![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নতুন কিছু করার আশায় থাকা মানুষগুলোই এক সময় সফল হয়।
সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই প্রতিদিনের মত আজও বিদ্যুৎ চলে গেল, এ যেন প্রতিদিনের বাধা সময়, নিরাপদ কাকা কিন্তু এতে একটুও বিরক্ত নয়, নিয়তি মেনে নেয়ার মত ধৈয্য, সাহস, মনোবল সবই তার ভিতর বিদ্যমান। তাছাড়া নিয়তি তে যাই থাকুক না কেন সহজে মেনে নিতে পারলে জীবনে আনন্দের অভাব হবে না, নিয়তি মেনে নেওয়াও একটা আনন্দ, নিরাপদ কাকা এটা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।
শহরে থেকে অদূরে সাজানো ছোট্ট একটা গ্রামে নিরাপদ কাকার বাস। সন্ধ্যা হলেই এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে গুলো নিরাপদ কাকার বাড়িতে এসে হাজির। বাড়ির সামনে বিশাল উঠোন, চারপাশ গাছপালায় ঘেরা। দক্ষিণমুখী বাড়িটির কোণায় পাটি বিছিয়ে নিরাপদ কাকার মুখে গল্প শোনার মজাই যেন আলাদা। নিরাপদ কাকাও প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প বলে সবাইকে হাসায়, কাদায়, ভয় দেখায়। মুগ্ধ হয়ে সকলে তা শ্রবণ করে। একসময় বিদ্যুৎ চলে আসলে সেদিনের মত গল্প বলা শেষ।
এভাবেই সকলকে আগলে রেখে একত্রে মিলেমিশে থাকার শিক্ষাটা নিরাপদ কাকার মাধ্যমেই ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা শিখছে। তারা হয়তো জানেও না যে, তারা তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়ে রয়েছে।
সময় চলতে থাকে এভাবে, একদিন সন্ধ্যায় নিরাপদ কাকা বলল, "কাল রাইতে আমি একটা স্বপ্ন দেকছি আজক্যা হেইডা শুনাই তোদের। স্বপ্নে দেখতাছি, আমি বাজারে যাইতাছি ওই গঞ্জের রাস্তা দিয়্যা, দেহি বিশাল বড় কি একটা আকাশ থিক্যা আমাগো গ্রামের দিকে আইতাছে, আমিতো ভয় পাইয়্যা গেছি, আমি ঘুইরা দৌড় দিমু তহনই ওইট্যা আমাগো গ্রামের উপর পড়ল, একটা খন্ড আইস্যা আমার ঘাড়ে লাগলো, আমি উল্টাইতে উল্টাইতে অনেক দূরে গিয়্যা পরলাম, মনে অইলো আকাশ ভাইঙ্গা পরছে, চারিদিকে শুধু ধুয়া আর ধুয়া। বুঝতাছি না কি অইল, উটার চেস্টা করলাম কিন্তু প্রচন্ড ব্যতা, তারপরও উটলাম সবকিছু আবছা লাগে, কিছু চিনা যাইতাছে না, নাই কুনু গাছপালা, নাই কুনু বাড়িঘর, দুরের গ্রামগুলা দেহা যায়, মানুষজন দেহি কেউ দাড়াই আছে, কেউ বইস্যা আছে, কেউ শুইয়্যা আছে, বুঝতে পারতাছি আমাগো গ্রাম আর গ্রাম নাই, চক অইয়া গেছে কিন্তু কোন মানুষ মরে নাই। এরপর ঘুমটা ভাইঙ্গা গেল।
স্বপ্নটা শুনে সকলের মনে এক রহস্য দানা বাধলো, কেউ মনে মনে ভাবলো এটা কেমন স্বপ্ন, কেউ ভাবলো তারপর কি হল, কেউ ভাবলো আসলেই কি এমন কিছু হবে নাকি। নিরাপদ কাকা বলল আমাদের গ্রামে হয়তো কোন বিপদ আসতে চলেছে। সবাইকে একসাথে মিলেমিশে থাকতে হবে, পড়ালেখা করে অনেক কিছু জানতে হবে, একসাথে কাজ করতে হবে।
গ্রামের পশ্চিম দিকে সুদীর্ঘ ফসলের ক্ষেত, তারপর রয়েছে বিশাল নদী, কয়েক মাস পরেই এক বর্ষাকালে নদীটি ভাঙতে শুরু করলো, গ্রামের সকলের এক চিন্তা শুরু হল, বর্ষার পর সকলে একসাথে নদীতে বাধের কাজ শুরু করলো, কিন্তু তাতে কোন লাভই হল না, প্রতিবছর ভাঙতে ভাঙতে নদীটি গ্রামের একদম নিকটে চলে আসলো।
গ্রামে যেন হাহাকার পরে গেল, কারো মনে এতটুকু পরিমাণ সুখ নেই, অনেক চেষ্টার পরও সরকারী কোন সাহায্য এলো না। এক এক করে ভাঙতে থাকলো এক এক বাড়ি। বাড়িহারা, জমিহারা মানুষের চিৎকার, হাহাকার দেখে নিরাপদ কাকা নিয়তি মেনে নেওয়ার মত ধৈয্য, সাহস ও মনোবল সবই হারিয়ে ফেলল। জীবনে আর কোন দিন আনন্দ আসবে না, নিয়তি মেনে নিলেও জীবনের এই ফাকা জায়গাটা কোনদিন পূরণ হবে না, সব নিয়তি মেনে নেওয়াতে যে আনন্দ আছে এই বিশ্বাস তার ভেঙে গেল।
