![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শঙ্খ ঘোষ তখন সাহিত্য অঙ্গনে তরুন। একদিন কবিতার খাতা নিয়ে হাজরি হলেন দেশ পত্রিকার অফিসে। সম্পাদকের হাতে কবিতার খাতাটা ধরিয়ে দিলেন আর বললেন- আমার কবিতাগুলো দেখুন। দেশ সম্পাদক কিছুক্ষণ উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে শঙ্খ ঘোষের কবিতাগুলো পড়লেন। বললেন- শঙ্খ ঘোষের কবিতাগুলো কবিতা হয়নি। শঙ্খ ঘোষ খাতাটা হাত থেকে নিয়ে সম্পাদককে একটা চর বসিয়ে দিলেন। বললেন- আপনি একজন সম্পাদক মাত্র, এর থেকে বেশি কিছু নন। লেখা পছন্দ হলে ছাপবেন, না হলে না ছাপবেন। কিন্তু, কোনটা কবিতা হল, আর হল না তার স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি দিবার আপনি কেউ নন। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে চলে গেলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। আপাতত দৃষ্টিতে শঙ্খ ঘোষের এমন ক্ষ্যাপা আচরণ আপনার ভাল নাও লাগতে পারে। কিন্তু, অন্তর্দৃষ্টিতে ভাবুন সেদিনের সমুচিত জবাবে শঙ্খ ঘোষ কোনো অপরাধ করেননি। আপনি তাকে অপরাধী বললেও আমি তাকে অপরাধী বলতে রাজি না। একতজন কবি বা লেখক কি লিখলেন তার বাহ্যিক রূপটাই আমরা দেখতে পাই। এর চিন্তার মানস জগতে আমরা পৌঁছাতে পারি না। অন্যের চিন্তার গভীরে পৌঁছার ক্ষমতা স্বভাবতই আমাদের নেই। একটি সাহিত্য কর্মের মূল বক্তব্যও পূর্ণভাবে তুলে ধরা অত্যন্ত দূরহ ব্যাপার। আমাদের সাহিত্য সমালোচকরা লেখনির যে সমালোচনা করেন, তা যে লেখকের লেখার ভাষ্য তার কোনো নিশ্চয়তা প্রদান বা তা পূর্ণ অর্থ বহন করে না। ক্ষোদ জীবনান্দ দাশই সমালোচকদের পিন্ডি চাপকিয়ে বলে গেছেন- আমি সময় পেলে নিজের লেখার ব্যাখ্যা নিজেই লিখে যাব। জীবনানন্দ দাশের এই উক্তি থেকেই বোঝা যায় সাহিত্য সমালোচনার নাম করে কি হয় বা হতে পারে। আর সম্পাদকরা যদি লেখকের লেখায় হাত চালান, তবে তা কতটুকু ভয়াবহ, তা আপনি একবার আচ করুন, পিলি চমকে যাবে। আর আপনি যদি কোনটা লেখা হল আর হল না বরে বিচার করেন, স্বীকৃতিদানকারী সাজেন তবে তার ভিত্তি যে কি একবার বুঝে উঠুন। নিশ্চই এহেন কর্মও যে অপরাধ, তা অস্বীকার করা যায় না।
ইদানীংকালে সাহিত্য সম্পাদকদের বড় দোষ ধরা হয়- তারা সম্পাদনার নামে কবি-লেখকদের লেখায় ইচ্ছে মত ছুরি কাচির ব্যবহার করে থাকে। এই অভিযোগ হেলা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। আমরা জানি মানুষ মাত্রই ভিন্ন চিন্তারি অধিকারী। একজন মানুষের চিন্তায় অপর একজন মানুষের চিন্তার শিকড়ে মূল থাকলেও এর প্রকাশ বা প্রয়োগ ভিন্ন হবেই। সেদিক