করে বললে বাঙালী ফ্রীতে পাওয়া সম্পদে অতীব খুশি হলেও তার কদরের বেলায় অতি উদাসীন তাই বেমালুম ফ্রীতে পাওয়া অক্সিজেনের উৎস বিষয়ক চিন্তার প্রয়োজনীয়তা প্রায় শূন্যর কোঠায়। দাম দিয়ে কেনা সভ্যতার তাই বহু কদর আর সভ্যতা মানেয় আমাদের কাছে ইট-সিমেন্টের ধূসরতার উপর প্রলেপ দেয়া হরেক রঙের চাকচিক্য। আমাদের গড়া সভ্যতায় সবুজ বড়জোর দেয়ালের রঙেয় মানানসই। শহুরেদের সবুজ প্রীতি সৌখিনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে অনেকটা আর সৌখিন শব্দটাকে বগলদাবা করতে পকেটে পয়সা থাকা বাঞ্ছনীয় খুব সম্ভবত এই সূত্র মতে সবুজের দেখাসাক্ষাৎ গুলশান বনানীর মতো জায়গাতেয় বেশি পাওয়া যাই। প্রকিতির রঙের চাদরের পরিবর্তিত রূপ এখন আর জানান দেই না নতুন ঋতুর আগমনী বার্তার তাই শহুরে প্রজন্ম ঋতুর পালা বদলের খবর যানে বছরে বড়জোর দুই কি তিন দিন, তাও আবার উৎসবের সিল লাগানো ক্যালেন্ডারের নিদিষ্ট কিছু তারিখে। এক তরফা স্বার্থবাদী আমরা খুব সহজে ভুলতে বসেছি সবুজের সাথে সুস্থতার গভীর প্রেমের ইতিকথা। হাতে গোনা কবি সাহিত্যিক আর প্রকিতিপ্রেমি ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ শহুরে আমাদের কাছে সেই প্রেম উপাখ্যান জেন চোখের ঠিক নিচে উঠা ব্রণের মতো না উপরে ফেলা পর্যন্ত যেন হাত ইসপিস করতেয় থাকে।

সবুজের সাথে আড়িপাতা প্রিয় শহর ছেড়ে হাজার মাইল দূরের নতুন এক শহরে আজ আমি। সভ্যতার উচ্চ শিখড়ে থাকা এই শহরের সাথে সবুজের সখ্যতায় আমি মুগ্ধ,খানিক্টা আক্ষেপও হয় এই ভেবে যে, আমাদের শহরে দুই 'স' এর মধ্যকার ভাবটা কেন যে হয় না। নতুন শহরটার প্রকিতির পরিবর্তিত রং-রুপ না চাইতেয় আপনাকে জানিয়ে দিবে নতুন ঋতুর আগমনী বার্তা। শীতে বরফের চাদরে ঢাকা পড়া জরাজীর্ণ ধবধবে সাদা বুড়ি শহরটা সামার আসতে না আসতেয় চটজলদি অঙ্গে জড়িয়ে নেয় রঙিন নববধূর সাজ। যে সাজটা আবার সার্ক সম্মেলন বা টি-২০ বিশ্বকাপের আগে ঢাকার সাজা ক্ষণিকের বিউটি পার্লারের সাজ না মোটেও। এ দেশী সরকার আর সাধারণ জনগণের ভালোবাসা আর নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধার ফসল এই দীর্ঘস্থায়ী সাজ।

খুব জানি অনেকেয় হয়ত ঠোঁট উলটিয়ে বলবেন; আমেরিকার অনেক টাকা, অত টাকা থাকলে আমরাও অনেক কিছু করে দেখাতে পারতাম। ভাই ঘটনা কিন্তু সত্য ওদের অনেক টাকা কিন্তু দেশের প্রতি ভালোবাসার পাল্লার ওজন বাড়িয়ে আমরা কি অদের চাইতে এগিয়ে থাকতে পারি না? দুর্নীতিতে প্রথম হওয়ার কথা খুব মনে রাখলেও কেন যে বেমালুম ভুলে যান ১৯৭১ এ দেশপ্রেমে প্রথম হওয়ার ব্যাপারটা। ঐ সময়টাতে অনেক কিছুয় ছিলোনা আমাদের শুধুমাত্র ভালবাসাটাকে সম্বল করেয় অর্জন করেছিলাম স্বাধীনতা শব্দটা। আপন জনের লাল রক্তের দাম দিয়া কেনা পতাকার মর্মার্থ ভুলতে বসেছি সবায়। পতাকার সবুজ রঙ, বাংলার সাথে সবুজের অমর প্রেম গাঁথার সাক্ষী। সেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটা আমাদের শহরটাতে শুধু পাঠ্যপুস্তকেয় আটকানো।

আসুন এট লিস্ট নিজেদের ভালোর জন্যই, আড়িপাতা সবুজের সাথে সভ্যতার ভাব করিয়ে দেই আরোএকবার, শুরুটা না হয় আপনার থেকেয় হোক ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.