নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গোলাকার এক বৃত্তে পতিত মানব

মীর রবি

কবি ও সম্পাদক

মীর রবি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মীর রবির গল্প- ছোটন

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ দুপুর ২:০৮




মা-বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করল ছোটন। তারা তখনো নিস্তব্ধ। বুকভরা কষ্ট। একমাত্র ছেলে যুদ্ধে যাচ্ছে। নিশ্চিত মৃত্যুপুরী সেই যুদ্ধ। যুদ্ধ থেকে ছোটন কি আর ফিরে আসতে পারবে? এমন নানা প্রশ্নে জর্জরিত তারা। ছোটনেরও জানা নেই, মায়াভরা বাবা-মার এই সুন্দর মুখ আর দেখতে পাবে কিনা। খুব কষ্ট হচ্ছে তার। কিন্তু করার কিছু নেই। ছোট হলেও দেশের জন্য তাকেও যে কিছু করতেই হবে। সারা দেশে পাকিরা যেভাবে মানুষ খুন করছে- তা দেখে কি নিশ্চুপ থাকা যায়! ছোটনের ছোট্ট হৃদয়েও এর কোনো ঠাঁই নেই। বাবার সঙ্গে এই তো যে দিন রেডিওতে ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনছিল সে দিনই ছোটন ভেবেছিল যুদ্ধ ছাড়া উপায় নেই। আর এই যুদ্ধ বাঁচা-মরার। যুদ্ধে যে তাকে যেতেই হবে।

ছোটন বুকভরা কষ্ট নিয়ে শেষবারের মতো বাবা-মার বেদনার্ত মুখের দিকে তাকাল। মার চোখে পানি ছলছল করছে। বাবার ঠোঁট কাঁপছে। কি যেন বলার আকুতি। কিন্তু বলতে পাচ্ছেন না। বাইরে থেকে তুষার ভাইয়ের ডাক পড়ে- এই ছোটন… তাড়াতাড়ি আয় ভাই। সময় যে ফুরিয়ে যায়। ভাই, খাড়ান। এই-তো আমি আইতাছি। এই বলে ছোটন বাইরের দিকে পা বাড়ায়। মা এবার শব্দ করে কেঁদে ওঠে। পঙ্গু বাবাও উঠে দাঁড়াতে চায় ছেলের বিদায়ের পথে তাকিয়ে থাকার জন্য। কিন্তু পান না। নিজের অজান্তেই হু-হু করে কেঁদে ওঠেন। প্রলাপ বকেন- বাবা, ওগোরে ছাড়িস না বাজান…। ওগোরে এ্যাহন দাবান না গেলে ওরা তোগো ছিঁড়রা খাইব।

বাবার কথাগুলো মার কান্নায় এসে মেশে। হাওয়ায় এসে মিলিয়ে যায়। অনেক দূর পথ হেঁটে ছোটনদের ছোট্ট মুক্তির দলটা সোনাগাছি মুক্তি ক্যাম্পে এসে পৌঁছায়। তখন রাত ১২টা। সারা পথ আসতে ছোটনের খুব কষ্ট হয়েছে। কখনো কাদা-পচা পানি আবার কখনো ঝোপ-জঙ্গল দিয়ে আসতে হয়েছে। মরা শামুক দিয়ে পা কাটার যন্ত্রণা কি কম! ইস্! সে কি রক্ত! সুজন ভাই পা-টা বেঁধে না দিলে ছোটন আর হাঁটতেই পেত না। বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না ও। ছোট্ট একটা ডেড়ায় গিয়ে খড়ের বিছানায় শুয়ে পড়ে ছোটন। ঘুম ভাঙে তুষার ভাইয়ের ডাকে।

ক্যাম্পের ইফাত ভাই এসে কয়েক মুঠ মুড়ি আর এক কাপ ঠাণ্ডা চা দিয়ে যায়। এটাই আজকের সকালের খাবার। এই খাবার খেয়েই ছোটনদের ট্রেনিং শুরু করতে হয়। ট্রেনিং চলে টানা দশদিন। এই ক’দিনে ছোটন খুব ভালো করে স্টেনগান চালান শিখে নেয়। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ছোটনদের হাতে তেমন কাজ নেই। কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাসহ বসে গল্প করছিল। কারো নতুন বউ রেখে যুদ্ধে আসার গল্প। কারো বাচ্চা রেখে আসার। মজনু ভাইয়ের মা-বাবার কথা শুনে ছোটনের বুকটায় হঠাৎ ফাঁকা ফাঁকা মনে হলো। খুব করে মা-বাবাকে মনে পড়ে যায়। চোখের সামনে ভেসে ওঠে মা-বাবার অশ্রæ সজল মুখ। মায়ায় ভরা সেই মুখ। মা-বাবার কথা ভাবতেই ছোটনের মনটা খারাপ হয়ে আসে। কষ্ট হতে থাকে। তাই ও ঘুমানোর জন্য ডেড়ার দিকে উঠে যায়। এমন সময়ই রোস্তম ভাই খবর নিয়ে আসে- নিচপাড়ায় আজ রাতে পাকিস্তানি সৈন্যরা আক্রমণ করবে। তার আগেই ওদের আক্রমণ করতে হবে বলে জানায়। সবাইকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে বলে তুষার ভাই। স্টেনগান চালানোর দায়িত্ব পড়ে ছোটনের ওপর।

গভীর রাত, বারোটা হবে। নিচপাড়ায় ঢোকার পথের ধারের ঝোঁপে অবস্থান নিয়েছে ছোটনদের দল। ছোটনের কাছে এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। কেননা যেভাবেই হোক পাকিপশুদের পরাস্ত করতে হবে। পূর্ব পরিকল্পনা মতো যে যার স্থানে অবস্থান নেয় ওরা। মশা-মাছির অসহ্য কামড় খেয়ে ছোটনও শত্রুদের আসার অপেক্ষা করতে থাকে। সময়ও খুব দ্রুত ঘনিয়ে আসে। অদূরেই শত্রু সেনাদের জিপের আলো দেখে তরিকুল ভাই সবাইকে সজাগ হতে বলে। কাছে আসতেই শুরু হয় আচমকা আক্রমণ।

পাল্টা আক্রমণের আগেই ছন্নছাড়া হয় পাকি আর্মিরা। ছোটনের স্টেনগানের আঘাতে ওদের জিপে আগুন ধরে। কিন্তু কিছুক্ষণের মাঝেই শুরু হয় পাকিদের পাল্টা আক্রমণ। দুপক্ষের মাঝে চলে বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ। পাকিরা পেরে উঠতে পারে না। পিছু হটতে থাকে ওরা। ছোটনদের মুক্তিবাহিনী জয় বাংলা বলে উল্লাস করে ওঠে। ছোটন উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করে। দাঁড়াতে গিয়ে বুকের কাছটায় প্রচণ্ড আঘাত পায়। বুকে হাত রাখে। হাত রক্তে ভিজে যায়। কিছু বুঝে না উঠতেই ছোটন মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.