থেকে যে একজন কবি বা লেখকের লেখনি, চিন্তা, দর্শনের ভিন্নতা হবে না, তা ভাবা বোকার হদ্দই হওয়া। একজন কবি বা লেখক অবশ্যই অন্য একজন কবি বা লেখক অবশ্যই অন্য একজন কবি বা লেখক থেকে চিন্তা ও মন-মানসিকতা, দর্শনে ভিন্ন। প্রত্যেক কবি সাহিত্যকদেরই নিজস্ব চিন্তার একটি বলয় আছে, আছে নিজ নিজ সৃষ্ট কর্মের স্বকীয়তা। স্বকীয়তা ছাড়া কবি বা লেখক হওয়া যায় না। এখন বলুন, আপনি সাহিত্য সম্পাদক- এই লেখকদের স্বকীয়তায় কি হাত দিতে পারেন?নাকি তার লেখনির যা ইচ্ছা তাই কাট-ছাট বা সংযোজন-বিয়োজন করে লেখা প্রকাশ পারেন? একজন ভাল মানুষ মাত্রই বলবেন- এই অধিকার একজন সম্পাদকের নেই। সম্পাদকের অধিকার মাত্র লেখনির ব্যাকরণিক দিকগুলো দেখা- বানান আর ভাষার শৃঙ্খলা দেখা, তথ্যগত ভুল দেখা। লেখা ছাপতে হবে এমন বাধ্যবোধকতাও একজন সম্পাদকের নেই। পছন্দ হলে তিনি লেখা ছাপতে পারেন, নচেত নয়। সেটা না করে একজন সম্পাদক অবশ্যই লেখকের চিন্তার জগতে ছুরি চালাতে পারেন না। কিংবা অন্যের চিন্তাটাকে ভেঙে দিয়ে নিজের চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়ে লেখা ছাপার অধিকার রাখেন না। আর যারা এই কাজগুলো করছে- এটা অবশ্যই তাদের অপরাধ। জেনে বুঝে যেসব সম্পাদকগন এমন অপকর্ম করছে- অবশ্যই তাদের শাস্তির বিধান করা উচিত, সেই সঙ্গে সেই সব পত্র-পত্রিকায় লেখাও বাদ দেওয়া একজন কবি সাহিত্যিকের নৈতিক মূল্যবোধ ও কর্তব্য। আমরা যদি দিনের পর দিন তাদের অপকর্মের সুযোগ দিয়ে যাই পরে যেমন স্বকীয়তা হারাব, তেমনি বাংলা সাহিত্যকে বঞ্চিত করব সৃষ্ট কর্মের নবায়ণ ও ভিন্ন ভিন্ন ধারাকে। বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ তো দূরের কথা এমন কর্মে বাংলা সাহিত্যের পথে বসার যোগার হবে না, তা বলা ভুল হবে। বাংলা সাহিত্যের সর্বনাশ হতে সময় লাগবে না।
খ্যাতিমান কবি শহীদ কাদরীর একটি ঘটনার কথা বলি এবার। সওগাত পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী শহীদকে একটি কবিতা দিতে বললেন। শহীদ কাদরী ‘গোধূলির গান’ নামে একটি কবিতা দিলেন। কবিতাটা ছাপা হল ঠিক- কিন্তু, বিকৃতভাবে। শহীদ যেভাবে কবিতাটা লিখেছিলেন সেভাবে না। ‘দেবতার মতো মন্ত্র ছড়ায় দেবদারুর গাছ’ লাইনের স্থলে গাফ্ফার ছাপিয়েছেন- ‘দেবতার মতো মন্ত্র ছড়ায় দেবদারুর গাছ বাতাসের ঢেউয়ে’।শহীদ কাদরী ভাবলেন কবিতা নষ্ট করা হয়েছে। কবি শামসুর রহমানও ঠিক তাই বললেন। অসন্তষ্ট কবি শহীদ কাদরী কবিতাটা পূনরায় কলকাতার পূর্বাশা পত্রিকায় পাঠালেন। কবিতাটা ঠিকভাবেই প্রকাশিত হল। শহীদ কাদরীর সঙ্গে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী যে কাজটি করেছিলেন- এমন কাজটি যদি শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে করা হত, তবে তিনি কি করতেন একবার ভাবুন। আর এমন কাটিং-ছাটিং, লেখায় হাত চালানো কতটা ওদ্ধত্য পূর্ণ আচরণ আর অন্যায় তা এবার নিশ্চই অনুভব করতে পাচ্ছেন। সম্পাদকগণ লেখার শ্রী বৃদ্ধি বা শ্রুতি মধুর করার নামে কবি বা লেখক সত্ত্বায় যে আঘাত হানেন- তা কখনো বরদাশত করার মতো নয়। অবশ্যই এটাকে প্রতিহত করাই জ্ঞানীর কাজ।
এবার আমার লেখক জীবনের কথা বলি- আমার এক কবি বন্ধু- সিরাজগঞ্জের এক মফস্বল দৈনিকের সাহিত্য সম্পাদক। ওকে একটা প্রবন্ধ পাঠালাম পড়ে মন্তব্য জানাবার জন্য। মন্তব্য করলো- প্রবন্ধ হয়েছি ঠিক- কিন্তু বিশ্লেষণ কম হয়েছে। মন্তব্যে কিছু বলার নেই, বললাম না। এরই মাঝে আমার এই বিশেষ বিশ্লেষক বন্ধু এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। তার ইচ্ছা মতো কাট-ছাট আর আমার লেখার আগা-পিছ করে প্রবন্ধটি তার সাহিত্য পাতায় ছাপল। প্রবন্ধটি আমি যেভাবে লিখেছিলাম- তার কোনো ক্রমেই ঠিক রাখেনি দেখে স্বভাবতই আমি রাগান্বিত হলাম। মনে হচ্ছিল শঙ্খ ঘোষের ন্যায় কিছু করতে পেলে স্বস্তি পেতাম। কিছু কড়া কথা ব্যতিত কিছুই আর করা হল না।
এতক্ষণ সাহিত্য সম্পাদকদের নেতিবাচক এসব দিকের কথা বললাম, এবার একটা ইতিবাচক দিকের কথা না বললেই নয়। আমি তখন স্কুল ছাত্র। লেখালেখি করতাম দৈনিক ইত্তেফাকের কচি-কাঁচার আসরে। একদিন গল্প পাঠালাম আসরে। গল্প পেয়ে কচি-কাঁচার সম্পাদক খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক খালেক-বিন জয়েনউদ্দিন ফোন করলেন। জানালেন আমার গল্প নিয়ে তার খটকার কথা, কিছু দিক বুঝতে না পারার কথা। তিনি ইচ্ছে করলেই খটকা লাগা তার না বোঝা লাইনগুলো কেটে তার ইচ্ছে মত করে গল্পটা ইত্তেফাকে ছেপে দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি- তার নৈতিকতাবোধ থেকে। তার মতো খ্যাতিমান মানুষ যদি একজন আমার মত পিচ্চির লেখায় হাত না দেন- তকে আজকালের দুদিনের সম্পাদকরা কি করে এই অপকর্মগুলো করার সাহস পান- তা বুঝে উঠতে পারিন। সম্পাদকদের এমন কাজে কেনই বা প্রশ্ন উঠবে না বলুন?
২| ১১ ই মে, ২০১৭ রাত ৯:১৭
রাজীব নুর বলেছেন: লেখা, লেখক, সমালোচক- এইসব ই তো যুগ যুগ ধরে চলছে।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনি একজন সম্পাদক মাত্র, এর থেকে বেশি কিছু নন। লেখা পছন্দ হলে ছাপবেন, না হলে না ছাপবেন। কিন্তু, কোনটা কবিতা হল, আর হল না তার স্বীকৃতি বা অস্বীকৃতি দিবার আপনি কেউ নন।
কবি শঙ্খ ঘোষ ভুল বলেননি।