সাজানো গোছানো নিজ বাড়ি, গাছপালা, নিজ গ্রাম তছনছ হয়ে একেকজন একেক দিকে চলে যাওয়া যে কতটা যন্ত্রনার তা কেবলমাত্র নদীভাঙ্গা মানুষগুলোই জানে।
সেই ছোট ছেলেমেয়েরা আজ অনেক বড়, নিরাপদ কাকার সাথে দেখা হয়না অনেক বছর। তার কথা কেউ হয়তো ভুলতে পারবে না। গ্রামটি নেই কিন্তু নদীটি এখনো রয়েছে। নিজ গ্রামকে খুজতে তারা যায় সেই নদীর পাড়ে, শুধু পানি আর পানি। মনের কোণায় শুধু একটা আফসোস, একটা বড় দীর্ঘশ্বাস।
ছবিসূত্র-গুগল।
১০ ই মে, ২০২০ রাত ৩:১৭
মীর সাজ্জাদ বলেছেন: ধন্যবাদ বড়দা।
২| ১০ ই মে, ২০২০ রাত ৩:৫৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অতুলনীয় লেখা।
১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪৪
মীর সাজ্জাদ বলেছেন: শুকরিয়া।
৩| ১০ ই মে, ২০২০ ভোর ৫:২৭
রাফা বলেছেন: গল্পের ছলে বললেও এটা আমাদের জাতিয় সমস্যা। বাংলাদেশের উন্নতির জন্য এটা নিয়ে আরো ব্যাপক পরিকল্পনা দরকার। তা না হলে নিরাপদ কাকাদের জিবনে চলমান থাকবে অনিরাপদ বিপদ।
ধন্যবাদ,মী.সাজ্জাদ।
১০ ই মে, ২০২০ সকাল ৯:৪৬
মীর সাজ্জাদ বলেছেন: নদী ভাঙন রোধে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।
৪| ১০ ই মে, ২০২০ সকাল ১১:০৬
আলোকরশ্মি22 বলেছেন: প্রতিবার বর্ষাকালেই বাংলাদেশে নদী ভাঙন দেখা দেয়
অপরিকল্পিত নদীশাসন নদী ভাঙনের একটি বড় কারণ৷
রাষ্ট্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিস (সিইজিআইএস)-এর তথ্য মতে, প্রতি বছর ভাঙনে নদীতে চলে যায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমি৷ আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখখানেক পরিবার৷ সব কিছু হারিয়ে নানা ধরনের দুর্দশার মুখোমুখি হয় তাঁরা৷বাংলাদেশ জুড়ে থাকা কয়েকশ’ নদী-উপনদীতে ভাঙন হলেও সবচেয়ে বেশি ভাঙন-প্রবণ যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা৷ স্বাধীনতার পর থেকে নদী ভাঙনে এ দেশের পৌনে দুই লাখ হেক্টরের মতো জমি বিলীন হয়েছে বলে বিভিন্ন সমীক্ষায় উঠে এসেছে৷মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রমত্ত পদ্মায় বাংলাদেশের ৬০ হাজার হেক্টর (২৫৬ বর্গমাইল)-এর বেশি জমি বিলীন হয়েছে৷পদ্মা-যমুনার মতোই ভয়ঙ্কর আগ্রাসী হয়ে ওঠে মেঘনা৷ এ নদীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বরিশাল, চাঁদপুর এলাকার বাসিন্দারা৷ সিইজিআইএসের হিসাবে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেঘনার ভাঙনে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ২৫ হাজার ৮২০ হেক্টর এলাকা৷বাংলাদেশে নদী ভাঙন প্রতিরোধের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এর পূর্বাভাস এবং সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
১০ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৬
মীর সাজ্জাদ বলেছেন: পরিসংখ্যান দিয়ে সুন্দরভাবে বলেছেন। জানিনা কবে এ সমস্যার সমাধান হবে। সামনে বর্ষাকাল আসতেছে, আবারও কত মানুষের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হবে।
৫| ১০ ই মে, ২০২০ দুপুর ১২:১৭
ঢাবিয়ান বলেছেন: ভাল লাগলো পড়ে। সুন্দর, সরল ও প্রাঞ্জল ।
১০ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৭
মীর সাজ্জাদ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মে, ২০২০ রাত ১২:৫৯
রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর।